হৃদয়ের কথা সূর্যের মত যদি না বলিস ডুবে যাবে সন্ধার জলে...
অনেকে মানে করেন নেতিবাচক কিছু করেও জনপ্রিয় হওয়া যায়। আসলে কি তাই?
নেতিবাচক কিছু করে আপনি একজন সমালোচিত কিংবা ঘৃনিতই হতে পারেন কিন্তু এটাকে জনপ্রিয়তা বলেনা। জন-মানুষের প্রিয় বলতেই জনপ্রিয় বুঝায়। আলোচিত ব্যাক্তিকেই মানুষ মনে রাখে, সমালোচিত ব্যাক্তি সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায়।
২২ই জুলাই ২০১০ এ আমার প্রথম লেখা প্রকাশ করি সামহোয়ারইন ব্লগে।
তার আগে আমি বেশ কিছু ব্লগে নিয়মিত অনিয়মিত পাঠক ছিলাম। একটা সময় নিজের অনুভুতিগুলো শেয়ার করার জন্যই এই ব্লগে লেখালেখি করার সাহস করি। মুলত শুধু এটা যাচাই করার জন্যই যে আমার চিন্তাধারার সাথে অন্যদের কতটা মিল বা অমিল। বেশীর ভাগ সময় মিল পেলেও মতের অমিল যে পাইনি তা নয়। তাবে সেখান থেকে আমি নিয়মিত শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছি।
মুল কথায় আসি-
আমি যখন ব্লগিং শুরু করি তখনকার পরিচিত অনেকেই এখন নেই। অমিও বেশ কিছু দিন লেখালেখি বন্ধ রেখেছিলাম। একটা সময় ব্লগে আসাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এর একটা কারন ব্লগের পরিবেশ। তবে এটা করে যে নিজেকে অনেক ভাল লেখা পড়া হতে বঞ্চিত করছি এটা বুঝতে পারতাম।
কিন্তু রাগ বা ক্ষোভ যাই বলেন হয়ত সে জন্যই আসতে ইচ্ছে হলেও গুরুত্ব দিতামনা। তবে পুরোনো অনেকে না থাকার বড় কারন হয়ত এটি একটি কিন্তু অনেকেই হয়ত কর্মব্যাস্তাত বা অন্য কারনেও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। যাইহোক তাতে ব্লগার কমে যাচ্ছে এটা নয় প্রতিদিনি নতুন নতুন ব্লগার যোগ হচ্ছে, কিছু ভাল লেখাও দেখতে পাই। কিন্তু যে পরিমান ব্লগার ব্লগিং করছে সে পরিমান মানসম্মত ব্লগিং হচ্ছে মানতে পারছিনা। বিশেষ করে ভাষার ব্যাবহার, বিশ্লেষনমূলক, গবেষনামূলক লেখা কিংবা মন্তব্য প্রকাশে সচেতনতা বা সাবধানতা এই ব্যাপার গুলো খুব অভাব বোধ করছি।
ব্লগিং করলে শুধু লিখতে হবে এ ধারনাটা ঠিক নয়। মতের অমিল থাকতেই পারে তবে অন্য ব্লগারের ব্লগে আপনি শুধু যৌক্তিক, বিশ্লেষনমূলক ও যথার্থ মন্তব্য করেও জনপ্রিয় হতে পারেন।
উল্লেখ্য বেশ কিছু দিন আগে আমি অন্য একটি ব্লগসাইটে আইডি খুলি আমার ভাল লেখা গুলো শেয়ার করার জন্য। সেই ব্লগে একদিন একটি লেখা পোষ্ট করি, কিন্তু সেই ব্লগে আমার স্থায়িত্ব মাত্র কয়েকঘন্টা তার পর আমার পোষ্ট মুছে দেই। এর একটাই কারন ব্যাক্তিগত আক্রমন, নোংরা ভাষা ব্যাবহার যা আমার অত্মসন্মানে আঘাত করেছে বলেই সেখানে আর দ্বিতীয়বার প্রবেশ করার প্রয়োজন বোধ করিনি।
ব্লগিং যে ভাবে শুরু করবেন-
প্রথম পদক্ষেপঃ
প্রথমে বেশ কিছুদিন ব্লগ পড়ুন, ভাল লিখাগুলোর প্রতি নজর রাখুন। বিতর্কিত লেখাগুলোও পড়ুন। মন্তুব্য গুলো কে কিভাবে দিচ্ছে এবং লেখক কিভাবে মন্তুব্য গুলোর উত্তর দিচ্ছে সেগুলোও লক্ষ করুন। মনে মনে নিজেও মন্তুব্য দিন কিন্তু সেটা প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। অন্যদের মন্তুব্যের জায়গায় আপনি হলে কিভাবে মন্তুব্য করতেন এ ব্যাপারে নিজের মতামত তৈরী করুন এবং নিজের মধ্যেই রাখুন।
লেখকের অন্যদের মন্তব্যের প্রতিউত্তরে নিজেকে প্রতিস্থাপন করুন। কোন লেখা আপনার চিন্তাধারার সাথে মিল থাকলে মনে করুন লেখাটি আপনিই লিখেছেন এবং অন্যদের মন্তব্যের জবাব কিভাবে দিবেন তা মনে করুন এবং কোন লেখা আপনার চিন্তাধারার সাথে অমিল থাকলে মনে করুন আপনি কিভাবে মন্তব্য করবেন। এভাবে বিভিন্ন লেখা পড়া এবং পোষ্ট গুলো নিয়ে গবেষনা করার চেষ্টা করুন।
দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ আপনি যদি মানে করেন যে এখন আপনি কিছু লিখতে পারবেন বা সরাসরি মন্তব্য করতে সাহস পাচ্ছেন তখন একটি আইডি খুলুন। তবে আপনার ব্লগটি যেহেতু নতুন সেহেতু একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রথমে অন্যের ব্লগে মন্তব্য করার অনুমতি এবং পরে প্রথম পাতায় আপনার ব্লগ প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন।
এই সময়টুকুই আপনি প্রস্তুতি হিসাবে সুযোগ নিবেন বা নিজেকে ব্লগিং করার উপযোগী করে তুলবেন। অন্যান্য ব্লগসাইটে অন্যরকম হতে পারে। আবার আপনি নিজেও আলাদা ব্লগ খুলতে পারেন। তবে আমি সামহোয়ারইন বা এ ধরনের মডারেটর ব্লগিং সাইট গুলোর কথাই বলছি। এ ধরনের ব্লগিং সাইট গুলোতে এক সাথে অনেক ব্লগার পাওয়া যায় তাই আলাদা প্রচার করতে হয়না, এ জন্যই এ ধরনের ব্লগ পোর্টল গুলো জনপ্রিয়।
যেহেতু আপনি নতুন ব্লগার সেহেতু আপনার ব্লগে আপনি ব্লগ লিখতে পারবেন। তবে তখন অল্প সংখ্যক ব্লগারই আপনার ব্লগটিতে প্রবেশ করবে, এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই যেহেতু আপনি প্রক্রিয়াটি জানেন। এবার আপনি আপনার চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটান। সময় নিয়ে আপনার প্রিয় কোন বিষয় নিয়ে ছোট ছোট করে কিছু লিখুন এবং আপনার ব্লগে প্রকাশ করার পূর্বে কয়েকবার পড়ুন, ব্লগে প্রকাশ করে এডিট করার চেয়ে আগেই এডিট করুন। এবার আপনার মন মত হলে প্রকাশ করুন।
যেহেতু আপনি নতুন ব্লগার এবং আপনার লেখাটি খুব কম সংখ্যক ব্লগারেরই চোখে পরবে, সেহেতু আপনার বন্ধু মহলে কিংবা পরিচিত কাউকে দেখান সমম্ভব হলে তাকে মন্তব্য লিখতে বলুন। লিখাটি যদি একান্তুই মানসম্মত মনে হয় তবে লিংক শেয়ার করতে পারেন। এর মধ্যে কেউ আপনার লেখায় মন্তব্য করলে মন্তব্যটি গুরুত্ব দিয়ে প্রতিউত্তর দিন। তবে এ সময়টাতে ব্লগের ভাল লেখা গুলোও পড়ুন এবং অন্য ব্লগারের ব্লগ ঘুরে ঘুরে দেখুন।
তৃত্বীয় পদক্ষেপঃ এর মধ্যে যদি আপনি অন্যের ব্লগে মন্তব্য করার অনুমতি পেয়ে যান তবে কোন লেখায় মন্তব্য করার আগে ভাবুন।
ভাল লিখা হলে কিংবা আপনার মতের সাথে মিল থাকলে ভাল মন্তব্য লিখুন, লেখককে উৎসাহিত করুন। মনে রাখবেন আপনার একটি ভাল মন্তব্য কিংবা উৎসাহ আরেকটি ভাল লেখার জন্ম দিতে পারে। এবং অনুরুপ ভাবে আপনার একটি খারাপ মন্তব্য অনেক গুলো ভাল লেখার মৃতু ঘটাতে পারে। এমনকি একজন ব্লগারকে ব্লগিং বিমুখও করতে পারে। কোন লেখায় আপনার মতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক সুতরাং মিল অমিলের ব্যাপারটি বুঝিয়ে লিখুন।
প্রয়োজনে রেফারেন্স বা এভিডেন্স উল্লেখ করতে পারেন। কিন্তু কোন কিছুই যেন ব্যাক্তিগত আক্রমন না হয়। মন্তেব্যে ভাষা ব্যাবহারে অনেক বেশী সচেতন হউন। আমাদের প্রিয় ভাষা কলুষিত হয় এমন ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। লেখকের ভিতর যেন আপনার প্রতি নেতিবাচক ধারনা না জন্মায় এ ব্যাপারে সচেতন থাকুন।
কারন এই লেখক যখন আপনার ব্লগে প্রবেশ করবে তখন তিনিই কিন্তু একজন পাঠক। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারোর লেখা ভাল লাগলে তাহার ব্লগে গিয়ে পূর্বের লেখা গুলোও পড়ার চেষ্টা করি এবং লেখক সমন্ধে ধারনা নেয়ার চেষ্টা করি। আর আপনি যদি মনে করেন যে আপনি লিখবেন না শুধু পড়বেন আর মন্তব্য করবেন তবুও সচেতন থাকবেন, যেন এই লেখক কিংবা যে কোন ব্লগারই আপানার মন্তব্যটিকে গুরুত্ব দেয়। এ সময় আপনার মানস্মত লেখাটির লিংক কোন মন্তব্যের সাথে জুড়ে দিয়ে আপনার ব্লগে বেড়াতে আসার আমন্ত্রন জানাতে পারেন তবে এটা যেন খুব বেশী না হয় এবং অন্যের বিরক্তের কারন না হয়।
চতুর্থ পদক্ষেপঃ এখন আপনি যদি ব্লগের প্রথম পাতায় আপনার লেখা প্রকাশের অনুমতি পেয়ে থাকেন এবং আপনি যদি মনে করেন প্রথম পাতায় দেখার জন্য একটি লেখা লিখবেন তবে কেন ভাল কিংবা মানসম্মত লিখা নয়? আপনার প্রিয় বিষয়টি নিয়ে একটু সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে আস্তে আস্তে আপনার লিখাটি লিখুন।
লিখার সময় কিছুক্ষন পরপর সেভ অপশনে ক্লিক করে আপনার লিখাটি সেভ রাখুন। যদিও সামহোয়ারইন ব্লগে সংয়ক্রিয় ভাবেই সেভ হয় তারপরও আপনি আপনার লিখাটির নিরাপত্তার জন্য এই অপশনটি ব্যবহার করুন। অনেক সময় বিদুৎ চলে যাওয়া কিংবা আপনার কম্পিউটারের সমস্যার কারনে লিখাটি মুছে যেতে পারে। অনেক সময় লেখা প্রকাশের পর লেখা প্রকাশ না হয়ে মুছে যেতে পারে সে ক্ষেত্রে সেইভ অপশটি আগে থেকে ব্যাবহার করাই ভাল। অথবা লেখাটি কপি করে রাখতে পারেন।
অনেক সময় লেখা প্রকাশের পর যদি দেখেন লেখাটি প্রকাশ না হয়ে মুছে গেছে তখন আপনার ব্রাউজারের কিংবা কিবোর্ডের ব্যাকস্পেস ব্যাবহার করে লেখাটি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
লেখার সময় নিরাপদ অপশন নিয়ে এতকিছু বলার একটাই কারন অনেক সময় লেখাটি হারিয়ে গেলে পূনরায় একই উদ্যেমে লেখার আগ্রহ হারাতে পারেন এমনকি অনেক কথাই ভুলে যেতে পারেন। অনেক সময় লেখার মূল সারমর্মও ঘুরে যেতে পারে।
যাইহোক যা বলছিলাম-
আপনি নতুন ব্লগার হিসাবে মানস্মত একটি চমৎকার লেখা লিখে সব ব্লগারকে চমকে দিন। আপনি প্রথম থেকেই অন্য ব্লগারে দৃষ্টি আকর্ষনের সুযোগ নিন।
কবিতা গল্প রম্যরচনা ভ্রমনকাহিনি বিশ্লেষনমূলক গবেষনামূলক রাজনীত অর্থনীতি সমসাময়িক বিনোদন কিংবা আপনার ব্যাক্তিগত চিন্তা ভাবনা কিংবা অভিজ্ঞতা যাহাই হোক মানম্মত হয়েছে কিনা কয়েকবার পড়ে দেখুন। বিশ্লেষনমূলক গবেষনামূলক লেখা হলে রেফারেন্স উদাহরন কিংবা এভিডেন্স উল্লেখ করার চেষ্টা করুন এবং তথ্য উপাত্ত যেন বিশস্ত এবং মানসম্মত হয় লক্ষ রাখুন।
লেখার শিরোনাম গুরুগম্ভির কিংবা পুরু লেখাটি মূল কথাটি এক কথায় যা বুঝানো যায় তা দেয়ার চেষ্টা করুন। অনেক সময় মানসম্মত শিরোনাম না দেয়ার করনে একটি ভাল লেখাও পাঠকে আড়ালে চলে যায়। আপনার লেখায় ছবি কিংবা ভিডিও যুক্ত করতে পারেন তবে সেটি করার আগে কতটা যুক্তি যুক্ত ভেবে চিন্তে করুন।
লেখাটি আপনার মনেরমত এবং মানসম্মত মনে হলে এবার ব্লগে প্রকাশ করুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ন টিপস এবং ব্লগিং করার সময় যে বিষয় গুলি লক্ষ রাখবেনঃ
১। একটি লেখা শুরু করেই শেষ করে ফেলতে হবে এমন কোন কথা নেই, তাই কয়েক দিন সাপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস সময় নিয়েও লিখতে পারেন। যেমন আমি এ বিষয়টি নিয়ে লিখব বলে কয়ে মাস ধরে ভাবছি সাথে কিভাবে লিখব কি কি লেখার মধ্যে থাকবে তা পরিকল্পনা করছি এবং এ লিখাটি অনেক দিন ধরেই লিখছি। সময় সল্পতার কারনে এবং গবেষনার কারনে।
২। আপনি যে বিষয় নিয়ে লিখবেন তা লিখার আগেই নিজের চোখের সামনে সম্পূর্ন লিখাটি ভিজুয়ালাইজ/কল্পনা করার চেষ্টা করুন। এবং সে অনুযায়ী লিখুন।
৩। আপনি যখন একটি বিষয় নিয়ে অনেক দিন সময় নিয়ে ভেবে লিখছেন এমনও হতে পারে আপনি বাহিরে কিন্ত লেখাটি সমন্ধে একটি পয়েন্ট আপনার মনে পড়ছে তখন আপনার সামনে যদি কম্পিউটার না থাকে কিংবা ব্লগে প্রবেশ করতে না পারেন তখন আপনার সেলফোনের মেসজে লিখে ড্রাফ্ট করে রাখতে পারেন অথবা কাগজেও লিখে রাখতে পারেন পয়েন্ট আকারে।
কেননা আপনি হয়ত ব্যাস্ততার মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টি ভুলে যেতে পরেন, যে পয়েন্টি হতে পারত আপনার লেখার একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ বা টানিং পয়েন্ট কিংবা আপনার লিখাটিকে করতে পারত সম্পূর্ন।
৪। আপনার পোষ্টে কেউ মন্তব্য লিখলে সেটি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ন হোক আর নাই হোক উত্তর যতদ্রুত সম্ভব দেয়ার চেষ্টা করুন। কারন অন্য ব্লগার মন্তব্য দিয়ে অপেক্ষা করে আপনি তার মন্তব্যের প্রতি উত্তরে কি লিখলেন। মন্তব্যটি প্রাসঙ্গিক না হলে এড়িয়ে না গিয়ে ভদ্রভাবে কিছু লিখুন।
৫। অনেক ব্লগার আছেন কোন একটি লেখা প্রকাশ করার পর লেখকেই আর পাওয়া যায়না এমনটি যেন না হয় লক্ষ রাখুন। সময় সল্পতায় মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরি হলে আপনার পোষ্টের নিচে কিংবা আপনার পোষ্টের মন্তবে আপনি নিজেই অপরাগতার কারন লিখে উল্লেখ করুন, সম্ভব হলে কখন মন্তব্য গুলোর উত্তর দিবেন সময়টুকুও উল্লেখ করুন।
৬। এমনও দেখা যায় কোন লেখক তাহার লেখায় সব মন্তব্যের কিংবা সকল ব্লগারে মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছেনা।
এটা হওয়া একবারেই ঠিক নয়। এটা অন্য ব্লগারকে এক ধরনের অপমান করা হয়। সে জন্য সিরিয়াল অনুযায়ী এক এক করে উত্তর দিন।
৭। অধিক সংখ্যক লেখা কখনোই একজন লেখককে জনপ্রিয় করেনা, জনপ্রিয় হওয়ার জন্য মান সম্মত একটি লেখাই যথেষ্ট।
তাই লেখার সংখ্যা না বাড়িয়ে মানস্মত একটি লেখা লিখুন।
৮। ভাষা ব্যাবহারে অধিক সচেতন হোন। সেটা ব্লগ লেখার সময় হোক আর মন্তব্য করার সময়ই হোক। কারন ৭১রে পাকবাহিনী বাংলা ভাষাকে যতটানা কলুষিত করেছে বর্তমান সময়ে এর থেকে অনেক বেশীই কলুষিত হচ্ছে।
এই অবস্থাটির পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে।
৯। পোষ্ট লেখা কিংবা মন্তব্য করার সময় অপ্রাসঙ্গিক বিষয় গুলো টেনে আনবেন না। কিংবা উদাহরন দেয়ার সময় বেশী ঘুরিয়ে পেচিয়ে উদাহরন দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
১০।
আপনার পোষ্টটি অনেক বড় হলেই জনপ্রিয় হবে কিংবা মানসম্মত হবে এই ধারনাটিও ভুল। আপনি যে বিষয়ে লিখছেন সে বিষয়টুকু সহজ এবং সাবলিল ভাবে গুছিয়ে লিখার চেষ্টা করুন। সে জন্য কঠিন দূর্ভেদ্ধ শব্দ চয়নেরও প্রয়োজন নেই। আপনি যে উদ্দেশ্যে লিখছেন যাদের জন্য লিখছেন তাদের কাছে পরিস্কার করে তুলে ধরুন। সম্পূর্ন ভাবে বুঝাতে পেড়েছেন কিনা কিংবা সম্পূর্ন ভাবে আপনার বিষয়টি তুলে ধরতে পারছেন কিনা এটি মূখ্য বিষয়।
অনেক সময় একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অনেক বড় করে লেখার কারনে লেখার মূল বিষয় আড়াল পরে যায়।
১১। কোন বিষয় নিয়ে লেখার সময় পেরা/ভাগ করে লিখুন তাতে পাঠকের পড়তে সুবিধা হবে এবং আপনার লিখাটিও সুন্দর দেখাবে। যাহাই লিখুন বানানের দিকে লক্ষ রাখুন। (যদিও আমার লেখায়ও অনেক বানান ভুল থাকতে পারে।
বাংলা টাইপিংয়ে আমি অনেক দূর্বল। তাই আশা করি সবাই ক্ষমা করবেন)
১২। ১৮+ লেখা শুধু মাত্র সাময়িক বিনোদনই দেয়, অদতে এ ধরনের ব্লগারকে কেউ মনে রাখেনা। তাই এ ধরনের লেখা লিখার আগেই ভাবুন।
১৩।
ছবি কিংবা ভিডিও যুক্ত করার আগে সাবধানতা অবল্বন করুন, কারুর ব্যাক্তিগত ছবি কিংবা ভিডিও নিয়ে কোন কিছু লিখা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি কোন লেখার রেফারেন্স হিসাবে এ ধরনে ছবি কিংবা ভিডি যুক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। অশলীল, বিভৎস ছবি বা ভিডিও ক্লিপ্স দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
১৪। অনেক সময় অনেক পাঠক একটি লিখা সম্পূর্ন না পড়েই কিছু কিছু অংশ পড়েই কিংবা শিরোনাম পড়েই মন্তব্য করে।
এ ধরনে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। কোন ব্লগারের পোষ্টে মন্তব্য করার আগে সম্পূর্ন লিখাটি পড়ুন এবং মূল কথাটি বুঝে তারপর মন্তব্য করুন। যদি অনেক বড় লেখা পড়ার সময় না পান তবে প্রিয়তে নিয়ে রাখুন, সময় করে পড়ে তারপর মন্তব্য করুন।
১৫। নিয়মিত আপনার পুরাতন পোষ্টগুলোতে প্রবেশ করে দেখুন কেউ কোন মন্তব্য দিয়েছে কিনা, কেউ মন্তব্য দিলে তার উত্তর দিয়ে পর্যবেক্ষনে রাখুন।
১৬। কারোর পোষ্টে একাধিক মন্তব্য দিলে কিংবা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকলে পোষ্টি পরর্যবেক্ষনে রাখুন।
১৭। ব্লগ হচ্ছে আপনার ড্রয়িং রুমের বুকসেলফের মত, কোন অতিথী আপনার ব্লগে বেরাতে আসলে আপনার ব্লগের লিখা গুলো সমন্ধে যেন ইতিবাচক ধারনা পায় এ জন্য প্রতিটি লেখা মানস্মত ভাবে লিখার চেষ্টা করুন। এবং মন্তব্য প্রদান করুন।
১৮। আপনার ব্লগে আপনার পরিচিতজন বন্ধু মহল এমনকি আপনার পরিবারের যে কেউ যে কোন সময় প্রবেশ করতে পারে, এবং নতুন পুরাতন যে কোন লেখা পড়তে পারে। তাই ব্লগে নোংরা ভাষা ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
১৯। জনপ্রিয় ব্লগার হওয়ার জন্য অনেক গুলো নিক/আইডি থাকার প্রয়োজন পরেনা।
রিভার্স লিখা কিংবা মন্তব্যেরও প্রয়োজন পরেনা যদি আপনার সাথে অন্যের মতের অমিলটুকু মেনে নেয়ার মানুষিকতা ও সৎ সাহস দেখান। তাছাড়া এখানে কেউ আপনার বাড়ি ঘড় দখল করতে আসেনি যে আপনার মতের অমিলটুকু জোর করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
২০। একটি অগুরুত্বপূর্ন লেখা বার বার রিঃপোষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যের ব্লগে আপনার ভাল লাগা মন্ধ লাগা লিখুন, তাতে আপনার ব্লগেরও পাঠক বৃদ্ধি পাবে।
২১। অযাচিত কিংবা একবারেই গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে পোষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকুন। হা আপনার অধিকার আছে আপনি ব্লগে যে কোন বিষয় নিয়েই পোষ্ট দিতে পারেন। কিন্তু আপনার এ ধরনের পোষ্টের কারনে অনেক ভাল পোষ্টও হারিয়ে যায়। অনেক বেশি ব্লগার হওয়ায় প্রথম পাতায় এমনিতেই একটি পোষ্ট বেশি সময় থাকতে পারেনা এর মধ্যে এ ধরনের অযাচিত পোষ্ট থাকর ফলে অনেক ভাল লেখা পড়া থেকে অনেক ব্লগারই বঞ্চিত হয়।
তাছাড়া আপনি যখন একটি পোষ্ট অনেক কষ্ট করে লিখে ব্লগে প্রকাশ করবেন আর তখন যদি এ ধরনের অযাচিত পোষ্টের কারনে আপনার লেখাটিও হারিয়ে যায় তখন আপনি নিজেও বঞ্চিত হবেন। তাই পরিবর্তটা নিজ থেকেই করুন, নিজেকেই আগে করুন।
২২। একটি বিষয় নিয়ে সবাই লিখেছে তাই ঐ বিষটি নিয়ে আপনার কিছু লেখার নেই, কিংবা একটি বিষয়কে খুব সাধারন মনে হচ্ছে তাই এ বিষয়টি নিয়ে আপনার লেখার কিছু নেই এমনটি ভাবার কারন নেই। একই বিষয় নিয়ে আপনি ভিন্ন ভাবে চিন্তা করুন, ভিন্ন দিক থেকে চিন্তা করুন।
আপনার ভিন্ন চিন্তার একটি সাধারন লেখা হয়ে যেতে পারে অসাধারন।
২৩। ব্লগে আপনাকে কেউ সরাসরি দেখছেনা বা আপনি কাউকে দেখছেনা তাই বলে যা ইচ্ছা বলবেন এ ধরনের মনমানুষিকতা পরিহার করুন। নিজের নিক/আইডিটি কে ভালবাসুন। আপনার নিক/আইডি যে নামেই হোক সেটি কিন্ত আপনিই, সুতরাং প্রতি উত্তরে কেউ কিছু বললে আপনার অত্নসম্মানে লাগবেনা এমনটি ভাবার কারন নেই।
আপনি যদি কাউকে বাজে কিছু বলার সুযোগ দিন তবে এ সুযোগটি কেউ নিতে পারে, তাই এ ধরনের সুযোগটি আপনি কেন দিবেন? তাই মানসম্পন লিখা এবং মন্তব্য করার মাধ্যেমে ভার্চুয়াল ইমেজ বা ব্যাক্তিত্বের পরিচয় দিন।
২৪। দেশের সমাজ কিংবা কোন ধর্ম কিংবা কোন সন্মানিত ব্যাক্তি খাট হয় এমন লেখা কিংবা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
২৫। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় মিডিয়া এবং মত প্রকাশের শক্তিশালী গণমাধ্যম হচ্ছে ব্লগ।
একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার একটি লেখা যতবার পড়া হয় তারচেয়ে অনেক বেশী বার হয়ত আপনার লেখাটি পড়া হয়। কিংবা একটি টিভি চ্যানেলে একটি নিউজ যত দর্শক দেখে তার থেকে আপনার লিখাটির পাঠক হয়ত কম নয়। আপনার একটি লিখা সারা বিশ্বে শত শত মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে, আপনি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ করছেন, তাই ব্লগে লেখা বা মন্তব্য প্রদানের সময় সচেতন হউন।
লক্ষ করুন- গনমাধ্যমে যদি কোন লেখক নিজের দেশ সমাজ কোন ধর্ম কিংবা কোন সন্মানিত ব্যাক্তিকে কটুক্তি করে কোন কথা লেখা হয় বা বলা হয় তবে আমরাই কিন্তু এর সমালোচনা করি। এমনকি সরকার বিভিন্ন মহল কিংবা ব্যাক্তিগত পর্যায় থেকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করা হয়।
কিন্তু ব্লগে এ ধরনের কিছু হলে মামলা করা হয়না। অথচ গনমাধ্যেমে এ ধরনের মত প্রকাশ করলে মামলা হওয়ার মূল কারনই হচ্ছে অধিক সংখ্যক পাঠক কিংবা দর্শক। ঐ ব্যাক্তিই যদি নিজের বাসায় বলে তাহলে কিন্তু আমরা শুনতেও পারিনা জানতেও পারিনা সমালোচনাও করিনা মামলাও হয়না। এ ধরনে আইন ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে না থাকার কারনেই আমরা এই সুযোগটি নেই বা আমরা সচেতন না। তবে এ ধরনের আইন যেন না হয় সে জন্যই আরো বেশী সচেতন ভাবে সুস্থধারায় মত প্রকাশ বা ব্লগিং করা প্রয়োজন এবং ব্লগের পাঠক কিংবা ভিউয়ার যেহেতু কম নয় নিজের মন্তব্যের কিংবা লেখার দায় দায়ীত্ব নিজেকেই বহন করা উচিত।
তাই যাহাই লিখুন বা মন্তব্য করুন দায়ীত্বশীলতার পরিচয় দিন।
ভাল পোষ্ট গুলো ফেইসবুক কিংবা সামাজিক সাইট গুলোতে শেয়ার করুন। লেখা লেখির
অভিজ্ঞতা অনেক চাকুরির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়, তাই আপনার জীবন বৃত্তান্তে আপনার লেখা লেখি সমন্ধে জানিয়ে ব্লগের এড্রেসটি উল্লেখ করতে পারেন।
সর্বপরি যাহাই লিখুন মানের দিক দিয়ে আপনার আগের ভাল লেখাটিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
ব্লগিং কে উপভোগ করুন।
সুস্থ ভাবে জানা, শেখা এবং মত প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে ব্লগকে গ্রহন করুন।
মাঝে মাঝে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ব্লগ পড়তে পারেন। সাথে এই লিংক গুলো ঘুরে আসতে পারেন-
লিংক-১
লিংক-২
শুভ ব্লগিং
সচেতনতার জন্য লেখাটি শেয়ার করুন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।