ধীরে ধীরে ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমি আশাবাদী, একদিন সত্যিয়ই এদেশ দুর্নিতীবাজমুক্ত দেশ হবে মৌলভীবাজার জেলার প্রধান ঈদ্গাহে আজ ঈদের জামাত ৩টা। সকাল ৭টা, ৮টা ও ৯টা। গতকাল রাতে প্লান করেছিলাম, প্রথম জামাতেই নামাজ পড়বো। একজন বলল, প্রথম জামাতে নামাজ পড়তে হলে ভোর ৫টায় ঈদ্গাহে পৌঁছাতে হবে।
সকাল সাড়ে ৬টার আগে আমি কিছুতেই ইদ্গাহে যেতে রাজি নই। যাই হোক পরিকল্পনা মাফিক সাড়ে ৬ টায় ঈদ্গাহে সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখি, রাস্তাতেও যায়গা পাওয়া মুশকিল। তাড়াতাড়ি জায়নামাজ বিছিয়ে যায়গা দখল করলাম। হুজুর সিলেটি ভাষায় বেশ ভালো ভালো কথা বলছেন। খুব ভালো লাগলো শুনে।
গলার স্বর অনেকটা প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেবের মতো। এখানে এসে একটা জিনিষ খেয়াল করলাম, সকল মুরুব্বির কণ্ঠস্বর সাইফুর রহমানের মতো। বি এন পি দলীয় এই লোকটা আমার প্রিয় ব্যাক্তিতের একজন। বেঁচে থাকলে আজ উনার সাথে এই ঈদ্গাহে একসাথে নামাজ পড়া হতো। এসব সাতপাঁচ ভাবছিলাম।
দেখলাম একটা ছেলে, একটা ব্যাগ ও ছাপানো রিসিপ্ট নিয়ে ঈদ্গাহের জন্য দান-খয়রাতের টাকা উঠাচ্ছে। লক্ষ্য করলাম প্রতিটি রিসিপ্ট ১০ টাকা, অর্থাৎ আপনি যদি দান করতে চান তাহলে সর্বনিন্ম ১০ টাকা, ১০০ টাকা দান করতে চাইলে ১০টি রিসিপ্ট কিনতে হবে। ১০টাকার নিচে খয়রাতির কোন অপশন নাই। ব্যাপারটা মন্দ না। বুঝতে পারলাম যারা টাকা কালেকশন করে তাদের দুর্নীতি প্রতিরোধে এই ব্যাবস্থা।
এসময় মাইকে কে একজন সিলেটি ভাষায় বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন। এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ, শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ডাম্পিং জোন নির্মান ও আবর্জনা থেকে জৈব সার উৎপাদন, নদীর পানি ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহ করা ও ভূ-গর্ভস্থ পানির উপরে চাপ কমানো, এ জাতীয় বিজ্ঞান সম্মত বক্তব্য শুনে ধারনা করলাম উনি পৌরসভার চেয়ারম্যান। বলাবাহুল্য, আমি এপর্যন্ত যতগুলো পৌরসভা দেখছি, মোউলভীবাজার তার মধ্যে অন্যতম। খুব শিগগীরই এরা ভূগর্ভস্ত বিদ্যুতের লাইন, ইন্টারনেট, টেলিফোনের লাইন স্থাপনার কাজ শুরু করলে আমি অবাক হবো না এবং এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, যদি এরকম কিছু বাংলাদেশে হয় তাহলে তা সর্বপ্রথম এই পৌরসভাতেই হবে। মাইকে আসলেন জেলার ডিসি সাহেব।
বক্তব্যের বিষয় ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে সরকারের অভাবনীয় সাফল্য ও আইন- শৃংখলা রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা । সর্বশেষে মাইকে আসলেন এলাকার জনপ্রিয় জননেতা মহসেন আলী এম পি । বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ হলো, মোউলভীবাজারের যেসব মানুষ গতকাল সৌদিআরব, আফগানিস্থানের সাথে ঈদ করেছেন, চাঁদ না দেখে ঈদ করে দেশের মানুষের সাথে একাত্মতা ভঙ্গ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় তিনি প্রচন্ড উত্তেজিত থাকায় মাইক্রোফোন তার ভয়েস প্রেশারের লোড সামলাইতে না পারায় কাকতালীয় ভাবে মাইকে কথা ঠিকমতো শোনা যায় নাই। যথা সময়ে নামাজ শুরু হলো।
নামাজ শুরুর পুর্বে হুজুর বললেন “ যেহেতু, ঈদ্গাহে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছেন, নামাজের নিয়ত তো মুখস্ত করেই এসেছেন, আর যারা নিয়ত জানেন না, তারা বাংলায় নিয়ত করে ফেলেন”। হুজুর বেশ রসিক, তা প্রথম থেকেই বুঝতে পারছিলাম। আমার নিজ জেলা বগুড়াতে নামাজের আগে, হুজুর নিয়ত কি এবং কিভাবে নামাজ পড়তে হবে, কতবার তাকবীর, কয়বার হাত উঠাইতে হবে, কয়বার হাত বাধতে হবে, সে সম্পর্কে একটা বয়ান দিতেন। কিন্তু এখানকার হুজুরের কথাগুলো আমার যুক্তি সঙ্গত মনে হলো। নামাজ যথাসময়ে শুরু হলো, শেষ হলো, খুতবা হলো, মোনাজাত হলো।
নামাজ শেষ। এবার ফকির মিসকিনের পালা। ঢাকায় জাতীয় ঈদ্গাহে ফকিরের ভীড়ে ঈদ্গাহ থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে যায়। এখানে দেখলাম রাস্তার দুপাশে অল্প কিছু ফকির লাইন করে বসে আছে, সব মিলিয়ে ২০-২৫ জন হবে, বিকট ও উদ্ভট শব্দে কোন চিৎকার চেঁচামেচি নাই। আমি ১০ টাকার ২০ টা নোট নিয়ে বেরিয়েছিলাম, চিন্তায় ছিলাম, ২০জন ফকির পাবো কিনা।
ঢাকায় মিটফোর্ডে ঈদের নামাজ শেষে একবার ২ টাকার কিছু নোট বের করে ফকিরদের কে সিরিয়াল অনুযায়ী দিচ্ছিলাম, উদ্দেশ্য সবাই কে দেয়া। কিন্তু তখন সব ফকির তাদের যায়গা ছেড়ে যেভাবে আমাকে ঘিরে ধরলো ও একাধিক বার টাকা নেয়ার ধান্দা করছিল, তাতে লস তাদেরই হয়েছে। অন্য মুসুল্লীরা যারা দান করতে চেয়েছিলেন, ফকিরদের এহেন আচরন দেখে ও আমাকে ঘিরে ধরা দেখে বিরক্ত হয়ে দান না করেই চলে গেছেন। এখানকার ফকিরদের মধ্যে এরকম কোন আচরন দেখতে পেলাম না, দশ টাকার নোট দেখে কেউ হুড়োহুড়ি করলো না। “ আল্লায় দিলে পাবো”—এরকম মানসিকতা লক্ষ্য করলাম।
বেশ ভালো লাগছিল। দান করার এটাই শ্রেষ্ট যায়গা মনে হলো। অতপঃর ধীরে ধীরে পায়ে হেটে বাসায় ফিরলাম। এক সুন্দর অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার ঈদের দিন শুরু হলো।
আপনাদের ঈদ ও হোক সুন্দর আনন্দময়, সে কামনা রইলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।