ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না শরৎচন্দ্র তার 'পল্লীসমাজে' বলেছেন, কেউ যদি সমাজে চেঞ্চ আনতে চায় তাহলে তাকে আগে সমাজের মানুষের সাথে মিশতে হবে, তাদের মনোভাব বুঝে ঐ গোষ্ঠীর একজন হয়ে সমাজের ভেতরে থেকেই চেঞ্চের চেষ্টা করতে হবে, এরপরই কেবল আশা করা যায় - মানুষ তাকে গ্রহণ করবে. যাদের মধ্যে চেঞ্চ আনতে চায় সেই জনগোষ্ঠীর বাইরে অবস্হান করে যেমন- উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো শহর থেকে গ্রামে গিয়ে কেউ যদি আশা করে মানুষের মধ্যে চেঞ্চ আনবে.....এটা অসম্ভব. হুমায়ুন আহমেদ স্যার তার সকল লেখা, নাটক ও মুভির মাধ্যমে এটাই করার চেষ্টা করেছেন. গোড়া মনোভাবাপন্ন লোকের সমাজে একাত্নভাবে মিশে গেছেন, এরপর ধীরে ধীরে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন- কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক, মানুষের মনের ভেতরে অনুভূতি জাগ্রত করেছেন, তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছে: এই জিনিসটা গোড়ামী, এক্ষেত্রে চেঞ্চ হওয়া দরকার. উস্তাদ হুমায়ুন প্রথমেই কারো বিরুদ্ধে ডিরেক্ট অবস্হান নেন নি বলেই পেরেছেন কিন্তু হুমায়ুন আজাদ পারেন নি কেননা উনি যাদের মধ্যে চেঞ্চ আনতে চেয়েছেন প্রথম থেকেই সেই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্হান নিয়ে কলম ধরেছেন, তাদের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করেন নি. আমি প্রথমেই যদি কারো শত্রু বনে যাই তাহলে কিভাবে আশা করতে পারি যে সে আমার কথা শুনবে! রোম শহরটা যেমন একদিনে গড়ে উঠে নি তেমনি সমাজেও হঠাৎ করেই চেঞ্চ আসবে না যেটা চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিন. আগে বুঝতে হবে কতটুকু চেঞ্চ মানুষ গ্রহণ করতে পারে, সেইভাবে একটু একটু করে আগাতে হবে ....যেটা করেছিলেন বেগম রোকেয়া, উনি মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুলের ব্যবস্হা করেছিলেন, সহশিক্ষার দাবি তোলেন নি. বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রদূত এই মহিলা সবাইকে বুঝাতে চেয়েছেন, মেয়েরা যদি শিক্ষা-দীক্ষায় জ্ঞান গরীমায় উঁচু আসনে আসীন হয় তখন স্বামীরাই তাদের দ্বারস্হ হবে, অনুরোধ করবে বুদ্ধি দিয়ে বিপদ আপদ থেকে তাকে বাঁচাতে. "কি....... মাইয়্যা মাইনষের কথায় আমি চলমু" পুরুষের এই টেনডেনসির অবসান হবে. এখনও যারা মনে করেন মেয়ে মানুষরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো ঠিক না ! ওখানে গেলে তারা নষ্ট হয়ে যাবে...... তাদের জন্য একটা তথ্য, ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছেলেদের তুলনায় মেয়ে স্টুডেন্টের সংখ্যা বেশি. যদি মনে করেন, ওরা পথভ্রষ্ট আর আমারাই ঠিক তাহলে বলব... আমাদের সমাজ গোঁড়া, আমরা ঘাড়ত্যাড়া তাই সহজে চেঞ্চ হতে চাই না. বাংলার মানুষের মন-মানসিকতায় যতটুকু যা চেঞ্চ এসেছে তা সম্ভব হয়েছে রবী ঠাকুর, শরৎ বাবু, উস্তাদ হুমাযুন আহমেদ, বেগম রোকেয়ার মত কিছু মহীয়শীর কারনেই. হুমায়ুন আজাদ বা তসলিমা নাসরিন উনাদের মত লোকেরা প্রকৃতপক্ষে কোন চেঞ্চ আনতে পারে না বরং সমাজে অরাজকতা তৈরী করে, গোঁড়া মানসিকতার লোকদের আরো ক্ষেপিয়ে দেয়. এজন্যই আমাদের হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠীর মন-মানসিকতা বুঝতে পেরে বহুদিন আগেই কাজী নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলে গেছেন, 'আমাকে বিদ্রোহী বলে খামোখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ এ নিরীহ জাতটাকে আঁচরে কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা, আমার কোনদিনই নেই আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে যা মিথ্যা,কলূষিত,পুরাতন পঁচা,সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের আমি বলি ওদুটোর কোনটাই নয় আমি কেবলমাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি'
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।