আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোগীঃ ডাক্তার সাহেব, আমার কি অসুখ হয়েছে? ডাক্তারঃ বলতে পারছি না, কেননা আপনার অসুখ তো আমার পরীক্ষার সাজেশনে ছিল না”!!

আমি শুনতে পাই লক্ষ কোটি ফিলিস্তিনীর আর্তনাদ...হাহাকার অবাক হবার কিছু নেই। আর পাঁচ সাত বছর পর আমাদের মনে হয় এসব বাক্য শুনতে হবে। আগেই বলে নেয়া ভাল, আমি কিন্তু ডাক্তার না। তবে একজন রোগী হিসেবে আমার আশংকা না প্রকাশ করে পারছি না। সরকারের শুধুমাত্র জি.পি.এ গ্রেড দিয়ে ভর্তি যে কতটা ভয়াবহ রকম ভুল সিদ্ধান্ত তা মনে হয় সরকারের কোন আইডিয়াই নেই।

যারা জি.পি.এ ৫ পেল তারাই শুধু মেধাবী আর যারা একটু কম পেল তারা কেউ ডাক্তার হবার যোগ্য না এমন যারা ভাবে তারা আর যাই হোক, তাদের বুদ্ধিমত্তার লেভেল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে হয়। একটা উদাহরন দেই। আমার এক কাজিন ১৯৮৬ সালের ইন্টারমিডিয়েটে সেকেন্ড ডিভিশন পেয়েছিল। অর্থ্যাৎ মোট ৬০০ এর কম নম্বর। কিন্তু উনি দমে যাননি।

তার ডাক্তার হবার অনেক সপ্ন। উনি মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং আল্লাহর রহমতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চান্স পান। এর মূল কারন উনি সেকেন্ড ডিভিশন পেলেও পড়াশোনার বিষয় গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করেছিলেন। এবং নটরডেম কলেজে পড়ার কারনে তার পূরো সিলেবাসই পড়তে হয়েছিল। তখন যদি শুধু প্রপাত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হত তাহলে কিন্তু তার সপ্ন সপ্নই থেকে যেত।

আজ তিনি সিলেটের একটি মেডিক্যাল কলেজের সার্জারী বিভাগের প্রধান। উনি শিকদার মেডিক্যাল কলেজে ছিলেন। শিকদার কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়তে চায়নি। একজন ভাল ডাক্তার হবার জন্য তার ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্ট বাধা হয়ে দাড়ায়নি! এখন আরেকটা উদাহরন দেই। এটাও আমার কাজিনের ঘটনা।

সেও নটরডেম এর ছাত্র। সে এইচ.এস.সি তে ৫ লেটার সহ স্টার মার্ক পেয়েছিল। সে এক নামি কোচিং সেন্টারে তিন মাস পড়ে পরীক্ষাও দিয়েছিল, কিন্তু সে পরীক্ষায় টিকতে পারেনি। কারন জিজ্ঞাসা করাতে সে বলেছিল আসলে এত খুঁটিনাটি প্রশ্ন আসে যে এখানে পরীক্ষায় টেকা খুব কঠিন। উপরের উদাহরন দুটো দিলাম এই কারনে যে অনেকে বলছেন মেধাবীরাই তো সুযোগ পাচ্ছে।

না, শুধু জি.পি.এ’র নম্বর কখনই মেধার মুল্যায়ন না। ভর্তি পরীক্ষাই শুধু একজন যোগ্য ব্যাক্তিকে বাছাই করতে পারে। কেননা, মেডিক্যালের পরীক্ষায় অনেক খূটিনাটি প্রশ্ন থাকে। সাজেশন নির্ভর পড়াশোনা করে সেটা মূল্যায়ন করা অসম্ভব। আর ভর্তি কোচিং এর দোহাই দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করাটা পুরাই ফালতু ব্যাপার।

দরকার হলে সরকার আইন করে ভর্তি কোচিং বন্ধ করুক! আর শুধু জি.পি.এ’র ভিত্তিতে ভর্তি করলে যে সেখানে বিশাল বাণিজ্য হবে এতে কোনই সন্দেহ নাই। তাই, সরকারকে অনুরোধ, আমাদের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে তচনচ করবেন না। অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী আছে, তাদের জীবন নষ্ট করবেন না। আপনারা এমন গুরুত্ত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেবার আগে ছাত্র-ছাত্রী ও ডাক্তারদের মতামত নিন। প্লিজ, দেশের এমন সর্বনাশ করবেন না! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।