সেই ৪/৫ বছর বয়সে হলে গেলাম । আব্বুর কোলে বসে ছবি দেখছি যা ছিল সম্পূর্ণ সাদাকালো। ছবির নাম 'অবুঝ মন'। নায়ক নায়িকা রাজ্জাক, শাবানা আর সুজাতা। ছবি তেমন কিছু বুঝি নাই, শুধু মনে আছে একটি সুন্দর মুখশ্রীর রমণী একজন যুবককে কে খুব মিষ্টি সুরের একটি গান শুনাচ্ছে যা ছিল " শুধু গান গেয়ে পরিচয়'' ।
সেই যুবকটি এক সময় অন্ধও হয় তখন সেই সুন্দর মুখশ্রীর সেই রমণীর কি কান্না যা আজও চোখে লেগে আছে। সেই থেকে সেই সুন্দর মুখের মানুষটি আমার শিশু মনে জায়গা করে নেয়। ছবির গল্প, পটভূমি কিছু মনে না থাকলেও সেই সুন্দর মুখটি ঠিকই মনে রয়ে গেলো আমার। অল্প আরেকটু বড় হয়ে সেই মানুষটির নাম জানতে পারলাম যার নাম '' শাবানা''। যে ''শাবানা'' নামক অভিনেত্রী আমার শিশুমন জয় করে নিয়েছিল উনি সেই সবার প্রিয় '' শাবানা''।
যার নাম মনে আসলেই চোখে ভাসে স্নিগ্ধ সুন্দর নিষ্পাপ একটি মমতাময়ী মুখ। যে মুখটি আমাদের চিরসুন্দর বাঙ্গালী নারীর প্রতিচ্ছবি হয়ে চোখে ভাসে।
১৯৬৭ সালে পরিচালক এহতেশাম তাঁর উর্দু ছবি 'চকরি' ছবির জন্য একজন নায়িকা খুঁজছিলেন। এই এহতেশাম এর হাত ধরে এসেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রে শবনম যিনি সেই সময়ের একজন জনপ্রিয় নায়িকা। সেই এহতেশাম এবার যাকে পছন্দ করলেন তাঁর পারিবারিক নাম ছিল 'রত্না'।
তিনি সেই রত্না নাম বদলে নাম দিলেন 'শাবানা' । সেই থেকে শুরু হলো বাংলা চলচ্চিত্রের এক 'লক্ষ্মী'দেবীর যুগ যা ছিল একটানা ৭০-৯০ দশক পর্যন্ত দুর্দান্ত প্রতাপে। সেই উর্দু 'চকরী' দিয়ে পাকিস্তানের আরেক জনপ্রিয় নায়ক নাদিম এর সাথে অভিনয় দিয়ে যার শুরু সেই ''শাবানা'' অতি দ্রুত হয়ে গেলেন সত্যি সত্যিই বাংলা চলচ্চিত্রের এক রত্ন। যার নিষ্ঠা, সততা ও অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল পুরোটা অভিনীত সময় জুড়েই সবার কাছে আলোচিত ও সব শিল্পীর জন্য এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। সেই সময়ে যখন রাজ্জাক- কবরী জুটি চরম জনপ্রিয় সেই সময়েই শাবানা সমহিমায় নিজেকে চেনালেন যে তিনি কারো সাথে একক জুটির জন্য জনপ্রিয় হতে আসেননি, তিনি নিজের যোগ্যতা দিয়েই এই চলচ্চিত্র শিল্পে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
সেই ক্ষেত্রে শাবানা পুরোপুরি সফল। ৮০র দশকের শেষ দিকে যখন তাঁর সময়কার সব অভিনেত্রী নায়িকা / মূল চরিত্রে বেমানান সেই সময় তো বটেই ৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত শাবানা সেখানে নায়িকা/ মূল চরিত্রে দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন। একটানা তিন দশক দাপটের সাথে অভিনয় করে যেতে আজ পর্যন্ত শাবানা ছাড়া অন্য কোন অভিনেত্রী পারেনি হয়তো আগামীতেও পারবেনা। সেই শিশুকালে যেদিন থেকে হলে ছবি দেখা বুঝেছি সেদিন থেকেই দেখেছি শাবানা নামটি মানুষের কাছে কত প্রিয় ছিল! যিনি দর্শককে ইচ্ছে মতো যখন খুশি কাঁদাতে পারতো ,যখন খুশি হাসাতে পারতো। তিনি শুধু রাজ্জাক নয়, রহমান, আলমগীর, সোহেল রানা, জসীম, খসরু, উজ্জ্বল এর সাথেও ছিলেন চরম সফল এক অভিনেত্রী।
আবার কখনও কখনও শাবানা কে দেখার জন্যই হলে দর্শকের ঢল নামতো। শাবানা মানেই বাংলার একটি চিরচেনা রমণীর রূপ। এমন সময় গেছে যেখানে নায়ক কে সেইটা দর্শকের জানার বিষয় নয় ছবিতে শাবানা আছেন ঐ ছবি তাদের দেখতেই হবে। এমনই এক ইমেজ তিনি গড়ে ছিলেন যা আজও কোন অভিনেত্রী পারেনি। বিশেষ করে আলমগীর -শাবানা জুটি ছিল গ্রামবাংলার, নগরে সবার কাছে সামাজিক ও পারিবারিক ছবির জনপ্রিয় জুটি।
যে জুটির ১০০ টির মতো ছবি আছে যার বেশির ভাগই ব্যবসাসফল। আর জসীম -শাবানা ও সোহেল রানা - শাবানা জুটি মানে জমজমাট সামাজিক অ্যাকশন ছবির জনপ্রিয় জুটি। শাবানা অভিনীত ছবির সংখ্যা প্রায় ৪০০ টির মতো যার মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো- চকরী, মনিহার, বাবুল, অনুভব, নূপুর, মধু মিলন,সোহাগ, পুত্রবধূ, অনন্ত প্রেম, অবুঝ মন, ছুটির ঘণ্টা,দুই পয়সার আলতা, ভাত দে, স্বামী -স্ত্রী, দেশ বিদেশ ,রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, সারেন্ডার, বিজয়,অশান্তি, অন্ধ বিশ্বাস, রাঙ্গাভাবী, লালু মাস্তান, সত্য মিথ্যা, স্ত্রীর স্বপ্ন, অপেক্ষা, স্বাক্ষর, উসিলা,মরণের পরে, সান্ত্বনা, অবুঝ সন্তান, পিতা মাতা সন্তান,বাংলার বধূ, গৃহযুদ্ধ, মাস্তান রাজা, কালিয়া, টপ রংবাজ,শত্রু ভয়ঙ্কর, শাসন, জজ ব্যারিস্টারঅজান্তে, দুঃসাহস,ঘাতক, সংসারের সুখ দুঃখ, বাংলার মা, স্নেহ, বিদ্রোহী কন্যা, বিদ্রোহী বধূ, দুর্জয়, সত্যর মৃত্যু নেই, স্বামী কেন আসামী, বাংলার নায়ক এর মতো অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবি আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। এসব ছবিতে কখনও গরীব দুখী এক নারী, কখনও শহরের আধুনিক মেয়ে, কখনও স্বামী ভক্ত বাংলার চিরচেনা স্ত্রী, কখনও ভাবী, কখনও মা, কখনও এক প্রতিবাদী নারী এমন সব চরিত্রে অভিনয় করে পুরোটা সময় দর্শকদের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন। শাবানার শেষ পরিণতি না দেখা পর্যন্ত বাংলার মহিলা দর্শকরা সহ পুরুষ দর্শকরাও হলের আসন ছেড়ে উঠতে চাইতেন না।
এমনই এক দুর্দান্ত অভিনেত্রী ছিলেন যিনি সব অভিনেত্রীর মাঝে সবচেয়ে বেশী পুরস্কৃত হয়েছেন।
রজনিগন্ধা - ৮০ র দশকের শুরুতে মুক্তি পাওয়া 'চিত্রদুত' পরিবেশিত স্বনামধন্য প্রয়াত পরিচালক কামাল আহমেদ এর 'রজনিগন্ধা' ছবিতে শাবানা অভিনীত চরিত্রটি আজো সবার চোখে ভাসে। যেখানে শহরে বিত্তশালী পিতার বিদেশ ফেরত শিক্ষিত আধুনিক ছেলে (রাজ্জাক) এর পিতার পছন্দের গ্রাম থেকে আনা অল্প শিক্ষিত বিয়ে করা পুত্রবধুর ভূমিকায় চমৎকার অভিনয় করেন শাবানা। যে চরিত্রটি ছিল শহরের আধুনিক বিত্তশালী যুবকের অল্প শিক্ষিত,অপছন্দের স্ত্রীর চরিত্র যিনি স্বামীর অবহেলা, অপমান মুখ বুঝে সহ্য করেও স্বামীর প্রতি যত্নবান, স্বামীভক্ত এক নারী হয়ে ভালোবাসা দিয়ে স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করেন। স্বামীকে আধুনিকতার উশৃঙ্খল জীবন থেকে ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন যা চিরায়ত এক বাঙালী বধুর এক শাশ্বত রুপের চিত্র প্রকাশ করে।
'রজনিগন্ধা' ছবিটির মুল চরিত্রই ছিলেন এই শাবানা। যিনি শত আঘাত, অবহেলা, লাঞ্চনা, অপমান সহ্য করেও 'রজনীগন্ধা' ফুলের মতো মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে যান চারপাশে। যা তিনি ছবিতে গানে গানে প্রকাশ করেছিলেন । গানটি হয়ে আছে বাংলা ছায়াছবির একটি কালজয়ী চিরসবুজ গান ।
ভাত দে ঃ
বাংলা চলচ্চিত্রের ৮০র দশকের আমজাদ হোসেন এর কালজয়ী ছবি 'ভাত দে'র জরির কথা কি কারো মনে আছে? শাবানা অভিনীত আরও একটি হৃদয় দাগকাটা ছবি 'ভাত দে'।
যেখানে শাবানা একজন গরীব বাউল শিল্পীর মেয়ে। যে কিনা ছোটবেলায় অভাবের কারনে মাকে হারায়, অন্ধ বাউল বাবাকে নিয়ে ছোট বেলা থেকেই যার সংগ্রামী ও অতি অভাব অনটনের সংসার। জরি যখন বড় হয় একদিন তাঁর বাবাও দুমুঠো ভাত যোগাড় করতে গিয়ে মারা যায়। এরপর থেকে সহায় সম্বলহীন এক অসহায় দরিদ্র 'জরি'র অতি করুন কাহিনীর একটি সফল চিত্ররুপ 'ভাত দে' ছবিটি। যে ছবিটি দেখে হল ভর্তি মানুষ কেঁদেছিল ,যে ছবিতে শাবানার অভিনয় দেখে চোখ মুছতে মুছতে হল থেকে দর্শকরা বের হয়েছিল সেই 'জরি'র কথা বাংলার মানুষ কোনদিন ভুলবে না।
একজন অভিনেত্রী কত দক্ষ ,কত দুর্দান্ত হলে 'জরি'র মতো এতো কঠিন একটি চরিত্রকে এক দেখাতেই দর্শকের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন পেতে পারে সেটা 'শাবানা' বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। 'শাবানা'র জন্যই যেন 'ভাত দে' ছবিটি নির্মাণ হয়েছিল। 'জরি' চরিত্রটি শাবানা ছাড়া আর কেউ এতো দক্ষ ও দুর্দান্ত ভাবে অভিনয় করতে পারবেনা সেটা খ্যাতিমান পরিচালক আমজাদ হোসেন বুঝতে পেরেছিলেন। পরিচালকের সেই আস্থার জবাব তিনি এতো অসাধারন ভাবে দিয়েছেন যা কল্পনাও করা যায়না। বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা ১০ টি চরিত্র বাছাই করতে গেলে অবশ্যই 'ভাত দে' ছবির শাবানা অভিনীত 'জরি' চরিত্রটি রাখতেই হবে।
কারন এই 'জরি' যে শুধু ছবির গল্পের 'জরি' নয়, এই 'জরি' আমাদের গ্রাম বাংলার এক চিরচেনা অসহায় 'জরি'র বাস্তব গল্প। যাদেড় অভাব অনটনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আজো মানুষরূপী পশুরা তাঁদের অত্যাচার,অপমান করে যায়। 'ভাত দে' ছবির শাবানা চিরদিন বাংলার মানুষ মনে রাখবে।
অশান্তি - আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে শাবানা নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থার প্রযোজিত ও বাংদেশের 'মাস্টার মেকার' খ্যাত পরিচালক এ জে মিন্টুর 'অশান্তি' ছবিটি শাবানার ক্যারিয়ারের একটি অন্যতম ছবি হিসেবে স্থান করে আছে। কারন এই ছবিতেই দর্শকের চিরচেনা সহজ, সরল , শান্ত মুখের প্রতিচ্ছবি শাবানাকে অচেনা মনে হবে।
এই ছবির শাবানা যে একজন গ্রামের উচ্ছল তরুণী শুধু নয় সে একসময় পরিনত হয় এক প্রতিবাদী নারীরুপে যে অন্যায় অত্যাচার রুখে দাঁড়ানোর জন্য পুরুষের সাজে চলাফেরা করে মারদাঙ্গা করে শয়তানদের শায়েস্তা করতে পারে। এই ছবিতে শাবানাকে দেখা যায় একজন অ্যাকশন লেডি হিসেবে যে একজন সাধারন নারী কিন্তু ভাগ্যর দুর্বিপাকে পরে আর এই সমাজের ক্ষমতাবান পশুদের কারনে মিথ্যে অপবাদ নিয়ে সংসার হারানো এক নারী যে পরবর্তীতে নিজেকে রক্ষা ও মিথ্যে অপবাদের কালিমা মুছার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে। ছবিতে আরও অভিনয় করেছিলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় দুই নায়ক আলমগীর ও জসীম। কিন্তু ছবিটি তাঁদের দুজনকে ছাপিয়ে হয়ে যায় শাবানার ছবি। পুরো ছবিকে শাবানা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন যা এক কথার অসাধারন, দুর্দান্ত সুন্দর।
এখানে একজন শাবানা দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির শুরুতে শাবানা একজন গ্রামের উচ্ছল সহজ সরল তরুণী যার ভালোবাসার মানুষের (আলমগীর) সাথেই তাঁর বড় ভাইয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিয়ে ঠিক করা হয়। কিন্তু একদিন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে শাবানাকে বাঁচাতে গিয়ে আপন বড় ভাই খুন হয়। শাবানা হয়ে যায় আপনজন হারা, আর অন্যদিকে গ্রামের মানুষের মিথ্যে গুজবে তাঁর আকাঙ্খিত মানুষের সাথে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। শাবানা আশ্রয় হয় গরীব বোনহারা ট্যাক্সি ড্রাইভার জসিমের ঘরে।
শুরু হয় শাবানার আরেক জীবন। এই জসিমই যখন শাবানাকে তাঁর অপেক্ষায় থাকা ভালোবাসার মানুষের হাতে তুলে দিয়ে ভাইয়ের অপূর্ণ কাজটি সম্পূর্ণ করে। শাবানা ফিরে পায় তাঁর ভালোবাসার মানুষকে ও সংসারকে। কিন্তু এরপর একদিন ঘটে যায় অন্য কাহিনী। শাবানা খুঁজে পায় তাঁর ভাইয়ের হত্যাকারী ও তাঁকে একদিন অপমান করার চেষ্টাকারী সেই ভদ্রবেশী পশুটাকে।
শুরু হয় শাবানার প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা । এভাবেই পুরো ছবিতে শাবানা দুইভাবে দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকের মনে ঠাই করে নিয়েছেন। মিন্টুর অসাধারন চিত্রনাট্য ও পরিচালনা, আলমগীর- জসীম এর অভিনয় আর শাবানার অতি দুর্দান্ত অভিনয় ছবিটিকে সেই সময়ে সুপারহিট করেছিল। যা আজো বারবার মনে হয়।
আলম খানের সুরের 'অশান্তি' ছবির জনপ্রিয় গানটি দেখুন -
রাঙা ভাবী ঃ ৯০ দশকের শুরুতেই অর্থাৎ ১৯৯০ সালে শাবানার 'এস এস প্রোডাকশনস' এর প্রযোজিত ও মতিন রহমান পরিচালিত 'রাঙা ভাবী' ছবিটি যারা দেখেছেন তাঁরা আজো সেই ভাবীরুপী শাবানাকে ভুলতে পারেনি।
'রাঙা ভাবী' ছবিটি এস এস প্রদাকশন্স এর একটি অন্যতম সেরা ছবি। যেখানে তিনটি চরিত্র (আলমগীর, শাবানা ও মাস্টার তাপ্পু) পুরো ছবিটিকে অসাধারন দক্ষতায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন যা না দেখলে বিশ্বাস হবেনা। এই ছবিটি ভালো লাগে নাই এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ছবির কাহিনী একজন উচ্চবিলাসী যুবক আলমগীর যে তাঁর লক্ষে পৌঁছার জন্য ভালোবেসে বিয়ে করা শাবানাকে ত্যাগ করতে করে যা নিয়ে শুরু হয় দুজনার দন্ধ অন্যদিকে মায়ের মৃত্যুর পড় আলমগীর -শাবানার সংসারে আশ্রয় পাওয়া আলমগীরের সৎ ভাই কিশোর তাপ্পুর মায়ের মতো ভাবীরুপী শাবানাকে আগলে রাখার চেষ্টা , শাবানার কাছে আলমগীর কে ফিরিয়ে আনার আপ্রান চেষ্টার একটি অসাধারন দ্বন্দ্বমুখর ছবি 'রাঙা ভাবী'। যে ছবিতে শাবানা ও মাস্টার তাপ্পুর অভিনয় আজো দর্শকের বারবার মনে হয়।
সেদিনও দর্শক ছবি শেষে চোখের জল মুছতে মুছতে হল থেকে বেরোয়। ছবির শেষ দিকে মায়ের কথামতো ভাবীকে উপহার দেয়া সোনার বালা চুরি করে ভাবীর হাতে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে কিশোর তাপ্পুর মারা যাওয়াটার দৃশ্য দর্শকরা মেনে নিতে পারেনি। যা দেখে হলভর্তি মানুষের চোখে জল এসেছিল। পরিচালক এতো নির্দয় না হলেও পারতেন এটা ছিল সবার মতামত। এই ছবির অভিনয়ের কারনে বোম্বের 'মাস্টার তাপ্পু' বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরষ্কার লাভ করে।
পুরো ছবিতে শাবানা ও তাপ্পুর অসাধারন অভিনয় দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। এমন অসাধারন ছবি শাবানা ছাড়া আর কাউকে কি মানায়?
সবশেষে শাবানা সম্পর্কে বলতে হয় তিনি শুধু একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রীই ছিলেন না, ছিলেন একজন খুবই ব্যবসা সফল প্রযোজক। স্বামী ও প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক কে নিয়ে গড়ে তুলেন 'এস এস প্রোডাকশনস'। যা বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা প্রযোজনা সংস্থা হিসেবে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। এস এস প্রোডাকশনস এর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো - স্বামী স্ত্রী, অশান্তি, বিজয়, অন্ধ বিশ্বাস, রাঙাভাবী, অচেনা, লক্ষ্মীর সংসার, ঘাত প্রতিঘাত, স্বামী কেন আসামী, মেয়েরাও মানুষ, স্বামী ছিনতাই এর মত আরও অনেক ব্যবসাসফল ও পুরস্কারপ্রাপ্ত ছায়াছবি।
যিনি নিজের অভিনয় ও প্রযোজিত দুর্দান্ত সব ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে করেছেন অনেক সমৃদ্ধ। আজ তিনি বহুদূরে সেই আমেরিকায় সপরিবারে বসবাস করছেন তবুও বাংলার কোটি মানুষ তাঁকে আজও ভুলতে পারেনি। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখবেন যে যেদিন থেকে শাবানা অভিনীত ও প্রযোজিত ছবি মুক্তিপাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে সেদিন থেকেই বাংলা চলচ্চিত্র ধীরে ধীরে তাঁর জৌলুস হারিয়ে ধ্বংসের পথে পা বাড়িয়েছে। সেজন্য শাবানা কে বলা যায় বাংলা চলচ্চিত্রের এক 'লক্ষ্মী' দেবী। আজও সেই 'লক্ষ্মী'দেবীর স্থান কেউ দখল করতে পারেনি যার জন্য হয়তো আজও আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প পতনের মুখ থেকে উদ্ধার হয়নি।
আজ মুখ থুবড়ে পড়া আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর মতো একজন ''লক্ষ্মী'' দেবীর খুব খুব বেশী প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।