আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনি দেশের গৌরব ৭ বীরশ্রেষ্ঠকে সঠিক ভাবে চেনেন? পত্রিকা,টিভি,ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েভ সাইটে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি ভূল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে...এ দায় কার?

আমি তোমাদেরই একজন, খুবই সাধারণ !!!
আজ আমরা স্বাধীনতার ৪০ বৎসরে পর্দাপন করলাম। বলা যায় দীর্ঘ সময়। কিন্তু এর মধ্যে কি আমরা আমাদের স্বাধীনতার গৌরবের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পেরেছি? পাঠক আপনার কাছে আমার প্রশ্নঃ- আপনি দেশের গৌরব ৭ বীরশ্রেষ্ঠকে সঠিক ভাবে কতটুকু চেনেন? পত্রিকা,টিভি,ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েভ সাইটে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি ভূল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে...এ দায় কার? বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে গত ২ বৎসর আগে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নেন। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের অনেকেই বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সর্ম্পকিত। ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা বাংলাদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সুতরাং নতুন প্রজন্ম ইন্টারনেটের সাহায্যে হাতের কাছেই পাচ্ছে নিমিষে সারাবিশ্বর খবর। ফলে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পত্রিকা আর্ন্তজালে (ইন্টারনেট) তাদের পত্রিকার অনলাইন এডিশন বের করছেন নিয়মিত। কিন্তু আমরা কয় জনেই জানি স্বাধীনতার গৌরবগাঁথা ইতিহাস বা মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা বা বীরশ্রেষ্ঠদের সঠিক জন্মতারিখ বা ছবি ব্যবহারে এই আর্ন্তজাল / পত্রিকা বা টিভি কতটুকুই সঠিক তথ্য দিচ্ছে? ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েভ সাইটে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি ব্যবহারে প্রচুর ভূল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই দায় কার? নিন্মে আমি কিছু ছবি ও লিংকের সাহায্যে সেই ভূলের তথ্য তুলে ধরলামঃ- বিডিনিউজ২৪.কম সাম্প্রতিক বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনলাইন নিউজ বিডিনিউজ২৪.কম নতুন প্রজন্ম বা বাচ্চাদের কি শিখাচ্ছে দেখুন:- লিংক=> "আমাদের বীরশ্রেষ্ঠরা" ছবি:-১ বিডিনিউজ২৪.কমের লেখার হেডিং। ছবি:-২ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছবি।

ছবি:-৩ বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ছবি। ছবি:-৪ বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের ছবি। ছবি:-৫ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ছবি। বাংলাদেশ প্রতিদিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে কর্তৃপক্ষ ইদানিং সবার্ধিক প্রচার সংখ্যার পত্রিকা বলে ঘোষনা করছেন তারা কি ছেপেছে দেখুন:-লিংক=> "বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ছবি" বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১৯.১২.২০১০ইং পত্রিকায় প্রকাশিত ভূল ছবি। যুগান্তর দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ১৫.১২.২০১০ইং তারিখে লিংক=> "আমাদের প্রেরণায় বীরশ্রেষ্ঠ" লেখাটিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য অনুসারে তিন জন বীরশ্রেষ্ঠের জন্মতারিখে গরমিল দেখা যায়।

তবে এই লেখায় বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি যথাযত ব্যবহার করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য অনুসারে গরমিল গুলো হলোbr /> ১. বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্ম সাল=> মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য:- ২৯শে অক্টোবর ১৯৪১ ইং যুগান্তরে প্রকাশিত:- ২৯শে নভেম্বর ১৯৪২ ইং ২. বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের জন্ম সাল=> মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য:- ১লা মে ১৯৪৯ ইং যুগান্তরে প্রকাশিত:- ১৯৪৩ ইং ৩.বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের জন্ম সাল=> মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য:- ১৯৪৪ ইং যুগান্তরে প্রকাশিত:- ১৯৪৫ ইং ৪.বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের জন্ম সাল=> মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য:- ৮ই মার্চ ১৯৪৯ ইং যুগান্তরে প্রকাশিত:- ১৯৪৮ ইং উইকিপিডিয়া ১. বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্ম সাল=> মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য:- ২৯শে অক্টোবর ১৯৪১ ইং উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত:- ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৪৫ ইং উইকিপিডিয়ার লিংক=> "বীরশ্রেষ্ঠের জন্ম তারিখে গরমিল" ২. বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের জন্ম সাল=> মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য:- ১লা মে ১৯৪৯ ইং উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত:- ১লা মে ১৯৪৩ ইং উইকিপিডিয়ার লিংক=> "বীরশ্রেষ্ঠের জন্ম তারিখে গরমিল" ৩.বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের জন্ম সাল=> মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য:- ১৯৪৪ ইং উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত:- ২রা ফেব্রুয়ারী ১৯৫৩ইং উইকিপিডিয়ার লিংক=> "বীরশ্রেষ্ঠের জন্ম তারিখে গরমিল" একুশে টিভি একুশে টিভির ১৬ই ডিসেম্বর দুপুর ১২.৩০ মিনিটে সম্প্রচারিত স্ক্রীনে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্মসাল ও শহীদ হওয়ার তারিখ কবে তা দেখাতে গিয়ে উপরে বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের ছবি ব্যবহার করা হয়। যাহা অনস্ক্রীন হওয়াতে আমার কাছে কোন ডকুমেন্ট নেই তবে এটি আমার নিজের দেখা। বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে ওয়েভ সাইট দেশ ফোরাম দেশ ফোরামের ওয়েভে দেওয়া ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের সংকলিত ছবিটিতে ৪ জন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি ভূল ভাবে প্রর্দশন করে চলছে। বীরশ্রেষ্ঠেদের জীবনীতে দেওয়া সিঙ্গেল ভূল ছবি গুলো ইতিমধ্যে তারা তুলে নিয়েছেন।

দেশ ফোরামের ওয়েভ লিংক দেখুন=> "৪ জন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি ভূল" ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নিয়ে সংকলিত ভূল ছবিটি। ওয়েভ সাইট মূর্ছনা.কমের ভূল মূর্ছনা.কম বীরশ্রেষ্ঠদের ৩টি ছবি ব্যবহারে ভূল করেছেন। ১. বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ছবি ব্যবহার করেছেন। ২. বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ছবি ব্যবহার করেছেন। ৩. বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জীবনীতে বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের ছবি ব্যবহার করেছেন।

মূর্ছনা.কমের বীরশ্রেষ্ঠদের ৩টি ছবি ভূল ব্যবহারের লিংক দেখুন=> "বীরশ্রেষ্ঠদের ৩টি ছবি ভূল" আমার অভিজ্ঞতা:- ২০১০ এর ডিসেম্বরের শুরুতে হঠাৎ মাথায় আসলো দেশের গৌরব সাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে ব্লগে কিছু লিখবো। সে হিসাবে বিভিন্ন তথ্য নিতে থাকি ইন্টারনেট, পত্রিকা ও বিভিন্ন ওয়েভ থেকে। গুগল সার্চে বীরশ্রেষ্ঠদের বেশ কয়েকটি ছবি ভূল ভাবে পাওয়ার পরও মাথায় আসেনি আর্ন্তজালে লোড করা ছবি গুলোর নাম এবং ছবির সাথে গরমিল থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় গুগল সার্চ দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ছবির সাথে যুক্ত ছবি গুলোও চলে আসে। তারপরও যতটুকু সর্তকতা অবলম্ব করা যায় করলাম।

ভালো ভাবে না দেখেই আমি একটি পোষ্ট দেশ ফোরামের সংকলিত ছবিটি ব্যবহার করি। ব্লগার আইরিন সুলতানা আমাকে ঐ ছবিটি নিয়ে প্রশ্ন তুললে আমি সরাসরি সেগুন বাগিচার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ৬নং কক্ষে রক্ষিত পোর্ট্রেট শিল্পী বিকাশের আঁকা ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি এবং ছবির নিচে দেওয়া জন্মসাল ও সংক্ষিপ্ত জীবনী নোট করে নিয়ে আসি। যার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে আমি বিভিন্ন ব্লগে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে পোষ্ট প্রচার করি। ২য় ব্লগদিবসে অনলাইনে এবং ২১.১২.২০১০ইং প্রচারিত এটিএন নিউজের সাক্ষাতকারে আমি এ বিষয়ে ২টি সাক্ষাতকার দিই।

আশা করি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও বীরশ্রেষ্ঠদের সর্ম্পকে সঠিক তথ্য ও ইতিহাস জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও বিভিন্ন গণমাধ্যম গুলো তাদের যথাযত ভূমিকা পালন করবেন। ৭ বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে প্রথম আলো ব্লগে আমার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পোষ্ট লিংক=> "জেনে নিন: বাংলার গৌরব ৭ বীরশ্রেষ্ঠকে" ছবি ও তথ্য সূত্র:- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিভিন্ন গবেষনাপত্র। বীরশ্রেষ্ঠদের প্রোট্রেট ছবি:- বিকাশ। বিশেষ কৃতজ্ঞতা: গবেষক এহসান হাবীবকে।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.