আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Doctor যদি হয় Docterror (মেডিকেল রম্য)

কল্পিত চোখে বাস্তবতা দেখি, কম্পিত কলমে স্তব্ধতা লেখি দেশের অধিকাংশ মাতা-পিতার ন্যায় আমার মাতা-পিতাসহ চৈদ্দগুষ্টির ইচ্ছা রইয়াছিলো আমিও ডাক্তার হইবো। ডাক্তার হইতে পারি নাই,তবে যাহা বার বার হইয়া আসিয়াছি তাহা হইলো ডাক্তারের পেশেন্ট। একজন ডাক্তারের নিকট তাহার সমগ্র ডাক্তারীজীবনে যত পেশেন্ট ভিজিট করিতে পারে, আমি আমার এই সংক্ষিপ্ত জীবনে পেশেন্ট হইয়া তাহার চাইতে বেশি ডাক্তার ভিজিট করিয়াছি। তবে উহাদের মাঝে সকলকেই Doctor বলিতে আমি অপরাগ। কেহ কেহ ছিলেন Docterror (এই শব্দটি প্রথম শুনিয়াছিলাম রেডিও ফূর্তির সময় অসময় অনুষ্ঠানে)।

মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষা লইয়া যখন ডাক্তারী আকাশে মেঘের ঘনঘটা সেই সময়েই আমি ঐ সকল Docterror-দের লইয়া নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ফাঁদিয়াছি এই মেডিকেল রম্যরচনা। ১. তখন ৮ম শ্রেণীতে পড়ি। খাওয়া দাওয়া করার বাড়ন্ত বয়স। অথচ ব্যাপক খাইবার পরেও পেট ভরিতেছে না। ভরিবে কী করিয়া?পাকস্থলীতে গমনকালে খাদ্য আটকাইয়া যাইতেছে দন্ত-শৃঙ্গের ডান পাশের উপর মাড়ির দাঁতের এক বিশাল গর্তে।

কিঞ্চিত প্রদাহ অনুভব করিতেছি। দন্ত চিকিতসকের নিকট দ্বারস্থ হইলাম। আরেকজন রোগী লইয়া মহাব্যাস্ত থাকিবার কারনে এই অধমকে তিনি চালান করিয়া দিলেন নিজের তরুণী এসিস্টেন্টের নিকট। এসিসট্যান্টকে দেখিয়াই বোধগম্য হইতেছে মাত্রই জেলেদের কারেণ্ট জালে আটকাকৃত জাটকার ন্যায় তিনি সদ্য পাশকৃত টাটকা ডাক্তার। ঝুঁকি লইয়া আমার মুখের ভেতর উকি-ঝুকি দিয়া সে যে বয়ান শুরু করিলো তাহা হইতে জানিলাম সমস্যা এক দাঁতে নয় সমস্যা সকল দাঁতে এবং স্ক্যালিং করিলেই সমাধান হইবে।

স্ক্যালিং-এর নামে দন্তসমূহকে কিছুক্ষন রিমান্ডে লইয়া নির্যাতন চালানো হইলো। বাসায় ব্যাক করিবার পর দেখি কিছু মুখে ঢুকাইবার মাত্রই দন্তপাটি শিরশির করিয়া উঠিতেছে। মনে হইতেছে দন্ত-পাটি তাহার virginity খুইয়া বসিয়াছে। সেই non-virgin দন্তপাটি লইয়া কিছুদিন কাটাইবার পর একদিন খাইবার সময় যেই দাঁতে প্রদাহ সেই দাঁতের গর্তে এলাচির বিচি আটকাইয়া গেলো সেই সাথে শুরু হইলো আরো ব্যাপক প্রদাহ। হন্তদন্ত হইয়া ছুটিলাম সেই দন্ত-চিকিতসকের নিকট।

আমার পিতার অনুরোধে এসিসট্যান্তকে সরাইয়া নিজে দেখিতে রাজি হইলেন। গর্ভ দর্শন করিয়া এই থুক্কু গর্ত দর্শন করিয়া রীতিমত চমকাইয়া উঠিয়া কহিলেন, “কী হে বালক,তুমি তো এইখানে কৃষ্ণগহব্বর বানাইয়ায়ে ফেলিয়াছো”। আমি হা করিয়া ছিলাম তা না হইলে এসিসট্যান্টকে দেখাইয়া অভিযোগ করিতাম “আপনার ঐ রাধাই তো কৃষ্ণকে চিনিতে পারিলো না”। কী আর করা,অবশেষে গর্ত নিষ্কাশন করিয়া সেইখানে ফিলিং দিয়া সেদিনকার মতন চ্যাপ্টার ক্লোজ হইলো। ২. তখন এসএসসি-এর টেস্ট পরীক্ষা চলিতেছে।

ওদিকে স্বউদ্যগে বার বার টেস্ট করিয়া বুঝিলাম বসিতে গেলেই মেরুদন্ডের শেষভাগ হইতে ব্যাথার সিগন্যাল পাওয়া যাইতেছে। কিছুদিন আগেই দ্রুত দৌড়পূর্বক কোচিং-এ পড়িতে যাইবার কালে ঘটাং করিয়া চিতপটাং হইয়া পড়িয়া গিয়াছিলাম শক্ত মেঝেতে। ধরিয়া নিলাম সেই পতন হইলো মেরুদন্ডের ব্যাথার কারন। দ্বারস্থ হইলাম এক আর্থপেডিক এর নিকট। ব্যাথাখানা এমন অবস্থানে যাহা দেখাইবার লাগি শার্টখানা একটু উপরে তুলিলেও চলে আবার প্যান্টখানা একটু নিচে নামাইতেও হইতে পারে।

শঙ্কোচে রইয়াছি ডাক্তার দ্বিতীয় কম্মটি করিতে আবার না কহেন। ডাক্তার কিছুই দেখিলেন না। ঘটনা শুনিয়া এক্স-রে করাইতে বলিলেন। রিপোর্ট দেখিয়া জানাইলেন মেরুদন্ডে আঘাত লাগিয়াছে। পেইন কিলার খাইতে হইবে, উক্ত স্থানে প্রেমের ছ্যাক থুক্কু গরম ছ্যাক খাইতে হইবে আর কিছুদিন ইজি চেয়ারে বসিতে হইবে।

ব্যাপারখানা ইজিভাবে লইয়া বাসায় ফিরিবার কিছুদিন পরেই ব্যাথার জায়গা ফুলিয়া উঠিলো উইপোকার ডিবির ন্যায় যাহারে বলা যায় উইকিডিবিয়া। মেরুদন্ড ভাঙ্গিয়া গেলো নাকি?আমি কি এখন অমেরুদন্ডি প্রাণীর গোত্রে অন্তর্ভুক্ত??দন্ডিত মেরুদন্ডের দন্ডবিধি লইয়া আবার আসিলাম সেই ভন্ড ডাক্তারের নিকট। ব্যাটা নিজেও ঘাবড়াইয়া গেলো। রেফার করিয়া দিলো পাশের এক সার্জনকে দেখাইতে। সার্জন দেখিয়া জানাইলো আমার ব্যাথা হইতেছিলো কারন ওইখানে হইয়াছিলো পিওডেরিকাল সাইনাস (ফোড়াজাতীয়)।

দ্রুত অপারেশন করিতে হইবে অন্যথায় উহা নাকি নদ-নদীর মতো শাখা-প্রশাখা বিস্তার করিবে। সেবারের মতো নদীমাতৃক শরীর লইয়া ঘরে ফিরিলাম। ভুল চিকিতসায় অপমানিত হইয়া সাইনাস সাহেব নিজ হইতেই চলিয়া গিয়াছিলেন, আর ফিরিয়া আসেন নাই। নদ-নদীর বদলে উক্ত স্থানে বর্তমানে ধূ ধূ বালুচর। ৩. তখন একটু বড় হইয়াছি,কলেজ যাই।

আমি বড় হইবার আনন্দেই কিনা ডান বগল বড় হইয়া ফুলিয়া গিয়াছে। যেন একখানা আস্ত টেনিস বল ঐখানে ঢুকাইয়া দেয়া হইয়াছে। সাথে মোবাইলের বোনাস টকটাইমের ন্যায় বোনাস ভোগান্তি হইয়া দাড়াইয়াছে জ্বর। বরফ যুগের কাপুনী দিইয়া জ্বর মহাশয় আসেন, ছাড়িয়া যায় গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ঘাম দিয়া। এদিকে ব্যাথার চোটে হাত নামাইয়া রাখাও দুস্কর।

সারাদিন মুঘল আমলের নবাবদের ইস্টাইলে কোমরে হাত দিয়া থাকিতে হয়। আগেই জানিয়াছি এই নবাবি রোগ একখানা চর্ম রোগ। দ্বারস্থ হইলাম এক ডাক্তারের নিকট যিনি এই অধমকে পূর্বেও একই রোগের ভয়াল থাবা (অথবা বগল থাবা) হইতে উদ্ধার করিয়াছেন। ডাক্তারের চেম্বারে সাইনবোর্ড ঝুলিতেছে “ডাক্তার অমুক, চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ”। কালের বিবর্তনে সাইনবোর্ড হইতে চর্ম শব্দটি মলিন হইয়েছে কিন্তু যৌন শব্দটি জ্বল জ্বল করিয়া প্রজ্জ্বলিত।

পূর্বের সময় হইতে ডাক্তারের রোগী ব্যাপক বৃদ্ধি পাইয়াছে । ভীড় সামলাইতে ডাক্তারের কক্ষে একই সাথে তিনজন করিয়া রোগী প্রবেশ করানো হয়। আমার সাথে প্রবেশ করিলো লাল সালোয়ারের সহিত ম্যাচ করিয়া কপালে এবড়ো থেবড়ো লাল টিপ দেয়া এক রমনী এবং লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহত এক ব্যাটা। বগলের নবাবীরোগ বগলদাবা করিয়া নবাবী ইস্টাইলে ঢুকিয়া দেখি বৃদ্ধ ডাক্তার বসিয়া আছে। তাহার সুপুত্র,তিনিও ডাক্তার।

প্রথমে লুঙ্গি পড়া ব্যাটার নিকট জানতে চাওয়া হইলো কী সমস্যা?আর আমার মনে চলিতেছে “ইয়া মাবুদ,অন্য রোগিদের সামনেই রোগের নাম বলিতে হইবে!!রোগীর প্রাইভেসির দেখি এইখানে নিলাম ডাকা হয়”। ওদিকে ঐ ব্যাটা নিঃশঙ্কোচে শুরু করিয়া দিয়াছে তাহার রোগের বিবরন। পুরুষের পরিচয় বহনকারী স্থানে তাহার ব্যাপক চুলকানি, এবং চুলকাইতে চুলকাইতে তিনি নাকি সেইখানকার ছাল-চামড়া উঠাইয়া ফেলাইয়াছে। বিবরণ চলাকালেই সে লুঙ্গির উপর দিয়া এক দফা বেদম চুলকানি লাগাইলো, তাহা দেখিয়া ভাবিলাম “ভাগ্যিস যাহা যাইবার সব ছাল-চামড়া উপর দিয়া গিয়াছে। এহেন এক্সট্রিম চুলকানিতে মূল যন্ত্রাংশ যে উঠিয়া আসে নাই তাহাই সৌভাগ্য”! সব শুনিয়া ডাক্তার তাহাকে আরেকটি কক্ষে লইয়া গেলেন।

বুঝিতে পারিলাম, এইখানে সিস্টেম হইলো রোগের এনাউন্সমেন্ট সবার সম্মুখে হইবে,আর রোগের প্রদর্শনী হইবে গোপনে”। সেই কক্ষ হইতে বাহির হইয়া ডাক্তার ঐ ব্যাটাকে প্রেসক্রিপশন লইতে নিজের পুত্তুরের নিকট বসাইয়া দিলো। এইবার আমার পালা। আমি রোগের বিবরণ দিয়া সেই গোপন কক্ষে যাইতে প্রস্তুত কিন্তু ডাক্তার কহেন “হাত উপরে উঠাও”। কেমনি কি?ডাক্তার আমাকে একান্তে দেখিবারও প্রয়োজন বোধ করিলো না।

আমি আমার আক্রান্ত হাত উপরে উঠাইলাম। ডাক্তার খেকাইয়া উঠিলো “দুই হাত উপরে উঠাও”। জবাব দিলাম “অসুখ তো এক হাতে”। ডাক্তার পুনরায় খেকাইয়া উঠিলো “তোমাকে যেটা বলি সেইটা করো”। আমি দুই হাত উপরে তুলিয়া ছক্কা দেখাইলাম,লালওয়ালী রমণী পাশে থাকায় লজ্জায় লাল হইয়া জ্বলিতেছি,ভ্রুক্ষেপহীন ডাক্তার টর্চ জ্বালিয়া আগাইয়া আসিলো রোগ দেখিতে।

এইবার সেই লালওয়ালীর পালা। আমি বসিয়া আছি ডাক্তারের সুপুত্তুরের পাশে প্রেসক্রিপশন গ্রহন করিতে। সুপুত্তুর মনোযোগ দিয়া প্রেসক্রিপশন লিখিতেছে। কক্ষে পিন ড্রপ সাইলেন্স, লালওয়ালী তিনজন পুরুষের সম্মুখে ঘোষনা করিবে তাহার রোগ। মেয়ে মানুষের কি না কি রোগের বিবরণ শুনিতে হয় এই ভাবিয়াই আমি অসুস্থ বোধ করিতেছি।

অবশেষে লালওয়ালী বলিতে শুরু করে। কপালের সেই এবড়ো থেবরো টিপখানা আঙ্গুলি দ্বারা নির্দেশ করিয়া সে বলিয়া উঠে “কপালে খালি ব্রণ উঠে। কি করবো বুঝতেছি না”!!!! আমি শুনিয়া মনে মনে বলিলাম "কপাল আমার!!" এই অধমের লেখা যদি লাইক করিয়া থাকেন তাহা হইলে ফেসবুকের এই পেইজে লাইক দিতে ভুলিবেন না। উহাতে আমি নিজের এবং নিজের প্রিয় ব্লগারদের লেখা শেয়ার করিয়া থাকি। সামুতে রম্য লিখিতেই ভালোবাসি।

বিগত দুই পোস্টে হুমায়ন আহমেদরে লইয়া ক্যাচাল করিলেও আবার ফিরিয়া আসিলাম রম্যরচনায় (সেই দুই পোস্টের অন্যতম একটি হলো এই লিংক )। আমার অন্যা কয়েকটি রম্য দেখিতে নিচের লিঙ্কসমূহ ক্লিকাই্তে হইবে। আমার দৈনন্দিন এভারেস্ট বিজয় (এ্যাডভেঞ্চার রম্য) তরুন প্রজন্মের স্বার্থ রক্ষার বাজেট (রম্য) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।