অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!
আজ ২৩ জুন আমাদের একটা সেমিনার ছিল শান্ত-মরিয়ম ভার্সিটিতে। শুরোনাম ছিল - গ্রাফিকস, এনিমেশন ও গেমস মার্কেটে বাংলাদেশের সম্ভাবনা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় দুপুর ১টা পর্যন্ত আমরা ম্যালা বকর বকর করেছি। আমার সঙ্গে ছিল কানাডার রেডরড স্টুডিওর প্রধান কারিগরী কর্মকর্তা আল মামুন সোহাগ, টিম ইঞ্জিনের শীর্ষ নির্বাহী সামিরা জুবেরি হিমিকা এবং ডি-কাস্টালিয়ার উদ্যোক্তা সাবিলা ইনুন।
আর যথারীতি আমাদের যাবতীয় কাজের কাজি প্রমি। শা-ম বিশ্ববিদ্যালয় বিডিওএসএনের সহযোগিতায় এই সেমিনারের আয়োজন করেন। সকালে সেমিনারের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্থপতি হোসনে আরা।
এর আগে গেমস নিয়ে আমরা একটা সেমিনার করেছিলাম অনেক আগে। তবে, মাঝখানে আমরা এ নিয়ে তেমন উচ্চ বাক্য করি নাই।
যদিও সোহাগ আমাকে নিয়ম বলে যাচ্ছে এই সেক্টরের হিসাব নিকাশ। ২০১০ সালে গেমসের মার্কেট ছিল মাত্র ২৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রাফিকসের কী অবস্থা সেটি অবশ্য আমি হিসাব করে দেখি নি। আজকের সেমিনারের জন্য যখন স্লাইড বানাতে বসি তখন ওডেস্কে একটা সার্চ দিলাম গ্রাফিকস আর মাল্টিমিডিয়া ক্যাটাগরিতে। পাওয়া গেল ৮০০০+ কাজের তালিকা!!! এনিমেশনের ডিটেইলে আর যাইনি।
কারণ বাজার নিয়ে কোন সন্দেহ আমরা আগেও ছিল না। এখনো নাই।
আমাদের আলোচনায় আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি এই সেক্টরটি কেন আগাচ্ছে না যেমনটি আগানোর কথা ছিল? সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো জ্ঞান এখনো হয়নি।
ওডেস্ক থেকে আমি টেকনিক্যাল স্কিলের একটা থালিকা করার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলাম এডোবে, কোরেল, পাবলিশারের কাজের কোন অভাব নাই। অভাব নাই থ্রিডিম্যাক্স, মায়া ইত্যাদি কাজেরও।
এবং অবাক হয়ে দেখলাম এগুলোতে ওদের বেশ ভঅল দক্ষতা আছে। তাহলে? গ্যাপটা কোথায়?
সোহাগ বলেছে – আমরা লাইফ সাইকেলটা ভাবছিনা। কার জন্য আকবো, কী আকবো সেটাও খেয়ার করছি না। সাধরণ আঁকাআঁকির সঙ্গে ডিজিটাল আকাআকির একটা পার্থক্য হলো আকিয়েকে মনে রাখতে হয় প্রোগ্রামার কিন্তু সেটা নিয়ে কাজ করবে। This is not the end, but the beginning. শিল্পাজার্য জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে আমাদের শিল্পীর তাই অনেক ফারাক।
দ্বিতীয় হলো এই কাজের বাজারটা হলো পশ্চিমে। কাজে তাদের সংস্কৃতু এবং ব্যবসার ব্যাপারটাতো আমার বুঝতে হবে। নাহলে সে কেন আমাকে দিয়ে তার কাজ করাবে?
সোহাগ উদাহরণ হিসাবে গেমসের কথা ই বলেছে। পশ্চিমে একটি শিশু ছোটবেলা থেকে সুপারম্যানসহ নানান ক্যারেক্টারের সঙ্গে বড় হয়। তাঁর মনোজগতে টিনটিন, টমের নানান প্রভাব।
পলে, কার্টুনের ক্যারেক্টারগুলো কিন্তু তার মনে একধরণের রেখাপাত করে। আমি যদি সে বাজারের জন্য কাজ করতে চাই তাহলে আমাকে সেরকম ছবিই আঁকতে হবে।
এর সঙ্গে হিমিকা যোগ করেছে কয়েকটি অভ্যাস যা কী না আমাদের মজ্জাগত কিন্তু প্রফেশনাল জগতে যার খেসারত দিতে হয়। প্রথমটা হল কমিটমেন্ট। এটি রক্ষা করতে হয়।
এরপর হলো “আমি যে হনু” এই বোধ। আমারটাই যে সেরা এই বোধের জন্য আমরা অনেকখানি আটকে যাই। আমাদের একোমোডেশনের অভাব বেশি। আর একটা হল একলা চল নীতি। দলেবলে বাড়তে না পারলে দু:খ।
আর এসব গড়তে হলে খাটতে হবে প্রচুর। পড়তে হবে প্রুর। দেখতে হবে প্রচুর। আমরা খুব অবাক হয়ে দেখেছি ওরা গড়ে ২ ঘন্টার বেশি ইন্টারনেটে কাটায় অথচ গ্রাফিকসের সাইটগুলো খুলে বসে থাকে না!!! তাহরে কেমন করে হবে।
অথচ টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো ওরা শিখে ফেলেছ।
একজন শিক্ষার্থী অকপটে বলেছে ওরা তাড়াতাড়ি বড় হতে চায়, ধনী হতে চায় কিন্তু কষ্ট করতে চায় না। শেখার সময় নাই!!!
কঠিন। আমরা বলেছি, সোজা সাপ্টা রাস্তা কিন্তু সহজ নয় মোটে। খাটতে হবে। খাটতে হবে।
খাটতে হবে।
একটি লোগো ডিজাইন করার সময় কতোবার ভাবে একজন? কতটা ড্রাফট ডিজাইন করি আমরা? ধৈর্য কম না বেশি? এথিকস ঠিক আছে তো? অন্যের কাজ নিজের বলে চালিযে দিচ্চি না তো?
তবে এটা ঠিক যে, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারলে গ্রাফিকস ও মাল্টিমিডিয়ার শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে দ্রুত সাফল্য অর্জন করা যাবে।
আরো একটা বিষয় এসেছে আলাপ আলোচনায়। সেটি হল পাস করে কী করবে? আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি বেশিরভাগ গ্রাফিকসের লোক এড এজেন্সিগুলোর রুটিনকাজে লেগে যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জ নাই, সৃজনশীলতাও নেই।
কিন্ত আরাম আছে, স্বাচ্ছন্দ্য আছে। এ জায়গাটাও ভাবতে হবে।
দেশের এনিমেটর, গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরে প্রচলিত ক্যারিয়ারের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থী স্ব-উদ্যোগী এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে আসার জন্য আমরা আহবান জানিয়েছি। কারণ সেখানেই হয়তো তাদের আসল সাফল্য অপেক্ষা করছে।
বিডিওএসএনের প্রথ অনুষ্ঠান শা-ম’তে।
তাই সেখানে আমাদের কথাও বলেছি। আর শেষ করেছি আমাদের থীম সং- কারার ঐ লোহকপাট শুনিয়ে। যার শেষে ভেসে ওঠে আমাদের নেটওয়ার্কের মূল বক্তব্য-
স্বাধীনতার জন্য ইতিহাসে সব প্রজন্মকে রুখে দাড়াতে হয়েছে।
এবার আমাদের পালা।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।