আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৮ (ওয়াই-ডেল্টা কানেকশন)

আউলা মাথার বাউলা পোলা। এমনিতে জিনিসটা একটু হিজিবিজি। এই বিষয়ে হয়তোবা আরও পড়ে লিখতাম, কিন্তু কয়েকজনের অনুরোধে আজকেই লিখতে বসলাম। ওয়াই-ডেল্টা রেজিস্টর কানেকশন খুবই জনপ্রিয় এবং অনেক কাজের একটা কানেকশন। এটা সাধারনত পাওয়ার লাইনে ব্যাবহার করা হয় তবে আজকে আমরা শুধুমাত্র রেজিস্টর এবং ডিসি সার্কিট দিয়ে এই কানেকশন শিখব।

পাওয়ার লাইনে ব্যাবহার নিয়ে পড়ে আলোচনা হবে। এই কানেকশনগুলা অনেকের কাছে অনেক জটিল মনে হয়, কারন সমীকরন গুলা বেশ বড় আর মনে রাখা কষ্টকর। তাতে কি? মুখস্ত করার কি দরকার? যখন দরকার পড়বে বইটই একটুখানি দেখে নিলেই হয়। আমি নিজেও কিছু মুখস্ত করিনা। আমি চেষ্টা করব খুব সহজ ভাবে বুঝানোর।

এখন কথা হল এই ওয়াই আর ডেল্টা মানে কি? ওয়াই তো ইংরেজি বর্ণমালার একটা বর্ণ। তেমনিভাবে ডেল্টা হল গ্রিক বর্ণমালার একটা বর্ণ। ওয়াই দেখতে এরকমঃ (Y) আর ডেল্টা দেখতে এরকমঃ () ওয়াই কানেকশনে সার্কিট এর এলিমেন্ট গুলা ঠিক ওয়াই এর মত সবগুলার এক মাথা একসাথে লাগানো হয়। বাকি ৩ টা মাথা অন্য এলিমেন্টের সাথে যুক্ত থাকে। ডেল্টাতেও ঠিক ত্রিভুজের মত করে ৩ টা এলিমেন্ট লাগানো হবে।

তাহলে ওয়াই থেকে ৪ টা নোড বের হল আর ডেল্টা থেকে ৩ টা। আচ্ছা একটা কথা। ওয়াইকে “টি” (T) কানেকশন ও বলে। কারন দেখতে একইরকম। আর ডেল্টাকে “পাই” () কানেকশন ও বলে।

উল্লেখ্য যে, পাই ও গ্রিক বর্ণমালার একটা বর্ণ। এইটা কিন্তু খাওয়ার পাই না। দুঃখিত সামুর ফন্ট সমস্যার কারনে ডেল্টা আর পাই এখানে দেখাচ্ছেনা তাই আমি এই ২ টার ছবি দিয়ে দিলাম। নিচে দেখেন। এবার এই ছবিটা দেখলেই কানেকশনের ব্যাপারটাও ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

ছবিতে আমি প্রত্যেকটা নোডের একটা করে নাম দিয়েছি। প্র্যাক্টিক্যাল কাজে প্রায়শই এদের মধ্যে এক কানেকশন থেকে অন্য কানেকশনে পরিবর্তন এর প্রয়োজন পড়ে। এটা সাধারনত বড় বড় আর জটিল সার্কিট কম্বিনেশন কে ধাপে ধাপে সহজ রূপে এনে সমাধান করার কাজে লাগে। এই কাজ টা করতেই সাধারনত সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমার নিজেরও হয়েছিল এককালে।

জিনিসটা আসলে খুব সোজা শুধুমাত্র এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, বাইরের সার্কিট কিন্তু এই কম্বিনেশন গুলাকে শুধুমাত্র এদের নোড এর উপর ভিত্তি করে চিনবে। সিরিজ আর প্যারালাল কম্বিনেশনের ইকুইভ্যালেন্ট বা সমতুল্য রেজিস্ট্যান্সের কথা মনে আছে? এখানেও ঠিক সেরকম। কম্বিনেশনের ভিতরে আপনি যাই করেন না কেন, ২ নোডের ভিতর ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্ট্যান্স সমান থাকলে বাইরের সার্কিট বুঝবেই না যে ভিতরে কি কম্বিনেশন করা হয়েছে। ধোঁকা দেয়ার খুবই সহজ উপায়। উপরের ছবিতে বাইরের সার্কিটের সাথে কানেকশন হয়েছে শুধুমাত্র A, B, C নোড এর মাধ্যমে।

সুতরাং, AB, BC, CA নোডগুলির ভেতর ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্ট্যান্সের একই থাকলেই কেল্লা ফতে। এক কম্বিনেশনকে অন্যটা দ্বারা বদলিয়ে ফেলা যাবে এবং এতে সার্কিটের কার্যক্রমের কোনই পরিবর্তন হবেনা। আমরা এখন এই কাজটাই করব। অবশ্যই অবশ্যই ২ ক্ষেত্রেই নোড গুলার অবস্থানেরও কোন পরিবর্তন হবেনা। নিচের এই সহজ ছবিটা মনে রাখেন।

অনেক কাজে দিবে। ডেল্টা থেকে ওয়াইতে পরিবর্তনঃ নোড CA এর পরিস্থিতি বিবেচনা করি। ডেল্টার জন্য ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্ট্যান্সের মানঃ Rb || ( Ra + Rc ) আর ওয়াইর জন্য R1 + R3 এখন কম্বিনেশন একে অন্যতে পরিবর্তন করতে গেলে, এই ২ টা মান সমান হতে হবে । R1 + R3 = Rb || ( Ra + Rc ) = Rb ( Ra + Rc ) / Ra + Rb + Rc (১) তেমনি ভাবে, R1 + R2 = Rc ( Ra + Rb ) / Ra + Rb + Rc (২) R2 + R3 = Ra ( Rb + Rc) / Ra + Rb + Rc (৩) এখন (৩) নং হতে (১) নং বাদ দিলে পাই, R1- R2 = Rc ( Rb – Ra) / Ra + Rb + Rc (৪) (১) আর (৪) যোগ করলে পাই, R1 = Rb Rc / Ra + Rb + Rc (৫) তেমনিভাবে, R2 = Rc Ra / Ra + Rb + Rc (৬) এবং, R3 = Ra Rb / Ra + Rb + Rc (৭) এখন এইগুলা সমীকরন দিয়ে খালি হিসাব করবেন আর সেই মান গুলা ইকুইভ্যালেন্ট ওয়াই তে বসাবেন। ব্যাস কাজ শেষ।

ওয়াই থেকে ডেল্টাতে পরিবর্তনঃ এইটা আরও সোজা। (৫), (৬) আর (৭) দিয়ে নিচের মতন কাম করেন। মানে হইলেঃ (৫*৬)+(৬*৭)+(৭*৬) কত হয় সেইটা বের করেন। R1R2 + R2 R3 + R3 R1 = Ra Rb Rc (Ra + Rb + Rc)/ (Ra + Rb + Rc)2 (৮) অথবা, R1R2 + R2 R3 + R3 R1 = Ra Rb Rc / (Ra + Rb + Rc) (৯) এবার (৯) কে (৫), (৬), (৭) দিয়ে সিরিয়ালি ভাগ দিলে নিচের ৩ টা সমীকরণ পাওয়া যায়। একটা করলেই বাকি ২ টাও পারবেন।

Ra = (R1R2 + R2 R3 + R3 R1) / R1 (১০) Rb = (R1R2 + R2 R3 + R3 R1) / R2 (১১) Rc = (R1R2 + R2 R3 + R3 R1) / R3 (১২) এই সমীকরণ গুলা দিয়ে খুব সহজেই ওয়াই থেকে ডেল্টাতে পরিবর্তন করা যাবে। সমীকরণ দেখতে বড় মনে হলেও কিন্তু কঠিন না। কারন একটু খেয়াল করলেই পেয়ে যাবেন। প্রত্যেকটার ভেতরেই অদ্ভুত রকমের মিল রয়েছে যার ফলে এগুলা মনে রাখাও সোজা। তারপরেও আপনাদের সুবিধার জন্য আমি সবগুলা সমীকরণ একসাথে ছবি আকারে দিয়ে দিলাম।

যখন দরকার পড়বে চোখ বুলিয়ে নিবেন। যথারীতি প্রাকটিস করার জন্য এবারো একটা সমস্যা দিব। নিচের “পাই” নেটওয়ার্ক কে “টি” তে কনভার্ট করতে হবে। নিজে একবার চেষ্টা করে দেখেন। সমীকরণ তো আমিই বের করে দিলাম।

আপনি খালি মান বসাবেন আর যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করবেন। এইটুকু না পারলে তো সমস্যা, তাইনা? আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। আজকে থেকে আমার আবার থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছে। আল্লাহর রহমতে প্রথমটা ভালই দিয়েছি। পরেরগুলার যেন ভাল হয় সেইজন্য সক্কলে দুয়া কইরেন।

আল্লাহ হাফিয। বিঃদ্রঃ অনেক বড় বড় সমীকরণ লিখতে হয়েছে, কোন ভুল থাকলে যদি কারো চোখে পড়ে, ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। ___________আগের সব পর্ব_________________ ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি - পর্ব ১(সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা। ) Click This Link ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টর নিয়ে আলোচনা ) Click This Link ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ৩( রেজিস্টর কালার কোড + আপেক্ষিক রোধ) Click This Link ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৪ (সিরিজ - প্যারালাল আলোচনা) Click This Link ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি -পর্ব ৫(ভোল্টেজ ডিভাইডার + কারেন্ট ডিভাইডার) Click This Link ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৬ ( কার্শফ’স কারেন্ট ল ) Click This Link ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৭ ( কার্শফ’স ভোল্টেজ ল ) Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।