আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুমিনদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ হতে ২৫টি প্রতিশ্রুতি

ফারিয়াজ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের মনে অবশ্যই এই ধারণা জন্মানো উচিত যে, যখন আল্লাহ্‌ কোন প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন তখন তিনি তা পূরণ করেই থাকেন, আর প্রতিশ্রুতি পূরণ করাই আল্লাহ্‌র সুন্নাহ। “আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না। ” [সূরা ঝুমার ২০] এবং আরেকটি আয়াতে তিনি বলছেন, “সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা যথার্থ।

তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়”। [লুকমান ৯ ] কাজেই যখন কাউকে দেখা যায় যে সে দাবী করছে তার জীবনে আল্লাহ্‌র দেয়া ওয়াদা কার্যকর হয়নি, কিংবা আল্লাহর প্রতিশ্রুত সাহায্য এসে পৌঁছায়নি কিংবা ভবিষ্যতেও যদি না এসে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য অনুচিত কাজ হল আল্লাহ্‌র দেয়া ওয়াদার প্রতি সন্দেহ করা, আর উচিত কাজ হল তার নিজের ঈমানের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা। এই সমসস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার নিজের কারণে , কারণ যদি কেউ আল্লাহ্‌র প্রতি সত্যবাদী থাকে তাহলে আল্লাহও তার প্রতি সত্যবাদী থাকেন, আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুত ওয়াদায় কোন সমস্যা নেই, সমস্যা আমাদের ঈমানে। ১ম প্রতিশ্রুতি জান্নাত আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “আর হে নবী (সাঃ), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম।

বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে”। [সূরা বাকারাহ ২৫] ‘আল্লাহর পক্ষ হতে প্রতিশ্রুতি’ এ কথাটিই কি একজন মুমিনের জন্য যথেষ্ট নয়? মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহ্‌র প্রথম প্রতিশ্রুতি হল জান্নাত, আর জান্নাত সম্পর্কে যে অবগত আছে সে ব্যক্তি বাকি ২৪টি ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি থেকে এর বেশি আর কি প্রত্যাশা করতে পারে? জান্নাত হল এমন স্থান যা কোন চোখ দেখেনি, যা কোন কান শোনেনি, যার বর্ণণা কোন মানব মনে কল্পনা করা সম্ভব নয় এবং যা কোন ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হাদীসে কুদসীতে“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য তৈরি করেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার কল্পনা হয়নি”।

[বুখারি ও মুসলিম] “কেউ জানে না, তাদের জন্য নয়নাভিরাম কি কি উহ্য রাখা হয়েছে, তাদেরই কর্মের প্রতিদান স্বরূপ। ” [সাজদাহ ১৭] জান্নাত অর্জন করার জন্য শ্রম ও প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হবে, জান্নাত তো খুবই দামী উপহার। এটা কি এমনিতেই বিনাশ্রমে পাওয়া যাবে? ২য় প্রতিশ্রুতি পথ চলার আলো আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা হাদীদ ৫৭:১২] শেষ বিচারের দিনের একটি পর্যায় হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং আমাদের সবাইকে একটি সেতু পার হতে হবে, সেই সেতুটি হচ্ছে পুলসিরাত যা চুলের চেয়েও সরু এবং তরবারীর চেয়েও ধারালো, আর সেখানে কোন আলো থাকবে না।

কাজেই সেই পুলসিরাত অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে যদি না আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আমাদেরকে আলো দান করা হয়। আর এই আলো নির্ভর করবে দুনিয়াতে আমাদের অন্তরে কি পরিমাণ আলো ছিল তার উপর, আর এই আলো কোন বাতি বা কুপির আলোর মত নয় বরং এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক আলো , আর এই আলোকিত অন্তরের আলোই সেই শেষ বিচারের দিনে ব্যবহারিক আলোর রূপ নিয়ে আসবে। আমাদের অন্তরে কি পরিমাণ ঈমান রয়েছে সে অনুসারে আমরা আলো লাভ করব। শেষ বিচারের দিনে ঈমান নূর হিসেবে আমাদের সাথে থাকবে। অন্ধকার পুলসিরাতের উপর কিছু লোক এত বেশি আলো লাভ করবে যে তারা এক পলকে ঝড়ের বেগে সেই পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।

কেউ দৌড়ে যাবে, কেউ হেঁটে যাবে, আবার অনেকে এক পা সামনে ফেলে আলোর অভাবে থমকে দাঁড়াবে, আর অনেকে অপর্যাপ্ত আলো তথা নূরের জন্য সেই পুলসিরাত পার হতে পারবে না। ৩য় প্রতিশ্রুতি আল্লাহ আপনার সাথে থাকবেন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “…জেনে রেখ আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে। .” [সূরা আনফাল ১৯] যখন আল্লাহ্‌ জানিয়ে দিলেন যে তিনি ঈমানদারদের সাথে আছেন এর মানে হল আমাদের আর কাউকে দরকার নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “আল্লাহকে সংরক্ষণ করবে তো তিনি তোমাকে সংরক্ষণ করবেন, আল্লাহকে স্মরণ করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। ” (তিরমিযি ২৫১৬) ৪র্থ প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে উদারতা,দয়া ও করুণা - ফযল আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “…আর আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল”।

[আলে ইমরান ১৫২] আল্লাহর উদারতা এতই বিশাল ও মহান যা কেবল তাঁর মর্যাদার সাথেই মানানসই। তিনি আমরা যতটুকু যোগ্যতা রাখি তার চেয়েও বেশি আমাদের দিয়ে থাকেন। এর একটি সহজ উদাহরণ হলো, আমাদের জীবনের অধিকাংশ নেয়ামত আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করেই পেয়েছি, অপরদিকে যখন আমরা কোন কিছু প্রার্থনা করেছি তিনি আমাদের তার চেয়েও বেশি দিয়েছেন। এটাই সেই মহান রবের পক্ষ হতে, “...আর আল্লাহ্‌ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল”। “যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না।

নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু”। সূরা নাহল ১৮ ৫ম প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে সুরক্ষা ও বন্ধুত্ব আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরো বলছেন, “মানুষদের মধ্যে যারা ইব্রাহীমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারা ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম-আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু”। [আলে ইমরান ৬৮] ৬ষ্ঠ প্রতিশ্রুতি আল্লাহর পক্ষ হতে করুণা- রহমত “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য”। [সূরা জাশিয়া ৩০] আল্লাহ হচ্ছে আর-রাহিম, (যিনি রহম করেন)।

একজন মানুষ, সেও রাহিম হতে পারে, কারও প্রতি দয়া করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর দয়া ও করুণা সম্পূর্ণ অতুলনীয় ও ভিন্ন মাত্রার। আল্লাহ দয়া ও করুণা তার বড়ত্বের সমানুপাতিক। যখন আল্লাহ বলছেন যে তিনি একজন বিশ্বাসীকে তার রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন, এর মানে হচ্ছে ‘করুণা ও রহমতের শীর্ষবিন্দু’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন – “কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না, আল্লাহর করুণা ছাড়া”। ৭ম প্রতিশ্রুতি বিজয় আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরো বলছেন, “আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে”।

[সূরা গাফির ৫১] এবং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরো বলছেন, “...মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব”। [আর রুম ৪৭] যখন আমরা আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করব, আল্লাহ্‌ আমাদের বিজয় দান করবেন। কিন্তু আমাদের এক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধারণ কর‍্তে হবে কেননা বিজয় লাভের পূর্বে একজন মুমিনকে অনেক পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে হবে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বিভিন্ন সময়ে সাহাবাগণের সাথে আলোচনায় বসতেন, তারা আলোচনা করতেন কাকে কি ধরণের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে, এরকম একটি আলোচনায় একবার এক সাহাবী কিছু না বলে শুধু নিজের পিঠের কাপড় সরিয়ে দিলেন, আর তাদেরকে দেখালেন। উমার বলেন, আমি কখনো এরকম পিঠ দেখিনি, তোমার কি হয়েছিল? তিনি বলেন মক্কার মুশরিকেরা আমাকে নির্যাতনের সময় আগুনের মাঝে দীর্ঘক্ষণ ধরে পাথর গরম করতেন, এরপর আমার পিঠের উপর সেই পাথরগুলো ছেড়ে দেয়া হত, আমাকে সেই উত্তপ্ত পাথরের উপর শুইয়ে দেয়া হত, এতে আমি অনুভব করতাম যে আমার পিঠের মাংস পুড়ে যাচ্ছে আর আমি পোড়া মাংসের ঘ্রাণ পেতাম, আর এ কারণেই আজকে আমার পিঠে তোমরা এই গর্তগুলো দেখতে পাচ্ছ।

আমরা কি এ সব পরীক্ষা অতিক্রম করেছি? আমরা আরামদায়ক জীবনে অভ্যস্ত। সাহাবাদের তুলনায় আমাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট, ফিতনা পরীক্ষা কিছুই নয়, এমনকি বর্তমান সময়েও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নির্যাতিত মুসলিমদের তুলনায় আমরা আছি বেশ আরামেই। আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় চলে আসছে, তাদের আগমনী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, এটাই আল্লাহর ওয়াদা। যদি এটা আমাদের জীবদ্দশায় সম্ভব নাও হয় তো এটা আমাদের সন্তানদের জীবদ্দশায় সম্ভব হতে পারে, কিন্তু এটা হবেই ইনশা আল্লাহ। ৮ম প্রতিশ্রুতি আল্লাহ মন্দকে মুছে দিবেন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব”।

[আল আনকাবুত ৭] জান্নাত পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতার স্থান, অপবিত্রতা ও জান্নাত একই সাথে অবস্থান করতে পারে না। আর গুনাহের কারণে একজন মানুষ তার সৃষ্টিগত বিশুদ্ধতা হারায় এবং অপবিত্র হয়ে যায়। আর এই অপবিত্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হচ্ছে তাওবা করা, অনুশোচনা করা , ক্ষমা প্রার্থনা করা, এগুলোর সাথে সাথে আরও যে সকল উপায়ের দ্বারা একজন মুমিন তার গুনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জন করে সেগুলো হচ্ছে সবর, অসুস্থতা, দুঃখ কষ্ট, ফিতনা ইত্যাদি। আল্লাহ মহামহিম, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন, তিনি কিছু মানুষকে এত ভালোবাসেন যে তিনি তাদের গুনাহকে আড়াল করে থাকেন, গুনাহকে গোপন করে রাখেন। সাফওয়ান ইব্‌ন মুহরিয আল-মাযেনি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আমি ইব্‌ন ওমরের সাথে তার হাত ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এলো।

অতঃপর সে বলল: ‘নাজওয়া’ (গোপন কথা) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কি বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের নিকটবর্তী হবেন অতঃপর তার ওপর পর্দা ফেলে তাকে ঢেকে নিবেন এবং বলবেন: মনে পড়ে অমুক পাপ, মনে পড়ে অমুক পাপ? সে বলবে: হ্যাঁ, হে আমার রব, অবশেষে সে যখন তার সকল পাপ স্বীকার করবে এবং নিজেকে মনে করবে যে, সে ধ্বংস হয়ে গেছে, আল্লাহ বলবেন: তোমার ওপর দুনিয়াতে এসব গোপন রেখেছি আজ আমি তা তোমার জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি”। [বুখারি ও মুসলিম] কাজেই আমাদের নিজেদের উচিৎ নিজেদের গুনাহের কথা গোপন রাখা, কারও নিকট তা প্রকাশ না করা, তাহলে আল্লাহও আমাদের গুনাহ গোপন রাখবেন। ৯ম প্রতিশ্রুতি তাদের জন্যে ভালোবাসা “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদেরকে দয়াময় আল্লাহ ভালবাসা দেবেন”। [মারিয়াম ৯৬] মুফাসসিরগণ বলেন, যদি তুমি তোমার অন্তরকে আল্লাহর দিকে ঝুঁকিয়ে দাও তাহলে আল্লাহ মুমিনদের অন্তরকেও তোমার দিকে ঝুঁকিয়ে দিবেন। আরেকটি উক্তি-“যদি তুমি স্রষ্টাকে অসন্তুষ্ট করে সৃষ্টিকে সন্তুষ্ট করতে যাও, তাহলে তুমি স্রষ্টাকে অসন্তুষ্ট করলে আর এতে স্রষ্টার সৃষ্টিও তোমার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে ।

আর যদি তুমি সৃষ্টীকে অসন্তুষ্ট করে স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে যাও, তাহলে তুমি স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করলে আর এতে স্রষ্টার সৃষ্টিও তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবে”। অর্থাৎ সে স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করল সে মূলত উভয়েরই সন্তুষ্টি অর্জন করল। আর আমরা তো এটাই চাই, যে একজন মুমিন মুত্তাকী বান্দা আমাদের ভালোবাসবে, কুফফারদের কাছ থেকে ভালোবাসা কখনো প্রত্যাশিত নয়, তেমনি ফাসিক ব্যক্তির ভালোবাসা কিংবা নৈকট্যও আমরা চাই না। ১০ম প্রতিশ্রুতি কোন প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না”। [কাহফ ৩০] · কখনো কখনো এমনও হয়, কোন কাজ করতে করতে হঠাৎ আপনার মনে হতে পারে আপনি সময় ও শ্রম অপচয় করছেন।

ধরুন, আপনি কাউকে ইসলামের দিকে আহবান করছেন, কিন্তু কেউ শুনছে না, কিংবা আপনি আপনার দাওয়াহর ফলে কোন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন না, আপনার সেক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত, আপনার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে, আর আল্লাহর কাছে আপনার কোন শ্রম বৃথা যাবে না, আর সংখ্যা দিয়ে সফলতা বিচার করবেন না। · রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন আমাকে ঊর্ধাকাশে ভ্রমণ করানো হয়েছিল- আমি একজন নবীকে দেখলাম যার অনুসারী দশ জন, একজন নবীকে দেখলাম যার অনুসারী পাঁচ জন, একজন নবীকে দেখলাম দুই জন অনুসারী নিয়ে দণ্ডায়মান, আর কাউকে দেখলাম এক জন অনুসারী, আর কোন কোন নবীর একজনও অনুসারী ছিল না’। কিন্তু, এই নবীগণ কেউই তাদের মিশনে ব্যর্থ হননি, বরং লোকেরা নিজেরাই বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেছে। · বাস্তব কথা হচ্ছে, আমরা যা অর্জনের যোগ্যতা রাখি, আল্লাহ আমাদেরকে তার চেয়েও বেশি দান করে থাকেন। ১১শ প্রতিশ্রুতি শয়তান হতে সুরক্ষা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “তার (শয়তানের) আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে”।

[নাহল ৯৯] · আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন শয়তানের থেকে আল্লাহ্‌ আপনাকে রক্ষা করবেন। শয়তান খুবই অভিজ্ঞ, সে আছে আদম আলাইহি সালাম এর সময় থেকে। সে আমাদের থেকে অনেক বেশি কৌশলী ও ধূর্ত, আমরা তাকে পরাজিত করতে পারি না যদি আল্লাহ্‌ আমাদের সাহায্য না করেন। · আল্লাহ্‌ আমাদের শয়তান থেকে বাঁচার জন্য অনেক অস্ত্র দিয়েছেন। আর একজন মুমিন সেই সকল অস্ত্রের ব্যবহার জানে।

· উদাহরণস্বরূপঃ আয়াতুল কুরসী যা আপনি রাতে ঘুমানোর আগে তিলাওয়াত করতে পারেন, কিংবা অন্যান্য সময়ে, আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বনির রাজিম, দৈনিক আযকার সকাল সন্ধ্যায়, পেশাব পায়খানায় প্রবেশের পূর্বে দুয়া ইত্যাদি দুয়া দিয়ে আপনি জ্বিন কিংবা মানুষ উভয় ধরণের শয়তান থেকেই আল্লাহর নিকট আশ্র্য় লাভ করতে পারেন। প্রতিশ্রুতি-১২ অবিচলতা ও দৃঢ়তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন”।

[ইবরাহীম ২৭] · আল্লাহ আপনাকে অবিচলতা দান করবেন, কারণ জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের ঈমানের পরীক্ষা হবে আর তা ধরে রাখার প্রয়োজন দেখা দিবে। দুনিয়ার ফিতনা আর ফাসাদের মুখে স্থির থাকা সম্ভব নয় যদি না আল্লাহ আমাদের দৃঢ়পদ রাখেন। · কিছু অল্প সময়ের জন্য সরল পথে থাকা খুব সহজ, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তা ধরে রাখাটাই একজন মুমিনের কর্তব্য। · রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়শই এই দুয়া করতেন, “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনার দীনের উপর আমাদের অন্তরগুলোকে স্থিরতা দান করুন”। · অন্তরসমূহ বরতনের ন্যায়, যা যেকোন সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে।

এমনকি অন্তর শব্দটির আরবী হচ্ছে ক্বালব, যার মূল শব্দ তাক্বালাব, যার অর্থ হচ্ছে যা উলটে যায়, পরিবর্তিত হয়। · আল্লাহ আমাদের সকলের অন্তরকে তাঁর দীনের উপর অবিচল রাখুন, আমিন। প্রতিশ্রুতি-১৩ একটি শুভ সমাপ্তি · আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · · “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল”। [সূরা রাদ ২৯] এবং আল্লাহ্‌ আরো বলছেন যখন মুসা আলাইহি সালাম লোকদের বলেছিলেন, “…নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।

”[সূরা আরাফ:১২৮] · আল্লাহ্‌ মুমিনদের জন্য একটি শুভ সমাপ্তির ওয়াদা করেছেন। কাজেই আমাদের দুনিয়ার বর্তমান দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই, কারণ শেষ ভালো বা শুভ সমাপ্তি তো কেবল মুমিনদের জন্যে। “জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে”। (সূরা আল মুজাদিলা-২২) প্রতিশ্রুতি-১৪ আল্লাহ আপনাকে পরিত্রাণ করবেন, রক্ষা করবেন · “অতঃপর আমি বাঁচিয়ে নেই নিজের রসূলগণকে এবং তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে এমনিভাবে। ঈমানদারদের বাঁচিয়ে নেয়া আমার দায়িত্বও বটে”।

· [সূরা ইউনুস ১০৩] · নবী ইউনুস আলাইহি সালাম তিন স্তর বিশিষ্ট অন্ধকারের মধ্য আটকা পড়েছিলেন; মাছের পেটের অন্ধকার, রাত্রির অন্ধকার এবং সাগরের পানির অন্ধকার। · এরপরেও যখন তিনি এই বলে দুয়া করলেন, লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যলিমিন · “তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার। ” [সূরা আম্বিয়া ৮৭] · মহান আল্লাহ্‌ তিন স্তর বিশিষ্ট অন্ধকারের মাঝে তাঁর সেই আহবান শ্রবণ করলেন এবং সাড়া দিলেন, · “অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি। ” [সূরা আম্বিয়া ৮৮] প্রতিশ্রুতি-১৫ হেদায়াত-পথ চলার নির্দেশনা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “অবশ্য যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন তাদের পালনকর্তা, তাদের ঈমানের মাধ্যমে।

এমন সুসময় কানন-কুঞ্জের প্রতি যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণসমূহ”। [সূরা ইউনুস১০:৯] · এটাই আমাদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন, আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি এর মানে এই নয় যে আমাদের হেদায়াত বা পথ নির্দেশনা দরকার নেই, বরং জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমাদের হেদায়াত দরকার। · কুর’আনের ভূমিকায় সূরা ফাতিহাতে প্রত্যহ সালাতে পাঠ করে আমরা যে দুয়া করছি তা হল – “আমাদেরকে সরল পথ দেখাও” [সূরা ফাতিহা ৫] তাদের ঈমানের কারণে আল্লাহ্‌ তাদের সঠিক পথে চালিত করবেন। · প্রতিশ্রুতি-১৬ বারাকাহ-বরকত আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।

সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে”। [আরাফ ৯৬] · আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো এই নিয়তে যে আমরা পরকালের জীবনের বারাকাহ ও কল্যাণ চাই, দুনিয়ার জীবনের প্রাধান্য যেন আখেরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। · বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ এই উম্মাহর প্রতি বরকত দান করেন, যার কিছু অতিক্রান্ত হয়েছে, আর কিছু এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, যেমন শেষ সময়ে ঈসা আলাইহিস সালাম এর পুনঃআগমন। আমরা যে বরকত লাভের কথা বলছি তা অনেক সময় পাপ ও মন্দ কার্যের দরুণ ক্ষতিগ্রস্ত ও আক্রান্ত হয়। একজন পাপী তার পাপের কারণে এই দুনিয়ার অনেক বরকত লাভ থেকে বঞ্চিত হয়।

আবার সমষ্টিগতভাবে কোন জনপদের লোকেরা যদি অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে তখন তাদের থেকে বরকত ছিনিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু যেখানে ঈমান ও সৎ কর্ম বর্তমান সেখানে বরকত বর্তমান। আর শেষ সময়ে ঈসা আলাইহি সালাম যখন আগমন করবেন সে সময়টি হবে বরকতে পরিপূর্ণ। প্রতিশ্রুতি-১৭ শান্তি এবং নিরাপত্তা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই পথগামী। ” [সূরা আনয়াম ৮২] · একমাত্র আল্লাহই পারেন আমাদের অন্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করতে।

· এই শান্তি ও নিরাপত্তার অনুভূতি বিভিন্ন রূপে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বদর যুদ্ধের দিনে যখন মাত্র ৩০০ জন মুসলমান ১০০০ সুসজ্জিত কাফিরদের মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে গেলে তখন একমাত্র আল্লাহই তাদের অন্তরে সাকিনাহ(প্রশান্তি) দান করলেন, তারা তাদের সংখ্যা দেখে ভীত হলেন না বরং তাদের প্রতি আল্লাহ্‌ প্রশান্তি নাযিল করলেন, কাফিরদের বিরুদ্ধে তাদের পদ দৃঢ় করলেন, তাদের উপর সেদিন বৃষ্টিও বর্ষিত হয়েছিল যা তাদেরকে শীতলতা দান করলো, এমনকি যুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝেও তারা শান্তির তন্দ্রা অনুভব করলেন, আল্লাহ্‌ বলছেন, “যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন, যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের অপবিত্রতা। আর যাতে করে সুরক্ষিত করে দিতে পারেন তোমাদের অন্তরসমূহকে এবং তাতে যেন সুদৃঢ় করে দিতে পারেন তোমাদের পা গুলো। যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব।

কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়। যেহেতু তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের, সেজন্য এই নির্দেশ। বস্তুতঃ যে লোক আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্য হয়, নিঃসন্দেহে আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর”। ( আনফাল ১১-১৩ ) · আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “ জিহাদের ময়দানে তন্দ্রা অনুভব করা হল আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা, আর সালাতে তন্দ্রা অনুভব করা শয়তানের পক্ষ হতে”। আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “উহুদের যুদ্ধের দিন আমার চক্ষে এত বেশী তন্দ্রা এসেছিল যে, আমার হাত হতে তরবারী বারবার ছুটে গিয়েছিল”।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি চক্ষু উঠিয়ে দেখি যে, প্রায় সবারই ঐরূপ অবস্থাই ছিল’। হযরত যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, ‘ঐ কঠিন ভয়ের সময়েও আমাদেরকে এত ঘুম পেয়ে বসে যে, আমাদের চিবুকগুলো বক্ষের সাথে লেগে যায়’। · সাহাবাগণ তাদের চোখের সামনে মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছিলেন, মাথার উপর তরবারীর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন, এরপরও তাদের তন্দ্রা ভাব এসেছিল। এটা আমাদের জন্য যথেষ্ট চিন্তা ও ভাবনার অবকাশ প্রদান করে যে, কী ধরণের অসাধারণ শান্তি ও নিরাপত্তার অনুভূতি তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করেছিলেন, আর এ ধরণের নিরাপত্তার অনুভূতি কেবলমাত্র আল্লাহই প্রদান করতে পারেন। দুনিয়ার কোন প্রশিক্ষণ, প্রস্তুতি, কোন কিছুই একজন মানুষকে এ ধরণের অনুভূতি প্রদান করতে পারে না।

এটা আল্লাহর পক্ষ হতে, একজন মুমিনের জন্য উপহার। · প্রতিশ্রুতি-১৮ ক্ষমা-মাগফিরাত আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন”। [সূরা মায়িদা ৯] · প্রতিটি ব্যক্তির প্রয়োজন, আল্লাহর ক্ষমার। আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হচ্ছে তিনি সবার চেয়ে বেশি ক্ষমাশীল। কাজেই ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ একজন বিশ্বাসীকে ক্ষমা করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহর নিকট আন্তরিকভাবে তাওবা করতে থাকে আর ক্ষমা ভিক্ষা করে।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা যুমার ৩৯:৫৩] · আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্ত সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে। এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেন: তার ছোট পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর, বড় পাপগুলো গোপন রাখ, অতঃপর তাকে বলা হবে: তুমি অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ, অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ।

তিনি বলেন: অতঃপর তাকে বলা হবে: তোমার জন্য প্রত্যেক পাপের পরিবর্তে একটি করে নেকি। তিনি বলেন: অতঃপর সে বলবে: হে আমার রব আমি অনেক কিছু করেছি এখানে তা দেখছি না”। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি হাসতে, এমনকি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। [মুসলিম ও তিরমিযি] প্রতিশ্রুতি-১৯ আল্লাহ তাদেরকে পূর্ণ মূল্য প্রদান করবেন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে। তাদের প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে দেয়া হবে।

আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না। ” [আলে ইমরান ৫৭] · আল্লাহ আপনাকে আপনার প্রতিটি কাজের মূল্য প্রদান করবেন, কোন সামান্য খুঁটিনাটি কিছুই বাদ যাবে না। কোন সিস্টেম লস নাই। · “যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না।

” [আর রাহমান ৬০] প্রতিশ্রুতি-২০ কোন ভয় নেই, কোন অবসাদ নেই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। ” [সূরা বাকারাহ ২৭৭] · আব্দুস সালাম (একজন আলেম যিনি গত হয়েছেন) (রাহিমাহুল্লাহ) একদা একজন অত্যাচারী শাসকের সাথে সাক্ষাত করতে যান, তার ছাত্রদের সাথে। সেখানে সেই যালিম শাসকের বিরুদ্ধে শুরুতে তিনি ধীরে ধীরে নরম স্বরে কথা বলা শুরু করেন, কিন্তু এরপর তার স্বর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, একসময় আরও চড়া হতে থাকে এবং কর্কশ থেকে কঠিন হতে থাকে, একসময় তিনি সেই অত্যাচারী শাসকের দিকে আঙ্গুল তুলে পর্যন্ত কথা বলতে থাকলেন। এতে তার সাথের ছাত্ররা ভীত হয়ে গায়ে তাদের চাদর জড়িয়ে নিল, কারণ তারা আশংকা করেছিল যেকোন মুহুর্তে তরবারীর আঘাতে তার মাথা কেটে নেয়া হতে পারে।

যখন তিনি কথা শেষ করে বাইরে আসলেন তখন তার শিষ্যরা জানতে চাইলো, কিসে আপনাকে এত উত্তেজিত করলো, কিভাবে আপনি এইরকম অত্যাচারী একজন শাসকের সাথে এভাবে কথা বলতে পারলেন। তিনি উত্তর করলেন, যখন আমি আল্লাহর বড়ত্বের কথা অনুভব করলাম তখন আমার সামনের অত্যাচারী লোকটিকে একটি বিড়ালের চেয়েও ছোট তুচ্ছ মনে হল। · এটা সম্ভব হয়েছিল, কারণ তিনি প্রতিটি বিষয়কে তার যথাস্থানে রেখে বিচার করেছিলেন। · একজন মুমিন হিসেবে আপনাকে এমন পর্যায় অতিক্রম করতে হতে পারে যখন আপনাকে ভয় গ্রাস করবে, কারণ ভয় হচ্ছে একটি সাধারণ মানবিক অনুভূতি। কিন্তু যখন অন্তরে ঈমান পরিপূর্ণ হয় সেখান থেকে ভয় দূরীভূত হয়।

কাজেই আপনার ভয় লাগতেই পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈমানের শক্তি দ্বারা আপনি ভয়কে পরাজিত করতে সক্ষম হবেন। প্রতিশ্রুতি -২১ অন্ধকার হতে আলোতে আনয়ন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।

এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। ”[সূরা বাকারাহ ২৫৭] · আল্লাহ একজন মুমিনকে কুফর তথা অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে বের করে আনবেন, সন্দেহ, দ্বিধাদন্দ, মানসিক অশান্তি এগুলো থেকে বের করে ইসলামের আলোতে প্রবেশ করাবেন, যা সরল, সঠিক আর অনস্বীকার্য সত্য। যখন একজন মানুষকে ইসলামের আলো প্রদান করা হয়, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ভালো ও মন্দের মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা প্রদান করেন, হক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় আর অন্যায়ের মাঝে সে পার্থক্য করতে পারে। এই ধরণের ব্যক্তি তার জীবন পরিচালিত করে আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে, কারণ আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে তার কাছে এই জীবনের বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আর সে সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করতে পারছে। কাজেই এই ব্যক্তি , সে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের পর শুকরিয়া আদায়স্বরূপ এই দুনিয়ার অস্থায়ী ও ভঙ্গুর জীবনের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয় পরকালের স্থায়ী জীবনের প্রতি, যা কখনো শেষ হবে না।

যাদের অন্তর কুফরের অন্ধকারে নিমজ্জিত সে কখনো এই সহজ বাস্তবতা বুঝতে পারে না। আর তাই সে অন্ধকারের যুলমে নিমজ্জিত থেকে অবাধ্যতা আর অবিশ্বাসের অশান্তি বুকে নিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। প্রতিশ্রুতি -২২ আল্লাহ্‌ কখনোই কাফিরদেরকে মুসলমানদের উপর জয়ী হতে দেবেন না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “এবং কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না। ” [নিসা ১৪১] · রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি হাদীসে বলেছেন, “ইসলাম হচ্ছে সর্বদা সব কিছুর উপরে, আর এর উপর কিছু নেই” অর্থাৎ কোন শক্তিই ইসলামকে দমিয়ে রাখতে পারে না। (বায়হাকী) · অথচ যদি আমরা এই প্রতিশ্রুতির বিপরীত দৃশ্য দেখি আর দেখি অমুসলিমরা মুসলিমদের উপরে বিভিন্ন দিকে উঁচু অবস্থানে আছে তাহলে আমাদের আল্লাহর ওয়াদা সম্পর্কে সন্দিহান হওয়া উচিত নয়, বরং আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিত, আমাদের ঈমানের উপর সন্দিহান হওয়া উচিত, আমাদের প্রশ্ন করা উচিত আমরা কি খাঁটি মুমিন না এর বিপরীত।

প্রতিশ্রুতি -২৩ সুরক্ষা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দেবেন। আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না”। [সূরা হাজ্জ ৩৮] · আল্লাহ্‌ মুমিনদেরকে রক্ষা করবেন যদি আপনি একজন মুমিন হয়ে থাকেন তাহলে আল্লাহ্‌ আপনাকে সুরক্ষা প্রদান করবেন, আর কেউ যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এই ওয়াদা সত্য না হতে দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ঈমানে কোথাও সমস্যা রয়েছে। প্রতিশ্রুতি-২৪ একটি সুন্দর জীবন-হায়াতে তাইয়্যেবা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, · “যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত”। [নাহল ৯৭] · ঈমানদার ব্যক্তিদের জীবন হয় খুবই আকর্ষণীয় ও সুন্দর।

সুন্দর জীবন মানে এই নয় যে অর্থ,বিত্ত বৈভবপূর্ণ জীবন। সুন্দর জীবনের একটি বৈশিষ্ট হল তা কখনো একঘেয়ে হয় না, তাতে উত্থান পতন থাকে, সুখ দুঃখ থাকে, আর এই বৈচিত্রের কারণেই জীবন হয় উপভোগ্য। কখনো কখনো কোণ বিত্তবান অবিশ্বাসী কাফিরকে দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়, মনে করে তার হাতেই রয়েছে পুরো দুনিয়া, কিন্তু যা বাইরে থেকে দেখা যায় না তা হচ্ছে মানসিক প্রশান্তি। অথচ দেখা যায়, একজন দরিদ্র মুমিন সদা হাস্যোজ্জ্বল ও প্রশান্ত। তার কোন দুশ্চিন্তা, পেরেশানী নেই।

সে খুবই সুখী। তার যা আছে তাই নিয়েই সে সুখী, যে সে জানেই না যে এর থেকেই ভালো কিছু থাকতে পারে। “একজন মুমিনের উদাহরণ একটি শস্যের মত, থেকে থেকে বাতাস তাকে দোলায়। তদ্রুপ একের পর এক মুসিবত অবিরাম অস্থির করে রাখে মুমিনকে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিকের উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, দুলে না, কাত হয়েও পড়ে না, যতক্ষণ না শিকড় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় তাকে।

” [মুসলিম : ৫০২৪] “একজন মুমিনের ব্যাপারটি সত্যি আশ্চর্জনক, ভালো কিছু অর্জিত হলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়। আর মুসিবতে পতিত হলেওন সে ধৈর্যধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়। ” [মুসলিম : ৫৩১৮] · যখন জেলে আটকে রাখা হয়েছিল তখন ইবন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন , “যদি এই শাসকেরা জানতো আমার অন্তরে কি সুখ আর শান্তি বিরাজ করছে (এই আটক অবস্থায়ও ) , তাহলে তারা আসতো, আর তরবারীর অগ্রভাগ দিয়ে হলেও আমার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতো” · এবং যে আমার স্মরণ (কুর’আ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।