কারার ঐ লৌহ-কপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট রক্ত-জমাট শিকল পুজার পাষাণ-বেদী ওরে ও তরুণ ঈশান বাজা তোর প্রলয় বিষাণ ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি প্রথম লেখা মুভি রিভিউ
পরকীয়া নিয়ে এখন একের পর এক ছবি হচ্ছে, প্রত্যেকেই নিজের নিজের মতো করে সম্পর্ক, বিবাহ, প্রেম, বিশ্বাস, নির্ভরতার জায়গাগুলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। কেউ বা দেখাচ্ছে কিভাবে সম্পর্ক ভেঙ্গে সমাজ টা নতুন করে তৈরি হচ্ছে।
যদিও মুভির শুরুতে বলা হয়েছে inspired by Rabindronath Tagore's Nostonirh, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে নামটা অবশ্যই একটা গিমিক, দর্শক টানার জন্য। কারন নষ্টনীড়ের চারু আর চারুলতার চারুর মধ্যে অনেক পার্থক্য। বাংলা ছবি যে অনেক সাহসী হয়েছে তা এই সিনেমাটি দেখলে টের পাওয়া যায়।
অত্যন্ত সাহসী কিছু দৃশ্যে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা। বাংলা ছবিতে এমনটি আর কখনো মনে হয় দেখা যায়নি। কর্মব্যস্ত ও উদাসীন স্বামী বিক্রম ছাড়া তার সঙ্গী এই সময়ের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সাইবার বন্ধুতা। তার সময় কাটে, ল্যাপটপ অথবা ট্যাবে নিয়ত ফেসবুক চ্যাটে। তুলনা টানলে তাই বলতে হয়, সত্যজিতের চারু জানতো রুমালে নিপুণ নকশা-কাটার শৈলি।
তার ছিল দূরবিন, চৈতির আছে অনলাইন চ্যাটরুমস। তার ফেসবুক আইডি ‘চারুলতা ২০১১’ বাকি রইল শুধু অমল। অগ্নিদেব তাকেও এনেছেন, চৈতির ফেসবুক ফ্রেন্ড সঞ্জয়ের আইডি ‘অমল’ গল্পের প্রয়োজনে এই অমল ওরফে সঞ্জয় বিক্রমেরই দূর সম্পর্কের ভাই! ''
সবই তো মিল তবে পার্থক্য কোথায়?পার্থক্য টা কোথায় তা বোঝার জন্য ছবিটা একবার দেখা খুব দরকার,চিত্রনাট্যে যেন একটা ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপার আছে। সাথে খুব সূক্ষ্ম ভাবে কিছু তুলনা তুলে ধরা হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে সব সময় নিজের ইচ্ছা কে প্রাধান্য দিয়ে বেঁচে থাকটাও একটা জীবন
। আমাদের মা বোনেরা আজও নির্যাতিত হয়ে স্বামীকে ভালবেসে যাই এইটাকে নিছক দুঃখ
জনক বলে দেবার অবকাশ রাখে নি ছবিটিতে, তাও আবার কাজের মহিলা এবং চারুর কথার মধ্য দিয়ে দর্শককে একবার হলে ভাবতে বাধ্য করেছেন কোনটা থিক?কে ঠিক করছে? চারু নাকি কাজের মহিলা?
সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ ক্ল্যাসিক।
সেখানে এ রকম একটা চরিত্রে কাজ করে বড় রিস্ক নিয়ে ফেলেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, তার উপর স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা বর্ধিত চাপ এসে যাই ভালো করার, তিনি সে চাপ ভালো করে সহ্য করেছেন,এবং সবাই কেই এই নতুন চারু কে নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছেন
‘চারুলতা ২০১১’ হয়তো শুধু বিষয়ের জন্য নয়,ছবি টি যেহেতু একটি উপন্যাস অবলম্বনে তাই ছবির ঘেরাটোপের মধ্যে থেকেও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, দোলন রায় এবং অবশ্যই অর্জুন চক্রবর্তীর যে দক্ষ অভিনয় দেখার সুযোগ ঘটে, শীর্ষ রায়ের ক্যামেরা আর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুর মিলেমিশে যে সার্থক প্রযোজনাটি উপস্থাপিত হয় তা নিশ্চিত ভাবেই ভাল বাংলা ছবির মর্যাদা পেতে পারে।
ছবিটিতে ক্লোজশটের আধিক্য দেখা যাই, যাতে চারু রুপী ঋতুপর্ণার প্রায় মেকআপ হীন মুখের অভিব্যক্তি দর্শকের মনে একেবারে সূচের মত আঘাত করে, সমাজের দালান কোঠায় থাকা চারুলতা ২০১১ এর মধ্য থেকে সব কিছু ভেঙ্গে চুড়ে বের হয়ে আসে রবীন্দ্রনাথের চারু, কিন্তু তবুও সে কিন্তু চারু নয়, সে চারুলতা ২০১১
‘চারুলতা ২০১১’ আসলে চৈতি বলে একটি মেয়ের ফেসবুক আই ডি। আর অমল যার ফেসবুক আই ডি, সেই সঞ্জয় কিন্তু চৈতির জীবনে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো একদিন আচমকা এসে পড়েনি। ফেসবুকের অমলের সঙ্গে অন্তর্গত এক শিক্ষিতা, স্বাধীনচেতা গৃহবধূর একাকীত্বের সঙ্গী ছিল মাত্র, তার মধ্যে ছিল সামান্য রোম্যান্টিকতার ছোঁয়া। কিন্তু সেই অমল যখন লন্ডনের পরবাস থেকে কলকাতায় পদার্পণ করল তখন অমল-চারুর নিছক সাক্ষাৎকার ভদ্রতাপূর্ণ মননশীল যোগাযোগ দুমড়ে-মুচড়ে প্রবল কামনা-বাসনায় রূপান্তরিত হল।
হয়ত এটাই সত্যি, একজন বিবাহিতা নারী যখন পরপুরুষের সান্নিধ্যে আসে তখন তার শরীরটাই সর্বপ্রথম দাবি করে পুরুষ। কারণ ধরেই নেওয়া যায় যে পরিপূর্ণ শরীর এবং মনের বন্ধন স্বামীর সঙ্গে থাকলে একটি মেয়ে অন্য পুরুষের প্রতি টান অনুভব করবেই বা কেন? আর এখানে চৈতি বান্ধবীর কাছে স্বীকার করেছিল যে সে ‘সেক্স-স্টার্ভড’ পরিপাটি একটা সংসার ছিল চৈতির। শুধু ছিল না স্বামী-সঙ্গ। সদাব্যস্ত বিক্রম এক পত্রিকার সম্পাদক, যে যদিও চৈতিকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে তথাপি সময় দিতে পারে না।
একটি দৃশ্যে চৈতি স্বমেহনে প্রবৃত্ত আর সেই সময় ঘরে ঢুকে আসে বিক্রম।
স্ত্রীকে এই অবস্থায় দেখে সে চোরের মতো ফিরে যায়। আর এখানেই বোঝা যায় উভয়ের সম্পর্কটা আসলে বহুলাংশে প্রাতিষ্ঠানিক। তা সত্ত্বেও চৈতি অমলের সঙ্গে মিলনের স্মৃতিকে ধুয়ে-রগড়ে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। অমলের সঙ্গে আর কখনও দেখা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এর পরেই আসে গল্পের আসল মোচড় যখন অমল এসে হাজির হয় চারু-বিক্রমের বাড়িতে! সে ‘নষ্টনীড়’-এর গল্পের মতোই চৈতির পিসতুতো দেওর, নাম সঞ্জয়।
কলকাতার কয়েকটা দিন সে বিক্রমের বাড়িতেই থাকবে স্থির হয়।
‘চারুলতা ২০১১’-র চরিত্রটাকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার মধ্যে লাস্য এবং যৌনতা আছে ঠিকই কিন্তু সেটা আছে অত্যন্ত রুচিশীলভাবে। একজন মহিলার ভেতরে লুকিয়ে থাকা যৌনতাকে তুলে ধরা হয়েছে এক ভিন্ন তুলিতে।
শেষের দৃশ্যে বিক্রম চৈতির গলা টিপে ধরে জানতে চায়, “হু ইজ দ্য ফাদার?” উত্তরে চৈতি বলে “ইউ”। “তা হলে অমল কে?’’ “চারুলতাকে জিজ্ঞেস করো,” বলে চৈতি।
আমাদের সামাজিক পরিচয়ের ভেতরেই যে আমাদের নকল পরিচয়গুলো প্রাণ পায় এ কথা সংসারজীবী মানুষ সহজে মেনে নিতে পারে না, আর তাই হয়তো পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্য, সিনেমা সেই সত্যিকেই বার বার প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছে!
সব চেয়ে বড় উপলব্ধি করার মত বিষয় ছিল সাইবার সেক্স আর ওয়ান-নাইট স্ট্যান্ডের যুগে সম্পর্ক যতখানি তলানিতে এসে ঠেকেছে সেখানে চৈতিকে কয়েক দিনের প্রেম-যৌনতা-মোহের ওপর সম্ভবত বিবাহ নামক হাজার হাজার বছরের পুরনো স্থাপত্যকেই অধিক স্বীকৃতি দিতে দেখি আমরা। ‘প্রেগ কালার টেস্ট’-য়ে চৈতি যে অন্তঃসত্ত্বা, তা ধরা পড়ার পর যখন সে স্নানঘরে বসে কপাল ঠুকে আত্মভর্ৎসনা করতে থাকে তখন মনে হয় পরকীয়ার অন্তঃসারশূন্যতার হাত থেকে একবার রেহাই পেয়ে এই অবৈধ সন্তানকে সে নিজেও আর বহন করতে চায় না। চৈতি যদি কিছু চেয়ে থাকে তা হল বিয়েটা বাঁচাতে।
তবে একটা সমস্যা যেটা দেখলাম টা হল মুভি নির্মাতাদের মনে হয় ছোট্ট একটা জিনিস মাথায় আসে নি। তারা বলেছেন এবং বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ফেসবুককে কিন্তু দেখিয়েছেন জিমেইল ইন্টারফেস।
বিষয় টা খানিক টা অসামাঞ্জতা এনে দিয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।