ইসলামী শাসনকালের লৌহমানব হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফতকাল। তখন ইরানের একটি প্রদেশের শাসক ছিলেন হরমুজান। হরমুজান একদিকে যেমন অত্যাচারী অপরদিকে ঘোর ইসলাম বিরোধী। মুসলমানদের সাথে তার লড়াই হতো প্রায়ই। লড়াইয়ে পরাজিত হলেই তিনি বিভিন্ন শর্তে সন্ধী করতেন এবং নিজের রাজ্যে ফিরে যেতেন।
কিন্তু এরপর আবার যখনই সুযোগ পেতেন মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করেতেন।
শেষে খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আদেশ দিলেন, হরমুজানকে জীবন্ত ধরে এনে তাঁর মজলিসে হাজির করতে। ইতিমধ্যে এক যুদ্ধে হরমুজান মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেন। খলীফার হুকুম মোতাবেক তাকে বেঁধে খলীফার দরবারে হাজির করা হলো।
খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে লক্ষ্য করে বললেন,
“আপনি আমাদের সাথে বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আর আপনার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই আমাদের বারবার যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে।
ফলে অসংখ্য মুসলিম সৈন্যকে অযথা প্রাণ দিতে হচ্ছে। তাদের অর্থ সম্পদ নষ্ট হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি আপনি ধ্বংস করেছেন। নিরীহ অনেক লোকের উপর আপনি অন্যায়ভাবে অত্যাচার চালিয়েছেন। আপনাকে আর সুযোগ দেয়া যায় না।
আপনার একমাত্র শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পূর্বে আপনার কোন কথা থাকলে বলতে পারেন। ”
হরমুজান ছিলেন খুব সূক্ষবুদ্ধির লোক। সুযোগ পেয়ে তিনি একটি ফন্দী আঁটলেন। তিনি বললেন,
“মহানুভব খলীফাতুল মুসলিমিন, আমার বড়ই পিপাসা পেয়েছে, দয়া করে আমাকে একটু পানি পান করতে দিন।
”
খলীফার নির্দেশে তাকে একটি পাত্রে পানি পান করতে দেয়া হল। সুচতুর হরমুজান পানির পাত্র হাতে নিয়ে তা পান না করে ভীতু ভীতু ভাব দেখাতে লাগলেন এবং ডানে বামে তাকাতে লাগলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, “কি হলো, আপনি পানি পান করছেন না কেন?” তিনি জবাব দিলেন,” আমিরুল মুমিনিন, আমার ভয় হচ্ছে যে, পানিটুকু পান করার আগেই আমাকে হত্যা করে ফেলা হয় কিনা?”
খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “আপনি নির্ভয়ে পান করুন। হাতের পানি পান করার পূর্বে আপনাকে হত্যা করা হবে না। এ ব্যাপারে আপনাকে নিশ্চয়তা দিলাম।
”
হরমুজান আমীরুল মুমিনিনের এ কথা শেষ হবার সাথে সাথেই হাতের পানির পাত্রটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, আর বললেন,
“মহামান্য খলীফা, আপনি নিজেই বলেছেন, হাতের পানিটুকু পান করার আগে আমাকে হত্যা করবেন না। আমি পানি ফেলে দিয়েছি, সে পানি আর পান করবো না। ওয়াদা অনুযায়ী আপনিও আমাকে আর হত্যা করতে পারবেন না। ”
হরমুজানের এ চাতুরীপূর্ণ কথা শুনে মুসলিম সৈনিকেরা খুব রেগে গিয়ে বললেন, ” আমীরুল মুমিনিন, আপনি অনুমতি দিন আমরা এখনই তার চাতুরীর সাধ মিটিয়ে দেই। তাকে এখনই হত্যা করে ফেলবো।
”
কিন্তু খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সকলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “না তা হতে পারে না। মুসলমানের কথার মূল্য অনেক। সুতরাং যে কথা আমি বলে ফেলেছি, যেকোন মূল্যে আমি তা রক্ষা করবই ইনশা’আল্লাহ। যেহেতু আমি তাকে বলেছি, তার হাতের পানিটুকু পান করার পূর্বে তাকে আমি হত্যা করব না, আর সে যখন পানি পান করেনি সুতরাং, বন্দী হরমুজানকে হত্যা করা চলবে না। ”হরমুজানকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, “যান।
আপনি মুক্ত। আমার কথার খেলাফ আমি করবো না। ”
কথার কি অদ্ভুত দাম ! ওয়াদা পালনের কি অপূর্ব নযীর। হরমুজান কল্পনাও করতে পারেননি যে, তিনি এত সহজে মুক্তি লাভ করতে পারবেন। খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মহানুভবতা দেখে তিনি দারুণভাবে প্রভাবিত হলেন।
তিনি ভাবলেন, এই যদি হয় ইসলামের আদর্শ তবে এর থেকে দূরে থাকা হবে আমার জন্যে চরম দুর্ভাগ্যজনক। ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে তিনি সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করে নিলেন।
এমনিভাবেই যুগে যুগে ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
মূল: খন্দকার মুশতাক আহমদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।