বেশি কিছু চাই না, চাই শুধু মনের কথা বলতে উইম্বলডন সেমিফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর নোভাক জকোভিচকে ৬-৩, ৩-৬, ৬-৪, ৬-৩ উড়িয়ে দিতে ফেডেরার কী না করেনি! আগাগোড়া দুর্ধর্ষ সার্ভিস করেছে। দ্বিতীয় সার্ভেও সাফল্যের পার্সেন্টেজ সত্তরের ওপর। অসাধারণ রিটার্ন। প্রতিটা গ্রাউন্ডস্ট্রোকে অবিশ্বাস্য পাওয়ার। দুর্দান্ত কোর্ট কভারিং।
শুক্রবার ফেডেরার, বৃহস্পতিবার সেরেনা পরপর দু’দিন একত্রিশ ছুঁইছুইঁ দুই সিনিয়র মেগাস্টার যে রকম অকল্পনীয় দাপট দেখিয়ে উইম্বলডন ফাইনালে উঠল, তাতে সেই বহু ব্যবহৃত উপমাটাই আবার দিতে হচ্ছে। ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’। অবশ্যই উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে সামান্য হলেও ওরা সাহায্য পেয়েছে। নিজেদের প্রিয় সার্ভ-ভলি আরও ভাল খেলেছে। বিশেষ করে এ দিন বৃষ্টির জন্য অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টের ছাদ ঢেকে ম্যাচ হওয়ায় ফেডেরার সবচেয়ে বেশি লাভবান।
কারণ, এমনিতে ফেডেরারের নামের পাশে সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখা হলেও ইন্ডোরে ও নিঃসন্দেহে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ। অনেকটা তবে র্যাপিড চেসে তর্কাতীত ভাবে সর্বকালের সেরা। ইন্ডোর কোর্টে হাওয়ার ওঠা-নামা না থাকায় ফেডেরার বল কন্ট্রোলে অন্য সব টেনিস প্লেয়ারের চেয়ে বেশি সুবিধে পায়। এ দিন জকোভিচের ২১টা আনফোসর্ড এররের পাশে ফেডেরারের নেটে বা কোর্টের বাইরে মারা শটের সংখ্যা মাত্র ৯টা। কমেন্ট্রি বক্সে বরিস বেকার থেকে শুরু করে রয়্যাল-বক্সে রড লেভার থেকে সচিন তেন্ডুলকর প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিলেন, নোভাক-রজারের ২৭ বার সাক্ষাতের মধ্যে শুক্রবারই প্রথম ঘাসের কোর্টে লড়াই হলেও কেরিয়ারের প্রত্যন্তে পৌঁছে যাওয়া ফেড-এক্স পারবে না।
কিন্তু উইম্বলডনে ফেডেরার যে কী ভয়ঙ্কর, সেটা হাড়েহাড়ে বুঝল জকোভিচ। ১-১ সেট অবস্থায় তৃতীয় সেটে ৪-৪, ৩০-৪০ পয়েন্টে জকোভিচ একটা ব্রেকপয়েন্ট পেয়েছিল। ওটা জিতে গেলে ম্যাচের ভাগ্যে শেষমেশ কী ছিল বলা মুশকিল। কিন্তু ফেডেরার পরের তিনটে সার্ভিস অনবদ্য ‘ডিপ’ করে ৫-৪ এগিয়ে যাওয়ার পরে আর বিশেষ সন্দেহ ছিল না যে, আজ কে শেষ পর্যন্ত জিতবে? ফেডেরারের কেরিয়ারেরই আজ একটা বিশেষ দিন ছিল যেন।
মহাগুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় সেট জিতে ২-১ এগোতেই ফেডেরার যে ভাবে কোর্টে বজ্রমুষ্টি ছুড়ে চিৎকার করে উঠল তাতেই পরিষ্কার, এ দিন ও কী পরিমাণ উত্তেজিত আর মরিয়া হয়ে লকার রুম থেকে বের হয়েছিল! ফেডেরারের এই বডি ল্যাঙ্গুয়েজের সঙ্গে টেনিস দুনিয়া পরিচিত নয়।
ছ’বারের চ্যাম্পিয়ন আগের দু’বছর কোয়ার্টার ফাইনালেই হারায় এ দিন বিশ্বসেরা প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে যেন নেমেইছিল ‘মারব নয় মরব’ মনোভাব নিয়ে। যে জন্যই ওকে প্রথম পয়েন্ট থেকে এত আক্রমণাত্মক দেখিয়েছে।
এর পরে রবিবারের ফাইনালে ফেডেরার ছাড়া কাউকে ফেভারিট ভাবতে পারছি না। জো সঙ্গা না হয়ে অ্যান্ডি মারে সামনে পড়ায় ফেডেরারের মনে হয় সুবিধেই হবে। মারে পরের সেমিফাইনালে জিতল ৬-৩, ৬-৪, ৩-৬, ৭-৫।
সঙ্গার কাছে গত বছরই এখানে দু’সেট এগিয়ে থেকেও ম্যাচ হেরেছিল ফেডেরার। সেক্ষেত্রে ফেডেরারের মনে খচখচানি একটা থাকতই। মারের বিরুদ্ধে সেটা তো থাকছেই না। বরং মারের ওপর গোটা ব্রিটেনের চাপ। ফ্রেড পেরি-র ৭৬ বছর পরে প্রথম ঘরের ছেলে হিসেবে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাহাড়প্রমাণ চাপ।
মারের আগে শেষ ব্রিটিশ পুরুষ (বানি অস্টিন) উইম্বলডন ফাইনালই তো খেলেছিল ৭৪ বছর আগে!
পাঁচ বছরের ছোট জকোভিচকে হারানোর পথে ফেডেরার একটা সারসত্য বুঝিয়েছে‘ক্লাস’ চিরন্তন। যার কাছে বয়সের চ্যালেঞ্জও বেপাত্তা। রবিবার পঁচিশের মারের বিরুদ্ধেও ফেডেরার একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যদিও ফাইনালে জোড়া মোটিভেশন ফেডেরারকে আরও বেশি তাতিয়ে রাখবে।
এক) সাত বার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়ে পিট সাম্প্রাসের সর্বকালের রেকর্ড ছোঁয়া।
দুই) ফাইনালে জিতে বিশ্ব র্যাকিংয়ে আবার এক নম্বরে উঠে আসা।
একটা নজির তো এ দিনই ফেডেরার গড়েছে। উইম্বলডনের ইতিহাসে প্রথম পুরুষ হিসেবে ৮ বার ফাইনালে উঠে। গোটা লন্ডন যখন ভিজছে, টানা বৃষ্টিতে উইম্বলডনের আঠারোটা কোর্টেই যখন নীল কভার টানা, তখন ছাদ ঢাকা সেন্টার কোর্টে রোদ ঝলমল করে গেল ঝাড়া সওয়া দু’ঘণ্টা! যার নাম রজার ফেডেরার। টেনিস-সূর্য!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।