আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুভি রিভিউঃ এক থা টাইগার

মানুষ কিছু জানত না বলে সে জানার আগ্রহে ছিল ভরপুর,এখন মানুষ কিছু জানে বলেই সে অজানাকে পাঠিয়েছে বহুদূর আজকে অনেকদিন পর একটা হিন্দি মুভি দেখলাম। মুভির নাম "এক থা টাইগার"। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মুভিটা দেখতে বসেছিলাম কিন্তু প্রত্যাশার চাপ যে এভাবে জানালা দিয়ে পালাবে তা বুঝতে পারি নাই। সালমান খানের আগের কিছু হিট ছবি যেমন-ওয়ান্টেড,দাবাং,রেডি,বডিগার্ড এর মত মুভি দেখে ভেবেছিলাম "এক থা টাইগার"-এ কিছু নতুনত্ব থাকবে। কিন্তু আমি অন্তত কোন নতুনত্ব পাই নাই।

দেখে মনে হয়েছে আগের মুভিগুলার সাফল্যের জের ধরেই এই মুভিটা হিট করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এবং হয়েছেও তাই ***কাসটিং: সিনেমার কাসটিং নিয়ে কিছু বলার নাই। শুনেছিলাম শাহরুখ খানকে নাকি প্রথমে টাইগারের ভূমিকায় রাখা হয়েছিল কিন্তু ক্যাটরিনার কারনে সালমানকে নেওয়া হয়েছে। অ্যাকশনধর্মী সিনেমাতে কেন জানি শাহরুখ খানকে মানায় না। তাকে রোমান্টিক হিসেবেই বেশি ভাল লাগে।

সিনেমাতে যে বৈচিত্র্যটি আমার বেশি চোখে পড়েছে তা হল ক্যাটরিনা কাইফের রূপ। যেহেতু এই মুভিতে সে একজন আইএসয়াই এর এজেন্ট সেহেতু রূপটাকে প্রাধান্য দেওয়াটা আমার মতে দরকার ছিল। আরেওকটা চোখে লাগার মত ব্যাপার হল এখানে খুব কম চরিত্রের উপস্থিতি। সালমান খান,ক্যাটরিনা কাইফ,রানভির শোরে বাদে আর তেমন কোন চরিত্র দেখা যায় নাই তাই সিনেমার ঘটনায় কার কি ভূমিকা তা সহজেই বুঝা গেছে ***অভিনয়: সালমান খানের অভিনয় বরাবরই কেন জানি একই লাগে। তবে এই সিনেমাতে একশন দৃশ্যে তার এক্সপ্রেশন কাবিলে তারিফ।

রম্য দৃশ্যে ও বরাবরই পারদর্শি। কেবল একশন দৃশ্যের এক্সপ্রেশনের কারনে তাকে আলাদা করা যাবে। ক্যাটরিনা কাইফ এতদিন ধরে বলিঊডে থাকা সত্ত্বেও এখন এটা বুঝেনি যে রূপ দিয়ে সিনেমা হয় না,ভাষার জ্ঞান থাকা লাগে। হিন্দি বলায় সমস্যা এই সিনেমাতে চোখে পড়ার মত। রানভির শোরে মাত্র পাচ কি দশ মিনিটের জন্য ভিলেনের চরিত্রে দেখা যায়,বাকি সময়টা সে টাইগারের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।

তার চরিত্রে বকার সর্বসাকুল্যে পনের মিনিট। ***ঘটনা: সিনেমার ঘটনায় শুরুতে কিছু নতুনত্ব দেখা গেলেও শেষ দিকে নতুন কিছু দেখা যায়নি। সালমান খান ওরফে টাইগার(কোড নাম) ওরফে মনিষ চন্দ্র(মিশন নাম) ওরফে অভিনাশ সিং রাথোর(আসল নাম) ভারতের সিক্রেট সোসাইটির একজন এজেন্ট যার কাজ হল যারা দেশের সিক্রেট ইনফরমেশনগুলো অন্যদেশে পাচার করে তাদের ধরা এবং খুন করা। এরকই একটা কাজে তাকে একজন রাইটারের কাছে গোয়েন্দাগিরি করতে পাঠানো হয় যেখানে থাকে ক্যাটরিনা কাইফ ওরফে জয়া। সিনেমার মাঝ পর্যায়ে এসে টাইগার জানতে পারে জয়া একজন পাকিস্তানের আইএসয়াই এর এজেন্ট.।

এখান থেকেই সিনেমার ঘটনা মান্ধাতার আমলের কাহিনীতে চলে যায়। টাইগার জয়ার প্রেমে পড়ে যায়,কিন্তু এক এজেন্ট কখনও আরেক এজেন্টের প্রেমে পড়তে পারে না। কিন্তু তারা দুজনে সমাজের বাধা পেরিয়ে পালিয়ে যায় আর তাদের পিছে লাগে ভারতের সিক্রেট সোসাইটি আর পাকিস্তানের আইএসয়াই। ভারত ভাবে টাইগার হয়ত পাকিস্তানকে সব বলে দিবে আর পাকিস্তান ভাবে জয়া হয়ত ভারতকে সব বলে দিবে। তাই তারা পালিয়ে বেরায়।

তাদেরকে ধরা নিয়েই সিনেমার পরের অংশ। মাছ দিয়ে শাক ঢাকা যেত অর্থাৎ একশন দিয়ে শেষ দিকে মজার কিছু করা যেত কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ট্রেইলারে ছাদহীন গাড়ির একশনের যে দৃশ্যটি দেখানো হয় সেটা ক্যামেরার কারসাজি বলে মনে হয়েছে। চোখের ভুলও হতে পারে আমার ***গান: গানের দিক থেকে সিনেমা ব্লক বাস্টার হিট। অতিথি শিল্পী সাজিদ ওয়াজিদের কন্ঠে আর সোহেল সেন এর মিউজিকে গানগুলো অনেক সুন্দর,টাইমিং টাও চরম আর মিউজিক এর মধ্যে নতুনত্ব আছে।

বিশেষ করে "লাপাতা"গানের সিনেমার দৃশ্যায়নটা সুন্দর হয়েছে ***এডিটিং: সদ্যপ্রাপ্ত মুভি হওয়াতে হলপ্রিন্টের এডিটিং সবচেয়ে জঘন্য হয়েছে। কোন একটা দৃশ্যে যদি হয় দশ মিনিটের তাহলে দেখা গেছে শুরুর চার মিনিট আর শেষ থেকে দুই মিনিট কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে,এভাবে করে সবগুলা লম্বা ঘটনার শুরু শেষ বাদ দেওয়া হয়েছে যার ফলে কোন একটা নতুন দৃশ্য কখন শুরু হল আবার কখন শেষ হল তা বুঝা যায় নাই। ধারনা করে দেখতে হয় ***শুটিং লোকেশন: খুবই চমৎকার কিছু জায়গায় শুটিং করা হয়েছে যা আগে কোন বলিউড সিনেমায় হয়েছে বলে মনে পড়ে না। ইস্তানবুল,আয়ারল্যান্ড,কিউবা,ব্যাংকক ইত্যাদি জায়গার কিছু সুন্দর লোকেশনে শ্যুট করা হয়। ***সংলাপঃ রম্য দৃশ্যের সংলাপগুলো বেশ মজার,সালমান খানের অভিনয় গুনের সাথে মানানসই তবে "আইডল"ডাইয়লগ একটাও পাই।

"একবার যো ম্যায় কমিটম্যান্ট কার দিয়া তো ফের ম্যায় আপনি আপকি ভি ন্যাহি সুনতা"এই টাইপের ডায়লগ নাই বরং মনে হয়েছে সিনেমাটাতে সংলাপের অভাব রয়েছে। নাই। ***কেন দেখা উচিত: ১/লাস্ট বেশ কিছু মুভিতে সালমান খান নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সিনেমার শুরুর কিছু একশন আসলেই সুন্দর হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তার মাঝখানে ট্রাম থামানোর একটা দৃশ্য আসলেই সুন্দর হয়েছে ২/সিনেমার প্রচারনার অভিনব কায়দার ব্যবহার।

জুম টিভিতে একটা শোতে বলেছে যে,এই সিনেমা রিলিজ হবার কয়েকদিন আগে নাকি অনেক দর্শকের কাছে এসএমএস গেছে সিনেমার কাহিনী নিয়ে। সেখানে ঘটনাটা বলা হয়েছে এমন যে,এটা একটা স্মৃতচারনমূলক মুভি যেখানে ক্যাটরিনা কাইফ তার সন্তানদেরকে তাদের বাবা টাইগারের গল্প বলে। এই গল্প নিয়েই সিনেমার নাম "এক 'থা' টাইগার" ৩/সালমান খানের বা ক্যাটরিনা কাইফের ভক্ত হয়ে থাকলে ৪/হিন্দি মুভিপাগলা হলে #আমার মতে সিনেমাটা বিনোদনের জন্য বা অবসর সময় কাটানোর জন্য মোটামুটি ভাল। তবে সমালোচকের দৃষ্টি দিয়ে যারা দেখবেন তাদের ভাল নাও লাগতে পারে। এটা যার যেমন স্বাদের উপর নির্ভর করে।

আমার কাছে খুব আহামরি লাগে নাই। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.