আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্টিভ জবসের জীবনীর অনুবাদ-২

ব্লগিং শুরু করলাম স্টিভ জবসের জীবনীর অনুবাদ-১ কল্পনার সঙ্গে মিশিয়ে নাও বাস্তবতা স্টিভের খ্যাতি (অনেকে বলেন কুখ্যাতি) ছিল, কল্পনার সঙ্গে বাস্তবতা মিশিয়ে তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। কঠিন বিষয়ও এত ভালোভাবে বোঝাতেন যে, সেটিকে মনে হতো সহজ। কেউ কেউ বলেন, এটি গুণ নয়— মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা মাত্র। আমার কিন্তু মনে হয়, এটি স্টিভের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলতেন, ক্রেতাকে নতুন ও চমত্কার কিছু দিতে চাইলে নিয়ম ভাঙতেই হবে।

এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার থাকতে হবে সাধ্যের বাইরেও কর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায়ের সামর্থ্য। তাদের উপলব্ধি করাতে হবে, মানুষ কোনো নির্দিষ্ট বিষয়কে অসম্ভব মনে করে বলেই তা অসম্ভব। সঠিক পথে চললে মানুষের সাধ্যাতীত কাজ রয়েছে কমই। স্টিভের এ গুণটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে (ও হচ্ছে) বিস্তর। এরই মধ্যে তত্ত্বও দাঁড়িয়ে গেছে, যাকে বলা হয় রিয়েলিটি ডিস্টরশন ফিল্ড থিওরি বা আরডিএফ (নামটি অ্যাপল ইঞ্জিনিয়াররা নিয়েছিলেন ‘স্টার ট্রেক’ এপিসোড থেকে)।

এ তত্ত্বানুসারে কিছু মানুষের থাকে সহজাত নেতৃত্ব গুণ। এরা অল্টারনেট রিয়েলিটি (ভিন্ন বাস্তবতা) তৈরি করে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ রাখতে পারেন। ফলে তারা যাই বলেন, আশপাশের মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক সময় তা মেনে নেয়। পরিচিত, সহকর্মী ও স্বজনদের কাছে স্টিভ ছিলেন এমনই একজন। স্টিভ ওজনিয়াক (উজ) ছিলেন স্টিভ জবসের বন্ধু, অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও কিংবদন্তি হ্যাকার।

সে সময়েই কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি ছিল তার। আটারিতে যোগ দিয়েছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। স্টিভের দুঃসময়ে তিনি তাকে কাজ দেন আটারিতে, নাইটগার্ড হিসেবে। মাঝে মধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতেন উজ। ডিউটিতে যেন গাফিলতি না হয়, সে জন্য নিজেই গল্প করতে চলে আসতেন স্টিভের কাছে।

একবার উজ বললেন, এ মুহূর্তে যদি একটা ভিডিও গেমস বানাতে পারতেন, সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিতেন আটারির চাকরি। সমস্যা হলো, এটি তৈরি করতে কমপক্ষে মাসখানেক লাগবে। উজের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা জানতে চাইলেন স্টিভ। সব শুনে বললেন, চার দিনের মধ্যেই এটি তৈরি করা সম্ভব। পরদিন দুই বন্ধুই অফিসকে জানালেন— তাদের ফ্লু হয়েছে, সপ্তাহখানেক ছুটি লাগবে।

সপ্তাহ আর লাগেনি, চার দিনের আগেই শেষ হলো গেমস (স্টিভ এর নাম দিয়েছিলেন ব্রেকআউট) বানানোর কাজ। পেটেন্ট নেয়া হলো গেমসটির আর দুই বন্ধুই একযোগে ছাড়লেন চাকরি। উজের ওপর স্টিভের প্রভাব ছিল সাংঘাতিক। প্রতিভাবান কিন্তু উন্নাসিক উজকে খানিকটা ভয়ই পেতেন অ্যাপল ইঞ্জিনিয়াররা। অথচ এ ব্যক্তিটি যখন স্টিভের সামনে দাঁড়াতেন, মনে হতো কোনো বাচ্চা ছেলে বয়স্কদের উপদেশ শুনছে।

মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ রাখার এমন আরও ঘটনা রয়েছে স্টিভের। শুরুর দিকে ম্যাক ওএস (ম্যাকিনটশ অপারেটিং সিস্টেম) নিয়ে কাজ করতেন ল্যারি ক্যানিয়ন (সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার)। তার দায়িত্ব ছিল ওএস বুটিং ও কম্পিউটার চালুসংক্রান্ত। তখন ম্যাক পিসি বুট হতে মিনিটখানেক লাগত। একদিন ল্যারিকে ডেকে পাঠান স্টিভ।

বললেন, বুট-আপ টাইম (কম্পিউটার চালুর সময়) কমাতে। স্পষ্টভাষী ল্যারি জানালেন, তা সম্ভব নয়। কেন— স্টিভ জানতে চাইলেন। বিভিন্ন কারিগরি যুক্তি দেখাতে লাগলেন ল্যারি। কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শুনে স্টিভ ছোট্ট করে বললেন, ধর বুট-আপ টাইম সাশ্রয় হলে অনেকের জীবন বাঁচে।

সে ক্ষেত্রে তুমি কী করবে? ল্যারি তো অবাক, এ লোক বলে কী? বুট-আপ টাইমের সঙ্গে মানুষের বাঁচা-মরার সম্পর্ক কোথায়? স্টিভ উঠে গিয়ে হিসাব দেখালেন হোয়াইট বোর্ডে। এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৫০ লাখ পিস ম্যাক পিসি। প্রতিদিন এতে নষ্ট হচ্ছে বাড়তি ১০ সেকেন্ড; তার মানে বছরে ৩০ কোটি ঘণ্টা। মানুষের গড় আয়ু হিসাব করলে এভাবে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে ১০০ জনের জীবন। ল্যারি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন স্টিভের লেকচার শুনে।

শেষ পর্যন্ত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন ম্যাক ওএস তৈরি করলেন, যেটিতে কম্পিউটার চালু হতে সময় লাগত ২৮ সেকেন্ড কম। আইফোনের বেলায়ও ঘটেছিল একই ঘটনা। টাচস্ক্রিন হিসেবে তখন সবাই ব্যবহার করতেন প্লাস্টিক। স্টিভ বললেন, আইফোনে ব্যবহার করা যাবে না এটা। আমার দরকার আরও পাতলা, মজবুত ও স্ক্র্যাচপ্রুফ গ্লাস।

খোঁজ পড়ল, এটা কোথায় পাওয়া যায়? জানা গেল, কর্নিং গ্লাস কোম্পানি লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠান ষাটের দশকে এমন গ্লাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল; তবে সেটি বাণিজ্যিক ব্যবহারোপযোগী হয়নি। তারা এর নাম দিয়েছিল গরিলা গ্লাস। পরদিনই কয়েক হাজার ফুট গরিলা গ্লাসের অর্ডার দিয়ে কর্নিংয়ের সিইও ওয়েনডেল উইকসের কাছে চিঠি পাঠালেন স্টিভ। ওয়েনডেল জানালেন, এ ক্ষেত্রে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এখন এ গ্লাস সাপ্লাই দিয়ে তিনি কোম্পানির মান খোয়াতে পারবেন না।

জবাবে স্টিভ জানালেন, সংশ্লিষ্ট রিসার্চার ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হোক। তিনিই একটা উপায় বাতলাতে পারবেন বলে আশাবাদী। স্টিভ কীভাবে গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন কে জানে; তবে গরিলা গ্লাস বাজারে এল ছয় মাসের মধ্যেই। এখন শুধু আইপড-আইপ্যাড নয়; স্যামসাং, এইচটিসি, এলজিসহ প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন নির্মাতাই ব্যবহার করছে এ প্রযুক্তি। সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।