আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্টিভ জবসের পথ ৪ : সহজ নয় এই পথ চলা

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! আগের পর্ব বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৮৫। এপলের ত্রিমাসিক বোর্ড মিটিং। বোর্ড চেয়ার আর কেহ নয়, স্টিভেন পি জবস। ডিরেক্টরদের কাউকে হাসিমুখে দেখা যাচ্ছে না।

সবাই জানে আগের তিনমাসে “স্মরণকালের ভয়াবহ” লে অফের ভেতর দিয়ে গিয়েছে এপল। বিক্রি কমে গেছে মারাত্মকভাবে, আর্থিক অনটন প্রকট হয়ে উঠেছে। বাজারে জোর গুজবএ রয়েছে স্টিভ এপল কিনে নেবে! অন্যান্য মিটিং‌এর মতো নির্বাহীরা তাদের পরিসংখ্যান, চার্ট, হাবিজাবি এসব দেখালো। বোঝা গেল, বিক্রি কমে গেছে, উত্তরণের সহজ কোন রাস্তা নাই। কোম্পানির কর্মীদের মধ্যে যে উত্তেজনা, বাউন্ডিং ছিল সেটার কিছুই নাই।

প্রতিদিনই কোন না কোন কর্মীকে দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিগত জিনিষপত্র গোছগাছ করতে। আর পাশের টেবিলের বন্ধুটি ভাবছে, “আমি কি পরের জন?” নির্বাহীদের চার্ট টার্টের পর স্টিভ সবাইকে একটি ছোট অনুরোধ করলেন। (এ বাক্য কটি আমি অনুবাদ করতে চাই না), “ I am going to start my own company. I am not going to compete with Apple. Mine is going to to be a computer for the university market. I want to take a few low-level people with us.” বেশিরভাগ বোর্ড মেম্বার হাফ ছেড়ে বাঁচলেন ফলে তার পরের কথাগুলো সবাই খুব সহজভাবেই নিলেন, “And I’d like to have Apple invest in my company.” কিন্তু কেমন করে এমন হলো? সহ-‌প্রতিষ্ঠাতা এপল ছেড়ে যাচ্ছেন!!! আমরা একটু পেছন ফিরে তাকাই। মনে আছে, এপল‌টু আর ম্যাক হল এপলের প্রোডাক্ট। ম্যাকের বাজারজাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এপলের বিক্রি বেড়ে যায়।

প্রথম ১০০ দিনে বিক্রির টার্গট ছিল ৫০ হাজার। হল ৭০ হাজার! খালি জুন মাসেই হলো ৬০ হাজার! কিন্তু কয়েকদিন পরেই সোনার হাসের ডিম দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল। কারণগুলোর একটা হলো কম মেমরী (ম্যাক ১২৮ কে যখানে লিসার ১ মেগা), একপান্ডিবিলিটির অভার আর সর্বোপরি হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র এপ্লিকেশন। এর মধ্যে কিন্তু বাজারে চলে এসেছে আইবিএম পিসি। এপলকে ঠেকাতে আইবিএম উন্মুক্ত করে দিয়েছে পিসির আর্কিটেকচার।

যে কেহ বানাতে পারে আইবিএম কম্প্যাটেবল পিসি! রিটেলাররা বিরক্ত দুইটি কারণে। ম্যাক হলো ইনটুইটিভ। কিছুক্ষণ তাকায় থাকলে শিখে ফেলা যায় কেমনে এটি চালাতে হয়! কী-বোর্ডে ঝুকে টাইপ না করেও সেটি চালানো যায়। কাজে কম্পিউটার শেখানোর প্রশিক্ষণের কোন ব্যবসা নাই। কেন এক্নটেনশন স্লট নাই।

মানে পেরিফেরিয়াল বেছার বুদ্ধিও নাই। অন্যদিকে সিইও হিসাবে যোগ দিয়েছেন জন স্কালি। স্কালি এসেছে পেপসি থেকে!!! পেপসির মতো কম্পানিতে উদ্ভাবনের সুযোগ কই, সুযোগ কই নতুন কোন প্রোডাক্টের। স্কালি চিয়ারত পেপসিকেই বাণিজ্যের রাস্তায় নতুন করে নিয়ে এসেছেন (তার আমলে পেপসি ফুলে ফেপে বিরাট মহীরুহতে পরিণত হয়)। ব্যবসা কীভাবে করতে হয়ে সেটা তিনি জানেন।

কাজে, তার আমলে বিজনেজ এনালিস্টের কদর বাড়তে শুরু করে এপলে, ইঞ্জিনিয়ারদের নয়। স্টিভের যেখানে পছন্দ নিত্য নতুন প্রডাক্টের, স্কালি সেখানে যা আছে তাই দিয়ে বাজার দখলের পরিকল্পনা। বোর্ড মিটিংগুলোতে নতুন প্রোডাক্টের আলোচনা থেকে বাণিজে্যর নানা ফন্দি আলোচনা। বোর্ড মেম্বাররাও বেশিরভাগ স্কালির পক্ষে। স্কালি বললেন, ম্যাক নিজের দোষেই বাজার হারাচ্ছে।

এর ডিজাইনে গলদ। কাজে স্টিভকে ম্যাক টিম থেকে বাদ দেওয়া হোক। এবং সেটাই একদিন, ১৯৮৫ সালের মে মাসে. স্কালি জবসকে ডেকে বললেন। বললেন তার আর ম্যাকের দেখাশোনা করার দরকার নাই। বরং “আরো বড় দায়িত্ব” ওভারঅল টেকনোলজি সে ম্যানেজ করুক।

তাঁর পোস্টের নাম হবে প্রধান কারিগরি কর্কর্তা (সিটিও)। ঠান্ডা মাথায় স্টিভ বের হয়ে গেলেন এপ থেকে। নিজের মার্সিডিজ চালায়ে চলে গেলেন। গতে পারে ম্যাকের বাজার খারাপ, কিন্তু সেটা ভাল হবে না কে বললো। হাজার হলেও ম্যাক তাঁর উদ্ভাবন।

সব কম্পিউটার কোম্পানি হুমড়ি খেয়ে পড়েছে এপলকে নকল করতে তার মাউস, গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস, সহজে ব্যবহারের বুদ্ধির জন্য! এবং সবচেয়ে বড় কথা। এটি তাঁর নিজের কোম্পানি। স্কালি চেষ্টা করলেন জবসকে রাখতে কিন্তু সেটার কিছু হলো না। পরের দশ বছরে স্টিভকে তার কোম্পানিতে আর ফিরিয়ে আনা যায় নি! জবসের চলে যাওয়াকে অনেকে স্কালির সঙ্গ ব্যক্তিগত বিরোধ বলে মনে করলেও আসলে এখানে কোম্পানির ফোকাসটাও খুব গুরত্বপূর্ণ। (স্কালি কিন্তু জবসের পছন্দের সিইও) এপল কিন্তু একটি টেকনোলজি কোম্পানি ।

অন্য সব টেকনোলজি কোম্পানির মতো এরও টিকে থাকার মূল বৈশিষ্ট্য হলো নতুনত্ব এবং চমক। একটি প্রোডাক্ট বানাবো আর সারা জীবন সেইটা বেঁচে মিলিয়ন ডলার কামাবো এটা কখনো হয় না। (ফেসবুক ইফেক্ট পড়তে গিয়েও আমি এই ব্যাপারটা ভাল মতো টের পেয়েছি)। টেকনোলজি কোম্পানি যদি খালি প্রফিট আর বিজনেজ ভাবে তাহলে সেটার কপালে দু:খ থাকবেই! স্টিভ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এপলের প্রোডাক্ট ড্রিভেন কোম্পানি হয়ে ওঠার ব্যাপারটা মারা যায়। আর অন্যদিকে স্টিভ যদিও জানতেন তিনি কী চান, কিন্ত অন্যদের সেটা বোঝানোর কায়দাটা তিনি তখনও শিখে উঠতে পারেন নি।

বলতে গেলে সকল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী লিডার এমনকী সব কোম্পানির একটা খারাপ সময় আসে। স্টিভ জবসের সে সময় এসে গেল। একটি প্রতীকী শেয়ার রেখে স্টিভ তার ২০০ মিলিয়ন ডলারের এপলের শেয়ার বেঁচে দিলেন। ট্যাক্স বাদ দিয়ে সব টাকা তার পকেটে এসে পড়লো। জে এলিয়টরে বললে, বিশ্বভ্রমণে বের হবেন।

কয়দিন পর বের হয়ে পড়লেন, ইতালির টিকেট কেটে!!! মনে হচ্ছে নতুন একজন ইবনে বতুতার জন্ম হচ্ছে!!! কিন্তু যে লোকটির মাথায় সারাক্ষনই নতুন কিছু করার চিন্তা। সে কীভাবে কাজ না করে অলস বেড়াবে??? কিছুদিন পরেই স্টিভ ফেরৎ আসলেন নিজের বাড়িতে। সেসময় তাঁর মনে হয়েছে তার সাধের কোম্পানি থেকে তিনি ছিটকে পড়েছেন কিন্ত কাজ থেকে তো নয়। কাজে ভাবলেন আবার কাজে ফেরৎ যাবেন। স্টিভের জীবনী যখন আপনি পড়বেন, তখন আপনি দেখবেন এর পরের দশ বছর স্টিভের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।

শুধু তাঁর জন্য নয়, যে কোন নতুন উদ্যোক্তার জন্য স্টিভের এই সময়কালের শিক্ষা খুবই দরকারী। যে কোম্পানি থেকে তিনি বের হয়ে গিয়েছিলেন, ১টি রেখে সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, সে কম্পানিতেই তিনি আবার ফির আসেন সকল কতৃত্ব নিয়ে। আর যেদিন ফিরেন সেদিন তাঁকে দেওয়া হয় এপলের ১৫ লক্ষ শেয়ার! কিন্তু কী তিনি করলেন এই ১০ বছর? কেমন করে উদ্ধার করলেন হৃত সাম্রাজ্য। কেমন করে তৈরি করলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার কোম্পানি? গল্পটা খুবই মজার হওয়ার কথা। কিন্তু ঈদের তৃতীয় দিনে, ধুম বৃষ্টির আবহাওয়ায় যখন আপনি টেলিভিশনে মজার মজার সব অনুষ্ঠান দেখছেন, তখন কোন জ্ঞানের কাহিনী আপনাদের শোনানো ঠিক হবে না।

কাজে সে গল্প লিখতে হবে পরের পর্বে। এখন নয়। আপাতত সবার ঈদের সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক। আগের পর্ব  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।