পি এম বাহার আহমেদ ধারাবাহিক সাহসী বীরের গল্প
হেলেনাকে উদ্ধার-(এক)
বিশাল বিস্তৃত মাঠ। এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে সন্ধা হয়। সামনে সমতল পাহাড়। পাহাড়ের কোথাও ছোট ছোট গাছ-লতায় ঘেরা কুঞ্জবনের সৃষ্টি হয়েছে। অন্ধকারে হাঁটতে ডর ডর ভাব হয়।
আশে পাশে ঘর-বাড়ী নেই। বিচিত্র আকৃতির গুহাগুলোর ভেতর থেকে জিব-জন্তুর ভয়াল চিৎকার শুনা যাচ্ছে। কখন যেন এরা সামনে এসে দাঁড়ায়, ভাবলেই ফিলে চমকে উঠে।
অলাম্বস সাবধানে পা’ এগিয়ে যাচ্ছে। রাঁজা মেক পিটার্সন আগে থেকে সাবধান করে দিয়েছে।
এটা ফিগো হেল। এই পাহাড়ের আশ পাশে মানুষ বাস করে না। এখানে দানব-দৈত্যরা বাস করে। এদের সাথে হাজার হাজার ভূতেরা এক সাথে মিলে মিশে থাকে। জ্ঞানীরা মনে করেন, ফিগু হেল নামের সমতল পাহাড়টির ভূত-প্রেতের অভয়াশ্রম।
দুনিয়ার সব ভূতেরা এখানে ভ্রমণে আসে। অনেক ভূতেরা তাদের স্ত্রী-পুত্রদের নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শরু করেছে।
পাহাড়র’টার নাম ফিগো হেল রাখার পেছনে একটা ঘটনা আছে। দু’শ বছর আগের কথা। হেমলেট নামে একজন রাঁজা ছিলেন।
তিনি সমস্ত পৃথিবীর শাসন কর্তা।
একদিন রাঁজা সপরিবারে ভ্রমণে আসেন। সাখে ছিল, স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা। রাজ কন্যা খুব সুন্দরী ছিলেন। নাম হেলেনা।
এত সুন্দর বন্ধুর পাহাড় ও পরিবেশ দেখে হেলেনা মুগ্ধ হয়। বাবা’র কাছে অনুমতি চাইলো এখানে কয়েক’টা দিন ঘুরে বেড়াবে। রাঁজা অনুমতি দিলেন। হেলেনা তিনশ’ দেহ রক্ষী নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
তখন বিকেল বেলা।
হেলেনা মনের আনন্দে বান্ধবীদের নিয়ে খেলছে। সাথে একটা খরগশ। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, কিছুদূরে এক সুদর্শন যুবক বসে আছে। বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলো, কে এই যুবক। এত সুন্দর যুবক জীবনে আর একটা চোখে পড়েনি।
বান্ধবীরাও এই যুবককে চিনতে পারে নি। সবাই দূর থেকে ওকে দেখে মুগ্ধ। হেলেনা বলে, চল, যুবকের কাছে যাই।
খরগশ বলে, না-না, যেওনা রাজ কন্যা! ওটা সুদর্শন যুবক না; কুৎসিত একটা মেঘ।
ওটা মানুষ না, একটা অশুভ ছায়া ছাড়া কিছু না।
রাজ কন্যা মানতে চায় না। সে বলে, তুমি একটা খরগশ। তাই মানুষ চছনতে ভুল করেছো।
খরগশ আবার বাঁধা দেয়। সে মন্তব্য করে, তেমরা বিপদগ্রস্থ।
একটা মেঘখন্ড তোমাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে একটা শয়তানী আত্মা। পাপাত্মা।
রাজ কন্যা খরগশের কোন কথা শুনলো না। তারা যুবকের কাছে এসেই বুঝতে পারে, সত্যি এ’কোন যুবক না।
আর এটার মতো পৃথিবীতে এত কুৎসিত কিছু হতে পারে না।
যুবক এখন বিক্রিত রুপ ধারণ করে। বিক্রিত কণ্ঠে বলে, তুমি হেলেনা। মানব জাতীর পুণ্যধর এক সুন্দরী। রাজ কন্যা।
আমি ভূতদের রাঁজা ফিগো। তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি বিয়েতে রাজি হও। ন’তো কেউ বাঁচবে না। তোমার জন্য সবাইকে গাড় মটকে শূলে দেব।
সব মরে ভূত হবে। জোর করে তোমাকে বিয়ে করবো। এরপর ফিগো নাছতে শুরু করে।
হেলেনা বিয়েতে রাজি হলোনা। ফলে ফিগো হেলেনার বান্ধবীদের সহ তিনশ’ দেহ রক্ষীকে মেরে ফেললো।
ইতিমধ্য খরগশ পালিয়ে গিয়ে রাঁজাকে ঘটনা খুলে বললো। রাজ কন্যাকে উদ্ধারের জন্য রাঁজা ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে রওনা দিলেন। সাথে অসংখ্য ওঝা-বৈদ্য ও জাদুঘর। কিন্তু ভূতের রাঁজা ফিগো’র কাছে মানুষ রাঁজার দল হেরে গেলো। এক সাথেই রাঁজা-রাঁণী ও দুই রাজ পুত্রের মৃত্যু ঘটে।
এ’ঘটনার পর থেকে এই নিঝুম পাহাড়টি ফিগো হেল নামে পরিচিতি লাভ করে।
সম্প্রতি একজন প্রবীন জ্যোতিসের সাথে সাহসী বীর অলাম্বসের সাক্ষাত হয়। তিনি জানান, দু’শত বছর আগের ঘটনার এখনো শেষ হয় নি। শয়তান ফিগো ঘটনার সূচনা করেছিল কিন্তু সমাপ্ত করতে পারে নি।
অলাম্বস জানতেন, দু’শ বছর আগের ঘটনা এখন একটা অভিশপ্ত ও ভয়ংকর ইতিহাস ছাড়া কিছু না।
কিন্তু এই প্রবীণ ব্যক্তির কথা হেসে উড়িয়ে দেবার মনে করেন নি। বরং খুব আগ্রহে জ্যোতিসের কথাগুলো শনলো।
জ্যোতিস বলে, শয়তান ফিগো যখন রাঁজা-রাঁণী, রাজপুত্রদের সহ ত্রিশ হাজার সৈন্যকে মেরে ফেলে। তখন রাজ কন্যা হেলেনাকে নিয়ে তার প্রভু জিউরের কাছে যায়। এবং প্রভুর কাছে প্রার্থণা করে মানব সুন্দরী হেলেনাকে ভূত বানিয়ে তার জীবন সঙ্গি করে দিতে।
কিন্তু প্রভু জিউর ফিগোর প্রার্থণা কবুল করেন নি। বরং জিউর রাগাম্বিত হয়ে বলেন, তোমাকে পাপের সম্রাট বানিয়েছি। কিন্তু আমাকে স্মরণ না করে মানব জাতীকে ধ্বংস করেছ। তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। ফিগো জিউরের কাছে নিজের ভুলের কথা বলে কাঁদতে থাকে।
এতে জিউরের দয়া হয়। ভূতের রাঁজা ফিগোকে এক শর্তে ক্ষমা করেন।
জিউর ঘোষণা দেয়, আজ থেকে এই মানব কন্যা দু’শ তেত্রিশ বছর তোমার কাছে বন্ধি থাকবে। ততোদিন পর্যন্ত মানব কন্যার বয়স আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এতদিনেও ওর বয়স ও দেহের পরিবর্তন ঘটবে না।
এবং তুমি তাকে স্পর্শও করতে পারবে না। তবে তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, দুশ’ বছর পর পৃথিবীতে এক শক্তিশালী যুবকের আবির্ভাব হবে, যে যুবক এই কন্যাকে ছিনিয়ে নিতে আসবে। সে দিনটির জন্য অপেক্ষা করো। তুমি বিজয় হলে মানব কন্যার সাথে বিয়ে হবে। পরাজয় হলে যুবক তার সাথে নিয়ে যাবে।
প্রবীণ জ্যোতিস ঘটনাটি বলতে বলতে অসুস্থ হযয় যায়। তিনি আরো বলেন, আমার বিশ্বাস, সেই শক্তিশালী যুবক তুমি ছাড়া আর কেই না। তুমি ছাড়া কেই পারবে না হেলেনাকে উদ্ধার করতে।
অলাম্বস প্রতিজ্ঞা করে, রাজ কন্যাকে শয়তান ফিগোর হাত থেকে উদ্ধার না করে তার বন্ধুদের খোঁজে বিরোবে না।
এ উদ্দেশ্যে ফিগো হেল পাহাড়ে এসেছে।
এখন তাকে সাবধানে চলতে হবে কেননা, শয়তান ফিগো নিশ্চয় তাকে গন্তব্যস্থানে পৌঁছার আগেই মারতে চাইবে। চলবে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।