আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রথম আলোর ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা

স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে মুক্তিযুদ্ধ পরবতী প্রজন্মের পক্ষ হতে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন । "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" শিরোনামের ধারাবাহিক প্রতিবেদনটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ পরবতী প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ইতিহাস নতুনভাবে উন্মোচিত হচ্ছে, যা এরই মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যতদুর জানা যায় প্রথম আলো নিজস্ব উদ্দোগে প্রতিবেদনটির প্রকাশ করছে, সরকার বা সরকার পক্ষের কেউ প্রতিবেদনটির সাথে জড়িত নয় । তথ্যভিত্তিক বস্তুনিস্ঠ সংবাদের জন্য প্রথম আলো হয়তোবা এই সংক্রান্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত পূবে প্রকাশিত বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দলিল থেকে সংগ্রহ করে । প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো শুধুমাএ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের ইতিহাস এই প্রজন্মের সামনে তুলে ধরছে, এক্ষেএে আমাদের প্রশ্ন খেতাবপ্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাইরের যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল আমরা কি তাদের বীরত্বের ইতিহাস জানি? দূঃখজনক ভাবে উত্তর হবে না আমরা জানি না ।

স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সম্মিলিত কোন দলিল কি আমাদের আছে? আমরা কি সত্যিই আমাদের জাতীয় বীরদের মনে রেখেছি? আজ পযন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিঃভূল একটা তালিকা আমরা যেখানে প্রনয়ণ করতে পারি নাই । সেখানে মনে রাখারতো প্রশ্নই আসে না । ইতিহাস বলছে যখন যেদল ক্ষমতায় এসেছে তখন সেইদল তাদের মনমত করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রনয়ণ করেছে । আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় খাকে তখন তারা তাদের মত করে তালিকা প্রনয়ণ করে, বিএনপি যখন ক্ষমতায় খাকে তখন তারা তাদের মত করে তালিকা প্রনয়ণ করে একটা উদাহরন দেই, আমার এলাকায় ক্ষমতাশীন দলের একজন নেতা আছেন যিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেন এবং যতদুর সম্ভব তার কাছে সাটিফিকেটও আছে কিন্তু তার বর্তমান বয়স মাএ ৪০ বছর!!! তাহলে কি তিনি মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? কেউ প্রতিবাদ করে না কারন তিনি ক্ষমতাশীন দলের নেতা!! আবার আমার এলাকায়ই এমন আরেকজন আছেন যিনি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রণীত তালিকায় নিজের নাম অন্তভূক্ত করেছিলেন কিন্তু তিনি আদৌ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না । বরং মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের সহযোগিতাকারী হিসেবে তার পরিচয় ছিলো! মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম উঠেছিল কারন তিনি তখন বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন ।

আমাদের চারপাশে এরকম হাজারো উদাহরন আছে । মোদ্দাকথা এমন কোন দলিল আমাদের হাতে নেই যা দলীয় প্রভাব মুক্ত। ছোট্ট আরেকটি উদাহরন দেই, আমার পরিচিত একজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময় ভারতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের (রাজনগর) সহকারী প্রধানের দায়ীত্ব পালন করেছিলেন, যা সর্বজন বিধেয় কিন্তু দূঃখজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্বাধীনতা ইতিহাসের যে দলিল (আওয়ামী লীগের গত শাসনামলে প্রকাশিত) সংরক্ষিত আছে তাতে ঐ প্রশিক্ষণ শিবিরের অন্য দুইজন দায়ীত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তির নাম থাকলেও তার নাম নেই । কারন তিনি স্বাধীনতা পরবতী সময়ে জাসদের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন । এভাবে কত মুক্তিযোদ্ধার নাম যে কতভাবে দলীয় বিবেচনার চাকায় পিস্ট হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

দূঃখ শুধু এই ভেবে যে আমাদের পরবতী জেনারেশন কখনোই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে না । জানতে পারবে না সেই সব বীরদের নাম যারা জীবন বাজী রেখে মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধ করেছিলো। যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে একটা সময় আসবে যখন বিকৃত ইতিহাসই প্রকৃত বলে মনে হবে । কিছুদিন পূর্বে যোদ্ধাপরাধী বিচারের বিরুদ্ধে জামায়েত ইসলাম যেভাবে শো-ডাউন করেছে তাতে যেকোন দিন মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার বনে যেতে পারে, আবার রাজাকার বনে যেতে পারে মুক্তিযোদ্ধা। কিছুদিন পূর্বে দৈনিক প্রথম আলোতে ছাএলীগ কর্মী কতৃক মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত হওয়ার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ।

যা আমাদের ব্যাথিত করেছিল তবে বিষ্মিত করে নাই, কারন ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধারা এভাবেই বারবার লাঞ্ছিত হচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না । জাতীয় পতাকা বহনকারী গাড়ি যখন ৭১ এর চিন্হিত রাজাকারদের নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে ছুটে যায় তখনও মুক্তিযোদ্ধারা অপমানিত হয়, লাঞ্ছিত হয় । তবে কিছু বলতে পারে না, কারন তাদের সেই অধিকারই নেই, তারাতো সমাজের তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক । স্বাধীনতার চার দশক পর রাজাকারদের ( প্রকাশ যোদ্ধাপরাধী/ মানবতাবিরোধী ) বিচারের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তবে অবস্থাদৃস্টে তা প্রহসন বলেই মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি যেই ভাবে রাজনীতি শুরু করেছে তাতে বিচারকায শেষ হতে কয়েক যুগ সময় লাগতে পারে।

একটি বিষয় ভাবতে অবাক লাগে, ৭১এ যারা রাজাকার ও পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছিল তাদের মধ্যে অনেকেই আজ তাদের পক্ষে কলম তুলে ধরেছেন, কথার ফুলঝুরি ফোটাচ্ছেন। ক্ষমতার লোভ তাদের বিবেবকে অন্ধ করে ফেলেছে। শুধুমাএ এই ক্ষমতার লোভ, ভোটের রাজনীতির কারনে রাজাকারদের বিচার কখনই হবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার মতো রাজাকারদের কোন তালিকাও আমরা আজ প্রকাশ করতে পারি নাই। আর বিচার সেতো প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।

আমাদের মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম আর কত বছর বেঁচে থাকবে? ১০ বছর, ২০ বছর? এরপর আর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম থাকবে না, থাকবে মুক্তিযুদ্ধ পরবতী প্রজন্ম যারা ইতিহাস সৃস্টি করেনি, ইতিহাসের সাক্ষীও ছিলো না । তারা কি প্রকৃত ইতিহাস বলতে পারবে? কক্ষনও না । এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের কাছে আমাদের আকুল আবেদন প্লিজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা আপনারা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে জান । অন্তত একটিবারের জন্য হলেও দলীয় বা রাজনৈতিক পরিচয় হতে বেরিয়ে আসুন । আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস পরবতী জেনারেশনকে জানাতে চাই ।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আমরা গর্ব করতে চাই। করে অনুগ্রহ করে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।