আগের পোষ্ট..... ...........গন্তব্য বাগেরহাটঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ ও খান জাহান আলী (রহ) এর মাজার দর্শন
আগের পোষ্টে বাগেরহাট ষাট গম্বুজ ও খান জাহান আলীর মাজার দর্শন নিয়ে পোষ্টে দিয়ে শেষে অগ্রীম নিমন্ত্রনও জানিয়ে ছিলাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েট নিয়ে পোষ্টে। আজকে শুরু করবো সেখান থেকেই।
বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ দর্শন শেষ করে রাস্তায় উঠেই পেয়ে গেলাম খুলনাগামী বাস। সিট পাবো না জানা থাকা স্বত্তেও হাত তুলে উঠে পড়লাম বাসে । স্ট্যান্ডিং টিকিটে বাসে ভীড়ের মাঝে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ৩ জন গল্প করছিলাম।
বাসে সিট না পাওয়ায় বাহিরের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার মতো অবস্থা ছিলো না তবুও মাথাটা মাঝে নিচু করে জালনা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে মাঝে মাঝে কতদূর আসলাম দেখার চেষ্টা করছিলাম।
বাসে উঠেছি বেশী সময় হয়নি সম্ভবত ২৫-৩০ মিনিট হবে , হঠাৎ বাস থেমে যাওয়ায় বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম চলে এসেছি রূপসা ব্রীজে। এতো তারাতারি ?????? কারণ বাগেরহাটে যেতে সময় লেগেছে ১.১৫ মিনিট এখন মাত্র ৩০ মিনিট ............. পরে খেয়াল করলাম বাস রাস্তার কোথাও যাত্রী নেয়ার জন্য বা অন্য কারণে তেমন দাড়ায়নি । আর যাওয়ার সময় ঠেলতে ঠেলতে গিয়েছিলাম।
ব্রীজের টোল পরিশোধ করে আমাদের বাস ব্রীজ পার হয়ে রাস্তায় নামার পরে খুব ভালো লাগছিলো।
চমৎকার রাস্তা। দেশের খুব কম জায়গায়ই এরকম রাস্তা আছে। পরিকল্পিত চমৎকার রাস্তার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। দুপাশে সারি সারি গাছের মাঝ দিয়ে ২ ভাগে ৪ লেনের বিশাল রাস্তা। নাক বরাবর গিয়ে গিয়ে ডানে মোড় নিতেই বাস হেলপারের ডাকে প্রস্তুত হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নামে পড়লাম।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নাম ফলক
গেটে সাথে বাহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ লেখা দেখে কিছু দ্বিধা লাগছিলো। বিশ্ববদ্যালয় বন্ধ তাই মূল গেট একপাশ বন্ধই রইল। গেটে দিয়ে প্রবেশ করতেই মামাদের নিষেধের সম্মুখীন হতে হলো। খুলনা বন্ধুটির পরিচয়ে কাজ হচ্ছে মনে করে সাথের বন্ধুর সাংবাদিক কার্ডটি দেখানোতে কাজ হলো। তবে শর্ত জুড়ে দিলো মামারা................ বামের কোন রাস্তায় ঢুকবেন না , সোজা গিয়ে ডান দিকে চলে যাবেন , কোন গলি বা বিল্ডিংএ যাবেন না ।
হাতেও সময় কম তাই এদিক সেদিক যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছাও নেই আমাদের, একনজর দেখাটাই মূখ্য।
গেট গিয়ে প্রবেশ করেই বাম পাশে প্রথমেই প্রশাসনিক ভবনগুলো। প্রশাসনিক ভবন এলাকায় সাজসজ্জার কাজ চলছে সম্ভবত কোন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। যেহেতু বাম দিকে না যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাই আর ওমুখো হলাম না। সোজা চলে গেলাম .......... মাঝখানের রাস্তাটা চমৎকার ।
সারি সারি গাছের মাঝ দিয়ে সুন্দর রাস্তা। পরিবেশটা শাবিপ্রবি, সিলেটের মতো যদিও শাবিপ্রবির মতো মতো এতো লম্বা রাস্তা না সেটা। পুরো ক্যাম্পাসে ছাত্র যে ৪ জায়গায় দেখলাম তার মাঝে ১টি হলো এখানে । ৩/৪ জন ছাত্র ছাত্রী দাড়িয়ে দাড়িয়ে আড্ডা মারছে।
শহীদ মিনার
তাদের অতিক্রম করে নাক বরাবর গিয়ে বাম দিকে মাঠের শেষেই শহীদ মিনার ।
আর ডান পাশে খুবি ক্যাফেটোরিয়া । খুবির শহীদ মিনারটি অন্যান শহীদ মিনার থেকে আলাদা। একদিকে ছায়া ঘেরা সুন্দর পরিবেশ অন্যদিকে বড় মাঠ। মাঠে কাদা পানি থাকায় আর শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর হলাম না আর বাম দিকে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা তো আছেই।
ক্যাফেতে এক কাপ চায়ের আপসোস রয়ে গেছে...
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ তাই ক্যাফেও বন্ধ।
এককাপ চা খাওয়ার ইচ্ছেটা মনের মাঝেই চাপা দিয়ে রাখতে হলো। চমৎকার পরিবেশে ক্যাফের পরিবেশ যে সবসময় জমজমাট থাকে তা খুব সহজই বুঝায় যায়। বন্ধ ক্যাফেমুখী হতে না পারায় আফসোস কিছুটা রয়েই গেল।
চমৎকার ................
অদম্য বাংলার নিচের অংশ
বাংলার অদম্যরা
রেইন ট্রি গাছের ছায়ায় অদম্য বাংলা
আফসোস না বাড়িয়ে সোজা চলে গেলাম গোপালচন্দ্র পাল নির্মিত অদম্য বাংলা চত্ত্বরে। বিশাল মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি।
দুজন কপোত কপোতী দর্শনার্থী এখানে দেখা মিললো। তাদের ছবি তোলা কার্যক্রম শেষ করে তার চলে যাচ্ছিল আর আমরা গিয়ে উপস্থিত। আর কোন মানুষ নেই।
একাডেমিক ভবন -১
শহীদ মিনাররে সামনে আর আর অদম্য বাংলার ডান পাশে বিশাল একাডেমিক ভবন - ২ ছুটিতে ছাত্রশূন্য অবস্থায় একা একা দাড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের কোলাহালের প্রতীক্ষা করছে। শহীদ মিনারের সামনে ২ বার যেখানে ছাত্রদের দেখা মিললো , ৪/৫ জন ছাত্ররা চুঁটিয়ে আড্ডা মারছে সেখানে।
একাডেমিক ভবন - ২ টাও আমরা দূর থেকে দর্শন সম্পন্ন করলাম আর হাত নেড়ে টা টা জানালাম। কোলাহলমুক্ত প্রানহীন ইট বালুর প্রাচীর দেখে চোক্ষু জুড়াবে না তাই আর গেলাম না সেদিকে।
অদম্য বাংলার সামনে অদম্যের মতো পোজ মেরে ছবি তোলা কার্যক্রম সম্পন্ন করে একাডেমিক ভবন ১ এর দিকে ধাবিত হলাম। বিশাল করে এখনো লিখা রয়েছে freshers reception 2011 । একই অবস্থা....... কোন ছাত্র ছাত্রী কর্মচারী নেই ..... ভবনে কোন কোলাহলও নেই , প্রাণও নেই।
বিশাল ভবনটা ভালোই লাগছিলো , পাশ দিয়ে সামনে চলে যাওয়া পথ দিয়ে অগ্রসর হতে হতে ডান পাশে চোখে পড়ল বাস ডিপো। সব বাস ঈদের বন্ধে রেষ্ট নিচ্ছে। প্রতিদিন অনেকবার ছুটে চলতে চলতে তারা ক্লান্ত । অবসরে একটু লম্বা বিশ্রামে স্বাস্থ্য ভালোই আছে তাদের।
নাক বরাবর চালার পূর্ব রীতি অনুসরন করে গিয়ে পৌছলাম কটকা মনুমেন্ট এ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা তাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে বেড়াতে গিয়েছিল সুন্দরবনে। সেখানে তাদের সাথে বুয়েটের ও কয়েকজন মেহমান হিসাবে ছিল। বেড়াতে গিয়ে কটকা সী-বিচে ঘোরাঘুরির সময় হঠাৎ জোয়ারের টানে সমুদ্রে হারিয়ে যায় অনেকেই, স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে কেউ কেউ তীরে ফিরতে পারলে ও ফিরে আসতে পারেনি ওরা ১১ জন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ০৯ জন এবং বুয়েটের ২ জন, প্রানোচ্ছল ১১ টি প্রান নিথর হয়ে গেলো আর হারিয়ে গেলো চিরদিনের জন্য।
কটকা মনুমেন্ট
অপু
বাকী
কুশল
রুপা
নিপুন
শুভ
কাউসার
শাকিল
সামিউল
তোহা
রাসেল ।
যখন টঙ্গীতে থাকতাম এই শাকিলের নামে একটি সড়ক হয়েছিলো এখনো আছে শাকিল স্মরনী নামে। আগে পত্রিকা বা অন্যান্য মাধ্যমে জানা থাকলেও এখানে গিয়ে জানলাম তাদের মর্মান্তিক মৃত্যুর কাহিনী। শোক আর আত্মার মাগফিরাত কামনা করা এখন তাদের স্মরণের উত্তম মাধ্যম। কটকা মনুমেন্ট চত্ত্বরে দু জোড়া তরুণ তরুণীকে চোখে পড়লো।
কর্দমাযুক্ত মাঠ এখন খেলার অনুপযুক্ত
মনুমেণ্টের পাশে বিশাল মাঠ।
মাঠের দু পাশে ছায়া ঘেরা সুন্দর রাস্তা। প্রখর রোদ পথচারীকে ক্লান্ত করবে না এখানে। নির্মল পরিবেশে হাটতে হাটতে চলে আসলাম খান জাহান আলী হলের সামনে। বাহিরে ছাত্রদের কোন দেখা না মিললেও রাস্তা থেকেই হাই ভলিউমে মিউজিক আর গান বাজছিলো বলে স্পষ্টই বুঝা যায় ভার্সিটি বন্ধ হলেও কিছু ছাত্র এখন আছে।
খান জাহান আলী হল
এখানে রোদের প্রখরতা বেশী বলে হলের দু একটা ছবি তুলে বের হওয়ার জন্য পিছনের গেটে চলে আসলাম।
খুব বেশী সময় না দিলেও মোটামুটি একনজর দেখে শেষ করেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর . হকের পদধুলি বিজরিত হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে সম্ভবত আহসান উ্ল্লাহ হলের পাশ দিয়ে গিয়ে উঠলাম। আমরা ফিরছি আর ছুটি কাটিয়ে ভার্সিটিতে ফিরছে এক ছাত্র। ভার্সিটির ভিতরে নির্মল পরিবেশে থাকায় এতোক্ষত খুব অনুভুত হয়নি বাহিরে কি পরিমান রোদ.....................
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত এখানে।
পথ চললাম কুয়েটের উদ্দ্যেশে।
সামনে কুয়েট নিয়ে থাকবে আরেকটি পোষ্ট। সবাইকে আবারো নিমন্ত্রন রইল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।