বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে চাই। তেল সরবরাহ বাড়িয়েও পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। ৩২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২ থেকে ১৫টির একাধিক ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল থাকছে। একটি চালু হলে বন্ধ হচ্ছে আরেকটি। এতে কেন্দ্রগুলো থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে।
অথচ উৎপাদন কমার জন্য তেল সংকটকে দায়ী করে আসছিলেন কেন্দ্রগুলোর নির্মাতারা। এতে কম বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেখানে কেন্দ্রগুলোকে জরিমানা করার কথা সেখানে উল্টো তাদেরকে দুই বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি বিল্ডিং চার্জ পরিশোধ করে পিডিবি। বর্তমানে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ থাকলেও এসব কেন্দ্রের বিভিন্ন ইউনিট বন্ধ থাকছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অদক্ষতার জন্য এ কেন্দ্রগুলোকে জরিমানার বদলে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থ বছরেই ২৭টি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেওয়া হয় ২ হাজার ৬৯৭ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ৮৪০ টাকা (ডলার মূল্য ৭০ টাকা ধরে)।
গত অর্থবছরে তা তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। চলতি অর্থবছরে আরও পাঁচটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র্র উৎপাদনে আসায় এ পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পেঁৗছাবে যা বিদ্যুৎ না কিনলেও সরকারকে পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক ঊধর্্বতন কর্মকর্তা জানান, অনেক কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিভিন্ন ইউনিট বন্ধ থাকছে। তারপরও তারা পূর্ণ ক্ষমতা অনুযায়ী ক্যাপাসিটি বিল্ডিং চার্জ পাচ্ছে।
৩২টি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মধ্যে শুধু এনার্জি পাওয়ার করপোরেশনের শিকলবাহা-৫৫ মেগাওয়াট ও ইউনাইটেড পাওয়ারের আশুগঞ্জ-৫৩ মেগাওয়াট কেন্দ্রের নির্ভরযোগ্য ক্ষমতা দুই মেগাওয়াট করে কমেছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাওয়ার প্যাকের কেরানীগঞ্জ-১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রে ৩৮ মেগাওয়াট, দেশ এনার্জির সিদ্ধিরগঞ্জ কেন্দ্রে ১৭ মেগাওয়াট, এনার্জিস পাওয়ারের শিকলবাহা কেন্দ্রে ২৩ মেগাওয়াট, প্রিসিশন এনার্জির আশুগঞ্জ কেন্দ্রে ৬ মেগাওয়াট, এনার্জি প্রাইমার ফেঞ্চুগঞ্জ কেন্দ্রে ৫ মেগাওয়াট, দেশ ক্যামব্রিজ কুমারগাঁও পাওয়ার কোম্পানির সিলেট কেন্দ্রে ৩ মেগাওয়াট, কোয়ান্টাম পাওয়ারের ভেড়ামারা কেন্দ্রে ৬৯ মেগাওয়াট ও নোয়াপাড়া কেন্দ্রে ৬১ মেগাওয়াট, খানজাহান আলীর নোয়াপাড়া কেন্দ্রে ৬ মেগাওয়াট, ভেঞ্চার এনার্জি রিসোর্সের ভোলা কেন্দ্রে ৫ মেগাওয়াট, এনার্জি প্রাইমার বগুড়া কেন্দ্র থেকে ১২ মেগাওয়াট ও আর জেড পাওয়ারের ঠাকুরগাঁও কেন্দ্র থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া জ্বালানি সংকটে আমনুরা কেন্দ্রে ২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়। অথচ বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেল কিনতে দৈনিক ৩৭ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা গতবছর গড়ে ছিল প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এদিকে তেলের বরাদ্দ দ্বিগুণ করেও তেল সংকটের অজুহাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগেরই অনেক কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চুক্তি অনুযায়ী রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের জন্য নতুন মেশিন আনার কথা থাকলেও অধিকাংশ উদ্যোক্তাই পুরনো মেশিন আমদানি করেছে। এতে তেলের ব্যবহার বেড়েছে। কমেছে উৎপাদন ক্ষমতা। প্রায়ই একাধিক ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২১৭ থেকে ২১৮ মি.লি. জ্বালানি তেল লাগার কথা থাকলেও পিডিবি ইতোমধ্যে ১৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চিহ্নিত করেছে, যারা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬০ মি.লি. তেল খরচ দেখাচ্ছে।
জানা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদনে আসার কিছুদিনের মধ্যেই পাগলা-৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের সব মেশিন বদলাতে হয়। সামিটের মদনগঞ্জের ১০২ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট গ্যারান্টি থাকাকালীনই সমস্যা দেখা দেয়। পরে সরবরাহকারী কোম্পানি বদলে দেয়। এনার্জিস পাওয়ারের শিকলবাহা-৫৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের বিভিন্ন ইউনিট বছরের অধিকাংশ সময়ই ত্রুটিতে বন্ধ থাকছে। ভোলা কেন্দ্রের পুরো জেনারেটরই পুড়ে যায়।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি কেন্দ্রগুলো অনেক পুরনো হলেও চলছে। কিন্তু রেন্টাল কেন্দ্রগুলো নতুন হলেও ঠিকমতো চলছে না।
আরো পড়ুন
তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।