আমার পোস্ট আমার মতামতঃ যে কারো মতের সাথেই দ্বিমত হতে পারে।
৪টা বাজে মাত্র, আরও ১৫ মিনিট সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাসের বোরিং লেকচার শুনতে হবে এই গরমে বসে বসে। কে যে বিজ্ঞান বিভাগে এই বিষয়টা ইন্সটল করেছে!! বিরক্তিতে কপালে বেশ কিছু ভাজ ফেলে দিয়েছে মিশু। সময়টা যেন কাটতেই চাইছেনা, ম্যাডামের ঢিমেতালে কথাতেও ক্লান্তির চাপ সুস্পষ্ট। বেচারা!! ছুটি দিয়ে দিলেইত পারে, ৪০-৪৫ টা হতাভাগা মেয়ে এই গরমে ঘরে গিয়ে আরাম করতে পারে খানিকটা।
কিন্তু ফাঁকিবাজ ছাত্রীর অন্যায় আবদার বলেই হোক আর নিজের দায়িত্ব বলেই হোক চল্লিশোরধ ফজিলাতুন্নেসা ম্যাডামের ঘড়ির কাঁটা সোয়া চারটার দাগ অতিক্রম না করলে মুক্তি মিলছেনা। বাইরে মাঠে তপ্ত বালির উপর মরীচিকা খেলা করছে। কি সুন্দর দৃশ্য!! কলমের ক্লিপ মুখে পুরে ফাঁকিবাজ মেয়েটি মাঠের ঐ মরীচিকার খেলা দেখতে লাগল একাগ্রচিত্তে। ঘোর ভাংল বান্ধবী নিতুর কনুইয়ের গুঁতা খেয়ে, ম্যাডাম ডায়াস থেকেই লেকচার বন্ধ করে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। তার মনে হল ম্যাডাম কি মাঠের সব মরীচিকা এই দশম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েটার মুখে দেখতে পাচ্ছেন!! একটু ভয় করতে লাগল, ম্যাডামের রাগ সম্বন্ধে মাঠের কোণের ঐ নারিকেল গাছে বাসা বাঁধা পাতিকাকটাও বিস্তর জ্ঞান রাখে।
মিশু অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে শুরু করল ম্যাডাম একটা প্রশ্ন করুক। যত ফাঁকিবাজই হোক না কেন সে ক্লাসের লেকচারের চেয়ে এডভান্স থাকে সবসময়, তাই ম্যাডামের লেকচার বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেয়া চাট্টিখানি ব্যাপার। কিন্তু মানসম্মানের ফালুদা সৃষ্টিকারী সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্ন করলেই আর রক্ষা নাই, এই পড়ন্ত বিকেলে মেজাজটাই বিগড়ে যাবে। নাহ, প্রশ্ন এলোনা, জবাব ও দিতে হলনা, বেল বেজে ক্লাস শেষের সঙ্কেত আসায় আপাতত রিমান্ড স্থগিত। সবাই ব্যাগ পত্র গুছাতে ব্যস্ত হয়ে গেল, ম্যাডাম ও নিস্তার পেলেন!
এই ক্লাসেরই শুধু নয়, পুরো স্কুলেই সেরা ছাত্রী মিশু, নিতু তার বান্ধবী।
দুজন পাশের এলাকাতেই থাকে, সেই নার্সারি থেকেই একসাথে এই স্কুলেই পড়ছে। মেধাবী সহপাঠী, প্রতিবেশী, বান্ধবী এত সংযোগ থাকা সত্ত্বেও দুইজনের মধ্যে বিশাল একটা পার্থক্য আছে, নিতু যেমন শান্ত শিষ্ট আর মনযোগী মিশু ঠিক তার উল্টোটা... স্কুল থেকে বেরিয়ে দুজন একসাথে হেঁটেই বাসায় রওনা হয়। পা টেনে চলতে চলতে মিশুর নানা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হতে থাকে বেচারি সহচরী। মেয়েটা এত্ত কথা বলে!!! যদিও বিরক্ত হওয়ার অবসর নিতুর থাকেনা, সে মিশুকে অনেক পছন্দ করে।
স্কুল থেকে ফেরার পথে নিতুদের বাড়ির দুই হোল্ডিং পরে মিশুদের বাড়ি তাই নিতু আগেই দলছুট হয়।
মিশু বিদায় জানিয়ে একটু সামনে যেতেই নিতুর ডাক শুনতে পায়। ঈষৎ ভ্রুকুঞ্চিত করে পিছু ফিরতেই দেখে একটি ছেলে ১০-১২ হাত দূরে দাঁড়িয়ে, ঠিক যেন সে মিশুকে ফলো করছিল কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে সে পাশ কাটিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যায়। মিশু ছেলেটাকে চিনতে পেরেছে, প্রতিদিন স্কুলের সামনে আমগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে। তার অদ্ভুত পোশাকের কারনে সবার নজরেই পড়ে। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, টিশার্ট, স্পঞ্জের স্যান্ডেল, আর সব ঋতুতেই গলায় মাফলার জাতিয় এক টুকরা কাপড়।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তার নীল চোখ। একটা ছেলের চোখ নীল, বা একটা নীল নয়না... না, এটা নারীসূচক... কি বলা যায়!! নীলাক্ষি ছেলে। একটু ব্যতিক্রমই বটে, তাই যে কারো নজরে পড়তে বাধ্য।
‘ছেলেটা মনে হয় তোকে ফলো করছিল!!’ নিতুর কথায় স্বাভাবিক হয়ে কপালের কুঞ্চন কিছুটা ছাড়ে মিশু। নিতু আবার প্রশ্ন করে, ‘স্কুলের সামনের ছেলেটা না?’
মিশু বলে ‘ওটা ছাড়, ডাকছিলি কেন?’
-‘এজন্যই’
-‘এজন্যই মানে! তুই তো বাসায় ঢুকে গেছিস!
-‘গেটে তালা দেয়া, তাই বের হলাম আম্মুকে ডাকব বলে।
কিন্তু বের হয়ে ছেলেটাকে তোর পিছনে দেখে আশ্চর্য হলাম’।
-‘আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই, বাদ দে। তুই যা, কাল কথা হবে’।
-‘আচ্ছা, বাই’।
নিতু অধিক সাবধানী আর মিশু খামখেয়ালী।
নিতু জানে মিশু ব্যাপারটা নিশ্চিত হতে পারলে ছেলেটার হাড্ডি ভাঙ্গার ব্যবস্থা করে ছাড়বে। আবার আরেক ঝামেলায় তাকেও কিছুদিন অস্থির কাটাতে হবে। মাকে ব্যাল্কনিতে দেখে চাবি ফেলতে ইশারা করে।
পরদিন তারা স্কুলে যাওয়ার পথে যুক্তি করতে থাকে কি করা যায় ছেলেটার ব্যাপারে!! মিশু অনেক খেপে আছে দেখে নিতু তাকে শান্তভাবে দেখার উপায় বাতলাতে থাকে। তার বক্তব্য হল ‘ছেলেটা যদি বেশি বাজে হয় তবে তোর প্রতিক্রিয়ার হিতে বিপরীত হওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে’।
-‘রাখ তোর বিপরীত। আমাকে নিশ্চিত হতে দে, বজ্জাতটার পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেয়া পর্যন্ত আমি থামছিনা। তার রোমিওগিরি আমি ছুটিয়ে ছাড়বো। আমার পিছু নিয়ে বাসার সামনেও গেছে, কত সাহস তার বুকে!!’
-‘আচ্ছা, ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে, এখন চল। টিফিন পেরিয়ডে আমরা ভাবব কি করা যায়’।
মাঠের এক কোণে কাঠবাদাম গাছটার তলায় দূর্বা ঘাসের উপর বসে নিতু আর মিশু সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজছে। এক্ষেত্রে নিতুর মতামতের ভূমিকা বেশি কারন নিজের জেদের উপর অনিয়ন্ত্রনের ব্যাপারটা মিশুর মাথায় আছে। নিতু বলে ‘শোন, আমরা আগে নিশ্চিত হয়ে নেই ব্যাপারটা। তারপর আমার ভাইয়াকে দিয়ে খোঁজ নেব তার সম্পর্কে...’
‘এর মধ্যে তোর ভাইয়া কেন!’ মিশু যেন খানিকটা বিরক্ত হয় কিন্তু মিশু বুঝিয়ে বলে, ‘ভাইয়ার সাথে আমার ফ্রেন্ডলি আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। আমি বললে সে কাউকে জানাবেনা, কিছুই করবেনা।
শুধু খোঁজখবর নেয়া। বাকিটা তুই যা করার করিস’।
‘হুম... ডান’ বলে মিশু উঠে পড়ে, সমস্যার সমাধান যেন এখানেই হয়ে গেছে।
স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরতে গিয়ে আজও নিতু একটু পর বের হয়ে দেখে ছেলেটা মিশুর পিছনে। বাম হাতটা পকেটে ঢোকানো, কাঁধে মাফলার আর স্যান্ডেল পায়ে সন্তর্পণে পদক্ষেপ যেন শব্দ হলে যদি পাঞ্জেরী ফিরে দেখে!! মিশু গেইট খুলে ঢুকার পর ডান হাতের আঙ্গুলের নখ মুখে পুরে কাটতে কাটতে সামনের দিকে চলে যায় ছেলেটা।
ঘটনা সম্পর্কে সন্দেহের আর অবকাশ নেই। “বেচারা রোমিও!!”
নিতু বাসায় ফিরে তার ভাইয়াকে ব্যাপারটা জানালে সে বলে ‘আগামীকাল আমি নিচে থাকব তুই দেখিয়ে দিস। ’ পরদিন নিতুর ভাই ছেলেটাকে ফলো করে খোঁজখবর নিয়ে আসে। স্কুলের বিপরীত দিকের এলাকায় বাবা-মার সাথে ভাড়া বাসায় থাকে ছেলেটা। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে মাত্র, এই বয়সে এসব দিকে ছেলেদের ঝোঁক থাকাটা অস্বাভাবিক না তবে এটা নিয়ে বেশি জল ঘোলা করার প্রয়োজন নাই বলে সে নিতুকে কনফার্ম করে।
পরদিন নিতু মিশুকে সব ইনফরম করে বলে ‘একটা কাজ করা যায়, ডেকে নিয়ে ঝাড়ি দিলেই মনে হয় সাবধান হয়ে যাবে। ‘হুম’ একটা শব্দই দার্শনিক মিশুর দিক থেকে ভেসে আসে।
ছুটির পর মিশু স্কুল থেকে বেরিয়ে সরাসরি আমগাছতলার রোমিওর দিকে এগিয়ে যায়। ছেলেটাকে হঠাত ইতস্তত করতে দেখে সে বুঝে ফেলে সাহসের পরিধি। সরাসরি সামনে গিয়ে প্রশ্ন করে, ‘তুমি কি কর?’
-‘আমি! মানে...!’
-‘হ্যাঁ তুমি’ রাগের মাথায় তুমি বলেই শুরু করে সে, আপনি বলার সময় নাই।
-‘দাঁড়িয়ে আছি দেখতেই পাচ্ছেন’।
-‘দাঁড়িয়ে আছ!! ওকে, এদিকে আস’ বলে তাকে সাথে আসতে ইশারা করে মিশু। অনেকটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ছেলেটা ডান হাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে তাকে ফলো করে। নিতু চোখের ইশারায় মিশুকে সাবধান করে, বেশি বাড়াবাড়ি করার দরকার নাই। মিশু তাকে আশ্বস্ত করে ছেলেটার দিকে তাকায়।
হঠাত গোবেচারার মত চিমসে গেছে সে, যেন দুনিয়ার কিছুই বুঝেনা। মিশু তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, অপলকে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, ‘তোমার নাম কি?’
-‘রাফি’
-‘আমাকে ফলো করছ কেন?’ কিছুটা দাঁতে দাঁত চেপে মিশুর প্রশ্ন। ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে পায়ের তলায় যেন মাটি খুঁজে পাচ্ছেনা রাফি, মিনমিনে গলায় বলার চেষ্টা করে ‘আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি, তাই...’
আর কিছু বলার আগেই থেমে যায় তার গলা, মিশু প্রশ্ন করে ‘পছন্দ কর নাকি ভালোবাসো?’
রাফি প্রশ্নটার মানে বুঝে উঠতে না পেরে মিশুর দিকে তাকিয়ে থাকে, নিতু আর মিশু দুইজন তার উত্তরের অপেক্ষায়। রাফি ভেবে পায়না কি বলবে, দাঁড়িয়ে নিজের হাতের আঙ্গুল ফুটাতে থাকে।
কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে মিশুই নীরবতা ভাঙ্গে।
‘লিসেন, ফের যদি হ্যাংলা ছেলের মত আমার পিছু নিয়েছ তোমার ঠ্যাং ভাঙ্গার বিকল্প কিছু হাতে থাকবেনা’ বলেই নিতুকে নিয়ে গদগদ করে হাঁটতে শুরু করে বাড়ির দিকে। রাফি তাদের চলার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল করে। কি বলবে বা কি করবে কিছুই তার মাথায় আসেনা।
ছেলেটাকে আর দেখা যায়নি স্কুল গেইটে।
দেখতে দেখতে প্রায় একবছর পেরিয়ে গেল, মিশু আর নিতু দুজনেই গোল্ডেন এ+ নিয়ে এস.এস.সি. পাস করল, দুজনেই ভর্তি হল ভালো সরকারী কলেজে।
কলেজের নতুন পরিবেশ, নতুন শিক্ষক, নতুন সবকিছু পেয়ে ওরা অনেক রোমাঞ্চ অনুভব করছিল, পুকুরের মাছ বন্যার প্রকোপে নদীর পানিতে পড়লে যেমন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। নবীন বরণের দিন অনেক মজা করছিল সবাই, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় সবাই যখন মনোযোগ দিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছে তখন মিশুর নজরে পড়ল পিছনের সারিতে একটা ছেলে এক পলকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আড়চোখে কিছুক্ষণ দেখে নিশ্চিত হল এই সেই রাফি যাকে এক বছর আগে শাসিয়েছিল। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি সেদিনের মত আর নাই তাই ভেবেচিন্তেই চলতে হবে। সে নিতুকে টান দিয়ে বলে ‘চল, বাসায় ফিরে যাব’।
-‘কেন? কি হয়েছে?’
-‘বলছি, এখান থেকে বের হই আগে। ’ নিতু কিছুই না বুঝতে পেরে মিশুকে অনুসরণ করে গেল। তিন তলার অডিটরিয়াম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে সোজা গেইটের দিকে যাচ্ছিল, তখন পিছন থেকে একটা ডাক শুনতে পেয়ে তাকিয়ে দেখল রাফি এগিয়ে আসছে। চেহারায় আগের মত কৌলীন্য নেই, দেখেই মনে হয় কয়েক বছর ঘুমায়নি। মিশুর সামনে এসে বলল ‘মিশু, সেদিন তোমাকে বলতে পারিনি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি’।
এই কথাটি সেদিন শুনলে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে ফেলার প্রস্তুতি রাখা মিশু আজ কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেল! রাফি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অপরাধীর মত, ঘন কালো চোখে আগের সেই লেন্স দেখা যাচ্ছেনা, মাফলার ও নাই। মিশু কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা, ইতস্তত তাকিয়ে আছে পাশে ফোটা সহাস্য সূর্যমুখীর দিকে। ডানে বামে মাথা দোলাচ্ছিল ফুলটা, একটা দ্বিধান্বিত মুহূর্তই বটে। কয়েকটামিনিট এভাবেই কেটে গেল, নিতুকে টেনে হাঁটতে শুরু করল আবার।
গেইটের বাইরে এসেই রিকশা নিয়ে উঠে পড়ল ওরা। রাফি যথাস্থানেই দাঁড়িয়ে মাটিতে দাগ কাটছিল পা দিয়ে।
বাসায় ফিরতে ফিরতে ওদের প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, নিতু মিশুর সাথে ওদের বাড়িতেই চলে আসল সরাসরি। সবে কলেজে ভর্তি হল, এখনও পড়ার চাপ আসেনি ওদের। নিতু ফ্রেশ হয়ে ঘরে ফিরে দেখল মিশু নেই, খুঁজতে খুঁজতে চাদে গিয়ে দেখা মিলল।
চাদের যে পাশে হাসনাহেনার গাছটি আছে সে পাশে রেলিঙের ধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মিশু। নিতুর উপস্থিতিতে তার তেমন গত্যন্তর দেখা গেলনা। নিতু ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে! রাফির কথা ভাবছিস?’
মিশু নিতুর দিকে একটু তাকায় মাত্র, কিছুই বলেনা। নিতু পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলে, ‘কি এত ভাবিস বলত!! মনস্থির কর কি করবি। ’
-‘আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা।
’ বেদনার্ত পাখির মত চিহি করে এতটুকু বলেই নিতুকে জড়িয়ে ধরে ও। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে, প্রচণ্ড কাঁদতে ইচ্ছে করছে এখন। জ্যোৎস্নায় ভরে আছে সারা পৃথিবী, চাঁদ সাক্ষী হয়ে যাচ্ছে হাজারো আর্তনাদের, হাসনাহেনার গভীর ঘ্রাণ ভেসে আসছে অবিরত, সবকিছু মিলিয়ে ঘোরলাগা এক সন্ধ্যার অনুভূতি।
মিশু আর রাফিকে এড়িয়ে যেতে পারেনি, নতুন দিনে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে সে নতুন অনুভূতির পরশে। নিতু দলছাড়া হয়নি তখনও, তিনজনে মিলে এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি, অনেক সুন্দর কিছু স্মৃতি অথবা কিছু সুন্দর অনেক স্মৃতি।
রাফি ইন্টার কমপ্লিট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও এই কলেজেই অনার্সে ভর্তি হল, তার মুলে যে মিশু তা বলার দরকার হয়না। এর মধ্যে নিতু আবার একটা দায়িত্ব পেয়ে গেল, তার অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া চাচাতো বোনকে পড়াতে হবে বলে চাচা-চাচির আবদার সে ফেলতে পারেনি, কলেজ শেষে তাই আর তার বাইরে থাকার সুযোগ রইলনা। মিশু আর রাফি তাদের তৃতীয় ব্যক্তিহীন দুনিয়ায় দুর্দান্ত হয়ে গেল। হয়ত কিছু আবেগের বহিঃপ্রকাশ অথবা ভালোবাসার অভিসার।
(দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্য) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।