আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব। আসরের নামাজ পড়ে এসে মোতালেব দেখলেন ঘরে জামাই বসে
আছে।
জামাইয়ের নাম ইমন।
চেয়ারে বসে পা দোলাচ্ছে। পাশের চৌকিতে বসে
আছে অচেনা এক সুদর্শন তরুণ।
মোতালেবকে দেখে উঠে দাঁড়াল ইমন,আসসালামো আলায়কুম আব্বাজান।
---ওয়ালেকুম আসসালাম,ভাল আছো বাপ,তোমার মা?
বলতে গিয়ে ঢোঁক গিলল মোতালেব। খুব তেজী মহিলা।
ইমনের বিয়েতে
টুঁটি টিপে পণ নিয়েছিল। ওসুখ-বিসুখে ছারখার তবু বুড়ি মরে না।
---মায়ের আর শরীর,রোজই ডাক্তারবাড়ি ছুটতে হয়। বলল ইমন।
মোতালেব মনেমনে বলল,আমার কাছে নেওয়া পণের টাকা এখন সুদ হয়ে বেরিয়ে
যাচ্ছে বুড়ির।
প্রকাশ্যে বলল,ইনাকে তো চিনলাম না।
---ও আমার পরিচিত,বন্ধুও বলতে পারেন। ও ফারহাদ আমেদ।
প্রাইমারী টিচার। সুহানা কি এখনও কলেজ থেকে ফেরেনি?
মোতালেব মনে মনে বললেন,তোমার শাশুড়ির জ্বালায় বাড়িতে থাকি না বাবা,
পেটে যখন জ্বালা ধরে তখন আসতে বাধ্য হই।
প্রকাশ্যে বললেন,আমি তো বাবা
মসজিদে ছিলাম,তা শরবৎ-টরবৎ দিয়েছে তো?
---জী হ্যাঁ,ঘোলের শরবৎ দিয়েছিলেন আম্মা।
মোতালেব মনে মনে বললেন,তোমার শাশুড়ি আমাকে তো সারাজীবন ঘোল খাইয়ে
মারল রে বাবা। প্রকাশ্যে বলল,চা-টা?
---ঠিক আছে,হচ্ছে ওসব,সুহানা ফিরুক।
না ঠিক নাই সুহানার মায়ের মাথার গোলমাল দেখা দিয়েছে ইদানিং,রাতদিন কিসব
আবোল-তাবোল বিড়বিড় করে। প্রকাশ্যে সেসব বলা যায় না।
বাড়িতে বিবাহযোগ্যা
মেয়ে আছে। মেয়ের মা পাগল জানলে ভাল পাত্র পাওয়া যাবে না।
মোতালেব স্থির করলেন নিজেই চা বানিয়ে আনবেন। জামাইবাবাজী যতক্ষণ বিদেয়
না হচ্ছে ততক্ষণ তাঁর টেনশন।
বৈঠকখানা থেকে ভেতর বাড়িতে ঢুকেই বিষম খেলেন মোতালেব।
তাকে দেখেই
হাতে ধরা ঝাঁটা ঝাড়ল সুহানার মা। ভয়ে দু-পা পিছিয়ে এলেন মোতালেব,আরে
কর কি,কর কি,আমি আ-আবার কি দোষ করলাম,খামোকা ঝাঁটা মারছো কেন?
সুহানার মা ফিক করে হেসে ফেলল,তোমাকে নয়,মাকড়সা,দেখছো না ঘরবারান্দা
সব ঝুলে ভর্তি হয়ে আছে,ওদিকে ঘরে জামাই এসেছে।
---ঘরে জামাই আর বারান্দায় তুমি শচীন তেন্ডুলকারের ব্যাট চালানোর মত ঝাঁটা
ঝাড়ছো!
---তোমারই-বা আক্কেল কেমন,পুরুষমানুষ বাড়ি ঢুকবে গলা খেঁকারী দিয়ে,তা নয়
যেন মাছ খাওয়ার জন্যে বেড়াল ঢুকছে ঘরে।
মোতালেব চুপ করে গেলেন। পাগলের কথায় কান দিতে নাই।
মেয়েটার বিয়ে হয়ে
গেলে ওকে কোন হোমে দিয়ে আসতে হবে। পাগলের সাথে সংসার করা পৃথিবীর
সবচেয়ে কঠিন কাজ। বললেন,জামাইয়ের নাস্তা-পানির ব্যবস্থা হল?
---ময়দা ভিজিয়ে রেখেছি,এক্ষুণি ফনিডল দিয়ে ভেজে দেব।
---অ্যাঁ,ফনিডল?
---না-গো না,ফনিডল নয়,জানো,আমার না কেমন মাথা গোলমাল করছে এখন,
সেই ফুরাকল নাকি বুড়াকল তেল এনেছো তুমি,তাই দিয়ে ভেজে দেব।
---বেশ তুমি ঝাঁটা চালাও,আমিই দেখছি কি করা যায়।
বাজারে ছুটলেন মোতালেব। পাগল মানুষকে বিশ্বাস নাই,হয়ত কোনদিন সত্যিসত্যিই
ফনিডল খাইয়ে মেরে ফেলবে জামাইকে। তিনি নিজেও খুব টেনশনের উপর খাওয়া-
দাওয়া করেন। তিনি টাকা জমাচ্ছেন আর টাকার হিসেব করছেন। হ্বজে
যাবেন।
সেখান থেকে ফিরে শুধু মসজিদ আর মসজিদ। সেখানেই খাওয়া-দাওয়ার
ব্যবস্থা করবেন। বিষয়-সম্পত্তি সব দিয়ে দেবেন মেয়েজামাইদের। ঝাড়া হাত-পা হয়ে
দ্বিতীয় দুনিয়ায় পা রাখতে চান তিনি।
কলেজ থেকে ফিরে সুহানা দেখল জামাইবাবু বন্ধুকে নিয়ে খোশগল্প করছে।
পাশের টেবিলে নাস্তাপানির এঁটো কাপ-প্লেট। বলল,কি দুলাভাই কিছু ইনকামপাতি
হল?
ইমন হাসতে-হাসতে বলল,তোমার মায়ের মত দেখছি তোমার আব্বারও মাথা
খারাপ। বললাম,গাড়ির তেলের দাম দিতে হবে,এই দ্যাখ,এক বান্ডিল পাঁচশ টাকার
নোট হাতে ধরিয়ে দিলেন।
---হুম উনি চাইছেন যেনতেন প্রকারেণ আমাকে পাত্রস্থ করতে,তাই টাকাকে টাকা
মনে করছেন না। কই বান্ডিলটা আমাকে দেন।
টাকার বান্ডিল হাতে নিয়ে সুহানা বলল,আমার মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি
কলকাতায়,আব্বা তাতে রাজী নন,তাই একটু নাটক আপনাদের দিয়ে করালাম,
কিছু মনে করবেন না।
ইমনের বন্ধু আমতা-আমতা করে বলে উঠল,আরে না,না,আপনার মা সুস্থ হোন,তারপর
না হয় বিয়ের কথা ভাবা যাবে।
---ভুল ভাবছেন,চাকরীর আগে আমি বিয়ের কথা ভাবব না,আচ্ছা আসুন।
সদর দরজার কাছে মোতালেব দাঁড়িয়ে আছেন। ইমনদের বাইকে চড়তে দেখে
তিনি বললেন,কি বাবা,আমার মেয়েকে পছন্দ হল?
---জী,হ্যাঁ,খুব পছন্দ।
খুশিমনে মোতালেব ভাবলেন,এবার কলকাতা যেতে হবে হজ্বের ব্যবস্থা করতে।
কিন্তু সুহানা তার মাকে কলকাতা নিয়ে যেতে চাইছে কেন,বেশ ওরাই আগে
হজ্বের টিকিট কেটে আসুক,তারপর তিনি যাবেন। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে হ্বজে
যাবেন নাকি হোমে যাবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।