আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেনে নিন মার্চেন্ট মেরিনের র‌্যান্কগুলো.......

ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন -ভাই, আপনি কি করেন ? -জ্বী, আমি মার্চেন্ট মেরিন অফিসার -সেইটা আবার কি ? -মানে , আমি জাহাজে চাকরি করি -ও আচ্ছা , মেরিন ইন্জিনিয়ার..... অগত্যা বোঝাতে না পেরে...... -জ্বী ভাই, মেরিন ইন্জিনিয়ার..... বাংলাদেশে অফিসার এবং ক্রু মিলে প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক সমুদ্রচারী রয়েছেন। নিজেদের কর্মদক্ষতার মাধ্যমে তারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সমুদ্রগামী জাহাজে নিয়োজিত থেকে দেশের জন্য নিয়ে আসছেন বৈদেশিক রেমিটেন্সের একটি বড় অংশ । জাহাজ সম্পর্কে ধারনা থাকলেও আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই জাহাজের চাকরি বা এর র‌্যাঙ্ক সম্পর্কে ধারনা নেই । এ কারনে জাহাজে চাকরি করে এমন অনেকেই নিজেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বলে পরিচয় দেয় । আজ আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মার্চেন্ট মেরিনার ও কর্মজীবনে তাদের পর্যায়ক্রমিক র‌্যাঙ্কের বর্ণনা দিব ।

## মার্চেন্ট মেরিন এবং নেভি সম্পূর্ণ আলাদা । কেননা নেভির মূল উদ্দেশ্য দেশের জলসীমা রক্ষা করা অন্যদিকে মার্চেন্ট মেরিন বা বাণিজ্যিক জাহাজ গুলোর উদ্দেশ্য পণ্য বা কার্গো পরিবহন । জাহাজে মূলত দুটি বিভাগ আছে , ডেক এবং ইঞ্জিন । ডেক অফিসার এবং ক্রুদের দায়িত‍ জাহাজের নেভিগেশন ( জাহাজ চালনা ) , কার্গোর লোডিং-ডিসচার্জিং ( পণ্য উঠানামা ) , বিশাল জাহাজটির ডেকের বিভিন্ন মেইনটেনেন্স করা । অন্যদিকে ইঞ্জিন অফিসার ও ক্রুদের দায়িত্ত জেনারেটরের মাধ্যমে জাহাজের পাওয়ার সাপ্লাই , জাহাজের ইঞ্জিন ও মেশিনারিজ সম্পর্কিত সকল রক্ষনা-বেক্ষন করা ।

একটি জাহাজের প্রধান হলেন মাস্টার বা ক্যাপ্টেন । তার ব্যাকগ্রাউন্ড ডেক হলেও ইঞ্জিন এবং ডেক উভয় বিভাগের চিফ তার কাছে কাজের রিপোর্ট দেন । জাহাজ মালিক কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও জাহাজের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্ত পালন করেন ক্যাপ্টেন । ডেকের অফিসার রাঙ্ক পর্যায়ক্রমে চিফ অফিসার,সেকেন্ড অফিসার,থার্ড অফিসার এবং ডেক ক্যাডেট । ডেক ক্যাডেট থেকে বিভিন্ন প্রফেশনাল এক্সাম ও অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে প্রমোশনের মাধ্যমে ক্যাপ্টেন পদমর্যাদা লাভ করা যায় ।

জাহাজের নেভিগেশন বা ব্রীজরুম জাহাজের ডেক ও একোমডেশান ডেক অফিসার এবং ক্রুরা চিফ অফিসারের তত্তাবধানে কাজ করেন । চিফ অফিসার মূলত কার্গো ও জাহাজের স্ট্যাবিলিটি ( ভারসাম্য ) দিকটি দেখেন । সেকেন্ড অফিসার ব্রিজ ( জাহাজের একোমডেশানের সবচেয়ে উপরের অংশ যেখান থেকে জাহাজ চালনা করা হয় ) ও নেভিগেশন সংক্রান্ত উপকরনগুলোর মেইনটেনেন্স করেন । থার্ড অফিসার জাহাজের ইমার্জেন্সী বা বিপদের সময় ব্যবহৃত লাইফ সেভিং এপারেটাস যেমন , লাইফবোট , লাইফর‌্যাফট ইত্যাদির মেইনটেনেন্স করেন । জাহাজের লাইফবোট এছাড়া সবাইকেই দিনের বিভিন্ন সময় নেভিগেশন এবং পোর্টে থাকাকালীন কার্গো ওয়াচ করতে হয় ।

ক্যাডেট বা ট্রেইনি অফিসাররা চিফ অফিসারকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেন । ডেক ক্রুরা চিফ অফিসারের তত্তাবধানে ডেকের বিভিন্ন মেইন্টেনেন্স কাজে অংশ নেন । ডেক ক্রুদের প্রধান হল বোসান। ডেক বয় থেকে শুরু করে অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে বোসানের দায়িত্ত পাওয়া যায় । ক্রুদের মধ্যে শুধুমাত্র এবল সী-ম্যানরা জাহাজের স্টিয়ারিং ( হুইল চালনা) করেন ।

বাকিরা মেইন্টেনেন্স এ অংশ নেন । ইঞ্জিন অফিসার রাঙ্ক পর্যায়ক্রমে চিফ ইঞ্জিনিয়ার,সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার,থার্ড ইঞ্জিনিয়ার,ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার এবং ইঞ্জিন ক্যাডেট । ইঞ্জিন ক্যাডেট থেকে বিভিন্ন প্রফেশনাল এক্সাম ও অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে প্রমোশনের মাধ্যমে চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদা লাভ করা যায় । ইঞ্জিন অফিসার এবং ক্রুরা চিফ ইঞ্জিনিয়ারের তত্তাবধানে কাজ করেন । তবে অফিসার ও ক্রুদের রিপোর্টিং ইনচার্জ হল সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার ।

এছাড়া একজন ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রয়োজন অনুসারে ট্রেইনি ইলেকট্রিশিয়ান থাকেন । ইন্জিন কন্ট্রোল রুম ইন্জিন রুম চিফ ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিন বিভাগের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্তে থাকেন । সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার সাধারনত মেইন ইঞ্জিন ,থার্ড ইঞ্জিনিয়ার জেনারেটর এবং ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন পাম্প এবং পিউরিফায়ার এর মেইন্টেনেন্সের দায়িত্তে থাকেন । ইঞ্জিন ক্যাডেট ও ক্রুরা বিভিন্ন কাজে ইঞ্জিনিয়ার অফিসারদের সহযোগীতা করে থাকেন । এছাড়া জাহাজের রান্না-বান্না ও অফিসারদের রুম সার্ভিস এর জন্য ক্যাটারিং ডিপার্টমেন্ট থাকে ।

এখন সাধারণত একজন চিফ কুক ও একজন স্টুয়ার্ডের মাধ্যমে এই বিভাগ পরিচালিত হয় । চিফ কুক এবং স্টুয়ার্ড চিফ অফিসারের তত্তাবধানে কাজ করেন । এভাবে একটি চমৎকার চেইন অফ কমান্ডের মাধ্যমে জাহাজ পরিচালিত হয় । বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি আমাদের দেশের একমাত্র আর্ন্তজাতিক মানের প্রতিষ্ঠান যেখানে এইচ. এইচ. সি পরীক্ষার পর দুই বছরের কোর্স করে জাহাজে ট্রেইনি অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেওয়া যায় । এছাড়া ক্রুদের জন্য রয়েছে ন্যাশেনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট ।

এখানে ছয় মাসের কোর্স শেষে জাহাজে যোগ দেওয়া যায় । সবাইকে ধন্যবাদ এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য বি:দ্র: পোষ্ট কেমন হয়েছে মন্তব্যে জানালে ভাল হয়.......। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.