নিন্দা বা শাস্তি নয়, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বাহবাই পাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন মার্কিন পণ্ডিত নোয়াম চমস্কি।
দি মার্ক নিউজ ডট কমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, “গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় যে লোকটি সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে, বাহবাই তার প্রাপ্য, অসহনীয় নিন্দা বা শাস্তি নয়। ”
যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন কূটনৈতিক নথি প্রকাশ করে হৈ চৈ ফেলে দেওয়া অ্যাসাঞ্জ সম্প্রতি ইকুয়েডরের রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেও তাকে কাটাতে হচ্ছে লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে। ওই চত্বর ছাড়লেই লন্ডন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে পঠিয়ে দেবে সুইডেনে, যেখানে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার বিচার হওয়ার কথা।
অ্যাসাঞ্জ বরাবরই ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছেন, উইকিলিকসের কর্মকা-ে ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তাকে তুলে দিতেই সুইডেনে মামলা সাজানো হয়েছে।
মাইকেল মুর, অলিভার স্টোনের মতো বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতারাও কথা বলেছেন অ্যাসাঞ্জের পক্ষে।
ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস ও দর্শনের শিক্ষক চমস্কি তার নিবন্ধে লিখেছেন, সুইডেনে দুই নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালানোর যে অভিযোগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে এসেছে, তার তদন্ত অবশ্যই হওয়া উচিৎ, যেমনটা হওয়া উচিৎ অন্য সবার ক্ষেত্রে। তবে কোনো সভ্য সরকারের পক্ষে অ্যাসাঞ্জকে সেখানে পাঠানো উচিৎ হবে না, যেখানে অ্যাসাঞ্জের সুবিচার পাওয়ার আশা ফিকে হয়ে যাবে।
চমস্কির মতে, সুইডেনের অভিযোগের বিষয়ে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি সহজেই সমাধান করা সম্ভব ছিল। সুইডিশ পুলিশ লন্ডনে এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারত।
এমনকি তারা ইকুয়েডরের দূতাবাসেও অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে কথা বলতে পারত। কিন্তু সুইডিশ কর্তৃপক্ষ এর কোনোটিতেই রাজি হয়নি।
“এমনকি অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে না- এমন বিবৃতি দিতেও রাজি হয়নি তারা। ”
অ্যাসাঞ্জ যদি আমেরিকার নথি প্রকাশ না করে রাশিয়া বা অন্য কোনো দেশের গোমর ফাঁস করে দিতেন এবং তারপরের ঘটনাগুলো যদি একই রকমভাবে ঘটতো- সেক্ষেত্রে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের আচরণ অন্য রকম হতো বলেই এই মার্কিন তাত্ত্বিকের বিশ্বাস।
সমালোচকদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে বলেছেন, উইকিলিকসে প্রকাশিত নথির তথ্য সত্যি হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ইকুয়েডরের রেকর্ড মোটেও ভাল নয়।
ফলে এমন একটি দেশের কাছে আশ্রয় চেয়ে অ্যাসাঞ্জ কপটতার পরিচয় দিয়েছেন।
এই সমালোচনার বিপরীতেও চমস্কিকে পাশে পেয়েছেন অ্যাসাঞ্জ।
চমস্কি বলছেন, ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের যে অভিযোগ তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিৎ। কিন্তু একইসঙ্গে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স বা অন্য দেশগুলোকেও এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া উচিৎ নয়, কারণ একই অভিযোগ এসব দেশের বিরুদ্ধেও বহুবার এসেছে।
উইকিলিকসের কর্মকা-ের সমর্থনে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ভাষাতত্ত্ব ও দর্শন বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক চমস্কি বলেন, একটি দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কে কি করছেন তা জানার অধিকার গণতন্ত্রে প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে।
তবে রাষ্ট্রেরও অধিকার রয়েছে কিছু বিষয় গোপন রাখার।
“আমি উইকিলিকসে প্রকাশিত সব নথি পড়িনি। তবে যেগুলো পড়েছি তার মধ্যে এমন কিছু পাইনি যা গোপন রাখার জরুরি কোনো কারণ থাকতে পারে। ”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।