গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রাবাস আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ,যা প্রত্যক্ষ করেছে অনেকেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ-শিবিরের কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা টিলাগড় পয়েন্টে চলে যায়। এরপর ছাত্রলীগ সংঘটিত হতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টিলাগড় থেকে দুই শতাধিক বহিরাগত নেতাকর্মীদের নিয়ে ছাত্রাবাসে ঢুকেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ দাস পুরকায়স্থ ও এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি,বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাজিম উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন জেলা যুবলীগ নেতা মুশফিক জায়গীরদার, সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক দেবাংসু দাস মিঠুসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
ছাত্রলীগের মিছিলটি যখন হোস্টেলের দিকে এগুচ্ছিল,তখন পুলিশ ছিল তাদের সামনে। এরপর পুলিশের টিমটি আটকে যায় ছাত্রবাসের মূল গেইটে।
আর দা, ছোরা আর পেট্রোলের পিপা নিয়ে ভেতরে ঢুকে দুই শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা কর্মী। প্রথমেই দৃষ্টি নন্দন বিশাল ক্যাম্পাসের ৬টি ব্লকের ১ম ব্লকে আগুন ধরায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এরপর একে একে ২য় ব্লক, ৩য় ব্লক, ৪র্থ ব্লক ও ৫ম ব্লকে আগুন ধরানো হয়।
এর আগে শিবির কর্মীরা ছাত্রাবাসের পিছন দিয়ে চলে যায়। অবশ্য, ছাত্রলীগ কর্মীদের হাত বেচে গেছে ছাত্রাবাসের হিন্দু ছাত্রদের একটি মাত্র ব্লক ‘শ্রীকান্ত ছাত্রাবাস’।
এদিকে, সবকটি ছাত্রাবাসে পর্যায়ক্রমে আগুন ধরিয়ে ১ম ব্লকের মূল গেইটে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ দাস পুরকায়স্থ ও ছাত্রলীগ নেতা সাজনসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
সমাবেশে পংকজ দাস পুরকায়স্থ বলেন, স্বাধীনতার পর এবারই শিবিরমুক্ত হল কলেজ ছাত্রাবাস।
তারা শিবিরকে যেকোন মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
ঐতিহ্য পুড়লো দাউ দাউ করেঃ এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ধীরেশ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন এমসি কলেজ ছাত্রাবাসটি একশ ২০ বছরের পুরনো। আর এই ছাত্রাবাসটির সবকটা ব্লকে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন কারু কাজ। সেই পুরনো ঐতিহ্যবাহী ছাত্রবাসের ব্লকগুলো পুড়েছে দাউ দাউ করে। এর সাথে অশ্রু ঝরেছে শিক্ষক, কর্মচারী ও সাধারণ ছাত্রদের।
এ দৃশ্য হাজার হাজার জনতা দেখছে অশ্রু সিক্ত নয়নে। পুলিশ র্যাব সকলেই ছিলেন নিরব ভূমিকায়।
সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে সিলেটবাসী এর আগে এত বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা দেখেনি কখনো। শত শত ফুট দীর্ঘ একেকটি ছাত্রবাসের সবকটি কক্ষ এক সাথে পুড়েছে। কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হোস্টেল সুপার বশির আহমদ প্রাণে রক্ষার জন্য দৌড়াচ্ছেন।
এভাবে ২য় ব্লকের বাবুর্চি মান্নান, দাউ দাউ করা আগুনে বালতি দিয়ে সাধ্যমত পানি ছুড়ছে নিজের কক্ষটি বাচাঁনোর জন্য। আর কাঁদছে অঝোর ধরায়। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐ ছাত্রাবাস। আর ঐতিহ্যবাহী ঐ ছাত্রাবাসের আগুনে পুড়ার দৃশ্য দেখলে যে কারো মন কেদে উঠছে। এমনি ভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিন্দু কর্মচারী।
বলেছে বাবা ও ছিলেন ঐ কলেজের কর্মচারী। আমি নিজেও কাজ করছি, অথচ এমন দৃশ্য দেখব কখনো ভাবিনি।
ছাত্রাবাসে আগুন ধরানোর খবর পেয়ে বিভিন্ন সময় যারা এমসি কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন তারা দ্রুত ছুটে আসেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের ঘটনাস্থলে আসতে দেরী হয়েছে অনেকক্ষণ। আগুন লাগানোর প্রায় দেড় ঘন্টা পর প্রথমে সহকারী অধ্যাপক তৌফিক ইয়াজদানী ঘটনাস্থলে আসেন।
এরপর একে একে শিক্ষকরা আসেন। সাথে র্যাব পুলিশও প্রত্যক্ষ করে ছাত্রলীগের কান্ড ও দাউ দাউ করে ছাত্রাবাস পোড়ার দৃশ্য। এ ব্যাপারে কারোরই যেন কিছু করার ছিল না।
এদিকে, আগুন ধরার সাথে সাথে লুটপাট ও হয়েছে ব্যাপক। বহিরাগত শিক্ষার্থীদের অনেকের হাতে ল্যাপটপ ও মুল্যবান জিনিসপত্র দেখা গেছে।
এছাড়া,ছাত্রাবাসের ৩ শতাধিক সিটের মধ্যে হিন্দু ব্লকে প্রায় ৫০টি সিট ছাড়া সবকটি ব্লকে আগুন লাগানো হয়। এসব ব্লকে ছাত্রলীগ কর্মীদের রুম ও বাদ যায়নি আগুনের লেলিহান শিখা থেকে। তবে, অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ছাত্রাবাসের মসজিদ।
নিরুপায় ফায়ার সার্ভিসঃ ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রাবাসে আগুন ধরানোর পরপরই ফায়ার ব্রিগেডের লোকজনকে বিষয়টি জানানো হয়। একটি ইউনিট সাথে সাথে গেলেও মাত্র ক’মিনিটির মাথায় পানি শেষ হয়ে যায়।
এরপর যখন ফায়ার ব্রিগেড সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ততক্ষণে পুড়ে গেছে সবকটি ব্লক।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিভেন্সের পরিচালক পরিমল কুন্ডু জানান, আলমপুর সবকটি ইউনিট নিয়ে আসা হয়েছে। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এসএমপি কমিশানর অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া দোষ চাপালেন ফায়াস সার্ভিসের লোকজনের উপর। তিনি বলেন খবর দেয়ার পর ও তারা দেরীতে এসেছে।
পুলিশ সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত ছিল।
আগুন দিয়ে শিবির তাড়ালেও নিজেদের অন্তঃর্দ্বন্দ্বে পুড়েছে ছাত্রলীগ। টিলাগড় পয়েন্টে ছাত্রলীগের দুগ্রুপেই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগ নেতাসহ ২০ ছাত্রলীগ কর্মী। টিলাগড়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ সম্পর্কে সিটি কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ জানান, শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপির ঘনিষ্টজন হেরোইন সম্রাট কবিরসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা অতর্কিতভাবে টিলাগড়ে ছাত্রলীগের উপর হামলা চালায়। এতে ছাত্রলিগের ২২জন নেতাকর্মী আহত হন।
কাউন্সিলর আজাদ আরো জানান, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর থেকেই শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপির ঘনিষ্টজন হয়ে উঠেন কবির। এর আগে কবিরসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ছিল। এখন প্রায়ই শফিক চৌধুরী গাড়ীতেই তাকে দেখা যায়। টিলাগড়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা সম্পর্কে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ বলেন, জামায়াত শিবিরের প্রেতাত্মা এমপি শফিক চৌধুরীর মদদে তার বাহিনী এ হামলা করেছে।
টিলাগড়ে সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত কদিন ধরে রঞ্জিত ও বাবলা গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
বাবলা গ্রুপকে সরাসরি প্রশ্রয় দিচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি। বাবলা গ্রুপ কদিন ধরে টিলাগড় পয়েন্টের দখলে রয়েছে। আবার রনজিত গ্রুপ পয়েন্ট ছেড়ে একটু দূরে অবস্থান নেয়। গতকাল এমসি কলেজ পুড়িয়ে এসে উভয় গ্রুপ টিলাগড়ের মূল পয়েন্টে অবস্থান নিলে মারামারি শুরু হয়। তখন ঘটনা ঘটে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শাহীন জানান, ছাত্রলীগের যখন থেকে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন মেয়র কামরানসহ আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অনুরোধ জানানো হয় বহিরাগতদের ঠেকাতে। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ও জানানো হয়। কেউ পাত্তা দেয়নি। শেষ পর্যন্ত অনুরোধ করা হয় ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটি রক্ষা করুন।
তাতেও তারা সাড়া দেননি। শাহীন বলেন, এতে পুরো সিলেটবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনার জবাবদিহি আওয়ামীলীগকে সিলেটবাসীর কাছে দিতেই হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ২ বছর আগে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসও অনুরুপভাবে পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ। এখন পর্যন্ত এ হোস্টেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।