আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: ঢাকায় এলিয়েন এবং প্রোফেসর আশরাফির স্ট্র্যাটেজি

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ এই মুহূর্তে আমার আর কোনও সন্দেহ নেই যে আমার কলিগ সংগীতা সিমিন এলিয়েন। ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা দেখার পর থেকে ভয়ে আমার হাত পা হিম হয়ে আছে। ব্যাপারটা প্রোফেসর আশরাফি কে জানাতে হবে।

‘স্যার, আমি একটু আসছি’, বলে প্রোফেসর আশরাফিকে ফোন করলাম। এখনও তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁর ল্যাব এখন উত্তরায়। তিনটের মত বাজে। বসকে বলে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

অফিসের বেজমেন্ট নেমে কিয়া স্পোর্টেজটা গুলশান দুইয়ের রাস্তায় উঠিয়ে নিয়ে এলাম। আমি চ্যানেল ফর্টি নাইন-এর চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিবও চ্যানেল ফর্টি নাইন-এর উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি এখন ‘দৈনিক বাংলাজমিন’ এর ওয়েভ ভার্সান দাঁড় করাতে ব্যস্ত। গুলশানে অফিস নিয়েছেন।

আমি চাকরি করি দেশলিঙ্ক টেলিকম- এর মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিপার্টমেন্টে। আজ লাঞ্চের পর অফিসে একটা গা শিউরানো দৃশ্য দেখে আতঙ্কে আমার শরীর অবশ হয়ে আছেন । আমার কলিগ সংগীতা সিমিন যে এলিয়েন সে ব্যাপারে আমি সিওর। প্রোফেসর আশরাফি উত্তরায় নতুন ল্যাবটির নাম দিয়েছেন: এন.ইউ। অর্থাৎ, ‘নর্দান ল্যাব’।

ল্যাবটা একটা ছ’তলা বাড়ির বেজমেন্টে। বাড়ির নাম: ‘মরিয়ম ম্যানসন’। একতলা দোতলায় বায়িং হাউজ আর আর তিনচার তলায় এনজিও। পাঁচ তলায় কারা থাকে জানি না। স্যার ছ’তলায় থাকেন ।

বেজমেন্টে আলাদা লিফটে যাওয়ার আগে লিফটের ঢোকার আগে পাশে একটি কালো রঙের ছোট প্যাডে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। উত্তরার নর্দান ল্যাবটি বেশ বড়। এক পাশে দেয়ালজুড়ে লার্জ স্ক্রিনের মনিটার আর তার নীচে প্যানেল। অন্যপাশে সোফা সেট। নাসিরউল্লাহ অবশ্য ‘নর্দান ল্যাব’ এ থাকে না ।

সে এখনও ‘স্পেস গার্ডেন’-এর ল্যাবেই আছে। সে আর শাহীনূর। শাহীনূর খেয়েই চলেছে। ল্যাব দেখাশোনা করছে আরএফটি । মানে লাউয়াছড়ার সেই বারোফুটি উল্লুকটা।

তবে সেটির সাইজ স্যার কীভাবে যেন অন্তত চার ফুট কমিয়ে এনেছেন। রোবটউল্লুকটার স্বভাব কিছু বদলেও দিয়েছেন। দেখলাম প্রোফেসর আশরাফির মেজাজ ভালো। লাল টকটকে একটা গেঞ্জি পরে সোফায় বসে আছেন। গেঞ্জি তে সাদা অক্ষরে লেখা: ‘আই অ্যাম লিও’।

ফারহান আর শান্তও এসেছে। স্যার, লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখার জন্য তাঁর পরবর্তী স্টেপগুলি বলছেন। ফারহান এবং শান্ত বসে শুনছে। স্যার আমাকে দেখেই বললেন, বসো, তানিয়া। বলো, শুনি, তোমার কী তোমার সমস্যা? সোফায় বসলাম।

তারপর বললাম, স্যার, মানে ... আমার অফিসের এক কলিগ। ও ফিনল্যান্ডের সিটিজেন হলেও ওরিজিন ইন্ডিয়ান । নাম সংগীতা সিমিন। ও ...ও স্যার এলিয়েন। হোয়াট! স্যার ঝুঁকে পড়লেন।

ফারহান এবং শান্তর চোখেমুখে স্পস্ট বিস্ময়ের ছাপ। ফারহান জিজ্ঞেস করল, কিভাবে বুঝলেন আপনার কলিগ এলিয়েন? আজ অফিসে লাঞ্চের পর ফ্রেশরুম থেকে ফিরছি। সংগীতা সিমিন ওর ডেস্কে বসেছিল। ও আমাকে দেখতে পায়নি। দেখলাম ফ্লাক্স থেকে গরম কফি কাপে ঢালার সময় ওপর হাতের ওপর পড়ল।

মেয়েটা ফরসাই। ওর হাতের ফরসা চামড়া কালো হয়ে কুঁচকে গেল দেখলাম । অল্প ধোঁওয়া আর বুদবুদ উঠল। চামড়ার ওপর সালফিউরিক অ্যাসিড ঢাললে যেমন হয়-ঠিক সেরকম । কুঁচকে যাওয়া চামড়া নীচে দেখি লাল-নীল ইলেকট্রিক তার।

কি? তার? ফারহান প্রায় চেঁচিয়ে উঠল। হ্যাঁ। তার। রক্তের বদলে নীল লাইট দেখলাম ছুটতে । একটু পর চামড়া আবার জোড়া লেগে গেল।

বলেন কী! শান্ত বলল। আমি মনে মনে বিরক্ত হলাম। আমি তো সত্যি কথাই বলছি। যা দেখেছি তাইই বলছি। আমি কেন বানিয়ে বলতে যাব? আমি জানি শান্ত আর ফারহান আমাকে নিয়ে ফান করে।

প্রোফেসর আশরাফি গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। একটু পর গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কলিগ কোথায় থাকে? গুলশান স্যার। এক্সজেটলি গুলশান-এর কোথায়? বলতে পারছি না। আমাদের অত ঘনিষ্টতা নেই। আর ইন্ডিয়ানরা আমাদের সঙ্গে মিশতে চায় না।

ও। তা কোম্পানিটার কী নাম? দেশলিঙ্ক টেলিকম স্যার। টেলিকমটা ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত টেলিডেটা গ্রুপের। হুমম। তা ফাইনানসিয়াল কন্ডিশন কেমন? প্রফিট তো প্রথম থেকেই ভালো হচ্ছে।

কী কারণে কোম্পানী ইদানীং ব্যাপক হারে কর্মি ছাঁটাই করছে। হুমম। বলে চুপ করে গেলেন স্যার। বুঝলাম স্যারের মগজের সুপার কম্পিউটারে ডেটা বিশ্লেষন চলছে। আমার বিশ্বাস স্যার একটা গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।

স্যার জিজ্ঞেস করলেন, দেশলিঙ্কের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের নাম কি? লিনা গোল্ডবার্ড স্যার। মহিলা? ওদের দেশে কিন্তু ছেলেদের নামও লিনা হয়। জ্বী। মহিলা। কোথায় থাকেন? গুলশান।

আহা, এক্সজ্যাটলি বল-গুলশান কত নম্বর রোডে ? ওহ। রোড ওয়ান টোয়েনটি এইট। বাড়ির নাম ভিলা সাটেইলি। পিছনেই গুলশান লেক। ফোর্থ আর ফিফথ ফ্লোর মিলিয়ে থাকেন শুনেছি।

তার মানে যাওনি কখনও? না, স্যার। আমাদের সিইও অফিসের সাধারণ কর্মচারিদের তার বাড়িতে এালাউ করেন না। এসব আমি এর-ওর কাছে অফিসে শুনেছি। স্যার এবার শান্তকে জিজ্ঞেস করলেন, শান্ত, তুমি কি ভিলা সাটেইলি চিনতে পারবে? হ্যাঁ, স্যার, গুলশানের ১২৮ নম্বর সড়কের ভিলা সাটেইলি চিনি স্যার। ওই বাড়ির ঠিক অপজিটে ‘চিকেন কটেজ’ নামে একটা ফাস্টফুড শপে মাঝেমধ্যে আমি আর ফারহান এক সময় আড্ডা দিতাম।

ভিলা সাটেইলি নীচ তলায় ‘ভিয়েরাস’ নামে একটা বার আছে। আমার গুলশানের বন্ধুরা বলে যে কাউকে নাকি ‘ভিয়েরাস’ বারে একসেস দেয় না। একসেস দেয় না? ভুঁরু কুঁচকে উঠতে দেখলাম। না। স্যার।

স্যার বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি আর ফারহান এখন বাইক নিয়ে গুলশান যাও। ভিলা সাটেইলির ছবি তুলবে। তবে সাধধানে। বলে এলজি অপটিমাসটা টেবিলের ওপর থেকে তুলে কাকে যেন ম্যাসেজ পাঠাতে লাগলেন।

শান্ত আর ফারহান চলে গেল। ম্যাসেজ পাঠাতে পাঠাতেই স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কবে এসেছেন তোমাদের সিইও লিনা গোল্ডবার্ড? বছর খানেক হবে। আচ্ছা। ঠিক আছে। এখন যাও।

কিচেন থেকে লেবু চা করে নিয়ে এস। আপাতত আরএফটির কলকবজা খুলে রেখেছি। মিনিট পাঁচেক পর কিচেন থেকে চা নিয়ে এসে দেখি স্যারের কোলের ওপর একটা ১৩ ইঞ্চি অ্যাপল ম্যাকবুক এয়ার। ডিসপ্লের ওপর ঝুঁকে আছেন। কিবোর্ডের ওপর আঙুলগুলো উড়ছে।

হঠাৎ তিন্নির গান বেজে উঠল। ‘স্বপ্ন গুলি সত্যি হয়ে যেন যেন মনেতে উঁকি দেয়’। বুঝলাম স্যারের এলজি অপটিমাস- এর রিংটোন। এলজিটা কানে ঠেকিয়ে স্যার বললেন, হ্যাঁ। বলুন ব্রিগেডিয়ার।

আচ্ছা, আচ্ছা। আমি একটু পরেই আসছি। বলে কোন ব্রিগেডিয়ারের সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ কথা বললেন। ‘টেলিডেটা গ্রুপ’ শব্দটা আমার কানে বাজাল। কথা বলে স্যার মোবাইল অফ করে রেখে দিলেন টেবিলের ওপর ।

স্যারের মুখ গম্ভীর দেখলাম। আমি চায়ের ট্রে রাখলাম টেবিলের ওপর। স্যার কাপ না তুলে বললেন, গুলশানের ভিলা সাটেইলির ওনার একজন ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ী। নাম জেরমান কাজাভা। ওই জমিটা আগে এ. জেড করিম গ্রুপ অভ ইন্ড্রাষ্টির দখলে ছিল।

জেরমান কাজাভা জমি ২ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। কন্সট্রাকশনের কাজ করেছে আমেরিকান জনসন অ্যান্ড শেলডন। জেরমান কাজাভার ব্যাকগ্রাউন্ড বেশ মিষ্টিরিয়াস। একে তো সে স্মাগলার, তারপর ওপর স্লোভেনিয়ার স্যাটানিক কাল্টের পুরোহিত। আল্পস পর্বতে তার আস্তানা।

তার মানে ব্ল্যাক আর্ট? হ্যাঁ। নাইনটিন এইট্টি নাইনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেন থেকে ইউরিনিয়াম পাচার করার সময় ধরা পড়েছিল জেরমান । সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজেবি তাকে দূর্গম সাইবেরিয়ার অসট্রোগ-এর এক নির্জন কারাগারে রেখেছিল। কারা যেন সে কারাগার অ্যাটাক করে জেরমান কাজাভা কে ছাড়িয়ে নেয়। সেখানে পরে উচ্চমাত্রায় অ্যাটমিক রেডিয়েশন পাওয়া গেছে।

অ্যাটমিক রেডিয়েশন! বলেন কি স্যার?। স্যারের মুখে চিন্তার ছাপ পড়েছে। গম্ভীর স্বরে বললেন, হ্যাঁ। চব্বিশ জন কয়েদি আর কর্মকর্তা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। এসব কেজিবির নথিতে রয়েছে।

আশ্চর্য! স্যার কিবোর্ডের ওপর আঙুল চালাতে চালতে বললেন, তখন বললে দেশলিঙ্ক কোম্পানী ইদানীং ব্যাপক হারে কর্মি ছাঁটাই করছে। তোমার কলিগ সংগীতা সিমিন কি নতুন রিক্রুট ছিল? হ্যাঁ। স্যাব বললেন, ভাবছি, নতুন রিক্রুটের সবারই বায়োনিক শরীর কিনা। তাহলে এর এক ব্যাখ্যা হয়। এই মুহূর্তে আমাকে সম্ভবত বিমূঢ় দেখালো মনে হয়।

স্যার বললেন, ভেবে দেখ তানিয়া। ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত টেলিডেটা গ্রুপের টেলিলিঙ্কের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার লিনা গোল্ডবার্ড। যে মহিলা থাকেন গুলশানের ভিলা সাটেইলি তে। যে বিল্ডিংয়ের মালিক ফিনল্যান্ডের সিটিজেন জেরমান কাজাভা। যে লোকটা নটরিয়াস এবং ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা করে ।

প্লাস রেডিয়েশন- এর এলিয়েনের একটা রিলেশন থাকলেও থাকতে পারে। সব মিলিয়ে কি দাঁড়ায়? কি দাঁড়ায় স্যার? আমার কন্ঠস্বর কাঁপছে। আহা, মাথা খাটাও। আমি আরও একটা ক্লু দিচ্ছি। ‘সাটেইলি’ ফিনিশ ভাষার শব্দ।

এর মানে- রেডিয়েশন। আর ‘ভিয়েরাস’ বাক্যটিও ফিনিশ। এই শব্দের অর্থ: ‘আউটসাইডার’। এর মানে এক্সট্রাটেরিসটিয়াল হতে পারে। এবার বল, সব মিলিয়ে কি দাঁড়ায়? ওহ্ মাই গড।

আমার মাথা ঘুরছে। বললাম, গুলশানের ভিলা সাটেইলি স্যার এলিয়েনদের আখড়া। গুড। তাতা। গুড।

আমি কী বলতে যাব- সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিব ঝড়ের বেগে ঢুকলেন। হাতে একটা প্যাকেট। অষুধ মনে হল। ওনার পিছনে ফারহান। ওর চেহারা দেখলাম বিধ্বস্ত।

ফরসা মুখে আতঙ্কের ছাপ। ডান হাতের কনুইয়ে ব্যান্ডেজ। স্যার ঝুঁকে টেবিলের ওপর ল্যাপটপটা রেখে উঠে ফারহানের হাত ধরে সোফায় বসালেন। কি ব্যাপার ফারহান? কি হয়েছে তোমার? শান্ত কই? সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিব ধপাস করে সোফায় বসে বললেন, আর বলিস না? অফিস থেকে ফিরছি। দেখি ফারহান গুলশান ২-এ ‘লেক ক্যাসল’- এর সামনে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে।

হাতে রক্ত ঝরছে। লোক জড়ো হয়েছিল। আমি ওকে দ্রুত আমার গাড়িতে তুলে ডাক্তার তোফায়েলের কাছে নিয়ে গেলাম। প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। তারপর এখানে চলে এলাম।

কি হয়েছে ফারহান? এবার আমি জিজ্ঞেস করলাম। ফারহান বলল, আমি আর শান্ত ‘চিকেন কটেজ’ -এ পিজা আর কোকের অর্ডার দিয়ে বসলাম এন্ট্রান্সের কাছে । কাঁচের ওপাশে ভিলা সাটেইলি আর নীচ তলায় ‘ভিয়েরাস’ বারটা দেখা যাচ্ছিল। আমাদের দেখে দু’ একজন বন্ধু এসে আলাপ জমাল। আমি বাইরে গিয়ে শান্তর বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলার অভিনয় করে ভিলা সাটেইলির ছবি তুলে ফিরে এসেছি।

তখনই দেখলাম। কি? আমি বললাম। ভিলা সাটেইলির দেয়াল ফুঁড়ে কালো একটা কিছু বেরিয়ে এল। কালো রেক্সিনের জ্যাকেট আর প্যান্ট মনে হল। মাথায় কালো হেলমেট, জুতাও কালো, হাতে কালো গ্লাভস।

চোখের পলকে ওটা একটা মোটর সাইকেলে পরিনত হল। পুরা ব্ল্যাক। হোয়াট! হ্যাঁ। তারপর ওটা উড়ে এসে ফাস্টফুডের কাঁচের ওপর জাম্প করবে বুঝতে পেরেই আমি আর শান্ত দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এলাম। তারপর কী ভাবে যে শান্ত বাইকে উঠে স্টার্ট নিল আর আমি চড়ে বসলাম-বলতে পারব না।

ওটা আর কাঁচের ওপর জাম্প দিল না। বরং চোখের পলকে ঘুরে আমাদের ফলো করতে লাগল। তারপর গুলশান সার্কেল দু-এ বাঁক নেওয়ার মুখে হঠাৎ লেজের ঝাপটা মারল আমাকে ... লেজটা কুমিরের মন হল। কি! কুমিরের লেজ! কথাটা আমার মুখ থেকে বেরুলো। হ্যাঁ।

আঁশওলা কুমিরের লেজ। আঠালো, সবুজ রঙের ...ভারি বিশ্রি গন্ধ। বলে ফারহান চুপ করে যায়। বুঝলাম ট্রমা কাটেনি। থাক।

এখন তুমি শুয়ে রেস্ট নাও। বলে স্যার ওকে সোফার ওপর শুইয়ে দিলেন। তারপর আমাকে বললেন, তানিয়া কিচেন থেকে ঠান্ডা পানির বোতল আন তো। আমি কিচেনে ঠান্ডা পানির বোতল আনতে ছুটলাম। ঢাকা শহরে সবুজ কুমির আসবে কোত্থেকে? ফারহানের হেলুসিনেশন হয়নি তো? বলল ভিলা সাটেইলির দেয়াল ফুঁড়ে ওটা বেরিয়েছে।

আমার হাত পা কাঁপছিল। লিনা গোল্ডবার্ড, সংগীতা সিমিন- এরা এলিয়েন? গতমাসে আমার দু’জন কলিগ নতুন জয়েন করেছে। রঞ্জিত কুলকার্নি এবং মনিষা শেখর। এরাও কি এলিয়েন? শান্তর জন্য টেনশন হচ্ছিল। কিন্তও শান্ত বুদ্ধিমান।

ওকে কাবু করা কঠিন। পানির বোতল নিয়ে কিচেন থেকে ফিরে এলে দেখি শান্ত । খালি গায়ে চেয়ারে বসে আছে। পরনের টি-র্শাটটা পড়ে আছে মেঝের ওপর। থ্রিকোয়ার্টাস ভিজে জবজবে ।

তখনও হঁাঁপাচ্ছিল। এ কী! বলে দৌড়ে তোয়ালে এনে দিলাম। মাথা মুছে নিল। ফারহান উঠে বসেছে। ওকে সুস্থই মনে হল।

স্যার বললেন কী ভাবে ভিজলে শান্ত ? শান্ত বলল, এলিয়েন তাড়া করেছিল স্যার। ফারহান তো ইন্ট্রোটা বলেছে না? স্যার বললেন, হ্যাঁ। তারপর কী হল বল। শান্ত বলল, ফারহান পরে যাওয়ার পরও আমি বাইক থামাইনি। অনেক গলি-রাস্তা ঘুরে মিরপুর রোডে ঢুকলাম।

তারপর ডাইনে টার্ন দিনে ধানমন্ডি দশ নম্বর সড়কে উঠে এলাম। তখনও ওটা ফলো করছিল। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কী মনে করে ধানমন্ডি লেকে বাইকসহ ড্রাইভ দিই। তারপর ডুব সাঁতার কেটে রবীন্দ্রসরোবরের দিকটায় উঠলাম ।

একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলাম, ওটা লেকের ধারে এসে থমকে গেল। মনে হল ওটা পানি ভয় পায়। প্রোফেসর আশরাফি বললেন, পানি ভয় পায়? গুড পয়েন্ট। আমি ওপর থেকে আসছি। এসো তানিয়া।

বলে লিফটের দিকে যেতে থাকলেন। লিফটে ভাবছিলাম শান্তও অদ্ভূত জীবটার তাড়া খেল। আবার মনে হল সংগীতা সিমিন- এর ইলেকট্রনিক হাত দেখলাম। একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আজ রাতেই সম্ভবত।

লিফট থামল পাঁচ তলায় । অবাক হলাম। স্যার তো থাকেন ছ’তলায় । একটা স্বল্প আলোর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দীর্ঘ করিডোর। করিডেরোর শেষ মাথায় অস্বচ্ছ কাঁচের স্লাইডিং ডোর।

তার ওপাশে বিশাল একটি হলরুম। দেয়ালে ওয়ার্ল্ড ম্যাপ। বিশাল একটা মনিটরে মিয়ানমারের জঙ্গল বলে মনে হল । নীচের সার সার প্যানেল । সার্ভার।

দেখলাম কয়েকজন স্মার্ট ছেলেমেয়ে ডেস্কে বসে কাজ করছে। সামনে এল সি ডি মনিটর। কারও কারও কানে হেডফোন। কলসেন্টার নাকি? স্যারকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার, এরা কারা? বাংলাদেশ আর্মি ইন্টেলিজেন্স। ওহ! একটা দরজার ওপর লেখা:ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ।

স্যার, দ্রুত পরপর দুবার নক করে করে ঢুকলেন। রিভলভিং চেয়ারে যিনি বসে রয়েছেন তাঁর বয়েস ষাটের মতন। মাথায় ছোট ছোট করে ছাঁটা রুপালি রঙের চুল। চৌকো মুখ। শ্যমলা রং।

বলিষ্ট চেহারা। বৃদ্ধ সাফারি পরে আছেন। আমাকে দেখলেন কয়েক সেকেন্ড। তারপর জলদ গম্ভীর কন্ঠে বললেন, বসুন, প্রফেসর। স্যার বসলেন।

আমাকে বললেন, বস তানিয়া। বসলাম। ঘরে হালকা চুরুটে গন্ধ। বাবা রোজ রাতে একটা চুরুট খান। ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপারটা আপনার কি মনে হয় প্রসেফর? এক্সট্রাটেরিসটিয়াল বিয়িং।

সংক্ষেপে বললেন স্যার। কথাটা শুনে ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ বলে গা ছেড়ে দিলেন। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর অত্যন্ত মৃদুকন্ঠে বললেন, ইউনো প্রসেফর। উই হ্যাভ নো এফেক্টিভ উইপন অ্যাগেইনস্ট দেম।

স্যার বললেন, আই নো। আই নো। তারপরও এই ক্ষেত্রে কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি। ব্রিগেডিয়ার সিধে হয়ে বসলেন। কি করতে চান বলুন? এক।

কুইকলিঙ্ক টেলিকম- এর সিইও লিনা গোল্ডবার্ড যে বাড়িতে থাকেন সেই ভিলা সাটেইলির গ্রাউন্ড ফ্লোরে ‘ভিয়েরাস’ নামে একটা বার আছে। ওই বারে যে কানও একসেস নেই। ঠিক কাদের একসেস রয়েছে বের করতে হবে। দুই। রাজউক এবং ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপে দেখতে হবে গুলশানের ১২৮ রোডের ড্রেনেজ সিসটেমটা কী ধরনের।

বিশেষ করে ভিলা সাটেইলির নীচে কোনও ধরনের টানেল আছে কি না। তিন। ভিলা সাটেইলির আশেপাশের সব স্থপনার খোঁজ নিতে হবে এবং সেখান থেকে গোপনে লোকজন সরিয়ে ফেলুন। চার। সেনাবাহিনীর এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্টদের সঙ্গে এক্ষুনি যোগাযোগ করতে হবে।

পাঁচ। ভিলা সাটেইলির পিছনের গুলশান লেকে আর্মির বোট যেন তৈরি থাকে। যে করেই হোক ভিলা সাটেইলি ধ্বংস করতে হবে। ওটা এলিয়েনদের আখড়া। দেন ইউ হ্যাভ আ প্ল্যান প্রফেসর? ডেফেনেটলি! আই অ্যাম আ সাইনটিস্ট ব্রিগেডিয়ার, ইউ নো।

ভিলা সাটেইলি এলিয়েনদের আখড়া। এলিয়েনরা পানি ভয় পায়। ভিলা সাটেইলির ঠিক পিছনেই গুলশান লেক। সো, বাড়িটাকে এক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে গুলশান লেকে ফেলতে হবে। তবে ভিলা সাটেইলি কেবল এক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দিলে কাজ হবে না- এটা এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্টদের বোঝাতে হবে।

ওকে প্রফেসর। আমাকে কি করতে হবে বুঝেছি। মুহূর্তেই গা ঝড়া দিয়ে উঠলেন ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ। ছ’তলা থেকে ফিরে এসে দেখি শান্ত স্যারে একটা নীল টিশার্ট পরে নিয়েছে। স্যার টেবিলের ওপর থেকে রিমোট তুলে নিয়ে সোফায় বসে বাটন প্রেস করলেন।

দেয়ালজুড়ে হিজিবিজি গুগল ম্যাপ ফুটে উঠল। ধীরে ধীরে ফোকাস করছেন। ঢাকা । গুলশান। বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক ও সেতু।

তার ওপরে গুলশান রোড নং ১৩০; রোড নং ১২৯; রোড নং ১২৮। এবার গুলশান লেকের ভিডিও ক্লিপ। লেকে পারে বাঁশের বেড়া মোড়ানো গাছ, সরু কংক্রিটের ফুটপাত, বাঁশের ফালি দিয়ে বেড়া, টিনের ঘের। সাদা রং করা পাঁচতলা -ছ’তলা বিল্ডিং। সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিব অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, ঢাকায় এসব কী হচ্ছে রে শ্যামল।

ভূতপ্রেত হলেও না-হয় কথা ছিল। এখন কী করবি রে শ্যামল? একটা প্ল্যান মাথায় ঘুরছে। দেখি কী হয়। স্যার বললেন। সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিব জিজ্ঞেস করলেন।

সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু ওই এলিয়েনদের উদ্দেশ্য কি রে শ্যামল? স্যার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, উদ্দেশ্য আর কী। ওয়াল্ড ওয়াইড কনট্রোল ছাড়া। এই তো চলছে মহাবিশ্ব জুড়ে। সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিব বললেন, ভারি গোলমালে পড়া গেল দেখছি।

ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ এলেন। ওনাকে ল্যাবে এই প্রথম দেখলাম। ব্রিগেডিয়ার এর হাতে একটা ওয়াকিটকি। ল্যাবে এসে সবাইকে দেখে নিলেন একবার। তারপর সরাসরি কাজের কথায় চলে এলেন।

বললেন, ভিলা সাটেইলির নীচে ‘ভিয়েরাস’ নামে যে বার আছে সেই বারে কুইকলিঙ্ক টেলিকম-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর ওহঝাটা কোম্পানির সিলেকটেড ফিনিস সিটিজেন ছাড়া একসেস নেই। গুড। কিন্তু ওহঝাটা কি? জেরমান কাজাভার সাউথইষ্ট এশিয়ান বিজনেস কনসার্ন। ওহঝাটা শব্দটি ফিনিশ । এর অর্থ: নিয়ন্ত্রণ।

আচ্ছা। বলে স্যার সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিব এর দিকে তাকালেন। ওনার মুখচোখ কেমন বদলে গেছে। ব্রিগেডিয়ার বললেন, ভিলা সাটেইলির দুই দিকে একটা ওষুধ কোম্পানী আর গার্মেন্টস এর ওয়্যারহাউজ আছে । আমাদের লোকদের ওদের দিয়ে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি।

গুড। যা বুঝলাম লেক থেকে ভিলা সাটেইলির ডিসটেন্স এই কুড়ি ফুটের মতন। মাঝখানে সরু ফুটপাত। এখনই ফুটপাতের দু’পাশের ব্যারিকেড দিয়ে লোকচলাচল বন্ধ করে দিন। বিগ্রেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ ওয়াকিটকি তুলে যথাযথ নির্দেশ দিলেন।

ভিলা সাটেইলির নীচে আন্ড্ররগ্রাউন্ড ড্রেন সিসটেম সম্বন্ধে কিছু জানা গেছে? আমি ফায়ার সার্ভিস ডাইরেক্টর জেনারেলা আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। আর এক্সপ্লোসিভ কর্নেল মাজেদ কে আমি পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেছি। হিজ’স রেডি টু ফেস দ্য সিচুয়েশন। ফাইন।

এখন আমাদের লেকের ওই পাড়ে কোথাও পজিশন নিতে হবে। ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ একটু ভেবে বললেন, নো প্রবলেন। ভিলা সাটেইলির ঠিক অপজিটে গুলশান লেকের পাড়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই এক টেলিফোন অপারেটরের ফ্ল্যাট। আমি এখুনি ওর সঙ্গে কথা বলছি। চলুন, তাহলে।

বলে স্যার উঠে দাঁড়ালেন। ব্রিগেডিয়ার ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন। আমরা দরকার কছে এলাম। স্যার বললেন, ওহো, নাইট ভিশন বাইনুকলার লাগবে। তোমরা নীচে যাও।

আমি ওটা খুঁজে নিয়ে আসছি। আমরা নীচে নেমে এলাম । একটু পর স্যার নীচে নেমে এলেন। হাতে একটা বাইনুকলার নাইট ভিশন। কালো রঙের জিনিসটা অনেকটা প্লেস্টেশনের মতো দেখতে।

গাড়িতে ওঠার আগে ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ আরও দুটো তথ্য দিলেন। (১ ) ফায়ার সার্ভিস-এর ডাইরেক্টর জেনারেল আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা ঢাকার একটি পুরনো নকশায় ভিলা সাটেইলির ঠিক নীচেই আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনের উল্লেখ আছে বললেন। (২)কর্নেল মাজেদ এর নেতৃত্বে এক্সপ্লেসিভ এক্সপার্ট টিম গুলশানে রওনা হয়ে গেছে। সাংবাদিক মোশতাক আন্দালিব- এর নিশান সানি তে উঠলেন স্যার ও ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ। আমার কিয়া স্পোর্টেজটায় উঠল শান্ত আর ফারহান।

ফ্ল্যাটবাড়িটা বাইতুল মামুর জামিয়া মসজিদ- এর কাছে। ছ’তলা লাল রঙের সিরামিক ইটের মালটি স্টোরিড বাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ বললেন, তোমার কলিগ সংগীতা সিমিন ভিলা এইমাত্র সাটেইলি তে ঢুকল। শরীরে শিরশিরানি টের পেলাম। ছ’তলায় উঠে এলাম ।

দরজার কাছে একজন চশমাপরা মাঝবয়েসি মহিলা । গায়ের রং শ্যামলা। পরনে কালো সাদা সুতি শাড়ি পরা। ইনিই টেলিফোন অপারেটর কিনা বুঝতে পারলাম না। ঘরে অন্ধকার।

ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ জিজ্ঞেস করলেন, ড্রইংরুমের পর্দা ফেলা তো মনিরা? জ্বী স্যার। তোমার স্বামী এখন কেমন আগের মতোই। বিগ্রেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ বললেন, মুনিরা দরজা বন্ধ করে দাও। ওকে স্যার। স্যার নির্দেশ দিলেন।

বি কেয়ার ফুল। কারও ছবি তোলার দরকার নেই। বিগ্রেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ অন্ধকারেই জানালার ধারে গেলেন পর্দা সরাতেই লেকের পচা গন্ধসহ এক ঝলক বাতাস ঢুকল। ব্রিগেডিয়ারের হাতে নাইট ভিশন। দূরে দেখছেন।

লেকের ওই পারে ভিলা সাটেইলি। ওয়াকিটকিতে তখনও কথা বলছেন। বললেন ওকে থ্যাঙ্কস। বলে নাইট ভিশনটা স্যারকে দিলেন। স্যার দেখছেন।

আমার গা ছমছম করে উঠল। নাও দেখ। বলে নাইট ভিশনটা আমাকে দিলেন। হালকা সবুজ অন্ধকার। ভিলা সাটেইলি ফোকস করতে পারলাম।

ছ’তলার জানালা । ঘরের ভিতরে আলো জ্বলছে। গোল একটা টেবিল। টেবিলের ওপর বিকিনি পরা একটা মেয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটির মুখে কালো মুখোশ।

টেবিলের চারপাশে বসে আছে লিনা গোল্ডবার্ড, সংগীতা সিমিন। আর আমার দু’জন কলিগ- রঞ্জিত কুলকার্নি এবং মনিষা শেখর । আরও কয়েকজনকে চিনতে পারলাম না। এদের একজনের মুখে কালো মুখোশ। এদের মধ্যে কেউ কি জেরমান কাজাভা? ঘরে একজন ঢুকল।

পুরুষ না নারী বুঝতে পারলাম না। সারা শরীরে সবুজ রঙের আঁশ, লেজ আছে। শিউরে উঠলাম। লেজওয়ালা সবুজ আঁশ মুখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকালো। আমি আতকে উঠলাম।

আমাকে কি দেখছে? ঠিক তখুনি প্রচন্ড বিস্ফোরণ হল। চারদিকে দিনের আলো ছড়ালো। সেই আলোয় দেখলাম ভিলা সাটেইলি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল লেকের পানি তে তুমুল তোলপাড় তুলে। ঠিক তখনই কয়েকটা জোরালো সার্চ লাইট জ্বলে উঠল। লেকের ধারে আর্মি ট্রাক।

লেকের ওপর কয়েকটি আর্মির বোট। কেউ ভেসে উঠল না কিনা দেখছে। ব্রিগেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ বললেন, ঠিক আছে মনিরা। এবার আলো জ্বালাও। আলো জ্বলে উঠতেই বিগ্রেডিয়ার এস্তেমদাদ ওয়াজেদ আর স্যার হাত মেলালেন।

আমাদের মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.