" কেউ তোমার দিকে পাথর ছুড়ে মারলে , তুমি তার দিকে ফুল ছুড়ে মারো...তবে ফুলের সাথে সাথে ফুলের টবটাও ছুড়ে মারতে যেন ভুল না হয় "
কোন মেয়েই পতিতা হয়ে জন্মায় না । আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা , পক্ষপাতদুষ্ট সামাজিক নিয়ম, পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাব ইত্যাদি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েই একটা মেয়ে বেছে নিতে বাধ্য হয় এই ঘৃণিত পতিতার জীবন । এটা কোন মেয়েরই কাম্য জীবন নয় । একটা মেয়ের পতিতা হয়ে উঠার পেছনের কাহিনী যাই হোক এটা ঠিক যে কোন মেয়েই স্বেচ্ছায় পতিতার জীবন বেছে নেয়না । পতিতা পেশায় নিয়োজীত একজন নারীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনি কেন এই পতিতা জীবন বেছে নিয়েছেন ? সে যা বলল তার সার সংক্ষেপে হলো এই রকম, স্বামী বিয়ের পর দুবাই চলে গেছে।
স্বামী প্রথমে তার খরচ চালালেও পড়ে আর চালায়নি। এক সময় স্বামী আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমার ২ টা সন্তান রয়েছে যারা ভালো দামী স্কুলে পড়াশুনা করে। বর্তমানে মেয়ে ক্লাশ ফাইভে পড়ে ও ছেলে ক্লাশ ওয়ানে পড়ে। অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন নিজের জীবন বাচানো এবং ছেলে মেয়েদের মানুষ করার জন্যই এক বান্দবীর সহযোগীতায় এই পথ বেছে নিয়েছি।
শুধু মাত্র টাকার জন্যই এই কাজে নামা। আমার মেয়েকে যেন এই কাজ করতে না হয় সে জন্যই এই পথে নেমে নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে সন্তানদের মানুষ করছি।
এবার একটু চিন্তা করে দেখুন এই পথ বেছে নেওয়ার পিছনে কে দায়ী ?
প্রায় সব সময়ই যে বা যারা এই মেয়েদেরকে অন্ধকার পতিতার জীবনে ঠেলে দিচ্ছে তারা রহস্যময় ভাবে থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে । যে পুরুষটি তাকে ব্যবহারের মাধ্যমে পতিতার সীলমোহর লাগিয়ে দিচ্ছে সেও সমাজের বুকে কোন নারীর সন্তান, ভাই, স্বামী বা বাবা হিসেবে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । সমাজের কাছে আজ একটা প্রশ্ন “আমরা অবিধানে কেন পতিতা, গনিকা বা বেশ্যা এগুলোর পুরুষলিঙ্গ কোন শব্দ যোগ হচ্ছে না ” কেন অন্যের কৃত কর্মের দায় শুধুমাত্র মেয়েদেরকেই একা বয়ে বেড়াতে হবে ? এমন কয়জন পুরুষ আছেন যিনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে কোনো মেয়ের দিকে কামার্ত দৃষ্টিতে তাকাইনি, কোন মেয়েকে নিয়ে কুচিন্তা করেনি , বিবাহ পূর্ব কোনো মেয়েকে স্পর্শ করেনি ।
যদি বলতে পারেন তাহলে আমি মেনে নিব যে সকল দোষ শুধু নারীদের বেলায়।
একজন ধর্ষিতা কে সকল মানুষ খুব নিচু দৃষ্টিতে দেখে, একজন ধর্ষিতা সমাজে মাথা উচু করে চলতে পারে না। যে সমাজ মেয়েটিকে নিরাপত্তা দিতে পারল না , তার প্রতি হয়ে যাওয়া অন্যায়ের সুবিচার করতে পারল না, তাহলে তাদের কি অধিকার আছে এই মেয়েটির দিকে আঙ্গুল তোলার। সাধারন মেয়েরা সমাজের এক শ্রেনীর পুরুষ দ্বারা নির্যাতিত হয়েই পতিতা বৃত্তির দ্বার খুলে।
পতিতাবৃত্তি নিঃসন্দেহে একটা অমানবিক বৃত্তি।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচুর শিশু বাধ্যতামূলকভাবে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হাজার হাজার মেয়ে শিশু এ জাতীয় অমানবিক পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। সেসব মেয়ে শিশু পায় না লেখাপড়া ও খেলাধুলাসহ অন্যান্য সুযোগ। বড় হওয়ার আগেই তারা বাধ্যতামূলকভাবে জড়িয়ে পড়ে পতিতাবৃত্তির মতো অমানবিক পেশায়।
পতিতাবৃত্তি কোনো অর্থেই পেশা নয়।
এটি শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। এই পতিতাবৃত্তিতে মেয়েদের দারিদ্র্য ঘোচে না। কোটি কোটি টাকা যা আয় হচ্ছে যৌন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে, সেসব টাকা নির্যাতিত মেয়েদের হাতে পৌঁছে না। মেয়েদের প্রতিদিন নারী পাচারকারী, আর দালালের ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়। মেয়েরা এই যৌন নির্যাতন থেকে বেরোতে চায়, কিন্তু তাদের বেরুতে দেয়া হয় না।
পছন্দমতো কোনো পেশা বেছে নেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই।
পুরুষের যৌনক্ষুধা মেটাতে, পুরুষের শরীরকে কিছুক্ষণের জন্য পুলক দিতে লক্ষ কোটি অসহায় মেয়ে ও শিশুকে বেঁচে থাকার সর্বসুখ বিসর্জন দিতে হচ্ছে, তিলে তিলে করে কামড়িয়ে খাচ্ছে তাদের দেহকে, মানুষ হয়েও মানুষের ন্যূনতম অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হতে বাধ্য হচ্ছে।
মানুষের ওপর ঘৃণ্য আর অমানবিক নির্যাতনের কারণে ক্রীতদাসপ্রথা আজ বিশ্বে নিষিদ্ধ। কিন্তু কী কারণে পতিতাপ্রথাকে আজো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না? আজ তারা চরম বিপদের দিনে গজবের মাঝে পড়ে হাবু-ডুবু খাচ্ছে, কে দেবে এই গজবের হাজ থেকে রেহাই, কে দিবে এর পূর্ণ সুষ্ঠ সমাধান? আপনার বিবেক কি এখনো ঘুমিয়ে থাকবে ? আপনার চোখের সামনে কি বিলীন হয়ে যাবে পতিতা নাম ধারী কিছু মানুষের জীবন ? মানুষ হিসেবে আপনার কি কোন নৈতিক দায়িত্ব নেই অন্য মানুষের প্রতি ?
তাদের জন্য যদি কিছুই করতে না পারেন, অন্তত চোখ বন্দ করে একবার তাদের কে আপনার আপন বোন ভেবে দেখুন তো কতটুকু কষ্ট পেতেন আপনি, নর্দমায় পড়ে থাকা মেয়েটা যদি আমার বোন হত তাহলে আপনি কি পারতেন তাদের বোবা কান্নার ডাকে সারা না দিতে ?
আমাদের শুসিল সামাজ তাদের কে নাম পাল্টিয়ে যৌনকর্মী নাম দিয়েছে। যা দিয়ে বুজানো হয়েছে এটা তাদের কাজ, কিন্তু পতিতা পতিতাই তার নাম পরিবর্তন করলেই তার সংজ্ঞা পাল্টে যায় না।
কোন মেয়ের কি স্বপ্ন থাকে যে আমি একজন যৌনকর্মী হব ? তারা নির্যাতিত হচ্ছে সমাজের সুশিল ব্যক্তিদের দ্বারাও ?
পতিতাপ্রথাকে বৈধ করা মানে নারী নির্যাতনকে বৈধ করা। যে রাষ্ট্রে পতিতাপ্রথা বৈধ, সেই রাষ্ট্র কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। গণতন্ত্র মানবাধিকার নিশ্চিত করে, নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে। কোনো সভ্যতা বা কোনো গণতন্ত্র মানুষের ওপর নির্যাতনকে ছলছুতোয় মেনে নেয়ার চেষ্টা করে না। করতে পারে না।
যদি করে, সেই গণতন্ত্রের নাম নিতান্তই পুরুষতন্ত্র, আর সেই সভ্যতার নাম বর্বরতা ছাড়া অন্যকিছু নয়। আর এই বর্বরতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে ধর্মীয় অনুশাসন ছাড়া তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের নৈতিক অবয় রোধ করা সম্ভব নয়। এ ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি যদি অচিরেই দূর করা না যায় তবে আমরা নৈতিকতা বিবর্জিত জাতিতে তথা সর্বনাশা ধ্বংসাবর্তে নিপতিত হব।
আল্লাহর রাসুর (সঃ) নির্যাতিত মেয়েদের কে নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের কে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে গিয়ে একের অধিক বিয়ে করে ছিলেন, আমরা তার আদর্শের অনুসারি হয়ে, কোন ভাই কি পারেননা একজন পতিতা বা একজন ধর্ষিতাকে বিয়ে করে একটি প্রান কে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি করে আকজন আদর্শ সৈনিক হিসেবে মাথা তুলে দাড়াতে। আসুন আমরা তাদের বিবাহ বন্ধনের সুষ্ঠ ব্যবসস্থা করে জগত কে শান্তির রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলি ।
বাংলাদেশের পতিতা নিয়ে এই প্রতিবেদনটি দেখুন : youtube.com
লেখার সকল কৃতজ্ঞতাঃ রুমানা আখতার টুম্পা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।