জীবনের কথা বলতে চাই "আব্বু, আমি জানি তুমি খুব ব্যাস্ত। কিন্তু কাল তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে। "
"কোথায় আম্মু?"
"কোথায় আবার? আমাদের স্কুলে। কাল তো sports day. তোমাকে যেতেই হবে। "
"উ ম ম ম ম.........sports day ? তাহলে তো যেতেই হবে।
কিন্তু, কাল তো আমার একটা মিটিং আছে মামনি। তাও যেনতেন মিটিং নয়, স্বয়ং প্রেসিডেন্টের সাথে মিটিং। কি করি বলতো?"
"থাকো তুমি তোমার মিটিং নিয়ে। যেতে হবে না তোমাকে আমার সাথে। পচা তুমি।
"
"হা হা হা হা হা। " মেয়ের অভিমানে হেসে ফেললেন ইরানের বিখ্যাত নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ ডঃ দারিউস রেজা। মেয়েকে আদর করে দিয়ে বললেন- "ঠিক আছে মা, কাল আমি মিটিং সেরেই সোজা চলে আসবো তোমার স্কুলে। খুশি এবার ??"
বাবার প্রমিস শুনে মেয়ের গোমড়া মুখে যেন ঈদের খুশির ঝিলিক খেলে গেলো। "তুমি মোটেও পচা না, তুমি অনেক ভাল"-এই বলে এক দৌড়ে আম্মুর বুকে গিয়ে মুখ লুকাল মেয়েটা।
মেয়ের এই কাণ্ড দেখে হেসে
উঠলেন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই। সেই সাথে তাদের মনটাও কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। নতুন দুটো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে আজকাল খুব ব্যাস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে ডঃ রেজাকে। পরিবারের কাউকেই সময় দিতে পারছেন না একদম। কোথাও যে একটু ঘুরতে যাবেন মেয়েটাকে নিয়ে,
তাও পারছেন না নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে! ছোটকাল থেকেই দেশসেরা পদার্থবিদ হওয়ার এই স্বপ্নটা যে জীবনের অন্যসব স্বপ্নকে এইভাবে দূরে ঠেলে দেবে, তা কোনদিন কল্পনাতে আসেনি তার।
৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১। হরমুজ প্রনালি দিয়ে বন্দর-ই-আব্বাসের দিকে আসছে ছোট্ট ওয়াটার ভ্যাসেল কিং অব পার্সিয়া । পোর্টের কাছাকাছি আসতেই একটা হালকা সারা পড়ে গেলো পার্সিয়ার যাত্রীদের মধ্যে। কে কার আগে নামবেন, এই নিয়ে একটা উত্তেজনা। আর, এই উত্তেজনার ভিড়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের কড়া চেকিং সহজেই এড়িয়ে ভ্যাসেল থেকে নেমে এলো মোসাদের টপ এজেন্ট ফুয়েদ ইতান।
বিশেষ এক গোপন মিশনে দ্বিতীয়বারের মতো ইরানে পা রাখল ফুয়েদ। পোর্টে নেমেই শার্টের বুকপকেটে ঝোলানো সানগ্লাসটা চোখে পড়ে নিল সে। মুখ ভর্তি অনভ্যস্ত দাড়ি কুটকুট করছে বিচ্ছিরি রকম। সাথে সেপ্টেম্বরের বিরক্তিকর গরম। কিন্তু অস্বস্তি প্রকাশ করার উপায় নেই একদম।
আচরন একটু এদিকওদিক হলেই ধরা পড়ে যাবে সে গোয়েন্দাদের হাতে। পোর্ট থেকে বেড়িয়ে ঠিক ১০০ মিটার হেঁটে হোটেল আল-আহভাজ ডানে ফেলে কিছুদুর এগুতেই চোখে পড়লো কালো রঙের একটা বাইক। খেয়াল করে নাম্বার মিলিয়ে দেখল ফুয়েদ। "O-44-6-03- FE"- যাক ! একদম মিলে গেছে। কোনও দিকে না তাকিয়ে সোজা হেঁটে এসে বাইকে চড়ে বসল সে।
ইঞ্জিনটা এখনও গরম। সব কিছুই ঠিক মতো এগুচ্ছে তার মানে । ঠোটে একটা মুচকি হাসির রেখা এসেই আবার মিলিয়ে গেলো ফুয়েদের। বাইক স্টার্ট দিলো সে। গন্তব্য-তেহরান।
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১১। প্রেসিডেন্টের সাথে মিটিং শেষে তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে চেপে বসলেন ডঃ দারিউস রেজা। খুব দ্রুত মেয়ের স্কুলে পৌঁছুতে হবে। ওরা কি এখনও স্কুলে আছে, নাকি প্রোগ্রাম শেষে বাসায় ফিরে গেছে, কে জানে?? ডঃ রেজা খুব করে চাচ্ছেন আজ স্কুলে গিয়ে মেয়েটার ছোট্ট আবদারটা পুরো করতে। বাবাকে খুব মিস করে আজকাল ও।
ওদিকে, দাস্ত-এ-কাভির অর্থাৎ লবন মরু পাড়ি দিয়ে সেম্নান শহর ছুয়ে তেহরানের দিকে এগিয়ে আসছে ফুয়েদ এতান। মরুর লবনাক্ত হাওয়া বেশ পুড়িয়ে দিয়েছে এবার তাকে।
ডঃ রেজার গাড়ি পৌঁছে গেছে মেয়ের স্কুলে। গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়লো স্ত্রী আর মেয়েকে। মাঠের কোনায় লাল সোফায় বসে আছে ওরা, ঐযে।
হঠাৎ মেয়েটাও কীভাবে যেন বুঝল, বাবা এসে গেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে বাবাকে দেখেই দৌড়ে ছুটে আসতে লাগলো তার দিকে। ওদিকে ডঃ রেজাও হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরার জন্যে।
কি অদ্ভুত এক ভাললাগার দৃশ্য!
দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে ফুয়েদ এতান, তেহরানের খুব কাছে পৌঁছে গেছে সে। আর, tel aviv এ অপেক্ষার প্রহর গুনছে মোসাদ প্রধান এহুদ দায়য়ান।
সুখবরের অপেক্ষায় ওয়্যারলেসে সতর্ক কান তার। এজেন্ট ফুয়েদ তার নিজের হাতে তৈরি। আর, ফুয়েদ ভুল করেনা, জানে এহুদ। তবুও উৎকণ্ঠা। কখন আসবে দুই শব্দের সেই বিখ্যাত বার্তা- "next what?"
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরতে না ধরতেই পকেটের ফোনটা বেজে উঠলো ডঃ রেজার।
"এইমাত্র এক মোটরবাইক আরোহীর গুলির প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের চিফ নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানি ডঃ মাজিদ শাহরিয়ার" - ফোনের অপরপাশ থেকে উৎকণ্ঠা ভরা কণ্ঠে জানালো কেউ একজন।
তিনদিনের মাথায় ডঃ দারিউস রেজা নিযুক্ত হলেন ইরানের নিউক্লিয়ার কার্যক্রমের প্রধান হিসেবে। তার ব্যাস্ততা বেড়ে গেলো বহু বহু গুন। আর, আফগান-পাকিস্তান সিমান্তের ZAHEDAN হয়ে ফুয়েদ ফিরে এলো tel aviv এ। গতকালই এক কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছে সে।
এবার কিছুদিন
পরিবারকে সময় দেবে এজেন্ট ফুয়েদ এতান। মোসাদের বিখ্যাত কিলিংমেশিন জেন্ট ফুয়েদ এতান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।