আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড্ডার গল্পঃ পর্ব-২ ।। কিংকর্তব্যবিমূঢ়!


কিংকর্তব্যবিমূঢ়!.... বাংলা অভিধানের খিটমিটে একটা শব্দ! কিন্তু কিছু কিছু পরিস্থিতিতে এই শব্দটা এতটাই এ্যপ্রোপ্রিয়েট যে.... আর কোন বাংলা শব্দ বা শব্দমালা দিয়ে পরিস্থিতি-টা ঠিক যেন যথার্থ প্রকাশ করা যায়না! সেইরকমই এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতিতে পরেছিলাম আমি একবার। মফস্বল শহর। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে শহীদ মিনারে পূস্পার্ঘ্য অর্পণ! যে কোন জাতীয় দিবসেই খুব ভোরে কলেজ মাঠের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিয়ে দিবসের অনুষ্ঠানমালা শুরু করাই এখানকার রীতি। আমরা তখন ছাত্র সংগঠন করি... সংগঠনের একনিষ্ঠ কর্মী! আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও শহীদ মিনারে ফুলের মালা দেয়া হবে। আগের রাতেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন.... এখন শুধু ভোরবেলায় ভাল একটা জমায়েত কনফার্ম করতে পারলেই হয়।

ভোরবেলা। আজান হয়েছে মাত্র.... কিন্তু তখনও পূবের আকাশ ফিকে হয়নি। আমি আর বেলাল বের হয়েছি সবার আগে। ভোরবেলায় পাড়ার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে খুব ভাল লাগছে। ফাঁকা রাস্তা....দু'একটা বাড়ীর সামনের লাইট জ্বলছে।

এক এক করে অনেককেই ডেকে তুলেছি। বাচ্চুর বাসার সামনে যখন গেছি তখন আমরা ইতিমধ্যেই পাঁচজন হয়ে গেছি। বাচ্চুদের একতলা বাড়ীর বারান্দায় তখনও ৬০ ওয়াটের একটা হলদেটে বাল্ব জ্বলছে। বাচ্চুর ঘরটা রাস্তার পাশেই। বাচ্চুর ঘরের জানালায় সাংকেতিক টোকা দিলাম.... ও জ্বানালা দিয়ে মুখ বের করেলো...'' দাঁড়া... এখনই বের হচ্ছি!'' আমাদের ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে বাচ্চু ছিল অতি দুষ্টু প্রকৃতির.... পাঁজির পা ঝাড়া! সেই বাচ্চুর জন্য তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে উপযুক্ত 'উষ্ণ সুপ্রভাত' জানানোর ব্যবস্থা করা হলো! আমরা বাচ্চুদের বারান্দায় সদর দরজার সামনে পজিশন নিলাম! মোকাদ্দেস আর বেলাল ঝটপট হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট নামিয়ে রেডী!... সার্ট পেঁচিয়ে কোমর পর্যন্ত গুঁজে সদর দরজার দিকে উল্টোমুখ হয়ে দাঁড়ালো দু'জন।

পশ্চাৎদেশে শুধুমাত্র অন্তর্বাস-ই সম্বল! চিতাবাঘের চামড়ার মত ছাপ মারা বেলালের অন্ডারওয়্যারটি হলুদ আলোয় আরও পিকিউলিয়ার দেখাচ্ছে... সেই নিয়ে আমরা হাসাহাসি করছি! এরইমধ্যে দরজার ভিতর থেকে হুরকো খোলার আওয়াজ এলো। সাথে সাথেই মোকাদ্দেস আর বেলাল কোমর থেকে শরীরটা সামনের দিকে বাঁকিয়ে দিগম্বর পশ্চাৎদেশ ডিসপ্লে করলো সদর দরজার মুখে.... আমরা সমস্বরে কোরাস ধরলাম..'' সুপ্রভাত....সু-স্বাগতম! সু-স্বাগতম... সুপ্রভাত!'' ক্যার-ক্যার শব্দ করে সদর দরজার ভারী পাল্লা দু'টি ভেতর থেকে খুলে গেল.... আমরা বাকি তিনজন সাথে সাথেই চুপ! শুধু চুপই না.... একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! দরজা খুলে বের হয়েছেন বাচ্চুর বাবা... ফজর নামাজ পড়তে মসজিদে যাবেন তিনি। মোকাদ্দেস আর বেলাল উল্টোমুখো হয়ে তখনও স্বাগত জানিয়েই যাচ্ছে আগুয়ানকে...'' সুপ্রভাত....সু-স্বাগতম! সু-স্বাগতম... সুপ্রভাত!'' এরকম একটা সকাল দেখবেন নিশ্চয়ই কল্পনাও করেননি আঙ্কেল! উনার ঘোর কাটতেই যেন সময় গেল কিছুটা। ''খুহু!... খুহু!'' জোরে জোরে বার দুয়েক গলা খাকারী দিলেন ভদ্রলোক! এতক্ষণে হুঁস হলো মোকাদ্দেস আর বেলালের। ওরা তখন আগে প্যান্ট তুলবে, নাকি সার্ট নামাবে ..... সেই কসরতে ব্যস্ত! আমরা তিনজন চোরের মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি! জটিল এক পরিস্থিতি! কি করা উচিত... সালাম দেব, নাকি দৌঁড়ে পালাব... কিছুই বুঝতেছিনা! উদ্ভূত নাজুক পরিস্থিতির শীতল বরফ ভাঙলেন বাচ্চুর বাবাই...'' ওহ, ছেলেরা বুঝি ব্যায়াম করছো?! ভাল... ভাল!"... বলেই হন হন করে মসজিদ পানে হেঁটে চললেন তিনি।

(ক্রেডিট লাইনঃ আমার বড় ভাই কাম বন্ধু.... সুহৃদ বাবু ভাইয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম এখানে। উনি মফস্বল শহরের একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা। অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ। জমিয়ে গল্প বলেন তিনি। আমরা যখন আড্ডা দেই... বাবু ভাই-ই আড্ডার মধ্যমনি।

আড্ডায় বলা উনার গল্প নিয়ে এই পোস্ট। উনার অনুমতি নিয়েই .... উনার জবানীতেই। )
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।