There is only one person who could ever make you happy, and that person is you...
বান্দরবান
রাত, না মধ্যরাত বলাই ভালো, ১৬ ঘন্টার “Journey By Bus” উপভোগ করে রাত আড়াই-টায় বান্দরবান বাস-স্ট্যান্ডে পা রাখলাম। (কারণ, চার দিন পরই কোরবানীর ঈদ ছিল) ঐ সময় কাউন্টার ছাড়া আর কোথাও রাতে যাওয়া সম্ভব ছিল না, কাউন্টারের লোকজন তাদের কাউন্টারের দায়িত্ব ৯৯% (দরজায় তালা দেওয়ার ক্ষমতা বাদে) আমাদের হাতে সপে দিয়ে ৩টায় নিজেদের বাসস্থানে চলে গেলেন। আমরা সূর্যোদয় উপভোগ করার জন্য একটা অনুপোযুক্ত আবদ্ধ জায়গায় অপেক্ষা করতে থাকলাম...
সকালবেলায় কাউন্টার থেকে বেরিয়ে পড়লাম হোটেলের খোঁজে। ম্যারাথন ভ্রমণ ও রাতের নির্ঘুম সময় শেষে প্রয়োজন ছিল বিশ্রামের, কিন্তু সেটা সিলেবাসের বাইরের জিনিস। কোনও রকম একটু ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে ৮ সিটের ল্যান্ড-ক্রুজার নিয়ে সকাল ৯টায় বেরিয়ে পড়লাম।
আমাদের গন্তব্য তখন নীলগিরি।
“Too often travel, instead of broadening the mind, merely lengthens the conversation.” – Elizabeth Drew
নীলগিরি যাওয়ার পথে রাস্তাটা খুব উপভোগ্য। এই পাহাড় থেকে ঐ পাহাড়ে পৌঁছলেই মনে হয় সামনের পাহাড় আরও উঁচু। যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদী চোখে পড়ে যদিও আমরা তখন অনেক উপরে। চলার পথে আশে-পাশের দৃশ্যগুলোও সুন্দর।
“One’s destination is never a place, but a new way of seeing things.” – Henry Miller
প্রথমে আমরা থামলাম চিম্বুকে সকাল ১০টায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট (শিওর নই)। জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে এখানে একটি রেস্ট হাউজ আছে।
সাড়ে ১০টায় যাত্রা শুরু হলো নীলগিরির উদ্দেশ্যে। লম্বা একটা পথ, তাছাড়া কড়া রোদ, অথচ পাহাড়ের নিচের দিকে প্রচুর কুয়াশা ছিল তখনও।
নীলগিরিতে পৌছলাম দুপুর সোয়া ১১টায়। দেখেই চোখ ছানাবড়া, অদ্ভুত সুন্দর একটা জায়গা।
চারিপাশে শুধু নীল আর সবুজ। সাদা মেঘের প্রাধান্য তেমন ছিল না, আফসোস। বর্ষা মৌসুমে নাকি নীলগিরির পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য এবং মেঘের হালকা হিম ছোঁয়া যেন মেঘ ছোয়ার অনুভূতি।
সেটা আমার ভাগ্যে হলো না। নীলগিরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র।
এ পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এটি। এর পাশেই রয়েছে একটি সেনা ক্যাম্প।
নিরিবিলিতে স্বপরিবারে কয়েক দিন কাটানোর জন্য এটি একটি আর্দশ জায়গা। ইচ্ছা আছে পরবর্তীতে এখানে এক রাত থাকার।
থাকার জন্য অনেকগুলো বিভিন্ন মানের কটেজ আছে। কয়েকটি দালানের কটেজ, ১টি বাঁশের কুটির, তাছাড়া ৪-৫টি তাঁবুও আছে এখানে।
এই সময়ে এসে একটা আলাদা মজা টের পেলাম, আর সেটা হলো- কোনও ভীড় নেই, সমস্ত নীলগিরিটা নিজের মনে হয়।
নীলগিরিতে আশেপাশের দৃশ্য এতোটা চমৎকার যে অভিভূত হয়ে যেতে হয়। এখানে একটা হেলিপ্যাডও আছে।
অসম্ভব সুন্দর এই নীলগিরি ছেড়ে কোনও ভ্রমণ-পিপাসু মানুষের সহজে ফিরে আসতে মন চাইবে না। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নাকি আলাদা একটা চার্ম আছে। দুপুর ১টায় আমরা ফিরে আসার জন্য গাড়িতে উঠে বসলাম।
লক্ষ্য এখন সরাসরি শৈলপ্রপাত। শৈলপ্রপাতে পৌঁছলাম দুপুর সোয়া ২টায়।
পৌঁনে ৩টায় হোটেলের উদ্দেশ্যে ফিরে আসলাম একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য। সাড়ে ৩টায় আবার বেড়িয়ে পড়লাম স্বর্ণমন্দির দেখার জন্য। বিকেল ৪টায় পৌঁছলাম স্বর্ণমন্দিরে।
জাদীর চারিদিকে উন্মুক্ত বারান্দা বা প্রাঙ্গণে ঘুরে ঘুরে মন্দির এবং আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে খুব ভালো লাগবে। সাড়ে ৪টায় আবার গাড়িতে উঠলাম এবার যাবো নীলাচল।
নীলাচলের রাস্তাটা একেবারে বান্দরবান বাস-স্ট্যান্ডে ঢোকার মুখে। এটি শহেরর সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন কেন্দ্র।
নীলাচলে যাওয়ার রাস্তাটা সোজা উঁচুতে উঠে গেছে।
এর উচ্চতা প্রায় ১৭০০ ফুট। বিকেল ৫টায় নীলাচলে পৌছলাম। এখান থেকে বান্দরবান শহর পুরোটা, চট্টগ্রাম শহর, এমনকি (আকাশ পরিষ্কার থাকলে) কক্সবাজার সমূদ্র সৈকত পর্যন্ত দেখা যায়।
বান্দরবান শহরের ভিতরে গোধূলী লগ্ন উপভোগ করার জন্য এর থেকে ভালো জায়গা আর নেই। আমরা ওখানে প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছিলাম।
ড্রাইভারের ভাড়া মিটিয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম। মনে পড়ল, পেটে কিছু দেওয়া হয় নি। খাওয়া-দাওয়ার পরে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম সকালে কক্সবাজার যাবো।
“Tourists don’t know where they’ve been, travelers don’t know where they’re going.” – Paul Theroux
পরদিন আমাদের যেতে হবে কক্সবাজার।
কক্সবাজার
ভোরে নাস্তা করে, সাড়ে ৭টায় কক্সবাজারের বাসে উঠলাম।
সকাল ১১টায় কক্সবাজার বাস-স্ট্যান্ড থেকে রিকশায় উঠলাম কলাতলী বীচের উদ্দেশ্যে।
বীচের রাস্তার মোড়েই হাঙরের সুন্দর একটা ভাস্কর্য আছে। এজন্য কলাতলী বীচের মোড়কে স্থানীয়রা শার্কের মোড় বলেই ডাকে। দুপুরে কলাতলী বীচে গিয়ে বেশী দেরী না করে হালকা ফ্রেশ হয়েই ১২টার দিকে ছুটলাম সি.এন.জি. নিয়ে।
ইনানী বীচে পৌঁছলাম পৌঁনে ১টায়।
আসার পথেই হিমছড়ি পড়ে। ইনানী বীচে কিছুটা সেন্ট-মার্টিনের ছোঁয়া পাওয়া যায়।
কক্সবাজারে এই জায়গাটিই আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। চারিদিকে পাথর ছড়ানো প্রকৃতি দেখে আর সামুদ্রিক ঢেউয়ের আছড়ে পড়া খুব উপভোগ্য। সবই যেন আমার প্রিয় ফটোগ্রাফটির নিশ্চুপ মডেল হতে প্রস্তুত।
ইনানী বীচে আমরা ছিলাম দেড় ঘন্টার মতো। ওখান থেকে আড়াইটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম। হিমছড়ি এসে পৌঁছলাম ৩টা কি সোয়া ৩টায়।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম সোজা উপরে। উপরে আমরা এবং একজন ডাব বিক্রেতা ছাড়া আর কেউ ছিল না।
ডাব খেতে খেতে দূরের সমুদ্রের সোনালী আভা আর একটা চুপচাপ পরিবেশ নিঃসন্দেহে ভালো লাগার মতোই। গোধুলীটা এখানেই কাটালাম।
হিমছড়ির চূড়া থেকে আমরা সরাসরি নিচে নেমে বা-দিকের রাস্তা ধরে ঝর্ণার কাছে গেলাম। অনেকটা মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের ছোট ভার্সন মনে হলো।
সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে ভাবলাম, কক্সবাজার এসে সেন্ট-মার্টিন না গেলে ভ্রমণ অনেকখানিই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
“A good traveler has no fixed plans and is not intent on arriving.” – Lao Tzu
সেন্ট-মার্টিন
টেকনাফের ঘাটে পৌঁছলাম সোয়া ৯টায়।
ঠিক সাড়ে ৯টায় নাফ নদীতে শিপ/লঞ্চ আমাদের নিয়ে চলতে আরম্ভ করলো। আমাদের শিপের নাম ছিল ঈগল-১। আমাদের অবস্থান ছিল ২য় তলার কেবিনে, কিন্তু কে থাকে কেবিনে, শিপের ডেক থেকে নাফ নদীর সৌন্দর্য্য দেখতে চরম লাগে। এই নদীর এক পাশে মিয়ানমার, আর এক পাশে বাংলাদেশ।
সেন্ট-মার্টিন যাওয়ার পথে বামদিকে পড়বে মিয়ানমার আর ডানদিকে বাংলাদেশ। নাফ নদীর সৌন্দর্য্যও মুগ্ধ করার মতো।
সমুদ্রে প্রবেশ করে সেই বঙ্গোপসাগরকে খুঁজে পেলাম না, একদম নাফ নদীর মতোই শান্ত। অন্যসময় এরকম শান্ত থাকে না। আফসোস, ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে গাংচিলকে সাথে পেলেও ডলফিনের দেখা পাই নি।
আড়াই ঘন্টার সমুদ্রভ্রমণ শেষে সেন্ট-মার্টিন পৌঁছলাম ঠিক দুপুর ১২টায়।
অসম্ভব সুন্দর এই দ্বীপটা দেখে এতক্ষণে মনে হলো কক্সবাজার আসাটা স্বার্থক।
সেন্ট-মার্টিনের পানি একদম সবুজাভ নীল আর স্বচ্ছ। এতো সুন্দর পরিবেশ যে কোন মানুষকেই মুগ্ধ করবে।
কক্সবাজার এসে সেন্ট-মার্টিন না দেখে ফিরে যাওয়াটা নিছক বোকামী।
কক্সবাজারের সৌন্দর্য্য এই প্রবাল দ্বীপের কাছে কিছুই না। এর স্থানীয় নাম নারিকেল জিঞ্জিরা, কারন এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ আছে, সাথে কেয়া গাছের সমারহ।
এখন অনেকেই সরাসরি সেন্ট-মার্টিনে চলে আসে। বিদেশী পর্যটকেরও অভাব নেই। সেন্ট-মার্টিন থেকে ট্রলারে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যায়।
কিন্তু তার জন্য একদিন থাকতে হবে, যেটা এই ট্রিপে সম্ভব ছিল না।
আমাদের দুপুর ৩টায় লঞ্চে ব্যাক করতে হবে। সেন্ট-মার্টিন আসলেই খুব চার্মিং একটা জায়গা। এখানে একটা রাত না থাকলে সৌন্দর্য্যটা পুরোপুরি উপভোগ করা যাবে না। এর পরে আসলে আমি জোৎস্না হিসাব করেই আসবো, কারণ পূর্ণিমার রাতেই এই দ্বীপের সৌন্দর্য্য ১০০% প্রকাশ পায়।
এবার এই অবারিত মুগ্ধতাকে সঙ্গে নিয়ে সেন্ট-মার্টিনকে বিদায় জানাতে হবে।
ঠিক ৩টায় লঞ্চে উঠে পড়লাম। ডেকে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত দূরে সরে যাওয়া সেন্ট-মার্টিনকে দেখছি আর ভাবছি, থেকে যেতে পারলে মন্দ হতো না।
থাক, কিছু অপূর্ণতা সৌন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
“Like all great travelers, I have seen more than I remember, and remember more than I have seen.” – Benjamin Disraeli
আজকের গোধুলীটা কাটবে সাগর আর নাফ নদীর মোহনায়।
আসার সময় নাফ নদী একরকম ছিল, এখন আরেকরকম…
কক্সবাজারের কলাতলী বীচে পৌঁছলাম রাত সাড়ে ৮টায়। খাওয়া-দাওয়া সেরে রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে বসলাম। এরপর সারা রাত ঘুমিয়েই কাটিয়েছি।
ঢাকা
ঢাকায় সায়দাবাদ পৌঁছলাম ভোর সাড়ে ৬টায়। ঢাকাকেও আজ অনেক ভালো লাগছে।
কেননা ফিরে এলাম নিজভূমে…
“No one realizes how beautiful it is to travel until he comes home and rests his head on his old, familiar pillow.” – Lin Yutang
কিছু ব্যক্তিগত অভিমত >>>
১. এসব জায়গায় এটাই ছিল আমাদের প্রথম ট্রিপ। প্রত্যেকের খরচ গেছে প্রায় ৪০০০ টাকা। একটু হিসাব করলে আরও কম খরচে কাভার করা যেত।
″A traveler without observation is a bird without wings.” – Moslih Eddin Saadi
২. পরপর ৩ দিনের গোধুলী ৩ জায়গায়- ১ম দিন নীলাচলে, ২য় দিন হিমছড়িতে এবং ৩য় দিন নাফ নদীর মোহনায়… এক কথায় অসাধারণ।
“Tourists don’t know where they’ve been, travelers don’t know where they’re going.” – Paul Theroux
৩. আমার ভ্রমণের ব্যাপারে বলতে গেলে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে বান্দরবান, তারপর সেন্ট-মার্টিন, তারপর কক্সবাজার, যদিও আমার ভ্রমণকে সম্পূর্ণ বলা যায় না।
“The world is a book and those who do not travel read only one page.” – St. Augustine ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।