ঠিক যেখানে দিনের শুরু অন্ধ কাল রাত্রি শেষ মন যত দূর চাইছে যেতে ঠিক ততদূর আমার দেশ । এ মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক এই দাবানল পোড়াক চোখ আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক । সদ্য একটা বেসরকারী ব্যাংকের নতুন এক শাখায় জয়েন করেছি । শাখার উদ্ভোধণ খুব শিঘঘিরই । সবকিছুই নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে ।
কাজের খুব চাপ । আমরা সহকর্মীরা নিজেদের মধ্যে খুব ভালভাবে তখনও পরিচিত হতে পারিনি । আমাদের ম্যানেজার স্যার হারুন-উর-রশীদ । খুবই কর্মঠ এবং বন্ধুবৎসল লোক । তো লোকবল সংকটে স্যার নিজের চেম্বার ছেড়ে পাশের ডেস্কে বসেই আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে ।
অফিসের নতুন টিবয় হানিফ । একটু কানেখাটো । তিন-চারবার না ডাকলে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা কঠিন । তো যানজটে পড়ে সেদিন অফিসে পৌছতে একটু দেরী হয়ে গেল । মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে ছিল ।
উচ্চস্বরে চিৎকার করে টিবয়কে ডাকলাম হারুন ! এই হারুন ! কতক্ষণ ধরে চায়ের কথা বলতাছি । পরিবেশটা কেমন থমকে গেল । কিছুই ধরতে পারলামনা । পাশের ডেস্কে তাকাতেই দেখি স্যার হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম আমি কী বড় ভুল করে ফেলেছি ।
হানিফকে , হারুন (আমাদের ম্যানেজার স্যার) নামে ডেকে চা দিতে বলেছি !!! ধরণী দ্বিধা হও । কিছুই না বুঝার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম । স্যারও চরম বিব্রত হয়ে কিছুই বলতে পারছেননা । মিনিট দশেক পর কাছে এসে অন্য একটা প্রসঙ্গ টেনে স্যার বললেন : ইয়্যাংম্যান । এই বয়সে এত ভুলোমনা হলে চলবে ? আমি বিভ্রান্ত হয়ে বোকার মত মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখলাম ।
সেই হাসির অর্থ স্যার কেন আমি নিজেই উদ্ধার করতে পারলামনা !!!!
তখন মাস্টার্স কোর্স ভাইভা । কী এক কারনে যেন লিখিত পরীক্ষার তিনমাস পর ভাইভার ডেট পড়ল । আমার মত দিন এনে দিন খাওয়া টাইপ স্টুডেন্টরাতো ৩য় দিনেই পড়া ভুলে যাই । শুধুমাত্র পরীক্ষার দুইদিন আগে পড়ে পরীক্ষা দেই পাস করার জন্য । আর তিনমাস পরে তো কোর্সের নাম মনে রাখাই কষ্টসাধ্য ।
তো লিখিত পরীক্ষায় যে চারটি কোর্স ছিল দুই দিনের মাঝে সেই কোর্সগুলোর রেফারেন্স বইয়ের নাম রাইটার সহ মুখস্ত করে ফেললাম । কারন ক্যাম্পাসে বড় ভাইদের ব্যাপক প্রচলিত নোটের কারনে আর রেফারেন্স বইগুলো খুলে দেখা হয়নি । সে যাই হোক ভাইভার দুইদিন আগে ব্যাপক পড়াশুনা শুরু করলাম । তিনটি কোর্সের টপিকস সম্পর্কে মুটামুটি ধারণা নিলাম । কোয়ান্টাম ফিজিক্স নামের এক বিদঘুটে ভয়ংকর কোর্স ছিল ।
যার আগামাথা শুধু আমি কেন বিভাগের অনেক শিক্ষক পর্যন্ত ভালভাবে বুঝত না বলেই আমার ধারণা !! তো ভাবলাম সেই কোর্সটা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল । এড়িয়ে যাবার আরো একটা কারন অবশ্য ছিল । আগের দিনের ভাইভাতে নাকি কোয়ান্টাম ফিজিক্সের শিক্ষক কামরুল হাসান স্যার থাকতে পারেননি তার মেয়ের অসুস্থতার জন্য। কারো অসুস্থতা যে অন্য কারো সুখের কারন হতে পারে সেবারই প্রথম টের পেলাম (ক্ষমা প্রার্থণাপূর্বক)!! পরের দিনের ভাইভা শুরু হল । আমার সিরিয়াল পাচনম্বরে ।
৪র্থ জনের ভাইভা চলছে । ঠিক এইসময় দেখি কামরুল হাসান স্যার ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করলেন । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । মাথায় খালি ঘুরছে কোয়ান্টাম ফিজিক্স আর কামরুল হাসান স্যার । যথারীতি ভাইভার ডাক পড়ল ।
স্যার জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কোন কোর্সটা সম্পর্কে ভাল জান ? আমার মুখ আমার সাথে প্রতারণা করল । মুখ ফসকে বলে ফেললাম : কোয়ান্টাম ফিজিক্স !!! ভাইভার বাকী ১৫ মিনিটের কথা আর না হয় এই মুখে নাই বললাম ।
সেই স্কুলের সময়কার ঘটনা । খুব রাশভারী অংকের শিক্ষক ছিলেন জামাল স্যার । স্যারের ভয়ে নাকি বাঘে মহিষে একঘাটে জল খেত ।
এই ছিল আমাদের তখনকার বিশ্বাস । স্যার যেই রাস্তা দিয়ে যেতেন , সেই রাস্তায় আর কাউকে খুজে পাওয়া যেতনা । তার ভয়ে কেউ তার পাশ দিয়ে যাবার সাহস পেতনা । স্যারের স্ত্রী-ছেলেমেয়েও তার সাথে উচু গলায় কথা বলতে সাহস করতনা । আমরা সবাই তার উপরে চরম বিরক্ত ছিলাম (অবশ্য ছোটবেলায়) ।
তো আমাদেরই এক বন্ধু শাখাওয়াত একদিন ক্লাসে এসে বলল : জানিস জামাল স্যার নাকি বিয়ে করসে !! ব্যাস মুহূর্তের মধ্যেই এই খবর পুরো ক্লাসে ছড়িয়ে পড়ল । টিফিনের বিরতির মধ্যে সেটা স্বয়ং হেডমাস্টারের কানে পৌছে গেল । হেডস্যার জামাল স্যারকে ডেকে পাঠালেন : ঘটনাটা কী ? তথাপি হেডস্যারের রুমে শাখাওয়াতের ডাক পড়ল । আমরাতো সবাই ভয়ে অস্থির শাখাওয়াতের করুণ পরিনতির কথা ভেবে । কিন্তু তার মাঝে ভয়ের লেশমাত্র নেই ।
হেডস্যার জিজ্ঞেস করলেন : এই ছেলে , তুই এই খবর কোথা থেকে শুনলি ? শাখাওয়াত মুচকি হেসে বলল : স্যার আমি তো কিছুই শুনি নাই । তবে স্যার বিয়ে না করলে স্যারের ছেলেমেয়ে হল কীভাবে ?!?!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।