আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরবর্তী জেনারেশন হতে পারে স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধি!!! ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্প!!! সরকার কি এ বিষয়ে জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন মনে করছে না ?!!!

গাড়ি থেকে নেমে মূল ভবনের দিকে হাটতে লাগলাম আমি, গাজ্জালী ও ডঃ বাদায়ুনী। বাগানের বা দিক থেকে একটা ডাক আসল (গাজ্জালীকে ডাকা হল)। তাকিয়ে দেখি পাইপ দিয়ে গাছে পানি দিচ্ছেন আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব, বিনয়ী সেই মহামানব। হ্যাঁ, ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ ... চামড়ার বিষাক্ত বর্জ্য থেকে তৈরি করা হচ্ছে মাছ এবং পোল্ট্রি মুরগীর খাবার। চামড়া পাকা করার পর ফিনিশিং করার সময় প্রচুর ওয়েস্টেজ বের হয়।

একে চামড়ার বুশি বলে। রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় এ বুশি সিদ্ধ করে সারা দেশে মাছ এবং মুরগীর খাবার হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এসব কেমিক্যাল সমৃদ্ধ বুশি থেকে তৈরি করা খাবার মাছ এবং মুরগী থেকে সরাসরি চলে যাচ্ছে মানব দেহে। কেমিক্যাল, পোল্ট্রি সায়েন্স এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয় দেখা দেবে ।

চামড়ার বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত খাবার যেসব এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে সেসব এলাকার ডিম পরীক্ষা করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষনা পরিষদ ( বিসিএসআইআর) । ডিমের মধ্যে উচ্চ মাত্রার ক্রমিয়াম এবং শিসা ধরা পড়েছে । কোন কোন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তাদের মুরগীর মৃত্যুর হার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। মুরগীর এমনসব অসুখ হচ্ছে যা কোন ঔষধে ভাল হচ্ছেনা। এন্টিবায়োটিকও কাজ করছে না ক্ষেত্রবিশেষে।

রাজধানীর হাজারীবাগ ট্যানারী কারখানা এলাকায় প্রতিদিন শত শত মন চামড়ার বর্জ্য সিদ্ধ করা হচ্ছে। চামড়ার বর্জ্য সিদ্ধ করার পর তা রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর এর নাম হয় শুটকী । যারা মাছ এবং মুরগীর খাবার প্রস্তুত করে তাদের কাছে বিক্রি করা হয় এ শুটকী । তারা এসব শুটকী মেশিনে গুড়া করে খৈল, বিস্কুটের খুড়া, গম, ভুট্টা, সয়াবিন, পলিশ রাইস প্রভৃতির সাথে মিশিয়ে মাছ এবং মুরগীর খাবার তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে।

বাজার থেকে এ খাবার কিনে নিয়ে যায় মাছ এবং পোল্ট্রি মুরগীর চাষীরা। মাছ এবং মুরগীর যেসব খাবার বাজারে কিনতে পাওয়া যায় তাতে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান থাকে প্রোটিন। আগে এসব খাবারে প্রোটিন হিসেবে ব্যবহার করা হত মাছের শুটকীসহ বিদেশ থেকে আমদানী করা মিট এবং বোন মিলে। কিন্তু এখন সারা দেশে অনেক মাছ এবং মুরগীর খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রোটিন হিসেবে ব্যবহার করে এ চামড়ার বর্জ্য থেকে তৈরি করা শুটকী। হাজরীবাগ ট্যানারী এলাকার চামড়া এবং কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা জানান চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩২ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।

চামড়া ফিনিশিং করে বুশি বের করার স্তর পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ক্রমিয়াম, সালফিউররিক এসিড, সোডিয়াম , লাইম, এলডি, সোডা, ফরমিকা, ক্লোরাইড, সালফেট, এলুমিনিয়াম সালফেট প্রভৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এসব কেমিক্যালের মধ্যে যেগুলো ধাতব পদার্থ তা সবই রয়ে যায় আগুনের জ্বালাবার পরও । পরে এগুলো ধাতব অক্সাইডে পরিণত হয় । এর মধ্যে সবেচেয় ভয়াবহ হল ক্রমিয়াম।

এটি আগুনে জ্বালালেও কোন ক্ষয় নেই। মাটিও হজম করতে পারেনা এই উপাদানটি। ব্যবসায়ীরা এই খাদ্য বেশি নেয়। অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানও এসব শুটকী কিনে থাকে। তবে তারা সরাসরি কেনে না।

অন্য মাধ্যমে কিনে, যাতে কেউ জানতে বা বুঝতে না পারে। নামকরা বিভিন্ন প্রোল্ট্রি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তারা বিষয়টি জানেন, তাই তারা এগুলো ব্যবহার করে না। তারা প্রোটিন হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকেই মিট ও বোন মিল কিনে আনেন। হাজারীবাগ ট্যানারী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বেড়িবাঁধের দুই পাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রতিদিন শুকানো হচ্ছে সিদ্ধ করা চামড়ার বর্জ্য। যেমন বিষাক্ত জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে তেমনি নোংরা পরিবেশে এসব খাবার সিদ্ধ করা ও শুকানো হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আগে এসব বর্জ্য রাখার জায়গা ছিল না। বর্জ্যের গন্ধে এলাকায় আসা যেত না। ট্যানারী কারখানার জন্য একটি বোঝা ছিল এসব বর্জ্য। এখন এসব বর্জ্য সিদ্ধ করে মাছের খাদ্যের একটি অংশ প্রস্তুত করা হচ্ছে। তারা জানান, ট্যানারী থেকে এক গাড়ি বুশি কিনতে হয় ৫০০/৬০০ টাকায়।

তারপর তা থেকে তৈরি শুটকী ৮ থেকে ৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টন চামড়ার শুটকী তৈরি হয়। হাজারীবাগেই অনেক শুটকী গুঁড়া করার কারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়া গাজীপুর, সানারপাড় প্রভৃতি এলাকায় এধরনের বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। দুই শতাধিক ব্যবসায়ী চামড়ার বর্জ্য সিদ্ধ করার কাজে জড়িত।

এর মধ্যে মাত্র দু’জন ব্যবসায়ী আছেন যারা গ্যাসের বয়লারে বর্জ্য সিদ্ধ করে। বাকী সবাই খোলা জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে সিদ্ধ করে। তারা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে চামড়ার আরেক ধরনের বর্জ্য, যাকে বলে সাট। কাপড় থেকে জামা তৈরির সময় যেমন কাটা কাপড় বের হয় তেমনি চামড়া থেকেও এক ধরনের কাটা চামড়া বের হয়। সাট নামে এ কাটা চামড়া জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয় বুশি সিদ্ধ করার কাজে।

চামড়া পোড়ানোর গন্ধ ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে পুরো এলাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, পুলিশ এসে তাদের কাছ থেকে মাঝে-মধ্যে টাকা নিয়ে যায় তবে কোন প্রকার ঝামেলা করে না। আগে মাছের খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রোটিন হিসেবে বিদেশ থেকে মিট বোন কিনে আনত। এখন অনেকে তাদের কাছ থেকে শুটকী কিনে নিয়ে যায়। চামড়ার বর্জ্য থেকে এভাবে শূটকী তৈরি প্রথমে শুরু হয় চট্টগ্রামে।

ঢাকায় ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে এটা শুরু হয়েছে। এছাড়া কাটা চামড়া সিদ্ধ করে আঠা তৈরি করা হয়। এসব আঠা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, রং কারখানা, তাঁত ও কার্টন তৈরির কারখানায় ব্যবহার করা হয়। চামড়ার বুশি সিদ্ধ করার পর তা সাধারণত কালো রং ধারণ করে। সেজন্য অনেকে রং ব্যবহার করে।

তাছাড়া সিদ্ধ করার পর তাতে পচন রোধ করার জন্য এবং অনেক দিন টিকিয়ে রাখার জন্য কেমিক্যাল মেশানো হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এসব কেমিক্যালও ক্ষতিকর। চামড়ার বর্জ্য থেকে মাছ-মুরগীর খাবার তৈরি করা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএসআইআর-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে এবং অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়ঙ্কর এসব কেমিক্যাল ফুড চেইনের মাধ্যমে নানাভাবে মানবদেহে প্রবেশ করছে। ক্রমিয়াম এবং সীসা মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি প্রবেশ করলে মানুষের লিভার, কিডনী, ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেম অচল হয়ে যায়।

নারীর প্রজননক্ষমতাও নস্ট হয়ে যায়। চামড়ার বুশি যদি ধুয়ে অথবা সিদ্ধ করে পানি ফেলে দেয়াও হতো, তাহলেও সাবান, সোড়া, চুন, লবণ অনেকটা চলে যেত। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। তাছাড়া অন্য যেসব ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে যা বাতাসে উড়ে যাবার নয়। সিদ্ধ করার পর তার সবই থেকে যাচ্ছে।

হাজারীবাগ ঘুরে দেখা গেছে, এসব বুশি সিদ্ধ করার আগে ধোয়া হয় না বা সিদ্ধ করার পর পাত্রে পানিও জমে থাকে না। ফলে সবই চলে যাচ্ছে খাবার হিসেবে। এ ছাড়া সিদ্ধ করার জন্য অনেকে ট্যানারী এলাকার বিষাক্ত পানি ব্যবহার করে। খামারে ইদানীং বিভিন্ন জটিল রোগে মারা যাচ্ছে অনেক মুরগী। আগের তুলনায় ৫ গুণ বেশি মুরগী মারা যাচ্ছে।

এমন সব রোগ হচ্ছে, যা কোন ওষুধ বা এন্টিবায়োটিকেও সারে না। কারণটি খামারীরা না বুঝলেও পাঠকরা এরই মধ্যে বিষয়টি বুঝে গেছেন। এই যদি হয় বাস্তব অবস্থা পোল্ট্রি শিল্প লাভের মুখ দেখবে কিভাবে ??????? বর্তমানে চামড়ার বর্জ্য কিভাবে পরিশুদ্ধ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্রমিয়াম ব্যবহারের পর তাপ এবং বাতাসে ক্রমিয়াম-৬ এ পরিণত হয়। একে ক্রমিয়াম-৩ এ নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

আগে হাজারীবাগে চামড়ার বর্জ্য রাখার জায়গা ছিল না। আর এখন এ বিষাক্ত বর্জ্যের সর্বশেষ ডাম্পিং স্থান হয়েছে আমাদের মানব দেহ। লেখক- সৈয়দ সাইফুল ইসলাম। . ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।