http://www.myspace.com/423882880/music/songs/31785002 লেখক হুমায়ূন আহমেদের দুটো ব্যাপার আমার কাছে খুবই পছন্দের। এক. তাঁর পাগলামি এবং দুই. তাঁর শৌখিনতা। হুমায়ূনের ব্যক্তিগত জীবনের পাগলামি নিয়ে আমি কিছু বলছিনা, বলছি তার সৃষ্টিতে বিদ্যমান পাগলামিগুলোর কথা। এটাকে পাগলামী শুধু বলবো না এর সাথে সুপার সেন্স অব হিউমার আছে। সব মিলে তাঁর যে গুণটি পাঠক হিসেবে আমার চোখে পড়েছে সেটি হলো "পাঠকের সাথে সম্পর্কের সাবলীলতা"।
খুব সহজেই পাঠকের মনে ঢুকে পড়ার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা ওনার ছিল। কি লিখছি, কার বা কাদের জন্য লিখছি লেখক হিসেবে এ সম্পর্কে তাঁর পরিস্কার ধারণা ছিল।
সাহিত্য যে একটা দারুণ বিনোদন মাধ্যম হতে পারে, বই পড়া যে একটা অপার আনন্দের বিষয় হতে পারে- সেটা হুমায়ূনের সৃষ্টি প্রমাণ করেছে। লেখক হিসেবে ওনার ভালো প্রিপারেশন ছিল কিন্তু উনি ওনার দেখার চোখটাকে সাবলীল ভাষায় পাঠকের সামনে তুলে ধরতে পারতেন। যাকে বলা যায় বাহুল্যবর্জিত যাদুময় গদ্য।
অনেকই তাঁর গল্প বলার, লেখার ভঙ্গিটাকে সাহিত্যমন্ডিত মনে করেন না। আমার কথা তাতে কি আসে যায়। গল্প বলার, লেখার উৎকর্ষতার মানদন্ড কি? বা কোন সাহিত্য সংবিধানের আলোকে একে অপন্যাস বলা হচ্ছে। আমি মনে করি, বেশির ভাগ সমালোচকরা প্রতিহিংসা থেকে এসব কথা বলতেন। হুমায়ূনের ঈর্ষণীয় অবস্থানটাকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখতেন।
হুমায়ূন একটা সেল্ফ আইডেনটিটি তৈরি করেছিলেন। এটা একটা সৃজনশীল মানুষের বড় গুণ। আমি ওনার ওয়ে অফ এক্সপ্রেশনকে সবসময়ই রিসপেক্ট করতাম, এখনো করি। মুক্তমনা মানুষ মাত্রেই সেটা করা উচিৎ।
হুমায়ূন আহমদে আর রবীন্দ্রনাথ।
জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথর পিন্ডি চটকিয়ে, তার সাহিত্য নিয়ে সমালোচনা করে হুমায়ূন আলোচিত হতে চান নি। উনি চেয়েছিলেন, নিজস্ব একটা ধারা তৈরি করতে। এবং সেখানে আমি তাকে ১০০ তে ১১০ দিব নির্ধিদ্বায়। রবীন্দ্রনাথের ওয়ে অব স্টোরি টেলিং এর সাথে হুমায়ূনের একটা বিস্তর ফারাক কাছে। দুটোই আলাদা এবং সফল।
গীতিকবিতায়, সুর চয়নে রবীন্দ্রনাথ পারদর্শী ছিলেন সেখানে সাহিত্যিক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ নাটক, সিনেমা, সিনেমা পরিচালনা ইত্যাদিতে তার সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। পশ্চিমবঙ্গের ক'জন সাহিত্যিক এভাবে নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছেন? মাল্টি-মিডিয়ায় একজন সাহিত্যিকের এমন আধিপত্য আমি খুব কম দেখেছি।
তবে এটা বলতে হবে তার বিপুল জনপ্রিয়তা এবং ইমেজের সুযোগ নিয়ে আমাদের পাবলিকেশন মিডিয়া তাকে ভীষণভাবে ব্যবহার করছে। হুমায়ূনও নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছিলেন যা তাঁর সৃষ্টির মান ক্ষুন্ন করেছে এবং ইমেজের উষ্ণতাকে ম্লান করে দিয়েছে। একজন সাহিত্যিকের এতো বইয়ের মধ্যে তার মৌলিক সৃষ্টি আলাদা না করা গেলে সেটা হবে দারুণ বেদনার।
ঘন ঘন সৃষ্টি এবং ফরমায়েশী সৃষ্টি তার সৃষ্টির প্রতি পাঠকের আবেদনটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। অনেককেই আমি বলতে শুনেছি, " নতুন কিছু নেই"। আসলে এভাবে নতুন কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়। আমি অনেক প্রকাশককে দেখেছি হুমায়ূনের পুরানো বইকে নতুন মলাটে নতুন ভাবে আনতে, কেন? এ ব্যাপারে হুমায়ূন আহমেদেরও নিশ্চয়ই সম্মতি ছিল!
নব্বইয়ের দশকে উনি যেভাবে পাঠককে ওনার সাহিত্য-সম্মোহনে বেঁধে ফেলেছিলেন, তারপর আস্তে আস্তে সৃষ্টির সেই ধার ম্লান হয়ে গিয়েছিলে। অনেকে বলেছেন, উনি বইমেলার জনপ্রিয় লেখক কিন্তু বাংলাদেশের সেরা সাহিত্যিক নন।
হুমায়ূনকে বাণিজ্যিকীকরণ করার একটা অদ্ভুত ধারা তৈরি হয়েছিলো। উনি প্রকাশকদের সাহিত্যিক হয়ে গিয়েছিলেন!
সকালে নাসিরউদ্দীন ই্উসুফ একটা টিভি চ্যানেলে বলছিলেন, " হুমায়ূনরা যুগে যুগে আসেন না, শতবর্ষে এক বার আসেন" । আমি ওনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। সব মানুষেরই ভালো দিক, মন্দ দিক থাকে। হুমায়ূনেরও আছে।
কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের কথা সাহিত্যজগতের অদ্বিতীয়
ও ক্ষণজন্মা একটি নাম। আরো একজন হুমায়ূন আশা করিনা, আমি আশা করি হুমায়ূনকে টপকে যাবে এমন একজন প্রতিভাবান সাহ্যিতিক বাংলাদেশে আবার তৈরি হবে। যে নিজেকে বিকিয়ে দিবে না, যে ম্লান হয়ে যাবে না।
বাবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার ৩ ঘন্টা পর বড় ছেলের নুহাশ হুমায়ূন ফেসবুকে তার প্রোফাইল পিকটা বদলিয়েছে। আমি ছবিটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।
হঠাৎ নিজের মনের ভিতর একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো- আমি কোন হুমায়ূনকে বেশি মিস করবো- নূহাশপল্লীর হুমায়ূন না সেন্টমার্টিনস্থ "সমুদ্রবিলাস"-এর হুমায়ূন! অবশ্যই দ্বিতীয়টি।
পোস্টের ছবি : নূহাশ হুমায়ূনের ফেসবুক ফটো থেকে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।