গত ১৯ মে রাজধানীর মিরপুরে ভাষানটেক নেভী কলোনির অফিসার্স মেসের ৫ তলা ভবনের ছাদে এক মহিলার লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। নৌ-বাহিনীর এক কর্মকর্তার শ্যালক বন্ধুকে নিয়ে ভাসমান যৌনকর্মীর সঙ্গে ফুর্তি করার একপর্যায়ে তাকে শ্বাস রোধে হত্যা করে বলে জানা গেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানায়, নৌবাহিনী কর্মকর্তা সপরিবারে ছুটিতে যাওয়ার আগে তার শ্যালক ইমরানের কাছে চাবি দিয়ে যান। খালি বাসা পেয়ে ইমরান তার বন্ধু ওবায়দুলকে সঙ্গে নিয়ে এক ভাসমান যৌনকর্মী ভাড়া করে আনে ফুর্তি করার জন্য। টাকা নিয়ে দেনদরবারের একপর্যায়ে ওই মহিলাকে বেধড়ক পেটায় ইমরান ও ওবায়দুল।
মহিলাটি চিৎকার শুরু করলে কোয়ার্টারের অন্যরা এসে পড়ার ভয়ে তাকে হত্যা করেন তারা। হত্যার পর লাশ ছাদে ফেলে রেখে গা ঢাকা দেন ইমরান ও ওবায়দুল। এ ঘটনায় ভাষানটেক থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। গত শুক্রবার ইমরানকে আটক করা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের দায় স্বীকার করেছে। শনিবার ওই মামলায় ইমরানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে তাকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
মামলার অন্য আসামি ওবায়দুল এখনো পলাতক। তাকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে রোববার পর্যন্ত ওই মহিলার পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই কামরুল ইসলাম জানান। ভাষানটেক থানার ওসি অপারেশন আব্দুল মোমেম যায়যায়দিনকে জানান, ওই ভবনের অনেক বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার তিনদিন আগে থেকে ওই ভবনে কারা আসা যাওয়া করেছে তাদের একটি তালিকা সংগ্রহ করা হয়।
পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে লাশ উদ্ধারের একদিন আগে অর্থাৎ ১৮ মে নৌ কর্মকর্তা সপরিবারে চার দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে চলে যান। সেখানে পুলিশ তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার ক্লু খুঁজে পায়। তার স্ত্রী ছিলেন বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী আলফাডাঙ্গায়। সেখানে তার সঙ্গে তদন্ত দল কথা বলেন। ইমরানকে পুলিশের কাছে হাজির হওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করেন।
শুক্রবার ইমরান ভাষানটেক থানায় আসেন। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি খুনের দায় স্বীকার করেন। ইমরান পুলিশকে জানান, তিনি তার বন্ধু ওবায়দুলকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুর ১০নং এলাকা থেকে এক ভাসমান পতিতাকে বাসায় নিয়ে আসেন। সেখানে মদ্যপানের একপর্যায়ে মহিলার সঙ্গে টাকা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে তারা মহিলাকে মারধর শুরু করে।
এতে মহিলা চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন জেনে যেতে পারে এই ভয়ে দু'বন্ধু তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর তারা লাশ ছাদের ওপর ফেলে রাতেই গা ঢাকা দেন। মামলার তদারকি কর্মকর্তা ভাষানটেক থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত হেলাল উদ্দিন জানান, ওবায়দুলকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে ইমরানের সহযোগিতায় অভিযান চালানো হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই কামরুল ইসলাম জানান, ইমরান তার দুলাভাইকে বাঁচাতে খুনের দায় স্বীকার করল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভিকটিম মহিলার পরিচয় না পেয়ে তার লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইমতিয়াজ হোসেন যায়যায়দিনকে জানান, নৌবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কীভাবে নিজ বাসার চাবি শ্যালকের কাছে দিয়ে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় পিও (প্লেস অব অকারেন্স) তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও নিতে পারে। সেটা তাদের বিষয়। পুলিশি তদন্তে যদি বাসার চাবি দিয়ে তিনি খুনের কাজে সহযোগিতা করেছেন এমন কিছু প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।