আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম তেহরান থেকে

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল (পোস্ট এডিট করে দ্বিতীয় পর্বও এখানেই দিয়ে দিলাম। অনুগ্রহ করে এখানেই শেষটুকু পড়ে নেবার অনুরোধ করছি) কুরিয়ারে করে পাঠানো টিকেট, আর নিমন্ত্রনপত্র পেয়ে মনে হলো লটারি পেয়েছি। আমার লটারির কোন ভাগ্যি নেই বলে যে আক্ষেপ, সেটাও অবশেষে দূর হলো। খালি একদিন সকালে শামিম ভাইয়ের কাছে পাসপোর্ট দিয়ে এসেছিলাম ভিসার জন্য। সেটাও বিকালের মধ্যে হস্তগত হওয়াতে উড়াল দেবার পথে কোন বাধা রইলো না।

ভি আইপি লাউঞ্জ ধরে ঝামেলা ছাড়াই বিমানে উঠে বসলেও, বসার আসনটি ইকোনমি ক্লাসে হওয়াতে মন খারাপ হলো। হোক না ৫-৬ ঘন্টার জার্নি, তাই বলে দাওয়াত দিয়ে সস্তায় বসাবে? মেঘযুক্ত আকাশের মধ্যে খানিকটা হেলে দুলে বিমান আকাশে উঠার প্রায় আধা ঘন্টা পর, অপরুপ রুপসি বিমানবালা খুব সুন্দর করে হাসি দিলে বললো, would you please follow me sir? কথা শেষ হবার আগেই মনে হয় আমি সুন্দরির পিছু পিছু হাটা দিলাম। এখন আমাকে প্লেন থেকে ফেলে দেক, কিংবা কাজি অফিসে নিয়ে যাক কুচ পরোয়া নেই। পর্দার ওপাশে বিজনেস ক্লাস। ভেতর থেকে যে রকম শব্দ আসছে, মনে হচ্ছে মাছের হাট বাজার।

বিমানবালা পর্দা সরিয়ে আমাকে ভেতরে যাবার অনুরোধ করলো। কি আলিসান হাল। একই বিমানে একই যাত্রাপথে আরাম আয়েশের কি বিশাল ভিন্নতা। বুবুর আত্মিয়স্বজন দিয়ে কোলাহলে পরিপুর্ণ বিজনেস ক্লাস। মনে হচ্ছে পিকনিকে যাচ্ছে।

খাওয়া নিয়ে দেখলাম দুই মহিলা টানাটানি করছে। দুই এক জন পুরুষকে দেখলাম দিব্যি সিগারেট খাচ্ছে। কি করবো ভাবছি, এমন সময় শামিম ভাই হাজির। বিজনেস ক্লাস ছাড়িয়ে আরো ভেতরে নিয়ে গেলেন আমাকে। সোভানাল্লাহ ! এদিকে আরো কঠিন অবস্থা ! চোখে চশমা দিয়ে গম্ভির মুখে বুবু বসে আছে।

আশে পাশে তার সহকারিবৃন্দ। আমাকে ইশারায় পাশের সিটে বসতে বলে নিজের কাজে মনযোগ দিলেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় হুর পরি থুক্কু বিমানবালা এসে সবিনয়ে জানতে চাইলো, আমি কি খাবো? খাওয়া? প্রথম কথা বুবু কেন আমাকে তেহরানে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা জানি না। দ্বিতীয়ত প্রথম সুন্দরির কৃপায় ক্ষুধা তৃষ্ণা তো সেই কবে চলে গিয়েছে। দ্বিতীয় সুন্দরির কৃপায় মনে হচ্ছে আমি মর্তে নেই, সোজা স্বর্গে ! এই অবস্থায় খানা পিনার চিন্তা যে করতে পারে, তাকে দিয়ে মানুষ খুনও সম্ভব ! তাও ভদ্রতা করে অরেঞ্জ জুস শুধু চাইলাম।

"বুবুর পয়সা বাচানোর জন্য কিপটামি করিস না রে বাচ্চু !" চেয়ে দেখিয়ে হাতের কাজ শেষ করে আমাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলি বললেন স্বয়ং বুবু। "তেমন ক্ষিদা তো নেই বুবু। তাছাড়া কি খাবো? মেনু টেনু তো কিছু দিলো না। " আমার কথা শুনে যেন ভীষন মজা পেলেন বুবু। হাসি হাসি মুখে বলেই বসলেন, "ক্ষিদা কেমন থাকবো? সুন্দরি এয়ারহোস্টেস দেখে তো তো সব গায়েব।

" আমি লজ্জা পেলাম। আসলে বুবুরা বোধ হয় এমনই। অনেক কিছু বুঝে ফেলে। "আচ্ছা বুবু, কও তো আমারে নিয়া যাচ্ছো ক্যান?" "কোন কারণ তো নাই বাচ্চু। এমনেই।

দেশের টাকার শ্রাদ্ধ করতে যাইতেছি। তোরে নিলাম, যাতে তুই বড় গলায় কইতে না পারোস যে আমি একলাই গুস্টি নিয়া দেশের টাকা উড়াই। " মোক্ষম কথা। "আচ্ছা বুবু, এখন তো আর দুই পরাশক্তি নাই, যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন করতে হইবো। এর পরেও এই সব ক্যান?" "আরে পাগল, নাই তো কি? বড়লোকেরা যেমন লায়ন্স ক্লান রোটারি ক্লাব ইত্যাদি বানাইয়া পিকনিক করে, তেমনি অনেক দেশের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রিরাও এই ন্যাম কইরা পিকনিক সারে।

ফাকতালে এক জন আরেকজনের সাথে বিজনেস ডিল সাইরা ফেলায়। " "তো তেহরান যে যাইতাছো, ওবামা শুনলে তো গোস্যা হইবো। জানোই তো ইরাক আফগানিস্তান খাওয়ার পর এখন ইরান তাগো দুই চক্ষের বিষ !" "গোশ্যা করলে করবো ! আমার কি? ব্যাটারা কত বড় ইতর চিন্তা কর। কোথাকার কোন ইনুছের জন্য আমার লগে ক্যাচাল করে ! ক্যান? আমি কি ইনুছের চেয়ে কোন অংশে কম? আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রি। অথচ হেগো কাছে আমার কুন দাম ই নাই।

" "আচ্ছা এক কাজ কর, বাথরুমে যা। " "বাথরুমে? ইয়ে আমি ঠিক আছি। " "তর্ক করিস না তো বাচ্চু। যা কইছি কর। শামীম ওরে প্যাকেটটা দে।

এই অবস্থায় তুই ওইখানে গেলে আমার মান ইজ্জত থাকবো?" তাও তো কথা। রথি মহারথিরা যেখানে জমায়েত হচ্ছেন, সেখানে সাধারণ আটপৌরে পোষাকে আমাকে মানাবে কেন? ইয়া মাবুদ ! এত সুন্দর যায়গায় বিস্ময়ে শুধু অবাক হবার পরিবর্তে মানুষ কি করে পয়োঃকৃত্যের চিন্তা করতে পারে, মাথায় ঢুকলো না। পাশে নিন্দা হয়, তাই প্যাকেটের ভেতর থাকা কমপ্লিট স্যুট পড়ে নিলাম। বুবুর রুচি খুবই ভালো। খেয়ালও তেমনি।

স্যুটের সাথে বাকি সব অনুসঙ্গও আছে। আয়নায় নিজেকে দেখে মনে হলো, নাহ... জীবনটা এতদিন অপুর্ণ ছিল। বাকিটুকু সময় ভালোয় ভালোয় কেটে গেলো। মাঝখানে শুধু বুবু বললেন, "দেখিস হারাইয়া যাইস না। নতুন যায়গা, আমার আশে পাশেই থাকবি, বুঝলি? আমি খাইতে গেলে তুই ও যাবি।

আর হ্যা, এই ২০০০ ডলার রাখ। শপিং টপিং করিস। কিছু লাগলে ওগো যে পাব্লিক রিলেশনস অফিসার থাকবো, ওরে কবি। ঠিক আছে?" তেহরানে নেমে বিশাল রিসেপশন। রাস্ট্রিয় প্রোটোকল।

ইরানী সেনাবাহিনীর চৌকশ সদস্যরা পাহারায়। সাদা পোষাকের গোয়েন্দারা গিজ গিজ করছে। বুবু আর তার লটবহরের সাথে সাথে আমিও রাস্ট্রিয় আতিথ্যে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। এটা কি হোটেল নাকি রাজপ্রাসাদ নাকি যাদুঘর নাকি অন্য কিছু? হোটেলে তো পৌছালাম। বুবুর পিছনে পিছনেও গেলাম।

আমার লাগেজ টাগেজের ঝামেলা তেমন নেই। খালি কি জানি কাগজে সাইন করালো। এর পর পরিচিত হলাম পাব্লিক রিলেশন অফিসারের সাথে। সোভানাল্লাহ ! কিশোর কুমারের গানটা মনে পড়লো। কি দারুন দেখতে ! ----------------------------------------------------------------------- "Hi I am Laila your P.R.O" হুম ! আসলেও লায়লা ।

মানে সুন্দরি। আমি কি বলবো? মনে গান বাজছে , পড়ে না চোখের পলক... ওইদিকে শামিম ভাই দেখি চরম লুলের মত তাকিয়ে রয়েছে। করমর্দনের সময় ভদ্রতার চেয়ে বেশি সময় ধরে হাত ধরে ছিল। সারাদিন বুবুর আত্মিয় স্বজনদের আবদার রাখতে রাখতে লায়লার অবস্থা খারাপ। অথচ মুখ থেকে সুন্দর হাসিটা মুহুর্তের জন্যও বিলীন হয়নি।

এক সময় ফাকতালে শুধু বললো, সবাই অনুরোধ করছে এটা ওটার জন্য। কই? তুমি তো কিছু চাইলে না। মনে মনে বললাম, ওগো আমি চাইলে তো তোমারে শাদি করতে চাইতাম। মুখে শুধু বললাম নাহ ঠিক আছে। আমার চাহিদা খুব সামান্যই।

তাছাড়া তুমি একলা এতজনের আবদার সামলাচ্ছো। তাই দেখে তোমাকে আর বিব্রত করতে ইচ্ছা করছে না। " "বাহ তুমি নিপাট ভদ্রলোক দেখছি। এজন্য একটা পুরস্কার তোমার অবশ্যই প্রাপ্য। " লায়লার কথা শুনে আমার তো ফিট হবার দশা।

বলে কি ! এ যে চাঁদ ধরণিতে নেমে আসতে চাইছে। "কি পুরস্কার জানতে পারি?" " কাজের পরে তোমাকে আমি তেহরানের কিছু অংশ দেখাতে নিয়ে যাবো। রাতের খাবারটাও আমার সৌজন্যে। " সারাদিন একটা ছটফটানি কাজ করলো। সন্ধ্যার দিকে আমি একটু ফিটফাট হয়ে নীচে নামলাম।

বুবুকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। ওই প্যাকেটের অনেক কিছু কাজে লেগেছে। মনোরম সন্ধ্যা আর বেশ কিছু মধুর স্মৃতি নিয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় ৯টা। বাকিরা যে যার মত হয় রুমে, নইলে শপিং এ। বুবু কি যেন কাজে ব্যাস্ত।

মানে আমার করার কিচ্ছু নেই। রুমের ব্যালকনিতে বসে বসে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে লায়লার কথাই ভাবছি। হঠাৎ পাশের ব্যালকনি থেকে শুনলাম চাপা কন্ঠের আওয়াজ আসছে। অভ্যাসমত কান পাতলাম। "শিং এর পো, তোরা কিন্ত বেশি হারামিপনা শুরু কইরা দিছো।

" আরে, এ যে বুবু। "ই সব কি বোলছো হাস্না বানু। হামরা কি করেছে?" মেয়েলি কন্ঠের পুরুষের গলা। মন মোহন ছাড়া আর কে হতে পারে? "তুমার কি ধারণা তমাগো "র" যে কানাডার পুলিশরে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে ইনফো দিছে, এইটা আমি জানি না? " "ইটা ঠিক কথা না হাস্না বানু। বিসওয়াস কারোও।

" "তোমাগো আবার বিশ্বাস করতে কও? মঙ্গলা পোর্টও খাওয়ার তালে এই গিরিঙ্গিটা যে করছো, সেইটাও আমি জানি। " " ই সব কে বাতয়েছে তুমাকে? আমার তু মনে হয় আই এস আই তুমাকে ভড়কাইসে। " "আই এস আই ভড়কাইছে? মামদাগিরি করো? আমেরিকারের এইটা সেইটা বুঝাইয়া কইছো যে, পদ্মা সেতুর লোনটা স্যাংশন করাইলে, তোমাগো মংলা পোর্ট দখল নিতে সুবিধা হইবো। হেরা তো তুমাগো বাপ মানে। এইজন্যই তো কই, এত অল্পেতেই বিশ্বব্যাংক আবার ঋণ মঞ্জুরের কথা বার্তা শুরু করতে রাজি হইলো কেমনে?" "ই সব কি আজগুবি বাত করতেছো হাসনা বানু? এসবের প্রমান কি আছে তুমার কাছে?" "শুনো শিং এর পো।

প্রমান ছাড়া এই হাসনা কুন কথা কয় না। আরেকটা কথা সাফ সাফ কইয়া দেই। আমার পোলার পিছেও তুমরা আমেরিকারে লেলাইয়া দিছো। যাতে আপুসে মংলা লইতে পারো। আমার পোলা মাইয়া আর মাইয়া জামাইয়ের যদি কিছু হয়, তাইলে তুমার খবরই আছে।

" "মাথা গরম কোরো না হাসনা বানু। সব ঠিক হয়ে যাবে। ওদের কুছি হোবে না। মাগার তুমি যে গদির জন্য আমাদের কাজ আগের মোতো করছো না, সে খেয়াল আছে?" "আরে... আর কি করমু তোগো জন্য? দুনিয়ার সব দ্যাশের সাথে আমাগো ব্যাবসা বানিজ্য লেন দেন তোগো লাইগা ছাইড়া দিলাম। দেশের লোকে উঠতে বইতে গালি দেয়।

আর্মির কোমড় ভাইঙ্গা দিলাম। এয়ার ল্যান্ড সি পোর্টে ব্যাবসা বাণিজ্য সব তোগো জন্য ওপেন কইরা দিলাম। তোগো ৫ লাখ লোক অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করার লাইগা আইতে দিলাম। এমন কি তোগো র এর কইয়েক শো এজেন্ট ডি এফ জে এর মধ্যে ঢুকতে দিলাম। আর কি চাস?" "ই সব কথা থাক হাস্না বানু।

হামরা সব কিছু একবারে তো গিলতে চাই না। তাছাড়া তুমার এডমিনের ফেইলিয়র তো হামরা নিতে পারবো না। " " ও বুঝছি ! গোলাপি বেগমের লগে এখন ভাও দিছো?" " ইটা আবার কিমুন কথা বললে হাসনা বানু। ও বেটিকে তো হামরা দেখতেই পারি না। " "দেখতে পারো না? রোজার সময় ওই বেটির পিছে পিছে সৌদি পর্যন্ত দৌড়াও নাই?" শিং সাহেব যেন একটু ধাক্কা খেলেন।

এই কথা তো কারো জানার কথা না। "আরে ওসব কিছু না। আসলে তুমি যেন হামাদের কাজগুলি অপজিশন ছাড়াই করতে পারো, এই জন্যই ধমক দিয়ে দিলাম। দেখো না হ্যান করেঙ্গা তেন করেঙ্গা বললেও আসলে কেমন বিল্লির মত চুপ হয়ে গিয়েছে?" "ওই সব বুঝি না শিং এর পো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার পোলা মাইয়া আর মাইয়া জামাইয়ের পিছন থেইকা পুলিশ সরানোর ব্যাবস্থা করবা।

আর যদি না করো, যা দিছিলাম সব ফেরত নিয়া নিমু। " "দেখো হাসনা বানু। হামাদের সাথে দুশমানি তোমার অনেক ভারি পড়বে। ইন্দিরাজির কথা না সুনে তোমার আব্বা তো সব সুদ্ধা ফিনিস হয়ে গেলো। এখন তুমিও বেশি বাড়াবাড়ি করলে..." " ওই গোলামের পুত ! আমারে হুমকি দ্যাশ? তুর এত বড় সাহস?" এর মধ্যে আমি বুবুর পেছনে গিয়ে দাড়িয়েছি।

বুবুর বিরুদ্ধে এত বড় কথা? আমি কোন দিকে না তাকিয়েই শিং এর চোয়াল বরাবর সর্বশক্তি দিয়ে কঠিন একটা চড় বসালাম। ইয়া আল্লাহ ! চোয়াল নাকি দেয়াল? চোখ মেলে দেখি হাতটাই ফুলে গিয়েছে। শালা দেখি আস্ত কুফা ! বিছানা ছাড়বো ছাড়বো করছি, এমন সময় ডাইনিং রুম থেকে বাবা মা এর কথা কানে এলো। বাবা বলছেন, " এই শুনছো? তোমার ছেলে মনে হয় লায়লা নামের কোন মেয়েকে পছন্দ করে। সারারাত লায়লা নামের জপ করেছে।

" নাহ। মান সম্মান আর হাত সবই গেলো।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.