আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ালটন ফ্রিজে প্রযুক্তির বিস্ময় ন্যানো টেকনোলজি

দেশকে ভালবাসি ন্যানো টেকনোলজিকে বলা হয় প্রযুক্তির বিস্ময়। একুশ শতকে এসে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে যতটা না তোলপাড় হচ্ছে- তারচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে। প্রযুক্তির সর্বশেষ এই আবিষ্কার ন্যানো টেকনোলজি এবার যুক্ত হলো ওয়ালটনের সঙ্গে। বাংলাদেশে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ তৈরিতে ওয়ালটন এখন ব্যবহার করছে ন্যানো পার্টিকেল। ন্যানো হচ্ছে- পরিমাপের অতি সুক্ষ্মতিসুক্ষ্ম একক বা উপকরণ।

যা ধুলিকণার চেয়ে শতসহস্রগুণ ক্ষুদ্র। ধুলিকণার একলাখ ভাগের একভাগ অতিক্ষুদ্র যে বস্তুকণা সেটাই মূলত: ন্যানো। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণার সাহায্যে পণ্য তৈরিতে যে প্রযুক্তির পরিস্ফুটন বা সংমিশ্রন ঘটানো হয় তাকেই ন্যানো প্রযুক্তি বলে। উন্নত বিশ্বে এই প্রযুক্তি ইলেকট্রনিক, অটোমোবাইল, রাসায়নিক, খাদ্য শিল্প থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও কার্যকরভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ন্যানোযুক্ত রোবট যেমন মানবদেহের ভেতরে প্রবেশ করে হার্টের ব্লক অপসারণ করতে পারবে- তেমনি হাতঘড়িতেই পাওয়া যাবে কম্পিউটরসহ প্রযুক্তির সব সুবিধা।

ন্যানোর কারণেই খাদ্য থাকবে জীবাণুমুক্ত। এ নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। ওয়ালটনের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল আম্বিয়া জানান, ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ন্যানোর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপুর্ণ ও যুগান্তকারী ঘটনা। বাংলাদেশে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ড্রাস্ট্রিজে রেফ্রিজারেটর তৈরিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১১ সালের মাঝামাঝি ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরে এ প্রযুক্তির সফল সংযোজন ঘটে।

২০১২ থেকে সফলতার সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে ওয়ালটনের ফ্রিজ এখন অনেক বেশি আধুনিক ও কার্যকরী। তিনি বলেন, ওয়ালটন ফ্রিজ বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী করে তৈরি। পৃথিবীর যেসব দেশে ওয়ালটন ফ্রিজ রফতানি হচ্ছে সেসব দেশের আবহাওয়া উপযোগী করেই এটি তৈরি হচ্ছে। ফলে ওয়ালটন ফ্রিজের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।

জানা গেছে, ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটরের জন্য কোরিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে ন্যানো পার্টিকেল। রেফ্রিজারেটরের ভেতরে খাদ্য ও পণ্য সংরক্ষণের যেসব যন্ত্রাংশ ও প্লাস্টিকের পকেটগুলি থাকে, সেগুলি তৈরি করার সময় মূল উপকরণের সঙ্গে ন্যানো পার্টিকেল মেশানো হয়। প্রকৌশলী আশরাফুল আম্বিয়া আরো বলেন, ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষিত খাদ্যপণ্য দীর্ঘদিন টাটকা থাকে। খাবারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অনুপ্রবেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ করে এবং ফাঙ্গাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করে। নেগেটিভ আয়ন ফ্রিজের ভেতরের অংশকে সজীব ও সতেজ রাখে।

খাবার রাখে দুর্গন্ধমুক্ত। এই প্রযুক্তি সংযোজনের আগে ওয়ালটন এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণাও করে। ওয়ালটনের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর এবং ক্রিয়েটিভ ও পাবলিকেশন বিভাগের প্রধান উদয় হাকিম বলেন, “বাংলাদেশে ওয়ালটনই একমাত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান। যারা রেফ্রিজারেটর তৈরিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও ফ্রিজের উপর বাড়তি মূল্য সংযোজন করা হয়নি।

এ প্রযুক্তির ব্যবহার ওয়ালটনকে দিয়েছে আলাদা মর্যাদা। ” জানা গেছে, দেশে আমদানিকৃত বা সংযোজনের পর বিক্রি হওয়া ফ্রিজে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা ফ্রিজে ন্যানো প্রযুক্তি না থাকায় এগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে বাজারে প্রচলিত ফ্রিজ কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। অন্যদিকে রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত ওয়ালটনের প্ল্যাটিনাম ব্র্যান্ডের ফ্রিজে ডিওডারাইজ নামে আরেকটি উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন করা হয়েছে যা ফ্রিজের খাবারকে দুর্গন্ধমুক্ত করে।

এটা ন্যানোর চেয়েও বেশি শক্তিশালী। অন্যদিকে ন্যানো প্রযুক্তি ওয়ালটন এয়ারকন্ডিশানারেও সংযোজনের প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে ওয়ালটনের এসির বাতাস হবে আরো বেশি সতেজ ও জীবানুমুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার মোটরসাইকেলেও হতে পারে। মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেল বারবার ধরার কারণে সেখানে ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণ হয়ে থাকে।

জীবানুমুক্ত করতে ন্যানো সংযোজন হলে এ দেশের মোটরাসাইকেল ইউরোপ আমেরিকার মানে উন্নীত হবে। ওইসব দেশে এসব পণ্য রফতানিও সহজ হবে। একইভাবে টেলিভিশনের রিমোট তৈরির ক্ষেত্রেও ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রিমোটের মাধ্যমে মারাত্মক রোগ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে না। ওয়ালটনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মঈনুল হক বলেন, “ওয়ালটন কারখানায় উৎপাদিত প্রতিটি পণ্যে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।

ন্যানোর ব্যবহারে পণ্যের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত হবে। ” শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (গবেষণা ও উন্নয়ন) তপন কুমার নাথ ন্যানো টেকনোলজির সফল ব্যবহারের জন্য ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “ন্যানো নিয়ে তার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ” উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান আগামী এক বছরের মধ্যে তাদের ব্যবহার্য সব পণ্যে ন্যানো প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে কাজ করছে।

জাপানের জাতীয় গবেষণা বাজেটের সিংহভাগই ব্যয় হচ্ছে ন্যানো প্রযুক্তির উন্নয়নে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ন্যানো নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। ভারতও এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী যুগ হচ্ছে ন্যানো বিপ্লবের যুগ। সূ্ত্র: বাংলানিউজ২৪ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।