আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সঞ্চয়পত্র

আবুল হোসেন সাহেব জিপিওর বারান্দায় একটা নড়বড়ে চেয়ারে বসে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অটো-সাজেশন দিচ্ছেন, “আমি শান্ত থাকবো, আমি শান্ত থাকবো, আমি শান্ত থাকবো”, “আমি প্রো-একটিভ থাকবো . . .”। এমন সময় কাউন্টার থেকে আবুল হোসেন সাহেবের নাম ধরে ডাকা হলও। “আবুল হোসেন . . , আবুল হোসেন . . .”। আবুল হোসেন প্রায় দৌড়ে কাউন্টারের কাছে গেলেন। মনে মনে বেশ খুশি, তাড়াতাড়িই কাজটা হয়ে গেল।

এতক্ষণ তিনি যেসব নেতিবাচক চিন্তার করছিলেন তার জন্য নিজেকে নিজেই ধমক দিলেন। মনে মনে ভাবলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে অফিসগুলি দেখতে যেমন বেশ সুন্দর হয়েছে, সবার সামনে মনিটর, কি-বোর্ড, তেমনই কাজেরও বেশ গতি এসেছে। “আপনি আবুল হোসেন?” কাউন্টার থেকে ক্যাশিয়ার জিজ্ঞাস করল। “জী” “আপনার সিগনেচার মিলে না। আরেকটা দেন।

” আবুল হোসেন সাহেব চিন্তিত হয়ে সঞ্চয়পত্রের উপর আরেকটা সই দিলেন। ক্যাশিয়ার সঞ্চয়পত্রটা আবার পিছনে পাঠিয়ে দিলেন। আবুল হোসেন সাহেব অনুমান করলেন টাকা পেতে আরও কিছু সময় লাগবে। মাত্র সিগনেচার ভ্যারিফাই হচ্ছে। টাকা পেতে পেতে আরও সময় লাগবে।

তিনি সেই নড়বড়ে চেয়ারটাতে আবার যেয়ে বসলেন। টেনশন এবং সময় কাটানোর জন্য, ঠিক করলেন দম চর্চা করবেন আর অটো-সাজেশন দিবেন। সময়ও কেটে যাবে, টেনশনও দূর হবে। মেরুদণ্ড সোজা করে, বুক ফুলিয়ে নাক দিয়ে দম নিয়ে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ছেন। ১৯ বার এই ভাবে দম নেয়ার পর, অটো-সাজেশন দিতে থাকলেন।

কখন যে আরও এক ঘণ্টা সময় কেটে গেল, আবুল হোসেন সাহেব টেরই পেলেন না। কাউন্টার থেকে ডাক শুনে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। মুখে বিরক্তির ভাব নিয়ে ধমকের শুরে ক্যাশিয়ার বলল, “আপনার সই মিলছে না। শেষের ‘ন’ টা মিলছে না। ” আবুল হোসেন সাহেব সকালে মেডিটেশন করেই বাসা থেকে বের হয়েছেন।

তারপর এখানে বসে বসে দম চর্চা করেছেন, এক নাশা প্রাণায়াম করেছেন, অটো-সাজেশন দিয়েছেন, তাই তার মেজাজ খুব ঠাণ্ডা। “কি করতে হবে আমার?” আবুল হোসেন সাহেব শান্ত ভাবে বললেন। “অফিসারের সাথে দেখা করেন। ” কাউন্টারের পাশে দাঁড়ানো একজন বললেন, “বুঝেন না কেন? শ পাঁচেক টাকা দেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।

না হলে ঘোরাবে। ” আবুল হোসেন সাহেব খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলেন, সারা জীবন সৎ ভাবে উপার্জন করে তিলে তিল এই টাকা জমিয়েছেন। এখন সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাতে এসেছেন, ঐ বেটাকে টাকা দিবেন কেন? তিনি আরও চিন্তা করলেন, “হাতে যেহেতু সময় আছে দেখিই না বেটা কি করে। আমার টাকা না দিয়ে সে কি করে দেখাই যাক। ” “কি করতে হবে বলেন?” আবুল হোসেন চিৎকার করে কাউন্টারের পিছে বসা অফিসারকে জিজ্ঞাস করলেন।

অফিসার ক্রুদ্ধ হয়ে হাত-পা নেড়ে বললেন, “এই ভাবে কথা বলেন কেন?” আবুল হোসেন আরও বিনয়ী হয়ে আবার জিজ্ঞাস করলেন, “এখন আমার কি করতে হবে। জানতে চাচ্ছি। ” অফিসারটা মনে হয় খুব বিপদে পরে গেলেন। বেটা আকার ইঙ্গিত কিছুই বুঝে না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “আরেকটা সই দেন।

” আবুল হোসেন সাহেব সঞ্চয়পত্রটার উপর আরেকটা সই দিলেন। ক্যাশিয়ার সঞ্চয়পত্রটা আবার পিছনে পাঠিয়ে দিলেন। আবুল হোসেন সাহেব বুঝতে পারলেন ঝামেলা শেষ, কিছুক্ষণের মধ্যেই টাকা পেয়ে যাবেন। তাই নড়বড়ে চেয়ারটাতে না বসে কাউন্টারের সামনেই দাড়িয়ে থাকলেন। এবার আর দেড়ি হল না।

পুরানো, ছেড়া, একশ’ টাকার নোট, পাঁচশ’ টাকার নোট, আবার কিছু হাজার টাকার নোটের পঞ্চাশ হাজার টাকার এক একটা বান্ডিল। আবুল হোসেন সাহেব অনুরোধ করলেন, একটু ভাল আর বড় নোট দেয়ার জন্য। ক্যাশিয়ার ঝাঁজালো গলায় বলল, “এই নোটেই নিতে হবে। ” “শ দু’ এক টাকা দেন। ভাল নোট দিবে।

” পাশে দাঁড়ানো লোকটা বলল। আবুল হোসেন সাহেব কোন কথা বললেন না, শ দু এক টাকাও দিলেন না। অনেক কষ্টে টাকাগুলি গুনে ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছেন, ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য। আবুল হোসেন সাহেব আয়তুল কুর্সি পড়তে পড়তে টাকাগুলি নিয়ে এসে ব্যাংকে জমা দিলেন। কম বয়স্ক একটা মেয়ে ক্যাশিয়ার টাকার বান্ডিল গুলি বুঝে নিয়ে এক একটা বান্ডিল মেশিনে দিয়ে গণতে লাগলেন।

মেশিনে গনা শেষে মোট টাকা মিলাতে গিয়ে দেখেন পঞ্চাশ হাজার টাকা কম। মহিলা প্রায় চিৎকার করে বললেন, “আপনি কত টাকা দিয়েছেন? পঞ্চাশ হাজার টাকা কম আছে। ভাল করে দেখেন। ” সকালের মেডিটেশনের প্রভাবে আবুল হোসেন সাহেব এখনো বেশ শান্ত আছেন। বললেন “আমার ভুল হতে পারে, দেখি ব্যাগে আছে কিনা।

” আবুল হোসেন সাহেব তার ব্যাগ হাতড়াতে থাকলেন। ইতোমধ্যে মহিলা ক্যাশিয়ার ব্যাংকের আরও দু’জন লোককে ডেকে নিয়ে এসেছে। লোক দু’টা দেখে, আবুল হোসেন সাহেবের মেডিটেশনের রেশ কেটে গিয়ে প্রথম বারের মত টেনশন শুরু হয়েছে। পঞ্চাশ হাজার টাকা যদি না পাওয়া যায় তা হলে কি হবে? তাকে প্রথমেই প্রতারক হিসাবে চিহ্নিত করে অপমান-অপদস্থ করা হতে পারে। মার-ধর করা হতে পারে।

পুলিশে সোপর্দ করা হতে পারে। আর পঞ্চাশ হাজার তো গেলই। আবুল হোসেন সাহেব আয়তুল কুর্সি পড়ছেন আর ব্যাগটাতে ভাল ভাবে খুঁজছেন। এমন সময় মেয়েটা খুব লজ্জিত হয়ে বলল, “না, পাওয় গেছে। আমার গণতে ভুল হয়ে গেছে।

” ব্যাংকের লোকটা খুব চিৎকার করে, ধমকের শুরে আবুল হোসেন সাহেবকে বললেন, “এই ভাবে টাকা নিয়ে আর কখনো আসবেন না। ” আবুল হোসেন সাহেব বিশ্বয়ের সাথে জিজ্ঞাস করলেন, “কি ভাবে?” লোকটি কোন উত্তর না দিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে, আবুল হোসেন সাহেব বললেন, “আমি অপরাধী। আমাকে যে কোন সাজা আপনারা দিতে পারেন। আপনাদেরকে কোন টাকা না দিয়ে, পুরো টাকাটা তোলা এবং জমা দেয়া দু’টাই আমার অপরাধ। ” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.