হাতের লেখা ভালো, চেহারা ভালো না
যে মাঠে ২ বার ফসল হয় সে জমিকে দোফসলি বলে। যে ক্লাশে একই কারনে ক্লাশের শুরুতে ও শেষে মারা হয় তাহাকে কি বলা হয়?
পৃথীবিতে বহু প্রশ্ন ঘুরিতে ঘুরিতে বেহুশ হইয়াছে কিন্তু উত্তর পাওয়া যায়নি। কলি কাল হইতে অদ্যবধি এমন অনেক প্রশ্নের পাশাপাশি একই ক্লাসে একই কারনে দুবার বেত্রাঘাতের কারণ ও তাহার সংগা উদঘাটিত হয় নাই সত্য তবে সে ঘটনা কিন্তু ঘটিয়া গিয়াছে। পূর্বের ইতিহাস জানা নাই, কারন আগেরদিন আমার স্কুলে আসা হয় নাই। প্রেমঘটিত বিয়েতে যেমন পূর্ব ঘটিত কারণ থাকে স্যারের এমন আচারণণেরও নিশ্চয় কোন কারণ ছিল।
তখন কেবল হাতা বটা শিখিয়াছি (বড় ভাইরা বলিত, প্রাইমরি ছাড়িয়া হাইস্কুলে উঠিলেই কেমল ফুল শার্টের হাতা কাছাইয়া পড়া যাইবে, উহা ছাড়া উহা করিলে উহা অন্যায়)। ৭ম এ পড়ি। ঘটনার দিন তারিখ খেয়াল নাই তবে সে ক্লাসের নাম ইংরেজী ২য় পত্র, প্রিয়ড নাম্বার দুই যাহা ১০.৪৫ এর ক্লাস শেষ হই বার পরে অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন আকাশ মেঘা”চ্ছন্ন ছিল না সত্য তবে স্যারের আচরনে মনে হইল সিডর বোধহয় আজকেই হওয়ার কথা! স্যার ২য় সাময়িক পরীক্ষার ইংরেজি ২য় পত্রের খাতা লইয়া ক্লাসে ঢুকিলেন। বরাবরের মতো বুক কাপিতে লাগিল এবং কাঁপার কারণকে সত্য প্রমান করিতে স্যার আমাকে দিয়াই ডাবল বেত আনাইলেন।
অতপর দীর্ঘ দিনের প্রথা অনুযায়ী আমি এবারো ইংরেজিতে পাশ করিলাম না। এরপর স্যার যখন ঘোষনা করিলেন, যাহাদের রঙিন টিভি (রঙিন টিভি বলতে সুন্দরী বউদের বুঝাইতেন) পাইবার শখ না হওয়ার দরুন পড়াশুনা না করিয়া পাশ নাম্বার তুলিতে পারেন নাই তাহারা কস্ট করিয়া একটু হাই বেঞ্চে দন্ডায়মান হউন। স্যার আল্লাহ ভক্ত মানুষ। মাইর শুরুর পূর্বে তিনি নিয়মিত দোয়া দুরুদের সাথে বিসমিল্লাহটা বেশ জোরেসোরেই বলিয়া থাকেন। আমি প্রথম সারির ছাত্র (প্রথম বেঞ্চের) হওয়ায় আমাকে দিয়াই শুরু করিলেন।
কোন ধরনের গননা কার্য ছাড়াই তিনি দম বন্ধ করিয়া মারিতে লাগিলেন। দম যখন শেষ মাইরও শেষ। প্রথম পর্যায়ের মাইর সম্পন্ন হওয়ার পরে তিনি হাই বেঞ্চ হইতে নামাইয়া ফ্লরে পা রাখিয়া দাড়াইয়া থাকিতে বলিলেন। পৃথিবী যেমন সূর্য্যরে চারিপাশে পরম আনন্দে ঘূর্নায়মান থাকে তেমনি স্যারও পরম আমোদের সহিত সমস্ত ক্লাস ঘুরিয়া ঘুরিয়া প্রহার করিতে লাগিলেন। যথারীতি প্রথম পর্যায়ের মাইরের পর হাই বেঞ্চ হইতে সবাইকে যখন ফ্লরে দাড় করানো হইলো, ক্লাস শেষ হইবার আগ মুহূর্তে তিনি আবার হুংকার করিতে করিতে আমাদের সম্মুখ পানে আসিয়া পূর্বের ন্যায় দম ফাটাইয়া মাইর আরম্ভ করিলেন।
অতপর দমও শেষ আমরাও শেষ (মরি নাই)। এরকম করিয়া দ্বিতীয় বারের মতো দম ফাটানো বেত্রাঘাতের মাধ্যমে আমাদেরকে বসার অনুমতি দিলেন সত্য তবে বসার উপক্রম ছিলনা। বাংলাদেশ যদি বস্ত্র শিল্পে উন্নত না হইতো আমি নিশ্চিত ঐদিন আমাদের প্যান্টের পিছন ভাগ ছিড়িয়া ফাড়িয়া কোথায় লুকাইত! এবং আমাদেরকে কলাপাতা চাপিয়া আদিম সাজিতে হইতো! সুতরাং, আমি ঘোষণা করিতেছি যে, আমাদের বস্ত্রশিল্পে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেইদিন নিশ্চিত লজ্জা হইতে আমাদেরকে বাচাইয়াছিলেন আমরা তাদের তরে চিরদিন ঋণী থাকিব।
এরপরে স্যার আমাদেরকে প্রায়ই সেইদিনের ভয় দেখাইয়া বলিতেন, ‘‘মনুরা, দোচরা মাইরের কথা খেয়াল আছে?”
অতপর বুঝিলাম, দুইবার ফসল ফলায় যে জমি উহা দোফলি। দুইবার মারা হয় ক্লাসে উহাই দুচরা ক্লাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।