আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অজেয় স্পেন নাকি অদম্য ইতালি

আমি উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথা বলতে চাই অজেয় স্পেন নাকি অদম্য ইতালি ইতিহাস ডাকছে স্পেনকে। কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দিতে ইতালি নামের এক এভারেস্ট জয় করতে হবে লা রোজাদের। অজেয় স্পেন কি পারবে অদম্য ইতালির বাধা পেরিয়ে ইতিহাসের আলিঙ্গনে ধরা দিতে? নাকি সর্বজয়ী স্পেনকে স্বর্গচ্যুত করে ইউরোপের রাজা হবে ইতালি? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ। পৃথিবীর সব পথ আজ গিয়ে শেষ হবে কিয়েভে। ইউক্রেনের রাজধানীতে মঞ্চায়িত হবে ইউরোর শেষ দৃশ্য।

স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনাল। গ্র“পের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হওয়া দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী স্পেন ও ইতালিই আজ শিরোপার জন্য লড়বে। ফুটবল রোমান্টিকরা তাদের মনের ক্যানভাসে আবেগের রঙ আর কল্পনার তুলি দিয়ে ফাইনালের যে ছবিটি এঁকেছিলেন, বাস্তব ছবিটা তার সঙ্গে হয়তো মিলছে না। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ফাইনালে ধ্রুপদী ফুটবলের আশা করাই যায়। ইতালির ফাইনালে ওঠাটা বিস্ময়কর হলেও অযৌক্তিক নয়।

টুর্নামেন্টে সেরা ফুটবল খেলেই স্বপ্নপূরণের শেষ ধাপে পা রেখেছে আজ্জুরিরা। ইংল্যান্ডের কাগুজে-সিংহ কিংবা জার্মানির যন্ত্রদানবরাও পারেনি তাদের বিস্ময় যাত্রায় ছেদ টানতে। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা অপেক্ষা করছে আজ। ফাইনালে খেলাটা প্রায় অভ্যাসে পরিণত করা স্পেনের এটি টানা তৃতীয় ফাইনাল। অন্যদিকে ইউরো মঞ্চে এক যুগ পরে ফাইনালে উঠেছে ইতালি।

আজ তাদের লড়তে হবে চাপের সঙ্গেও। তবে সেই চাপকে প্রেরণা বানিয়ে লাল ঝড় থামাতে প্রস্তুত ইতালি। লা রোজারাও প্রস্তুত নীলকে বিষাদের রঙ বানাতে। কিন্তু ইতালি বর্ণের জন্য স্পেনের ঘুমন্ত দৈত্যদের এবার জেগে উঠতে হবে। অন্যথায় নীল বিষে তাদের সোনালি স্বপ্নের অপমৃত্যু হতে পারে।

তখন ‘বিস্কুট’ না খাওয়ার জন্য হয়তো আফসোস করবেন স্পেনের কোচ ভিসেন্তে ডেল বস্ক। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে স্পেনকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল ইতালি। কিন্তু শেষ ম্যাচে ইতালির ভাগ্য ছিল স্পেনের হাতে। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে স্পেন ২-২ গোলে ড্র করলে পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হতো ইতালিকে। কিন্তু ইতালিকে ল্যাং মারার জন্য ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে কোন গোপন সন্ধি তথা বিস্কুট তত্ত্বের শরণাপন্ন হয়নি স্পেন।

ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে আজ্জুরিদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল লা রোজারা। কে জানত ফাইনালে সেই ইতালির মুখে পড়তে হবে তাদের। তবে ডেল বস্ক পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ‘বিস্কুট’ না খাওয়ার জন্য কখনও আফসোস করবেন না তারা। ‘বিস্কুট না খাওয়ার জন্য কখনোই আফসোস করব না আমরা। আমাদের যা করা উচিত ছিল, আমরা তাই করেছি।

ফাইনালে নিজেদের অস্ত্র নিয়েই লড়ব আমরা। নিজেদের স্টাইলের সঙ্গে কোন আপস করব না’, বলেছেন ডেল বস্ক। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হওয়া দু’দলের ফাইনালে ওঠার চতুর্থ নজির এটি। সর্বশেষ ২০০৪ ইউরোতে একই গ্র“প থেকে ফাইনালে ওঠার পর পর্তুগালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গ্রিস। সেবার প্রথম ম্যাচেও জিতেছিল গ্রিস।

কিন্তু এবার প্রথম ম্যাচের হিসেবে দুই ফাইনালিস্টের অবস্থান সমান্তরালে। টানা তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে ইউরো অভিযান শুরু করেছিল ইতালি। কিন্তু প্রথম ম্যাচ থেকেই অন্য ঘরানার ফুটবল খেলছে আজ্জুরিরা। শুধু দাঁত কামড়ে রক্ষণদুর্গকে না সামলে উল্টো আক্রমণের ঝড় তুলে প্রতিপক্ষকে বেসামাল করে দিয়েছে তারা। সেমিফাইনালে হট ফেভারিট জার্মানিকে এক রকম উড়িয়েই দিয়েছে ইতালি।

পিরলো, কাসানো, বুফনদের অসাধারণ ধারাবাহিকতার পাশাপাশি একদম ঠিক সময়েই জ্বলে উঠেছেন আক্রমণ ভাগের প্রাণভোমরা মারিও বালোতেল্লি। জার্মানির বিপক্ষে জোড়া গোল করার পর ফাইনালে চার গোল করার হুংকার দিয়েছেন ইতালির এই খ্যাপাটে স্ট্রাইকার। বালোতেল্লির জন্যই তাই আলাদা রণকৌশল ঠিক করতে হচ্ছে স্প্যানিশদের। বালোতেল্লিকে নিয়ে উদ্বেগ গোপন করেননি সেস ফ্যাব্রিগাসও। তবে স্পেনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি আন্দ্রে পিরলো।

বদলে যাওয়া ইতালির নীরব নেতা। ইতালি চ্যাম্পিয়ন হলে হয়তো ব্যালন ডি’অরও জিতবেন এই জুভেন্টাস গ্রেট। পিরলোর কারণেই ইতালির মাঝমাঠকে নিখুঁত বলছেন ডেল বস্ক। প্রতিপক্ষকে সমীহ করছেন ইতালির কোচ সিজার প্রানদেল্লিও। তবে স্পেনকে ফেভারিট মেনে নিয়েই তিনি বলেছেন, ‘স্পেনই ফেভারিট।

কারণ, দীর্ঘদিন ধরে তারা ভালো খেলছে। কিন্তু স্পেনকে আমরা ভয় পাচ্ছি না। আমরা তাদের দুর্বলতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কাজটা সহজ নয়। কিন্তু আমরা প্রস্তুত।

’ কাগজে-কলমে স্পেনের প্রথম একাদশের সবাই তারকা। কিন্তু ইনিয়েস্তা ছাড়া এখনও কেউ নিজেদের খেলাটা খেলতে পারেননি। এজন্য ডেল বস্কের অভিনব ফরমেশনকে দায়ী করছেন অনেকে। ‘ফলস নাম্বার নাইন’ দিয়ে স্ট্রাইকারের কাজ চালাচ্ছেন তিনি। কিন্তু শুধু মিডফিল্ডারদের দিয়ে শিরোপা জেতা খুবই কঠিন।

দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার ফার্নান্ডো টরেসকে বসিয়ে রেখে ফ্যাব্রিগাসকে আক্রমণ ভাগে খেলাচ্ছেন ডেল বস্ক। সেমিফাইনালে খেলিয়েছেন নেগ্রেদোকে। আজ হয়তো ফার্নান্ডো লরেন্তেকে মাঠে নামিয়ে দেবেন। কারণ, ডেল বস্কের কাছে মাঝমাঠই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিষ্প্রভ আক্রমণ ভাগের জন্য স্পেনের পাসিং ফুটবল এখন অনেকের কাছেই একঘেয়ে লাগছে।

কিন্তু যে যাই বলুক না কেন, নিজেদের দর্শনের সঙ্গে কোন আপস করবে না লা রোজারা। এভাবে খেলেই ২০০৮ ইউরো ও ২০১০ বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। এবার তাদের সামনে ঐতিহাসিক ত্রিমুকুট জয়ের হাতছানি। গতবার ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতেছিল স্পেন। কিন্তু হেড-টু-হেডে ইতালিই এগিয়ে।

দু’দলের আগের ৩০ ম্যাচের দশটিতে জিতেছে ইতালি আর স্পেন আটটিতে, বাকি ১২টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। টাইব্রেকার ছাড়া ১৯২০ সালের পর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ইতালিকে কখনও হারাতে পারেনি স্পেন। কিন্তু পরিসংখ্যান যাই হোক স্প্যানিশ সমর্থকদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। ফাইনালের জন্যই হয়তো সেরাটা তুলে রেখেছে লা রোজারা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।