আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌমি'র ভূতের গল্প!! (গল্প লেখার অপচেষ্টা!! )

রক্ষা কর, আল্লাহ্‌ !!! রাত ১০ টা। সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ নেই। মৌমি’র আজ মেজাজ খুব খারাপ তাই। ল্যাপটপের চার্জ ইতোমধ্যেই শেষ। রাত ১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে প্রতিদিন।

তাই মোবাইলেও চার্জ রাখার চিন্তা আসেনি বিকেলে। কিছুই করার নেই। গ্রামের অন্য সবার মত ওকেও আজ ঘুমিয়ে পড়তে হবে তাড়াতাড়ি। ডিনার করে ১১.৩০ নাগাদ শুয়ে পড়ল ও। একবারে ফজরের নামাযের সময় উঠবে।

লাইটের সুইচ অন করে রাখল,যাতে বিদ্যুৎ আসলে ঘুম ভাঙ্গে। মৌমি আলোতে ঘুমাতে পারেনা। ভাগ্য বিরূপ! মৌমি’র ঘুম ভেঙ্গে গেল ঘণ্টা খানেক পরেই। বিদ্যুতের দেখা নেই তবু। মৌমি পানি খেয়ে কাগজ কলম নিয়ে বসল।

সময় কাটানোর জন্য ব্লগে টুকটাক লেখালেখি করে ও মাঝে মাঝে। কবিতা লেখা শুরু করল- স্বপ্নে- আমি ছুঁয়েছিলাম তোমার হাত... ভালবাসার সেই প্রথম পরশ-প্রথম শিহরণে কেঁপে উঠল আমার ঘুমন্ত চোখের পাতাও... এইটুক লিখেই থেমে গেল। নাহ, কবিতার ভাব আসছেনা আজ। তারচে একটা গল্প লিখলে কেমন হয়?? বাইরে ঝিরিঝিরি হাওয়ায় গাছের পাতা দোল খাওয়ার খসখস শব্দ শোনা যাচ্ছে। মৌমি’র মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপল! একটা ভূতের গল্প লিখলে কেমন হয়!! ভূতে বিশ্বাস না করলেও ভূতের ভয় ঠিকই আছে মৌমির! লেখা শুরু করল ও।

গ্রামের নাম সখীপুর। অজপাড়া গাঁ বলতে যা বোঝায়, ঠিক তেমনি একটা গ্রাম। গ্রামের স্কুলের মাষ্টার অতীন বাবু। বিয়ে থা করেন নি, একাই থাকেন স্কুল থেকে একটু দূরে নিজের একচালা ঘরে। বাড়ির পাশেই বিশাল বটগাছ।

সচরাচর এই পথ মাড়ায় না কেউ। কবে কোন জমিদারের ছেলে নাকি এই গাছে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল! অতীন বাবুর এত ভুত প্রেতের ভয় নেই। উনি নিজের মত থাকেন। বড় ভাল মানুষ। সেদিন বিকেল থেকেই আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল।

সন্ধ্যার পর বাতাসের বেগ বাড়ল। বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টির দিনে খিচুরি খেতে মন চাইল অতীন বাবু। রান্না সহজ। ডাল, চাল আর দু’টুকরো আলু দিয়ে রান্না চাপানো হল।

খিচুরী থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে। অতীন বাবু হঠাৎ একটা শব্দ শুনে চমকে উঠলেন। গিয়ে দেখলেন বারান্দার একটা জানালা বাতাসের তোড়ে যেন খুলে গেছে। আটকাতে গিয়ে তিনি দেখলেন কে যেন দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। অবাক হলেও অতীন বাবু বললেন, কে ওখানে? মানুষটা সামনে এগিয়ে এল।

হারিকেনের আলোয় এক তরুণকে দেখা গেল। ভিজে চুপচুপে অবস্থা। এইটুক লিখে মৌমি থামে। বাইরে থেকে কেমন যেন একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে। কেউ যেন কিছু খাচ্ছে চপচপ করে! মৌমি জানালা খুলে আলো ফেলল বাইরে।

ভক করে একটা দুর্গন্ধ নাকে এসে লাগল ওর। একটু উঁচুস্বরে বলল ও- কে? কে ওখানে? গলার স্বরটা একটু কেঁপে গেল। কোন জবাব পাওয়া গেলনা। তবে আওয়াজটা বন্ধ হয়ে গেল। মৌমির মা পাশের রুম থেকে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললেন, কি হয়েছে মৌ? না, মা।

কিছু না। কিসের যেন শব্দ শুনলাম! ঘুমিয়ে পড়। আচ্ছা,মা। ল্যাম্পের আলো কমে এসেছে। মৌমি টর্চের আলোয় লেখা শুরু করল আবার।

আজকের পরিবেশটা গল্প লেখার জন্য পারফেক্ট!! আরে, তুমি তো ভিজে একাকার! ভেতরে এস! দরজা খুলে দিলেন অতীন বাবু। ভেতর আসল তরুন। সাথে সাথে একটা অচেনা কটকটে গন্ধ পেলেন অতীন বাবু। গন্ধের ব্যাপারটা একটু আগের ঘটনা থেকে লেখায় নিয়ে এল মৌমি। তোমাকে আগে কখনো এই এলাকায় দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না! কে তুমি বাবা?? জী, আমি সুজন।

আমি শহর থেকে বেড়াতে এসেছি বন্ধুদের সাথে। গ্রামের পুরনো জমিদারবাড়িটা দেখতে গিয়েছিলাম। ফিরতে দেরি হয়ে গেল। আর হঠাৎ বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল! তোমার বন্ধুরা কোথায়? ওরা যায়নি আমার সাথে। নদীর পাড়ে বেড়াতে যাবার কথা ওদের।

অতীন বাবু আর ঘাঁটালেন না। শহর থেকে অনেকেই আসে গ্রামে বেড়াতে। সবাইকে উনার চেনার কথা ও না। আচ্ছা, এসে যখন পড়েছ, বৃষ্টি থামার আগে তো যেতে পারবেনা। আমার সাথে বরং রাতের খাবার খেয়ে নাও।

হিন্দু বাড়িতে খেতে আপত্তি নেই তো? আপত্তি দূরে থাক, সুজন সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেল। অতীন বাবু এবারো একটু অবাক হলেন। ভাবলেন- ছেলেটা ক্ষুধার্ত বোধহয়! অতিথির জন্য ডিম ভাজা হল। দুজন একসাথে মজা করে খেলেন। বৃষ্টি থেমে এল আস্তে আস্তে।

তরুণ আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি যাই। নিঃসঙ্গ অতীন বাবু অনেকদিন পর কথা বলার একজন মানুষ পেয়ে খুশি হয়েছিলেন। বললেন- ফিরে যাবার আগে আরেকবার এস কিন্তু! কার বাড়িতে উঠেছ তোমরা? সুজন হাসল। বলল- নওয়াব আলী সাহেবের বাড়ি। নামটা পরিচিত লাগল না।

সে কথা বলতে গিয়েই অতীন বাবুর চোখ পড়ল সুজনের চোখে। শিউরে উঠলেন তিনি। সাপের মত শীতল দৃষ্টি সে চোখে!! কোন কথা হল না আর। সুজন চলে গেল। পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে পরিচিত এক লোকের সাথে দেখা হল অতীন বাবুর।

জিজ্ঞেস করলেন, জহির সাহেব, নওয়াব আলী সাহেবের বাড়ীটা চেনেন? জহির সাহেব চমকে উঠে বললেন, নওয়াব আলী!! পুরনো জমিদারবাড়ীর জমিদার ছিলেন উনি!! ওই যে যার ছেলে বট গাছটাতে..., কথা শেষ না করেই তড়ীঘড়ি করে চলে গেলেন জহির সাহেব। অতীন বাবু এরপর অনেককেই জিজ্ঞেস করলেন গ্রামে শহর থেকে কেউ বেড়াতে এসেছে কি না! কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারলনা! একজনের কাছ থেকে কেবল এটুকু জানতে পারলেন- জমিদার সাহেবের ছেলে সুজন নাকি খিচুড়ি খেতে খুব পছন্দ করত!! লেখা শেষ হল,টর্চের চার্জও শেষের পথে। মৌমি শুয়ে পড়ল। কালই আপলোড করবে গল্পটা। যদিও খুব একটা জমিয়ে তুলতে পারেনি! জমাবে কি করে, ও তো ভূতের গল্প পড়েনা কখন।

আর ভূত বলে কিছু তো নেই ই! মৌমির চোখে ঘুম ধরতেই হঠাৎ আবার সেই চপচপ আওয়াজ টা শুরু হল। সাথে পচা গন্ধটা। এবার অনেক তীব্র গন্ধ। মৌমি স্পষ্ট শুনতে পেল ঘরের ভেতর কে যেন হাঁটছে! ভয়ে কোন শব্দ করতে পারল না ও। ক্যাঁচ করে শব্দ হল ওর রুমের দরজা খোলার।

মৌমি টর্চের খোঁজে হাতড়াচ্ছে চারপাশ। কোথায় গেল টর্চটা! এখানেই তো ছিল! গন্ধটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আর শব্দটা ঠিক ওর বিছানার পাশে এসে থামল!! মৌমি মনে প্রাণে ভাবছে- এটা একটা দুঃস্বপ্ন! এখুনি ঘুম ভাঙবে ওর! পরদিন সকালে ওর মা পুকুর পাড়ে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেল। মৌমি’র ধড়হীন মাথাটা ওখানে পড়ে ছিল। কেউ যেন প্রবল আক্রোশে মাথাটা ধড় থেকে ছিঁড়ে আলাদা করেছে!! ------------ ------------------------------------------------------- জানিনা কেমন লিখেছি।

গল্পের মৌমির প্রথম অবস্থা, মানে গল্প লিখবে ডিসিশান নেয়া পর্যন্ত অবস্থাটা হচ্ছে আমার গতকালকের অবস্থা। কারেন্ট ছিল না। গল্পটা লিখলাম আজ। ভুতে আমার অনেক ভয়। আজ ঘুমাব কি করে কে জানে!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।