আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৪ (সিরিজ - প্যারালাল আলোচনা)

আউলা মাথার বাউলা পোলা। আগের পোস্টে রেসপন্স খুবই নগন্য। তাও আবার লিখতেছি ( নির্লজ্জ আর কারে কয়!! ) কি করুম?? লেখার লোভ সাম্লাইতে পারিনা। তাই আবার আইছি। নামাজ পইরা আইসাই লেখতে বইছি।

এই পোস্টে আগের গুলার লিঙ্ক দিমুনা। বড়ই পেইনফুল কাম। ইচ্ছা হইলে এই অধমের ব্লগে যাইয়া সিরিয়ালি পড়েন। মেলা আজাইরা প্যাচাল পাড়লাম, এইবার কামের কথা কই। রেজিস্টর এর সংজ্ঞা মনে আছে? এইটা হইল সেইটা যা তড়িৎ প্রবাহে মানে ইলেকট্রন প্রবাহে বাধা দেয়।

এইটাকে পাথরে ভরা একটা সরু রাস্তার সাথে তুলনা করা চলে। সোজা কথায় বাধাযুক্ত একটা পথ। রেজিস্টরের সিম্বল হইলঃ সংজ্ঞার সাথে মিল আছে কি কন। কিভাবে মিল আছে তা দেখেন নিচেঃ ধরেন মানুষ গুলা হইল ইলেক্ট্রন আর রেজিস্টর এর রেজিসট্যান্স বা রোধ কি জিনিশ তা ত এখন বুঝেই গেছেন আশা করি। তড়িৎ প্রবাহ নিয়ে একটা কথা।

পরে এইটা কাজে লাগবে। খালি ইলেকট্রন এর হুদাই প্রবাহকেই পরিমাপযোগ্য তড়িৎ বলা যায়না। পরিমাপের জন্য সাথে সময়টাকেও নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। আসলে কোন পরিবাহকের ভিতর দিয়ে একক সময়ে যেইটুকু ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে। প্রবাহ=(ইলেক্ট্রনের মোট আধান/সময়)।

আধানের একক কুলম্ব। তাই কোন তারের ভিতর দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে এক কুলম্ব আধান প্রবাহ হলে বলা হয় এক অ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে। এখানে অ্যাম্পিয়ার হল তড়িৎ প্রবাহের একক। ওকে, এইবার আসেন কয়েকখান রেজিস্টর নিয়া বিভিন্ন কম্বিনেশন বা সমবায় কইরা লাগায় দেখি কি হয়। রেজিস্টরের বেসিক কানেকশন ২ ধরনের।

১। সিরিজ বা শ্রেণী সমবায় আর ২। প্যারালাল বা সমান্তরাল সমবায়। অবশ্য এইগুলার মিক্সড কানেকশন ও আছে। আগে দেখি সিরিজ কি জিনিস।

আপনার কাছে যত্তগুলান রেজিস্টর আছে সবগুলার ২ মাথা একটার পর একটা জোড়া লাগাইলে হয় সিরিজ। নিচের ছবিতে দেখেন। আর যদি সবগুলা রেজিস্টরের এক মাথা একসাথে লাগায় দেন আর অন্য মাথা গুলা আরেক জায়গায় একসাথে লাগায় দেন তাইলে হেইডা হইব প্যারালাল। নিচে দেখেন। এখন কইতে পারেন, এই ক্যাচালের মানে কি? হে হে ভাইজান লাভ না থাকলে কি আর মাইনষে হুদাই ক্যাচাল করে?? লাভ হইল যে, এইসব কম্বিনেশন করলে টোটাল রেজিস্টরের মান বদলাইয়া যায়।

ধরেন রাইত বাজে ১২ টা, সার্কিট নিয়া দরকারি কাম করতেছেন, আপনার কাছে আছে খালি ৫ টা ১ কিলো ওহম। এখন আপনার দরকার একটা ৫ কিলো ওহম। সুন্দর কইরা ৫ টারেই সিরিজ কইরা দেন। ৫ কিলো পাইয়া গেলেন। আরো কিছু সুবিধা আছে।

পরে কমুনি। সিরিজ কানেকশনের ছবিটা দেখেন, a আর b বিন্দুর ভেতর ৫ টা রেজিসটর লাগান আছে। R1, R2, R3, R4, R5। ধরি এদের সবার মানই আলাদা। আপনি এখন প্রত্যেকটা রেজিস্টরের ২ মাথায় ওহম মিটার ধইরা মান চেক করতে পারেন।

এখন যদি a আর b এর ২ মাথায় মিটার ধরেন,তাইলে কিন্তু পুরা আলাদা একটা মান পাইবেন। এইটা হবে সবগুলা রেজিস্টরের মানের যোগফল। জি হ্যাঁ সিরিজ কানেকশনে রেজিস্টরের মান যোগ হইয়া যায়। আর আপনি ab প্রান্তে যে মান পাইছেন সেইটাকে বলে সবগুলা রেজিস্টরের কম্বিনেশন ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্ট্যান্স বা সমবায়ের তুল্য রোধ। তাহলে, Rab= Requivalent=R1+R2+R3+R4+R5 এখন বলেন দেখি ৫ টা ১কিলো,২ টা ১০কিলো, আর ৩ টা ৫কিলো দিয়ে কিভাবে ১ টা ৪০ কিলো বানাবেন? এক্কেবারে সিম্পিল।

খালি মাথায় মাথায় জোড়া মারেন। মানে সিরিজ করেন। ১+১+১+১+১+১০+১০+৫+৫+৫=৪০। বুঝছেন? কাহারো কাহারো অন্তরে প্রশ্ন জাগিতে পারে, ওহে সিরিজে মান যোগ হয় কেন? আমি বলিব, মাথায় ঘিলু থাকিলে এতক্ষনে বুঝিয়া যাইতেন। ২ নং ছবিটা দেখেন।

মনে করেন মানুষ গুলা আপনি আর আপনার দোস্ত। যত রেজিস্টর সামনে জোড়া দিবেন তত বেশি বাধার মুখে পড়বেন তাইনা? তার মানে বাধা যোগ হইল। আরেকটা কথা। ab প্রান্তে ভোল্টেজ একই থাকলে আপনি কম্বিনেশনে যত বেশি রেজিস্ট্যান্স লাগাইবেন, ততই কিন্তু ভিতরের প্রবাহিত তড়িৎ বা কারেন্ট কইমা যাইব। সোজা কথায় ভোল্টেজ ঠিক থেকে রেজিস্ট্যান্স বাড়লে কারেন্ট কমবে।

কথা হইল কেন? বুঝার জন্য ২ নং ছবি। যদিও এইখানে ভোল্টেজ দেখান হয়নাই। ভল্টেজ আসলে কি? মনে আছে? এইটা হইল সেই শক্তি যা তারের ভিতর দিয়া ইলেকট্রনরে ঠেলা মারে। ছবিতেও মনে করেন আপনাকে ঠেলা মারার জন্য অইখানে ৩ জন লম্বা লাঠি নিয়া খারায় আছে। এখন আমি কইছি ৩ জনই ১ মিনিটে রেজিস্টর মানে রাস্তা পার হন।

ধরেন ১টা রেজিস্টর দিসি তাই ঠেইলা ঠুইলা ৩ জন কুনোরকমে পার হয়া গেলেন। এখন আমি যদি ৫ টা লাগাই তাইলে কি আর ১ মিনিটে ৩ জনই পার হইবার পারবেন? একজন যাইতেই ত খবর হইয়া যাইব। মানে দাঁড়াইল কি? সমান সময়ে আধান কম প্রবাহ হইল, মানে কম কারেন্ট। উপরে এইটার ফরমুলা দেখাইছি কিন্তু। যাউগ্যা এইবার প্যারালালের চিত্রখানা মনযোগ সহকারে দেখিয়া লন।

কি বুঝলেন? জোড়া মাত্র ২ টা। ঠিক দড়ি পাকানোর মত। সব রেজিস্টর একসাথে নিয়া খালি মাথা ২ টা পাকাইবেন। এইটার তুল্য রোধ বের করা ঝামেলা আছে। মজা হইতেছে এর কাহিনী সিরিজের ঠিক উল্টা।

ওইখানে তুল্য রোধ সবগুলার থেকে বেশি হইছিল, এইবার হবে সবগুলার থেকে কম। কেন হবে? আবার আগের ছবির মত কল্পন করেন। এইবার প্যারালাল মানে কি? রেজিস্টর আর লম্বালম্বি জোড়া দেয়া না। পাশাপাশি জোড়া দেয়া। মানে কি? মানে হইল যে পাশাপাশি এইরকম আরও কয়েকটা রাস্তা।

ধরেন ৩ টা। এখন ৩ জন ৩ রাস্তা দিয়ে দৌড় লাগান। গুঁতাগুঁতি কম হবে। তার মানে রাস্তা আগের চেয়ে সোজা হইয়া গেল। আবার অপর পারে যাইতেও আগের চেয়ে সময় কম লাগবে।

মানে কি? বেশি কারেন্ট। আশা করি কিলিয়ার হইছে। ওহমের সূত্র দেখেন আবার। ভোল্টেজ = কারেন্ট * রোধ। বা কারেন্ট= ভোল্টেজ/ রোধ।

এই সূত্র থেইকাই বুঝা যায় যে, সিরিজে রোধ বেশি তাই কারেন্ট কম। আর প্যারালালে রোধ কম তাই কারেন্ট বেশি। আইচ্ছা প্যারালালের তুল্য রোধের ফরমুলাটা দেখি এখন। এইরকম হবেঃ (1/ Rab)= (1/Requivalent )= (1/R1)+(1/R2)+(1/R3)+(1/R4)+(1/R5) মানে সবগুলা রোধের বিপরীত রাশির যোগফল হইবে তুল্য রোধের যোগফল এর বিপরীত রাশি। ত ঐ যোগফল বের করে সেইটাকে ১ দিয়ে ভাগ দিলেই উত্তর পাইবেন।

আসেন একটা ফাইনাল অংক করি। ২ টা ২কিলো, ১ টা ৪ কিলো প্যারালাল করলে তুল্য রোধ কত হয়? পরথমে উল্টা কইরা যোগ করেন, (1/2)+(1/2)+(1/4) = 1.25 হয়। এরে আবার উল্টা করেন। ১/১.২৫= ০.৮ ওহম হয়। দেখেন আগের সবগুলার থেকে কম।

তাইলে সিরিজ,প্যারালাল বুঝলেন? সামনের দিনে ২টা কম্বিনেশন একসাথে কইরা নয়া জিনিস বানামুনে। আর ভোল্টেজ এবং কারেন্ট ডিভাইডার নিয়াও আলুছানা হইবে। আইজকা ফুটেন। জুম্মা মুবারাক। ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি - পর্ব ১(সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা।

) ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টর নিয়ে আলোচনা ) ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ৩( রেজিস্টর কালার কোড + আপেক্ষিক রোধ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।