আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্ল্যান

আমি যা বিশ্বাস করি না... তা বলতেও পারি না! সফিক এহসান (২৯ অক্টোবর ২০০৬ইং) পরীক্ষা আরম্ভ হতে এখনও দেড় মাস বাকি। অথচ ওদের প্ল্যান প্রোগ্রাম করা শেষ। মঈনুল বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে বলল: বুঝলি- সাত তারিখ রাতেই চলে যাব। সন্ধ্যা পনে ছয়টায় বাস ছাড়বে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে রওনা দিতে হবে।

আগেভাগে না গেলে পরে টিকেট পাওয়া যায় না। মাসুদ বলল: আরে ধুর! কষ্ট করে অতো দূরে যাব কেন? সাড়ে ছয়টার বাসে গেলে একেবারে আমাদের বাসার গেটে নামিয়ে দেবে। টিকেট নিয়েও চিন্তা করা লাগবে না। আগের দিন কেটে রাখব। সাত তারিখে শুধু কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে থাকব।

বাস এলে হাত উচু করলেই থামিয়ে নিয়ে যাবে। বাসের কনট্রাকটর-ড্রাইভার সবাই আমাকে চেনে। মঈনুল মুচকি হেসে বলল: কেন? চেনে কেন? তুই কি আগে ঐ বাসের হেল্পার ছিলি নাকি? মাসুদ বুক ফুলিয়ে বলল: মাসুদ চৌধুরীকে পুরো শেরপুরের মানুষ চেনে। তোদের মত নেংটি ইদুর নাকি যে পাশের বাসার খালাম্মাও চেনে না। বাড়ি গেলে বলে ‘বাবা তোমাকে তো চিনলাম না, কার বাসায় বেড়াতে এসেছো?’ মঈনুল বলল: অতো বুক ফুলিয়ে কথা বলিস না; বুক ফাইট্টা যাইতে পারে।

আচ্ছা যা সাড়ে ছয়টার বাসেই যাব। আমি মিনমিন করে বললাম: পরদিন গেলে হয় না? অতো তাড়াহুড়ো করে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? তাছাড়া আমার প্রস্তুতিরও একটা ব্যাপার আছে। আমি তো আর পরীক্ষা হলে কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আসতে পারব না। মাসুদ মাথা ঝাকিয়ে বলল: তা অবশ্য ঠিক; এটা আগে ভাবিনি। কিন্তু সমস্যা হলো, রাতটা কোথায় থাকি? সাত তারিখেই তো হলের ডাইনিং বন্ধ হয়ে যাবে।

আমি তুরি দিয়ে বললাম: একটা রাত কোন ব্যাপার হলো নাকি? তোরা আমাদের বাসায় যাবি। রাতটা থেকে পরদিন সকালে ধীরে সুস্থে রওনা দেওয়া যাবে। মঈনুল এগাল ওগাল হেসে বলল: সেটাই ভাল। তোর মার সাথেও দেখা হবে; রাতে ভাল মন্দ কিছু খাওয়াও যাবে। মাসুদ সাথে সাথে ভেংচি কেটে বলল: ঈস; শখ কত! তোর জন্য সফিকের মা পোলাও কোর্মা রান্না করে রাখবে আরকি! মঈনুল অজুহাত দিয়ে বলল: না মানে সাড়ে ছয়টার বাসে গেলে তো রাত করে যেতে হয়।

ময়মনসিং রোডে রাত করে দেখার কিছু নেই। সে তুলনায় দিনে গেলে অনেক কিছু দেখতে পাবে। তাছাড়া ধীরে সুস্থে ঠান্ডা মাথায় যাওয়া যাবে। : তাতো বুঝলাম। কিন্তু সকালের বাসে গেলে যেখানে নামিয়ে দেবে সেখান থেকে আবার বাসে উঠতে হবে।

সন্ধ্যায় গেলে ডাইরেক্ট যাওয়া যেত। আমি বললাম: তাহলে পরদিন সন্ধ্যায় যা। তোদের বাসায় আমি এক সপ্তাহ থাকবো। আর তোরা না হয় একদিন থাকলি আমাদের বাসায়। মঈনুল বলল: আচ্ছা, সেটা যাবার সময় দেখা যাবে।

গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল। পরীক্ষাই এখনও দেড় মাস দূরে। আগে পরীক্ষাটাতো ভালভাবে শেষ হোক। পরে দেখা যাবে সকালে না বিকেলে যাই। সেদিনের মত মিটিং সেখানেই শেষ হলো।

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। তবে মিটিং প্রায় প্রতিদিনই হতে লাগলো। মাসুদ আর মঈনুলের আগ্রহই বেশি। ওদের বাড়িতে যাবার প্রস্তাবটা মাসুদই আমাকে প্রথম দেয়। শুধু আমার ইচ্ছা থাকলেই নাকি হবে।

টাকা পয়সা কোন ব্যাপার না। বুকে কিল দিয়ে মাসুদ বলেছিলো: মনে রাখিস তুই মাসুদ চৌধুরীদের বাসায় যাচ্ছিস। তোর খরচ সব আমার। এরই মধ্যে মঈনুলও এসে জুটলো। ওর বাড়িও শেরপুরে; মাসুদদের পাশের গ্রামে।

সেও উৎসাহ দেখিয়ে বলল: ভালই হবে দোস্ত। আমাদের বাসায়ও বেড়াতে পারবা। চলো একবার; শেরপুর শহর পুরোটা তোমারে ভাইজ্যা খাওয়াইয়া দিমু। আমি একবার হ্যাঁ বলতেই শুরু হয়ে গেল ওদের প্ল্যান প্রোগ্রাম। কবে যাব, কিভাবে যাব, কার বাসায় কত দিন থাকব, কোন জায়গা থেকে কিসে করে কোথায় যাব সব কিছু ঠিক করা শেষ।

শুধু যাবার তারিখটাই একটু দেরিতে। ওদের ভাষায় মাত্র ‘দুই মাস’! মাসুদ বলে: সফিক, তোকে গজনি নিয়ে যাব মামার হোন্ডায় করে। তারপর পাহাড়ি জঙ্গলে ঘুরতে নিয়ে যাব। সেখানে সাদা হাতি দেখতে পারবি যেটা বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না। মঈনুল ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে: আরে ধুর! সাদা হাতি।

হাতি সাদাই কি আর লালই কি; হাতি তো হাতিই। সফিক তোকে আমি নদীতে ঘুরতে নিয়ে যাব। তুই সাঁতার জানিস না? গুড! তোকে নিয়ে নদীতে গোসল করব। তারপর নদীর বাধটা দেখাব। বিরাট বাধ; দেখার মত।

মাসুদ বলল: দেখিস আবার নদীতে চোবাতে চোবাতে মেরে ফেলিস না। ওহ্ সফিক; তোকে একটা আশ্চর্য জিনিষের কথা বলা হয়নি। আমাদের বাড়িতে যে টিউবয়েলটা আছে, সেটার পাইপ মাত্র বিশ ফুট। তোরা শুনেছিস না- উত্তরাঞ্চলে পানির খুব অভাব? অথচ আমাদের শেরপুরের বাড়ির সেই টিউবয়েলে এক চাপে এক বদনি পানি ওঠে। মঈনুল ব্যঙ্গ করে বলল: এতো কিছু থাকতে তুই বদনির কথা বললি কেন? তুই কি বাড়িতে গেলে সারাক্ষণ বদনি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করিস নাকি? আর ‘বিশ ফুট পাইপের টিউবলেয়ে ভাল পানি ওঠে’ এই তোর আশ্চর্য জিনিষ! : না তা হবে কেন; আরও আছে।

যেমন ধর আমার দাদির কথা। তার সাথে জ্বিন আছে। মঈনুল সাথে সাথে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল: কী আছে? : জ্বিন আছে জ্বিন। জ্বিন বুঝিস তো? ঐযে তোরা যেটাকে ভুত ভেবে প্যান্ট নষ্ট করিস। : আচ্ছা, তুই কিভাবে সিওর হলি যে ওটা জ্বিনই? পরীও তো হতে পারে! : গাধার মত কথা বলবি না।

মহিলাদের কখনও পরীতে ধরে না; পরী ধরে পুরুষদের। মঈনুল আপসোসের সুরে বলল: ঈস আমারে যদি একটা ধরতো! তা সেই জ্বিন কী করে? মাঝে মধ্যে তোর দাদির আর তোদের প্যান্ট নষ্ট করিয়ে দেয়? মাসুদ চোখ পাকিয়ে বলল: দেখ মঈনুল; তুই কিন্তু থাবরা খাবি আমার হাতে। কথার মধ্যে বা হাত ঢুকাস কেন? আমি কি তোর সাথে কথা বলছি? আমি বলছি সফিককে। মঈনুল পাল্টা জবাব দেবার আগেই আমি বললাম: থাক থাক বাদ দে। মাসুদ তুই বলতে থাক।

আসলে জ্বিন কী করে? মাসুদ আগ্রহের সাথে আবার শুরু করলো: মাঝে মাঝে দাদিকে রাতের বেলা খড়ের গোঁদার ওপর বসিয়ে রাখে। সকাল বেলা দেখা যায় দাদি খড়ের গোঁদার ওপর বসে দিব্বি ঘুমুচ্ছে। মজার না? আমি নির্লিপ্তে বললাম: না, মোটেই মজার না। এই ঘটনাটার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। একে বলে ‘স্লিপ ওয়াকিং’।

ঘুমের ঘোরে তোর দাদি নিজেই হাঁটতে হাঁটতে বাইরে বেরিয়ে আসে; তারপর খড়ের গোদায় উঠে বসে থাকে। এটা জ্বিন-ভুতের কোন ব্যাপার না। মাসুদ সাথে সাথে বলল: আরে রাখ তোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। ঐ ব্যাখ্যা আমিও জানি। ঘুমের ঘোরে না হয় ঘর থেকে বের হলো।

কিন্তু মই ছাড়া অতো উচু গোদায় উঠে কিভাবে বল? তুই কি বলতে চাস ঘুমের ঘোরে মানুষ মই ছাড়াই বিশ ফুট উচু গোদার ওপর লাফিয়ে উঠতে পারে? তাছাড়া জ্বিন যে আছে সেকথা কোরানেও লেখা আছে। আর বাংলাদেশের মধ্যে শেরপুর হলো জ্বিনের আড্ডা খানা। এই প্রথম দেখলাম মঈনুলও ওর সাথে একমত পোষণ করে বলল: এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস। আমার নানার বংশের সবাই আগে জ্বিন পুষতো। নানার বাবা পুষতেন সাতটা জ্বিন।

উত্তরাধিকারসুত্রে নানা দুইটা জ্বিন পেয়েছিলেন। কিন্তু মামাদের দিয়ে যাননি। মৃত্যুর আগে সবগুলোকে ছেড়ে দিয়ে গেছেন। আমি ওদের আজগুবি গল্প থামিয়ে দিয়ে বললাম: কী জ্বিন-ভুতের কাহিনী শুরু করলি দিনের বেলা! এসব গল্প করতে হয় রাতে; তখন এসব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। মাসুদ বলল: তারমানে তোর এসব বিশ্বাস হচ্ছে না? তুই জ্বিন বিশ্বাস করিস না, তাই না? আচ্ছা ঠিক আছে; চল একবার, তোকে এমন জিনিষ দেখাবো যে ভয়ে প্যান্ট নষ্ট করে ফেলবি।

আমি বললাম: থাক থাক; আর বলিস না। আমি জ্বিন বিশ্বাস করি না, কিন্তু ভয় পাই। বেশি ভয় দেখালে কিন্তু যাওয়া ক্যানসেল করে দেব। মঈনুল বলল: আরে ধুর! যাওয়া ক্যানসেল করা লাগবে না। মাসুদ তোকে জ্বিন দেখাবে কোত্থেকে? ওর বাবার কি জ্বিনের গোডাউন আছে নাকি? মাসুদ বলল: নাহ্; আমি জ্বিন পাব কোথায়।

সব জ্বিন তো তোর নানার বাপে খাঁচায় ভরে রেখেছে। আমি ওদের থামিয়ে দিয়ে বললাম: আচ্ছা তোরা কী শুরু করলি বলতো। শেরপুরে কি জ্বিন ছাড়া আর কিছু নেই? মঈনুল হেসে বলল: থাকবে না কেন? তোকে মজার একটা ব্যাপার বলি। আমাদের গ্রামে যে বাজারটা আছে না; বুধবার সেখানে হাট বসে। গাঢ়ো উপজাতিরাও ঐ দিন বাজার করতে আসে।

গাঢ়ো মহিলারা পিঠে করে বাচ্চা ঝুলিয়ে রাখে। ওদের পেছনে কোন বাঙালিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই রাগি স্বরে ধমক দেয়- বাঙ্গাল! ছাবধান! আমি হেসে বললাম: একথা বলে কেন? মাসুদ বুঝিয়ে দিলো: বুঝলি না, মঈনুলরা কি কম বান্দর? বাচ্চাটাকে যদি খোঁচা দেয়! : তাই নাকি? মজা তো! : মজার তুই দেখেছিস কী? একবার গিয়ে নিই, তোকে আরও অনেক কিছু দেখাবো। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম: বল ইনশাল্লাহ্। প্রতি লাইনে লাইনে একবার করে ইনশাল্লাহ্ বলবি। আমার ভাগ্যতো তোরা জানিস না।

মানুষের পোড়া থাকে। আমার কপাল শুধু পোড়া না, একবারে ছাই কপাল! হাসিস না, হাসিস না। তোরা যখন এতো জোর দিয়ে এসব কথা বলিস তখন আমার মনে হয় ওপর থেকে আল্লা আমাদের কথা শুনে হাসছেন। হাসছেন আর মনে মনে বলছেন: রাখ, যাওয়াচ্ছি তোদের। মাসুদ হাসতে হাসতেই বলল: তুই কোন চিন্তা করিস না।

তোর ছাই কপাল হলে কী হবে, আমার তো আর ছাই কপাল না। আমি যা বলি তা করে ছাড়ি। পরীক্ষাটা খালি একবার শেষ হতে দে; তারপর দেখ তোকে নিয়ে আমি কী করি। ইনশাল্লাহ্! আমি মাসুদের কথায় আশ্বস্ত হই। মনে মনে অপেক্ষায় থাকি পরীক্ষা শেষ হওয়ার।

অবশেষে পরীক্ষা আরম্ভ হলো। মঈনুল প্রতিদিন পরীক্ষা দিতে আসে আর হলে ঢুকবার আগে বলে: সফিক, আট তারিখ! মনে থাকে যেন। আমি ওর হয়ে মনে মনে বলি: ইনশাল্লাহ্! আমাদের প্ল্যান প্রোগ্রাম গুড়ে বালি করে দিয়ে হঠাৎ করে হরতালের জন্য তিন তারিখের পরীক্ষা পিছিয়ে চৌদ্দ তারিখে চলে গেল। মঈনুল আর মাসুদ মুখ কালো করে বলল: শালার, আসলেই তোর ছাই কপাল। যাই হোক, ইনশাল্লাহ্ চৌদ্দ তারিখ আর মিস হবে না।

আমি চৌদ্দ তারিখের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। পরীক্ষার পর অনেক কাজ ছিলো। সেগুলো সব এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখলাম। আত্মীয় স্বজন সবাইকে বলে বেড়াতে লাগলাম- পরীক্ষার পর এক সপ্তাহ কোন কাজ করতে পারব না। শেরপুর যাব, এক বন্ধুর বাসায়।

সাভার থেকে মামা এসেছিলেন। পরীক্ষার পর বেড়াতে যাবার জন্য বললেন। আমি বললাম: এবার সাভারে যাব না মামা। এবার এক বন্ধুর সাথে শেরপুর যাব; এক সপ্তাহের সফর। ছোট খালা একদিন বললেন: বাসায় কারেন্টের কিছু কাজ ছিলো।

তোর পরীক্ষা শেষ হলে একটু করে দিস তো। আমি হাসি মুখে বললাম: কয়েক দিন দেরি হবে আন্টি। পরীক্ষার পর এক সপ্তাহ ঢাকায় থাকব না, শেরপুরে যাব। কয়েক দিনের মধ্যে আত্মীয়-স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী সবাই জেনে গেল যে আমি শেরপুর যাচ্ছি। তের তারিখ রাতে আমি কাপড়-চোপড় ধুয়ে ইস্ত্রি করে রাখলাম।

ঘরে বেড়াতে যাবার মত ভাল কাপড়ের ব্যাগ নেই। আমি আন্টির বাসা থেকে এক সপ্তাহের জন্য একটা ব্যাগ নিয়ে আসলাম। মুন মামার কাছ থেকে কয়েকটা বইও নিয়ে আসলাম বেড়াতে গিয়ে পড়ার জন্য। সাথে আর কী কী নেব তার একটা লম্বা লিস্ট করে ফেললাম। ছবি তোলার জন্য একটা ক্যামেরা আর একটা ডায়েরী নিলাম।

প্রতিদিনের ঘটনা এতে লিখে রাখব। আর একটা খাতা। একটা ভ্রমণ কাহিনী লেখবার ইচ্ছা আছে। সবকিছু গুছিয়ে ব্যাগে ভরে রাখলাম। এটা আমার ছোট বেলার স্বভাব; কোথাও যাবার কথা থাকলে আগে থেকেই সব কিছু গুছিয়ে রাখি।

নয়তো যাবার সময় একটা কিছু নিতে ভুল হবেই। চৌদ্দ তারিখ পরীক্ষা হলের সামনে বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলাম। একে তো শেষ পরীক্ষা, তার ওপর আবার ইংরেজি। কেউ কোন গুরুত্বই দিচ্ছি না। ইংরেজি আবার কোন পরীক্ষা হলো নাকি? বানিয়ে বানিয়েই তো সব লেখা যায়! এমন সময় মাসুদ এসে আমাকে বলল: সফিক একটু শুনে যা।

আমি ওর সাথে বারান্দার একপাশে চলে গেলাম: কী হয়েছে? মাসুদ নাক চুলকে বলল: কি করে যে বলি। আই এম সরি দোস্ত! আমার বুকের ভেতর ধরাস্ করে উঠলো। মুখে ফ্যাকাসে হাসি ফুটিয়ে বললাম: প্রোগ্রাম ক্যানসেল? মনে মনে বললাম: আল্লাহ এটা যেন না হয়; ঘটনা যেন অন্যকিছু হয়। মাসুদ লাজুক হেসে বলল: না মানে হয়েছে কী- গতকাল চট্টগ্রাম থেকে খবর এসছে যে, বড় খালুর চাকরি হঠাৎ করে চলে গেছে। খালু ওখানে অফিসের কোয়ার্টারে থাকতেন।

কাল সকালের মধ্যে সেই কোয়ার্টার খালি করে দিতে হবে। নানার বংশে তেমন পুরুষ মানুষ খুব একটা নেই। তাই আজ রাতেই আমাকে চট্টগ্রাম চলে যেতে হচ্ছে। খালুর জিনিষ-পত্র নিয়ে কাল শেরপুর আসতে হবে। বুঝতেই পারছিস; আই এম সরি, দোস্ত।

রিয়েলি সরি। আমি সান্তনার সুরে বললাম: আরে না, তাতে কী হয়েছে। বিপদ-আপদ মানুষের হতেই পারে। আমি তো জানিই আমার ছাই কপাল। আমার সব কিছুতেই কুফা লাগে।

এজন্যই তোদের ইনশাল্লাহ্ বলতে বলেছিলাম। : মন খারাপ করিস না দোস্ত। : আরে ধুর! আমি একটু মন খারাপ করিনি। এরকম আমার প্রায়ই হয়। কোন ব্যাপার না।

মাসুদ ফ্যাকাসে হাসি হেসে বলল: আর তাছাড়া এই ছুটিই তো আর শেষ না। সামনে তো আবার শীতের ছুটি আসছে। শীতের সময় গেলে আরও মজা হবে। তখন যাব, নাকি বলিস? আমি হাসি মুখে বললাম: ইনশাল্লাহ্। ইংরেজি পরীক্ষাটা কেন যেন বেশি ভাল হলো না।

সিক্সটি পারসেন্ট প্রশ্নের এনসার করে বেরিয়ে এলাম হল থেকে। প্রশ্ন কমনই পড়েছে। কিন্তু কেন যেন লিখতে ইচ্ছে করছে না। কোন সেনটেন্সই মাথায় আসছে না। সহজ সহজ বানানগুলো বার বার প্যাঁচ লেগে যাচ্ছে।

তার মানে কি আমার মন খারাপ? অসম্ভব! এতো সামান্য ব্যাপারে মন খারাপ করার ছেলে আমি নই। এমনকি কারও ওপর রাগও লাগছে না। বাসায় এসেও আমার কোন রকম লজ্জা লাগলো না। সহজ ভাবে ব্যাগ থেকে সব কিছু বের করে রাখলাম। সন্ধ্যায় আন্টির বাসায় ব্যাগ দিয়ে আসার সময় হাসি মুখেই জানিয়ে আসলাম- প্রোগ্রাম ক্যানসেল; কোত্থাও যাচ্ছি না।

কালই আপনার কারেন্টের কাজ করে দেব। রাতে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এতো প্ল্যান-প্রোগ্রাম ক্যানসেল হওয়া সত্ত্বেও আমার একটুও খারাপ লাগছে না। হয়তো আমার অবচেতন মন ঘটনাটার জন্য প্রস্তুত ছিলো। কিংবা হয়তো শহরের আবেগহীন পরিবেশে থাকতে থাকতে মনটা রোবট হয়ে গেছে। মন খারাপের বদলে বরং আমার একটু একটু মায়া লাগছে।

মায়া লাগছে মাসুদের জন্য। কথাগুলো বলার সময় ও কী পরিমান লজ্জা বা কষ্ট পাচ্ছিলো সেটা ভেবে মায়া লাগছে। আহারে, বেচারা! ----------০---------- [পুনশ্চঃ আমার এই গল্পটা মাসুদ ও মঈনুল, দুই বোকা বন্ধুর জন্য। যারা গল্পটা পড়ে শুধু শুধুই মনে কষ্ট পাবে। ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।