পোষ্টটা না পড়লে পস্তাবেন। থানচি গিয়ে ইচ্ছে করবে নিজের চুল ছিঁড়ে বাতাসে উড়িয়ে দিতে। আমি ভুক্তভোগী, এই পোষ্টটা চোখে পড়লে আপনি ভাগ্যবান। কিছুদিন আগে নাফাখুম যাওয়ার উদ্দেশ্যে থানচি গিয়ে বান্দরবান ফেরত আসতে বাধ্য হলাম। কারন বি.জি.বি অনুমতি দিচ্ছেনা।
তবে অনুমতি না দিলেও দমে যাওয়ার পাত্র আমরা নই। বিকল্প উপায় বাতলানোর চেষ্টা করলাম। অবশেষে সব শুনে, বুঝে বান্দরবানগামী একটা জীপে উঠে পড়লাম। কারনটা আপনি নিজেই দেখুন।
(১) রেমাক্রি যাওয়ার পথে নৌকা নিয়ে যেতে হয়।
বড়পাথর এলাকাটা এমনিতেই খুব বিপদ্দজনক। এখন পানি খুব বেশী থাকায় আরো বেশী ভয়ঙ্কর। প্রতি বছর এখানে নৌকাডুবি হয়। আর নৌকা ডুবলে সাঁতার জানলেও কোন কাজ হবেনা। পাথরের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে এমন জায়গায় চলে যাবেন, আপনাকে দুএক দিন আগে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
(২) নাফাখুম যেতে হয় হেঁটে। কিছু জায়গায় নদী পার হয়ে যেতে হয়। অন্যান্য মৌসুমে কোমর সমান পানি থাকলেও এখন(বর্ষায়) গলা সমান। পানির স্রোত উপরে খুব কম মনে হলেও নিচে স্রোত খুব বেশী। তাই সবসময় নদীর আড়াআড়ি দড়ি বেঁধে পার হতে হয়।
অথবা একে অপরের সাথে মানব বন্ধন তৈরি করেও পার হওয়া যায়। বর্ষার ঢলে এই ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো।
(৩) নাখাখুম এর পথে এমন অনেক জায়গা পড়বে যেখানে হাঁটতে হবে পাহাড়ের একদম শরীর ঘেঁষে, যেখানে পা ফেলার জন্যে সামান্য ফাঁকা জায়গার অন্যপাশে খাঁদ নেমে গেছে ১৫-২০ ফিট নিচে বড় বড় পাথর পড়ে থাকা খালে। পিচ্ছিল উঁচু নিচু পাথরের ওপর দিয়ে বৃষ্টিতে নাফাখুম যাওয়ার সিন্ধান্তটা এখন আপনার।
(৪) নাফাখুম/রেমাক্রি যাওয়ার পথে পানি খুব পরিষ্কার থাকে।
এতটাই পরিষ্কার থাকে যে, কোন কোন জায়গায় মাছ ধরার জন্য দিনের বেলায় জাল না দিয়ে রাতের বেলায় জাল দিতে হয়। কারন দিনের বেলায় স্বচ্ছ পানিতে মাছ জাল দেখে ফেলে। কিন্তু এখন পাহাড়ী ঢলের কারনে পানি খুব ঘোলা। যা আপনার আনন্দ মাটি করার জন্য যথেষ্ট।
(৫) বর্ষায় জোঁক এবং সাপের উপদ্রব খুব বেশী।
(জানি এটা অনেকের কাছে ডাল ভাত। কিন্তু আমি জোঁককে বাঘের চেয়ে বেশী ভয় পাই)
(৬) এবার আসি আসল কথায়। এতক্ষন যা বললাম, সব’ই আজাইরা। রেমাক্রি থেকে মায়ানমারের সীমান্ত কাছে। এবং রেমাক্রির দিকে মায়ানমারের বেশ কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ ঢুকে পড়েছে।
কিছুদিন আগে তারা ৮ জনকে অপহরন করেছে। আপাতত শুনেছি মুক্তিপণ চেয়েছে তাদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে। এইকারনে বি.জি.বি কোন ট্যুরিষ্টকে রেমাক্রি যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেনা। পানি কমে গেলে বি.জি.বি রেমাক্রি, আন্ধারমানিক ও অন্যান্য জায়গায় একটা অপারেশন চালাবে। তারপর অনুমতি দিবে ট্যুরিষ্টদের রেমাক্রি হয়ে নাফখুম যাওয়ার।
এখন আপনি কিভাবে জানবেন কবে থেকে নাফাখুম যাওয়ার অনুমতি মিলবে। বি.জি.বি তো আর সংবাদ সম্মেলন করে বলবেনা “আজ থেকে সবার জন্য নাফাখুম উন্মুক্ত”। নিচে থানচি’র কিছু গাইড ও স্থানীয় মানুষের ফোন নাম্বার দিলাম। যাওয়ার আগে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না।
১. রুবেল -০১৮৩৪৬৬২৮০০
২. মন এ চিঙ(গাইড)-০১৫৫৬৭৪৭৩৪৭
৩. স্টীফেন ত্রিপুরা(স্থানীয়)-০১৮৪৩৯০১৬৮৭
জানি আপনার মনটাই খারাপ করে দিলাম।
কারন ঝরণার আসল সৌন্দর্য বর্ষায়। তাই বলে আমি বলছিনা বর্ষায় বান্দরবানের মতো কোন পাহাড়ের দিকে এগোবেননা। থানচি থেকে বিতারিত হয়ে আমরা চলে গেলাম রুমা-বগালেক-কেউক্রাডং হয়ে জাদিপাই ঝরণাতে। বিশ্বাস করুন এর চেয়ে সুন্দর ঝরণা আর হয় না। নিচের লিংঙ্ক এ একবার ঢু মারুন।
তারপর সিন্ধান্ত নিন।
জাদিপাই, ঝরনার রাণীর কথা বলছি ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।