আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাইখুল হাদিসের ইন্তেকাল ও কতিপয় ভাবনা

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু। বার্ধক্যজনিত কারণে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের মৃতু্য হল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নীরবভাবে জীবন-যাপন করছিলেন। তবুও তাঁর উপস্থিতি ছিল আশীর্বাদের মতো।

এখন এরও অবসান হল। কিন্তু তাঁর মৃতু্যর পর মনে কতিপয় প্রশ্ন জাগছে, তা-ই এখানে তুলে ধরছি: ১. নানা সূত্রে এটা প্রকাশিত যে মৃতু্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। গড়পড়তায় তা সন্তোষজনক। তাঁর জীবন ছিল কর্ম মুখর। কিন্তু একটি পরিচয়ই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আর তা হল, শাইখুল হাদিস। ইসলামী জ্ঞানের অন্যতম সূত্র হাদিসশাস্ত্রের বিশুদ্ধ গ্রন্থ বোখারি শরীফকে তিনিই বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি যেহেতু সরাসরি হাদিসের পাঠদানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাই তাঁর অনূদিত গ্রন্থ মানসম্পন্ন হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিেক বাংলার আলেম-সমাজ তো বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দেন নি দীর্ঘদিন। তিনি এখানে দৃষ্ঠান্ত কায়েম করলেন।

তাই তিনি অনন্য। কিন্তু কি বাংলা ভাষাীর ক্ষেত্রে, কি আলেম-ওলামার চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর গ্রন্থের মূল্যায়ন কতটুকু হল তা ভাবার বিষয়। এবং এর দায়ভার কে নেবে: আলেম-সমাজ নাকি মিডিয়া? ২. তিনি বর্ষীয়ান আলেম, এটা বোধহয় না বললেও হয়। কিন্তু তাঁর মৃতু্যর পর ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় এর প্রচারটা যথাযথ গুরুত্ব পায় নি। এর কারণটা অজানা।

হতে পারে তার রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি আমাদের মূল ধারার প্রচার মাধ্যমের সমর্থন নেই। আর প্রশ্নটা এখানেই। মতের মিল না হলে বুঝি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির প্রচারকেও খাটো করে দেখানো যায়? ৩. মৃতু্যর পর প্রচারে গুরুত্ব না পাওয়ার ্বিশেষ একটি কারণ হতে পারে তাঁর কর্মজীবনের সীমাবদ্ধতা। তিনি শুধু ধর্মকর্ম নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। সামাজিক নানা কাজে জড়িত হয়ে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার যে যোগ্যতা-দক্ষতা তাঁর ছিল এবং প্রয়োজনীয়তাও; তা হযে উঠে নি।

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের ইসলাম ধর্মে বৈরাগ্যের সুযোগ না থাকলেও আমাদের ধর্ম প্রতিনিধিদের কর্মব্যস্ততা-পরিধি মসজিদ-মাদরাসায়-ই সীমিত থাকে। এ জন্য কর্মবহুল হওয়ার পরও তারা থাকেন সমাজের অন্তরালে, লোকচক্ষুর আড়ালে। অবশ্য শাইখুল হাদিস একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসাবেও পরিচিত। কিন্তু ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতির সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে বৃহত্তর জনসমাজের স্পন্দনকে আত্মস্থ করতে না পারায় রাজনৈতিকভাবেও তিনি প্রান্তিক। তাই প্রচার-মাধ্যমের এই গা-ছাড়া ভাব।

৪. তবে ব্লগসহ নানা সামাজিক মিডিয়ার কারণে তাঁর মুত্যর প্রচার দ্রুত হয়েছে। এটা শুভ লক্ষণ। আবার সন্দেহ হচ্ছে, এখানেই কি এটা শেষ হয়ে যাবে, নাকি যারা তার ঘনিষ্টজন, তাঁর স্পর্শধন্য ও শিষ্য, তারা তাঁর নানা কীর্তি ও মহিমাকে, তাঁর ব্যক্তিক গুণাবলি, জ্ঞানের প্রসারতাকে নানা প্রচার মাধ্যমের নানা শাখায় তুলে ধরতে সক্ষম হবেন! যতদূর জানা যায়, তার পরিমণ্ডলে তরুণদের বাংলা ভাষা চর্চার একটা পরিবেশ ছিল এবং অন্যান্য মাদরাসার তুলনায় ভালই ছিল। সঙ্গত কারণে তাই যে প্রত্যাশা জাগে যে, তাঁর সে সব শিষ্য-প্রশিষ্য, গুণমুগ্ধ স্পর্শধন্য ব্যক্তিগণ তাঁর পরিচয় জনসমক্ষে তুলে ধরবেন বা সক্ষম হবেন এবং অবশ্যই সততার সঙ্গে। ভাণ করার কিছু নেই।

সত্যটুকু জানার অধিকার জনমানুষের রয়েেছ। ৪. আল্লাম শামসুল হক ফরিদপুরী গত হয়েছেন সে প্রায় কয়েক দশক হতে চলেছে। শোনা যায়, তাঁর রচিত অনেক মূল্যবান গ্রন্থ এখনও অপ্রকাশিত রয়েে গেছে। আজিজুল হক র. এরও নানা গ্রন্থ রয়েছে। এখন তাঁর প্রতি ঘনিষ্ট শ্রদ্ধা নিবেদন হবে, তাঁর রচিত সকল গ্রন্থকে অবিলম্বে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

না হলে এর ভাগ্যেও শামসুল হক ফরিদপুরী রচিত গ্রন্থের মতো গোপনতার তিলক লাগতে পারে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.