আমি সত্য জানতে চাই
উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বাঙালি কবি অক্ষয়কুমার বড়াল। উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কবি হিসেবে তিনি সর্বজন বিদিত। তিনি তৎকালীন বিখ্যাত কবি বিহারীলালের ভক্ত ছিলেন। পরে তাঁরই অনুপ্রেরণায় কবিতা লেখা শুরু করেন। বঙ্গদর্শন পত্রিকার ১২৮৯ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ সংখ্যায় তাঁর প্রথম কবিতা রজনীর মৃত্যু প্রকাশিত হয়।
এরপর থেকে তিনি অজস্র কবিতা রচনা করেছেন। আজ এই কবির মৃত্যুদিন। ১৯১৯ সালের ১৯ জুন তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনি কবির জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি
অক্ষয়কুমার বড়াল ১৮৬০ সালে বর্তমান ভারতের কলকাতার চোরবাগানে এক স্বর্ণব্যবসায়ীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় কলকাতার হেয়ার স্কুলে।
কিন্তু পড়াশোনায় তিনি উন্নতি করতে পারেননি। তাই তিনি স্কুল শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর না এগোলেও আমৃত্যু তিনি জ্ঞান আহরণে ব্রতী ছিলেন। এ হিসেবে তাকে একজন স্বশিক্ষিত মানুষ বলে আখ্যায়িত করা যায়।
হেয়ার স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় অক্ষয়কুমার বড়াল বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
বিহারীলাল ছিলেন বাংলা গীতিকবিতার প্রবর্তক। তার অনুপ্রেরণায়ই জড়াল কবিতা রচনা শুরু করেছিলেন। বঙ্গদর্শন পত্রিকার ১২৮৯ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ সংখ্যায় তাঁর প্রথম কবিতা রজনীর মৃত্যু প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অক্ষয়কুমার বড়ালকে "বিহারীলালের সাক্ষাৎ ভাবশিষ্য" নামে আখ্যায়িত করা হয়।
অক্ষয়কুমার বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে বড়াল কবি নামে পরিচিত।
তিনি মার্জিত এবং বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন। তার কাব্য রচনার মূল বিষয় ছিল নিসর্গ, সৌন্দর্যবাদ, কল্পনামূলক প্রেম, শোক এবং মানববন্দনা। নারীপ্রেমের শান্তরস তাঁর কাব্যের প্রধান বিশেষত্ব। তিনি মৃতা স্ত্রীর স্মৃতিচারণ করে এষা কাব্যগ্রন্থটি লিখেছিলেন। সুকুমার সেনের মতে ছন্দের চাতুর্যের দিকে বেশি ঝোঁক না থাকায় ভাবের প্রকাশ অকুন্ঠিত হয়েছে।
তবে ভাবাবেগের তীব্রতায় কবি ভাষার উপর সর্বত্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে পারেন নি। কবি অক্ষয়কুমার বড়ালের স্বরচিত গ্রন্থ সমূহঃ ১। প্রদীপ (১৮৮৪), ২। কনকাঞ্জলি (১৮৮৫), ৩। ভুল (১৮৮৭), ৪।
শঙ্খ (১৯১০), ৫। এষা (১৯১২) ৬। চণ্ডীদাস (১৯১৭)
সম্পাদিত গ্রন্থঃ ১। রাজকৃষ্ণ রায়ের কবিতা (১৮৮৭), ২। গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর অশ্রুমালা (১৮৮৭)
কর্মজীবনে স্কুল ত্যাগের পর অক্ষয়কুমার দিল্লি অ্যান্ড লন্ডন ব্যাংকের হিসাব বিভাগের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
এখানে কয়েক বছর চাকরি করার পর নর্থ ব্রিটিশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে হিসাব সহিব পদে যোগ দেন। এই পদ থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন। ১৯১৯ সালের জুন ১৯ তারিখে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন কবি অক্ষয় কুমার বড়াল। মৃত্যুদিনে কবির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জিলি।
কবি অক্ষয়কুমার বড়ালের পাঠকদের জন্য তাঁর "বঙ্গভূমি" ও " শত নাগিনীর পাকে" কবিতা দু'টি সংযোজিত হলো।
আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে।
বঙ্গভূমি
অক্ষয় কুমার বড়াল
প্রণামি তোমারে আমি, সাগর-উত্থিতে,
ষড়ৈশ্বর্যময়ী, অয়ী জননী আমার!
তোমার শ্রীপদ-রজঃ এখনো লভিতে
প্রসারিছে করপুট ক্ষুব্ ধ পারাবার |
শত শৃঙ্গ-বাহু তুলি হিমাদ্রি-শিয়রে
করিছেন আশির্বাদ স্হির নেত্রে চাহি ;
শুভ্র মেঘ-জটাজাল ছলে বায়ুভরে,
স্নেহ-অশ্রু শতধারে ঝরে বক্ষ বাহি |
জ্বলিছে কিরিট তব নিদাঘ-তপন
ছুটিতেছে দিকে-দিকে দীপ্ত রশ্মি-শিখা ;
জ্বলিয়া-জ্বলিয়া উঠে শুষ্ক কাশবন,
নদীটত-বালুকায় সুবর্ণ-কণিকা |
মূর্তিমতী হয়ে সতী, এসো ঘরে-ঘরে
রাখো ক্ষুদ্র কপর্দকে রাঙা পা দুখানি!
ধান্য-শীর্ষ স্বর্ণ-ঝাঁপি লও রাঙা করে
ভুলে যাই সর্ব দৈন্য, সর্ব দুঃখ গ্লানি!
.................................................
শত নাগিনীর পাকে
অক্ষয় কুমার বড়াল
শত নাগিনীর পাকে বাঁধ' বাহু দিয়া
পাকে পাকে ভেঙে যাক্ এ মোর শরীর !
এ রুদ্ধ পঞ্জর হ'তে হৃদয় অধীর
পড়ুক ঝাঁপায় তব সর্বাঙ্গ ব্যাপিয়া !
হেরিয়া পূর্ণিমা-শশি টুটিয়া লুটিয়া
ক্ষুভিয়া প্লাবিয়া যথা সমুদ্র অস্থির ;
বসন্তে বনান্তে যথা দুরন্ত সমীর
সারা ফুলবন দলি' নহে তৃপ্ত হিয়া |
এদেহ পাষাণ ভার কর গো অন্তর!
হৃদয়-গোমুখি-মাঝে প্রেম-ভাগীরথী,
ক্ষুদ্র অন্ধ পরিসরে ভ্রমি' নিরন্তর
হতেছে বিকৃত ক্রমে, অপবিত্র অতি |
আলোকে-পুলকে ঝরি, তুলি' কলস্বর
করুক তোমারে চির স্নিগ্ধ-শুদ্ধমতি !
অক্ষয়কুমার বড়ালের আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংক অক্ষয়কুমার বড়ালের কবিতা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।