আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরব ডায়েরি-৩৬ (মনির-নামা ১)

... আমার আগের অনেক লেখাতেই জুঁই ও মনিরের কথা এসেছে। অনেক হাস্যরস ও আড্ডার মধ্যমনি ছিল মনির। অল্প সময়ের জন্য তারা আবহাতে ছিল, এখানে কন্টিনিউ না করে দেশেও চলে গেল। গতবার ছুটিতে যখন দেশে যাই, মনিরদের বাসায় ইফতারির দাওয়াত ছিল। আমাকে পুরান ঢাকার মজাদার ইফতারি খাওয়ানোর কথা ছিল, কিন্তু দাওয়াতটি মিস করেছিলাম।

এবারও ছুটিতে দেশে যাবার পর যথেষ্ট আড্ডাবাজি হলো। আমরা, মিলন, আদিল ভাই, দিবা ও মনির ফ্যামিলি একসাথে হলাম। বসুন্ধরা শপিং মলে আড্ডা হলো, খাওয়া দাওয়া হলো, সাহস করে আমরা অনন্ত ভাইয়ের “দ্য ইস্পিড” ও দেখে ফেললাম। সিনেমার কথা নাইবা বলি, শুধু বলবো সারা হল জুড়ে সবার মুখে ছিল – ইস্টপ, ইস্টপ। এরই মাঝে একদিন মনির ইফতারের দাওয়াত দিল।

নড়েচড়ে বসলাম, এবার আর মিস করা যায় না। ঠিক হলো আমরা ও মিলনরা ঢাবি’তে একসাথে হবো। পুরান ঢাকার চানখারপুলে মনিরদের বাসা। আমি উত্তরা থেকে রওনা দিলাম। বাংলাদেশের ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের যে কি অবস্থা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, রাস্তায় মানুষ আর মানুষ, যানবাহন নেই।

উত্তরা থেকে ঢাবি আসতে প্রায় ৩ ঘন্টা লেগে গেল। আমাদের উদ্যম শক্তির সম্পূর্ণটাই শেষ হয়ে যায় রাস্তায় গাড়ীতে বসে ঘামতে ঘামতে, ক্রিয়েটিভ কিছু করব কিভাবে? মনে হচ্ছিল সময়মতো বোধয় পৌছতে পারবোনা। ২০/২৫ মিনিট বাকী থাকতে আমরা (আমার ও মিলনের ফ্যামিলি) মনিরদের বাসায় পৌছলাম। মনিরের আরও কিছু বন্ধু ছিল- সবাই মোটামুটি বিগশট, সরকারী কর্মকর্তা। কেউবা ট্যাক্সে, ফরেন এ্যাফেয়ার্সে, ইউনিভার্সিটিতে অথবা ব্যাংকে।

ইফতারে খাবারের আয়োজনে এলাহী কারবার। পুরো টেবিল ভরে গেল খাবারে। আমরা তাদের ছাদে বসেছি, টেবিল চেয়ার ফেলা হয়েছে। জুঁই বারবার খেয়াল রাখছিল আমি ঠিকমতো খাচ্ছি কিনা। মনির এবং আমি দু’জনেই ভোজন রসিক।

মনিরের জন্য বেশী খেতে মানা। কিন্তু আজ সে মানা মানলে চলবে কেন? ডাক্তারি পথ্য (চিড়া ও কলা) শেষ করে সে বিপুল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়ল। গতবার বলেছিলাম, আমাকে ‘বড় লোকের পোলারা খায়’ খাওয়াতে হবে। এবার সে ব্যাবস্থা আছে। টেবিলের একপাশে খাবারটি পড়ে আছে, কিন্তু কেউ ধরছে না।

জুঁই নিশ্চিত করলো আমি যাতে খাবারটির টেস্ট নেই। এই খাবার নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প শুনেছি, যার বেশীর ভাগই নেগেটিভ কথাবার্তা। কিন্তু আমাকে খাবারটি খেতে হবে, ‘খাবারটির স্বাদ আমি নিয়েছি’-একথাটি বলার জন্য হলেও আমাকে খেতে হবে। ভয়ে ভয়ে অল্প একটু নিলাম। আমি জানি মনির ও জুঁই লেখাটি পড়ছে।

তারপরও বলতে হয় খাবারটি আমার একটুও ভালোলাগেনি। বিস্বাদ ঠেকেছে, মনে হয়েছে আগেরদিনের বিক্রি না হওয়া বাসি সব আইটেম একসাথে করে খাবারটি বানানো হয়েছে। মারাত্নক ব্যাপারটি হলো বাসায় ফেরার সাথে সাথেই আমার পেট খারাপ করেছিল। ইফতারের পর আবার সেই পুরোনোদিনের আড্ডায় ফিরে গেলাম। মনির আর শাকিলা’র বাকী বন্ধুরাও যোগ দিল।

জমজমাট আড্ডায় কখন যে রাত গড়িয়ে ১০টা বেজে গেল বুঝতেও পারলামনা। যদি আমার বাসা কাছাকাছি হতো, সারা রাত আড্ডা দিতাম। ফিরতে হবে উত্তরায়, রাস্তা ঘাটের যে অবস্থা ক’টা বাজে কে জানে। ঘন্টা দেড়েকের মাথায় বাসায় পৌছে যাই, আর শুরু হয় বৃষ্টি। মনিরের সাথে আমার পরিচয় আবহাতে।

সে শাকিলা, দিবা ও মিলনের ক্লাসমেট। অথচ মনিরের সাথে প্রথম সাক্ষাতেই আমার রসায়নটা বেশ জমে গেল। এখনও মনে আছে সেই প্রথম দিনের কথা। মিলন রাতে মনিরকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়ে এসেছে। আমি ও শাকিলা সকালে তাদের জন্য নাস্তা তৈরি করলাম।

নাস্তা খেতে খেতে কত যে আলাপ, জুঁইয়ের চেচামেচি। প্রথম সাক্ষাতেই যে এত অন্তরঙ্গতা হতে পারে, তাদের না দেখলে বুঝতামনা। পরেরদিন সকালে মনির এডমিন অফিসে রিপোর্ট করতে যাবে। আদিল ভাই তাকে সকাল ৬টায় তৈরি থাকতে বলেছেন, একসাথে যাবেন। মনির ৬টার কিছু আগে তৈরি হয়ে বসে আছে।

জানালা খুলে দেখে চারপাশে অন্ধকার, কোন মানুষজনও নেই। তারা কিছু ভেবে পেলনা। ব্যাপারটা কি? তারা ভাবলো নতুন দেশ, হয়তো সূর্য এখানে দেরীতে উঠে। সময় যায়, কিন্তু আদিল ভাই ফোন দেয়না কেন? ... মনির অস্থির হয়ে উঠে। হঠাৎ খেয়াল হয়- ঘড়ির সময়তো পাল্টানো হয়নি।

তারা সকাল ৬ টা মনে করে রাত ৩টায় উঠে বসে আছে। ... ঘটনা শুনে আমরাতো হাসতে হাসতেই শেষ। (চলবে) >> সামু'র গোলযোগে ছবি দিতে পারলাম না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।