আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকী আজঃ প্রখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই উনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের জন্ম ১৮২৯ সালে। অধুনা নদীয়া জেলার চৌবেড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে দী্নবন্ধু মিত্রের জন্ম। তাঁর পিতার নাম কালা চাঁদ তি্রেম। গ্রাম্য পাঠশালা উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৮৪০ সালে পিতা- কালা চাঁদ মিত্রের তদবিরে স্থানীয় জমিদারের সেরেস্তায় মাসিক ৮ টাকা বেতনে চাকুরী লাভ করেন। লেখাপড়ার প্রতি ছিল তার গভীর মনোযোগ।

তাই পাঁচ বছর চাকরী করার পর পিতার অমতে তা ছেড়ে দিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য গমন করেন কলকাতায়। সেখানে জীবন ধারণ ও পড়ালেখার জন্য মনোবলকে পুজি করে গৃহভৃত্যের কাজ করেন। তিনি কৃতিত্বের সাথে লং সাহেবের অবৈতনিক স্কুলে, পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলে শেষ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। তারপর ১৮৫০ সালে ভর্তি হন হিন্দু কলেজে এবং কলেজের সব পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। আবার তাঁর টান পড়ে অভাবের শিকলে।

(দীনবন্ধু মিত্রের বাংলো বাড়ি) ১৮৫০ সালে কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষা না দিয়েই চলে যান পাটনায় আর পোস্টমাস্টার পদে চাকরী নেন ১৫০ টাকা বেতনে। কাজের দক্ষতার বলে দেড় বছর পর ইন্সপেক্টর পদে উন্নীত হন। একই সাথে নদীয়া ও ঢাকা জেলার দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬৯-১৮৭০ সাল পর্যন্ত কলকাতায় পোস্ট মাস্টার জেনারেলের সহকারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৭১ সালে লুসাই যুদ্ধের সংবাদসমূহ ডাকযোগে প্রেরণের বন্দোবস্ত করার জন্য কাছাড় গমন করেন।

সে সময়ে ডাক বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল হগ সাহেবের অপ্রীতিজন হওয়ায় তিনি উক্ত পদ হতে অপসারিত হন। পরে ১৮৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়ার রেলওয়ে ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন। তিনি জীবনের শেষ দশায় ব্যক্তিগত জীবন দর্শণ ও নানা অভিজ্ঞতায় ভর করে বাংলাসাহিত্যে হাত দেন কবিতা দিয়ে। তাঁর রচিত সুরধুনী কাব্য (প্রথম ভাগ ১৮৭১ ও ২য় ভাগ ১৮৭৬) ও দ্বাদশ কবিতা (১৮৭২)। তবে তিনি খ্যাত হন নাট্য অঙ্গনের বলিষ্ঠ পদচারণায়।

তত্কালীন সমাজের অত্যাচার ও নানা বর্বরতার চিত্রপট তাঁর নাট্যধারাকে করে আলোচিত। বাংলার আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক দীনবন্ধু মিত্র অবশ্য মাইকেল প্রবর্তিত পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক নাট্যরচনার পথে না গিয়ে বাস্তবধর্মী সামাজিক নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন। এই ধারায় তিনিই হয়ে ওঠেন পরবর্তীকালের নাট্যকারদের আদর্শস্থানীয়। তিনি বাংলাভাষার প্রথম আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের নাটক নীল দর্পনের (১৮৬০) মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন। নাটকটি ১৮৬০সালের সেপ্টেম্বর মাসে রামচন্দ্র ভৌমিক কর্তৃক মুদ্রিত হয়েছিল বাংলাবাজারের বাঙ্গালাযন্ত্রে।

এটি ১৮৬১ সালে মে/জুন মাসের প্রথম দিকে ঢাকার পূর্বভূমির উদ্যোগে প্রথম মঞ্চায়িত হয়। নাটকটিতে স্থান পায় ঊনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে নীলকরদের অত্যাচারে পীড়িত নিম্ন শ্রেণী তথা সাধারণ কৃষক শ্রেণির মর্মান্তিক চিত্র। এ নাটকের গোপী চরিত্র তার একটি জলন্ত উদাহরণ- “এরা সব দোরস্ত হয়েছে। এই ন্যাড়ে ব্যাটা ভারী হারামজাদা, বলে নিমোক হারামী করিতে পারিবনা। ” তার অন্যান্য নাটকসমূহ হল- নবীন তপস্বিনী (১৮৬৩), লীলাবতী (১৮৬৭), জামাই বারিক, (১৮৭২) কমলেকামিনী (১৮৭৩)।

তাছাড়া তিনি নাটকের পাশাপাশি প্রহসন লেখাতে হাত দেন এবং বাংলা সাহিত্য বিশ্বদরবারে হয় সমাদৃত। প্রহসনের মধ্যে অন্যতম সদবার একাদশী (১৮৬৬) । এ নাটকের বিষয় বস্তু ঊনবিংশ শতকের মধ্য ভাগে ইংরেজি শিক্ষিত নব্য যুবকদের মদ্যপান ও নারীভোগ তাদের জীবনে যে বিপর্যয় হয়ে ছিল তার অসভ্যজাত চিত্র। তাছাড়া রয়েছে বিয়ে পাগলা বুড়ো । এ প্রহসনটি মাইকেল মধুসূদনের একেই কি বলে সভ্যতা অনুসরণে রচিত।

বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্র ১৮৭৩ সালের ১ নভেম্বর ইহলোক ত্যাগ করেন। প্রখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.