ও রে যাব না আজ ঘরে রে ভাই, যাব না আজ ঘরে । ওরে, আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ নেবরে লুট ক'রে- যাব না আর ঘরে।
বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ঢাকা থেকে ৩৫ মাইল উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং মানিকগঞ্জ সদর থেকে ৫ মাইল পূর্বে সাটুরিয়ায় অবস্থিত। বালিয়াটি জমিদারবাড়িটি ১৯ শতকে নির্মিত। বালিয়াটি জমিদারদের পূবপুরুষ গোবিন্দ রাম সাহা ছিলেন এক ধনাঢ্য লবন ব্যবসায়ি।
তার চার ছেলেঃ দিঘি রাম, আনন্দ রাম, পণ্ডিত রাম এবং গোপাল রাম মিলে বালিয়াটি জমিদারবাড়ির ৭টি দক্ষিনমুখী প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ বালিয়াটির জমিদার বাবু কিশোরীলাল রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার বাড়ির পৌছার আগেই চোখে পড়বে বেশ সুন্দর একটা পুরনো স্থাপনার স্কুল। ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অন্যতম সদস্য হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী।
তার সহোদর ঈশ্বরচন্দ্র রায় চৌধুরীর নামেই এই স্কুলটির নামকরণ করা হয়। স্কুলটির সামনেই বিশাল প্রশ্বস্ত মাঠ।
স্কুল ছেড়ে আর একটু সামনে মোড় ঘুরতেই চোখ জুড়িয়ে দেখা মিলবে সিংহদরজার, তিন তিনটি ; আর অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়ির। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি মূলত ভিন্ন ব্লকে প্রায় একই রকম দেখতে পাঁচটি জমিদারবাড়ির সমন্বয়। তার মধ্যে দক্ষিণমুখো প্রশ্বস্থ তিনটি স্থাপনা রাস্তার দিক থেকে চোখে পড়ে।
আর তার আগেই চোখ আটকে যাবে অনন্য স্থাপনার আলাদা আলাদা তিনটি সিংহ ফটকে। প্রতিটি ফটকের উপর দন্ডায়মান তেজস্বী সিংহ। জমিদার বাড়ির গৌরবময় ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয় মুহুর্তে। ভেতরের প্রতিটি দালান নকশাখচিত আর করন্থিয়ান ডিজাইনের গোলাকার কলামে সারিবদ্ধভাবে সুসজ্জিত যা লম্বায় প্রায় ৪০০ ফুট।
ভেতরে ঢুকেই বিক্ষিপ্ত মন শান্ত হয়ে আসবে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অনুপম নির্মানশৈলী আর হারানো জাঁকজমকের অতীত দেখে।
পুরো জমিদার বাড়িটি প্রায় ২০ একর জমির উপর তৈরি। পুরো প্রাঙ্গনে বিভিন্ন মাপের ঘর রয়েছে ২০০টির উপরে। প্রথমে ঢুকলেই সারি সারি সাজানো সিন্দুক যা প্রদর্শনের জন্য অপেক্ষা করে আছে। বলে রাখা ভালো এই জমিদার বাড়িটি কিছুদিন আগেও সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী আর কিছু দপ্তরের অধীনে দখল ছিল। মূলত তাদের সরিয়ে দখলমুক্ত করাই বর্তমান প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের সাফল্যমাত্র।
এ বাড়ির সমস্ত সরঞ্জাম, তৈজষ, মূল্যবান স্মৃতিসামগ্রী সব লুট হয়ে গেছে সেই ৪৮ সালে। তারপর ধীরে ধীরে সাধারণ লোকজনের হাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এইসব ভবন আর ভবনের আসবারসহ অন্যান্য। বেশ কিছু সামগ্রী স্থানান্তর করা হয়েছে জাতীয় যাদুঘর, শাহবাগে। আর বালিয়াটিতেই একটা রুমে অবশিষ্ট কিছু মালামাল রক্ষিত আছে। সে রুম এখন তালাবদ্ধ।
ঐ রুমই ছিল জমিদার বাড়ির মূল বৈঠকখানা।
প্রথম বাড়ি পেরিয়ে ভেতরে গেলে চারটি মহল। যা জমিদারবাড়ির অন্দরমহল নামে পরিচিত। পিনপতন নিরবতা। বাইরের প্রচন্ড গরমের মধ্যেও অন্দরমহলের ভেতর শীতল আবহাওয়া।
সব কিছু মিলে কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয় মন, মননে, শরীরে।
অন্দরমহলের উত্তরে বিরাট বিরাট ঘাট বাঁধানো পুকুর। টলটলে জলের বাঁধানো ঘাটে বসে কাটিয়ে দিতে পারেন বেশ কিছুটা সময়। আশা করি ভাল লাগবে। তাহলে ঘুরে আসুন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি।
যেভাবে যেতে হবেঃ
ঢাকা থেকে সরাসরি সাটুরিয়ায় বাস যায়। গুলিস্তান থেকে জনসেবা এবং গাবতলি থেকে এস,বি পরিবহন সরাসরি সাটুরিয়ায় যায়। ভাড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এ ছাড়াও মানিকগঞ্জ এর বাসে উঠে কালামপুর নেমে সেখান থেকেও বাসে সাটুরিয়া যাওয়া যায়। ভাড়া ১৫ টাকা।
কিছুদিন আগেও এখানে ঢুকতে টিকেট লাগত না। কিন্তু এখানে ইত্যাদি হওয়ার পর থেকে ১০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
ছবি ব্লগঃ
এবং সর্বশেষ
জমিদার বাড়ীর মোটকা বিলাই
* সকল তথ্য নেট থেকে সংগৃহীত
* ইহা একটি রিপোস্ট, জেনারেল হবার আগে এই পোস্ট দিয়েছিলাম
কষ্ট করে ছবি গুলো দেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।