আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে জেনে-শুনে মৃত বানিয়ে রেখেছে সরকার।

আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ... নরসিংদীর রায়পুরার বীরপ্রতীক মোবারক হোসেন মৃত নয়, জীবিত। বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত এ মুক্তিযোদ্ধাকে তিন বছর ধরে মৃত বানিয়ে রেখেছে সরকার। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এ বীরপ্রতীক বিষয়টি সরকারের একাধিক দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দপ্তরই ভুল সংশোধনের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে জীবিত থেকেও মৃত পরিচয় বহন করে চলা এ মুক্তিযোদ্ধা সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

রায়পুরার আমীরগঞ্জ ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামের মৃত কারি হোছেন আলীর ছেলে মোবারক হোসেন। তিনি ১৯৫৬ সালে সার্ভেয়ার পদে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে পাকিস্তানের পেশোয়ারে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার পদে চাকরিকালীন ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক মাসের ছুটিতে তিনি দেশে আসেন। দেশের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় ছুটি শেষ হলেও কর্মস্থলে ফেরেননি। কিছুদিন পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। জীবন বাজি রেখে শুধু যুদ্ধই করেননি তিনি, সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষিত করে যুদ্ধের জন্য তৈরিও করেছেন। সিলেটের মনতলায় মেজর এম এ মতিনের নেতৃত্বে যুদ্ধ শুরু করেন মোবারক হোসেন। প্রথম সারির কম্পানির কমান্ডার ছিলেন মোবারক হোসেন। ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর সিংগারবিল যাওয়ার কথা বলে কমান্ডার মেজর এম এ মতিন আর ফিরে আসেননি।

চার দিকে তখন তুমুল যুদ্ধ। কমান্ডারের অনুপস্থিতে ৩ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তিনি তাঁর দলবল নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে বাম পায়ের গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হন। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত সহকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ফের যুদ্ধ চালিয়ে যান তিনি। তাঁর নেতৃত্বে অর্জিত হয় বিজয়।

শত্রু মুক্ত হয় মনতলা এলাকা। মোবারক হোসেন আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য মুজিব সরকার তাঁকে বীরপ্রতীক সম্মানে ভূষিত করেন। সরকার ফিরিয়ে দেয় তাঁর চাকরি। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭১ সালে তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ১৩ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরিতে যোগ দেন। পরে তিনি সুনামের সঙ্গে ১৯৮৬ সালে অনারারি ক্যাপ্টেন অবস্থায় চাকরি থেকে অবসর নেন।

অবসরকালীন সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন তিনি। কিন্তু বীরপ্রতীক খেতাবের জন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো সম্মান পাননি তিনি। হঠাৎ করে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর কার্যালয় থেকে একটি দাওয়াতপত্র আসে। দাওয়াতপত্রের খামের ওপর তাঁর স্ত্রী বেগম নূরজাহান লেখা থাকলেও প্রযত্নে স্বামী মৃত মোবারক হোসেন (বীরপ্রতীক) লেখা ছিল। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে মরহুম মোবারক হোসেনের বিধবা স্ত্রী বেগম নূরজাহানকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়।

স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মোবারক হোসেন সেনাকুঞ্জের ওই অনুষ্ঠানে হাজির হন! অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে বিধবা বেগম নূরজাহানকে মঞ্চে আসার জন্য ডাকা হয়। এ সময় মোবারক হোসেন বীরপ্রতীক মঞ্চে উপস্থিত হন। কিছুক্ষণের জন্য অনুষ্ঠানের সবার দৃষ্টি পড়ে মোবারক হোসেনের দিকে। অনুষ্ঠানেই পরে এ ভুল সংশোধনের জন্য ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে মোবারক হোসেন অনুরোধ করে আসেন। সেদিন এ অনুষ্ঠানে তাঁকে ১৫ হাজার টাকার একটি চেক, একটি কাশ্মীরি শালসহ অনেক উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়।

তিন বছরে তিনি লিখিতভাবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি দপ্তরে সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু ২০০৮ সালের ওই দিনের পর থেকে তিনি আর কোনো আমন্ত্রণ পাননি। আক্ষেপ করে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, 'জীবিত নয়, মৃত মোবারক হোসেনের বিধবা স্ত্রীকেও তারা আর কোনো আমন্ত্রণ জানায়নি। ' সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন স্ট্রেচারে করে কোনো রকম চলাফেরা করছেন। কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, 'মরিনি এখনো, তবে ভালো নেই।

' নরসিংদী সদর উপজেলার সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু বলেন, 'বীরপ্রতীক মোবারক হোসেন কিছু দিন আগে ঘটনাটি আমাকে অবহিত করেছিলেন। তাঁকে বিষয়টি সেনাবাহিনীর রেকর্ড বিভাগে অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। যেহেতু তিনি সেনাবাহিনীরই লোক সে হিসেবে সেখানে লিখিতভাবে জানালে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনো কেন হয়নি তা আমার জানা নেই। ' মূল- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.