আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেতায়িত

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই মনসুরা বেগম পুটুলিতে করে চাল নিয়ে পা টেনে টেনে পরের বাড়ি থেকে ফিরে আসে । ঘাম মুছে নেয় কাপড়ে। তারপর জুম্মাঘরের পাশে এসে কাপড়ে মাথা ঢেকে রহিম মুন্সীকে বলল, এক টোফা চাইল দান করতে চাই। -দেন, জননী, মাশাল্লাহ। -আপনের সন্তান কেমন আছে, জননী? সাদা টুপিটা ঠিক করে রহিম।

-জি, ভাল, উতার পানি দিয়া উপকার পাইসি মনসুরা বেগমের ছেলেটার বয়স সাত। হাবা গোবা। বুদ্ধি কম। আজকে সকালে বলেছিল তার বাবাকে যেন আরেকটা বিবাহ দেয়া হয় । এ রকম অনুরোধে, মাথা নেড়ে সে বলেছিল জি বাপ, দিমু।

এর পরের অনুরোধ কঠিনতর। আম্মা, তুমি কিন্তু মমিন ভাইরে বিয়া করবো,মমিন ভাইয়ের চুলগুলান কেমুন কালা, সোন্দর। এবার মনসুরা বেগমের মুখে রা নাই। বলে তুই ভাত খাবি ডাইল দিয়া লোকমা কইরা দেই? পড়া পানি বা উতারের জন্য মনসুরা বোতল জমা রেখে যায়। তার ধারণা আগের চেয়ে ছেলে শান্ত হচ্ছে তাতে।

রহিমুদ্দিন, গুন গুন করে সুরা পাঠ করে। বলে, জননী, উতার লাগলে আরো দেয়া যাইবো। আমগো মসজিদে দেওবন্দ এক কামেল আসবেন মঙ্গল বার, উনার পড়া পানি দিয়া যক্ষ্মা নিরাময় হয়, বন্ধামায়ের পেটে সন্তান আসে। বাড়িতে ঢোকে মনসুরা। পাশের বাড়ির কুলসুমের কাছে কদমাকে রেখে গিয়েছিল।

কদমার মুখের কোনায় লালা ঝরছে, হাতের একটা আঙুল বাঁকিয়ে সে কুঁচকে কথা বলে। মায়া হয়। লালাটা পরিষ্কার করে নেয় মনসুরা বেগম তার শাড়ীর কোণায়। কদমার বাবা মসুরির ডাল নিয়ে গেছে চিলাকান্দার হাটে। তিন চারদিন পর মনসুরা বাড়ির ফিরে কুলসুমের কাছে একটা দু:সংবাদ পায় ।

মনপাড়ার জয়তুকে মাঝ রাত থেকে জিনের আছর করেছে। মেয়েটি এত ভাল, ধর্মপরায়ন। মক্তবের সবাই বলে কোরান শরিফের ড়পে বড় সুন্দর। সবার সন্দেহ রুস্তমের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক। চৌদ্দ বছরে তাকে বিয়ে দেয়া হয় চেয়ারমেনের ছোট ছেলের কাছে।

জিনে ধরলো আবারও? মনসুরা জিজ্ঞেস করে, -হ, জয়ুত আপারে তালাক দিসে। সে নাকি চরিত্রখারাপ। কারণটা কুলসুম বলে ফেলে। মনসুরা বেগম ফিস ফিস করে, -জয়তুর পেটের বাচ্চা নষ্ট হইছিল, সত্যি? -লাত্থি দিসে ওর জামাই। বিয়ার আগেই নাকি পেট বান্ধাইসে।

আরও বলসে জয়তু আপা বেশ্যা মাগী। বিবাহের ছয় মাসে বাচ্চা পয়দা করে কেমনে? -কি কাম আসিলে এই বাড়িতে বিয়া দেওনের? যে পুরুষ অনেক বিয়া করে তার কাছে সব বউই বেশ্যা। কুলসুম বিস্ময়কর ভাবে চেয়ারমেনের ছেলে কে সমর্থন করে বলে, বাচ্চাডা তো জারজই। রুস্তম ভাইয়ের উরস। নাইলে সে বিবাহের পরে নিখোঁজ কেন? মনসুরা তরুণ দিনমজুর রুস্তমকে দেখেছে।

ভদ্র বিনয়ী ছেলে। সে প্রতিবাদ করে, না না, রুম্তম এই কাজ করবো না। তখনি কদমা চিল্লায়ে কান্দে পাশের ঘরে, আম্মা ঘর ভিজ্জা গেছে। মনসুরা লোটা আর নতুন কাপড় নিয়ে কদমার কাছে গিয়ে বকা দেয়, বান্দীর বাচ্চা মুত ধইরা রাখতে পারস না? কয় বার কইসি আমারে ডাকতে। গ্রামের প্রচলিত ভুত তাড়ানোর একটা দৃশ্য ।

পোড়া মরিচের আধা কেজি নিয়ে মাঝখানের মালসায় সাজানো হয়। চারদিকে হলুদের টুকরা। চুলার কয়লা দিয়ে তুষের আগুনে ঘরে গন্ধ ছেয়ে গেছে। ঘরের ভিতর পনেরো কুড়ি জন নরনারী। জয়তুন কে ঘরের মাছখানে পালার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।

মুখ গামছা বাঁধা। দেওবন্দের বড় হুজুর নাকের কাছে ধুতুরা গোটার আরক নিয়ে ফু দিচ্চিলো। পড়া পানি আঙুলে ছিটাতেই মনে হল কিছু মিশানো পানিতে। জয়তু ষাড়ের মত গোঙায়, গুমমমম বড়হুজুর ঝাড়ে, ঐ ঐ ক তুই কেডা? ক! মরিচ-পীতরাজের গুড়া চুলের উপর ছিটায়। হুমম, হুমমম...একটা চাপা শব্দ আছে ভেঙে আসে গামছায় ।

অবিকল পুরুষ কণ্ঠে সে বলে ওঠে জয়তুন, আমি জগন্নাথ, পিতা উত্তীয় নাথ বণিক। উপস্থিত সবাই বাকরূদ্ধ হয়ে দেখে পুরো ঘরে একজন মাত্র। বড় হুজুর। হুজুর টান টান করে দাঁড়ায়। গম্ভীর কণ্ঠে দাঁড়িয়ে কালাম পাঠ করে।

কুপি বাতিটা সেই কালামের শব্দে থির থির কেপে ওঠে। সমবেত দের দিকে চেয়ে সতর্ক করে সে, এইবার আপনেরা যেন ডরাইবেন না। জয়তুর ভিতর জগন্নাথের আসর। এই ভুত বড় খারাপ। যাওনের সময় দরজা খোলা রাখবেন।

সে একটা ক্ষতি করণের চেষ্টা করবো। আপনেরা সব আল্লাহর নাম ডাকেন। জয়তর ভিতরে জগন্নাথটা ঘো ঘো ঘো শব্দ করে খুলে ফেলতে চায় বাঁধন। পা ঝাড়া দিয়ে সে হাঁটু পর্যন্ত সরিয়ে ফেলে। অন্য সময় হলে পর্দা নিয়ে কথা উঠতো কিন্তু কারো মুখে শব্দ নেই।

হুজুর নাগরা জুতা পায়ে জয়তুর সামনে আসে। আংটিসমৃদ্ধ দুই হাতের তালুতে জয়তুর গালে সশব্দে থাপর দেয়, যাবি, ঐ যাবি? গায়েবী শব্দ ভেসে আসে, হ আমি যামু, আন্ধার করেন। কদমা আম্মা আম্মা বলতেই মুখ চাপা দেয় তার মা। বাপ চুপ! বুড়িটা বলে, বাচ্চাকাচ্চা বাইরে রাইখা আয়। বড় হুজুর সুরা পড়তে পড়তে বাতিটা ফু দিয়ে নিভিয়ে দেয়।

দরজা খোলা থাকায় পাশের ঘরের সামান্য আলোতে বোঝা যায় জয়তুন যন্ত্রণায় কাঁপছে। ঘরে ধূপের ধোঁয়া বয়ে যায়। দু তিন জন ধাঁকে কাশতে থাকে । যা জগন্নাথের মরা ভুত আসর ছাইড়া যা। গেরাম ছাইড়া যা, বলেই বড় একটা গজারীর বেত দিয়ে জয়তুকে প্রহার করে।

থাকে অন্ধকারে গোঙানি বাড়ে, তখনই একটা নাকি কণ্ঠ বলে, যা----ই, যা------ই, আমারে বাঁচাও । একটা ঝড় ওঠে, আঁধারে জয়তুর শরীর থেকে ঝটকায় একটা কুয়াসা মানব বের হয়ে চলে যায় খোলা দরজায়। দরজায় পাশের বাড়ির সামান্য আলোয় বোঝা যায়..মানুষ নয় কোন অশরীরী। যেন দানব। বহু দিন ধরে বাসা বেঁধেছিল সে জয়তুনের ভিতর।

ঠিক তখনই কদমা খ্যাক খ্যাক করে ওঠে, আম্মা ও আম্মা, ভুত নাই, রহিম কাকারে দেখসি, আম্মা রহিম কাকা দৌড়াল দিসে। মনসুরা কিছু না বলে তার ছেলের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে, চুপ কর শয়তানডা। চুপ। সবাই বড়হুজুরের কীর্তি দেখে মুগ্ধ হয়। বাতি জ্বলে ওঠে।

দেখতে পায় একটা কুঁকড়ে থাকা লাল শাড়ী পড়ে আছে মেঝের উপর। নিথর, সমস্ত মন্দ কিছু মিলিয়ে গেছে তার শরীর থেকে। -- ড্রাফট ১.০ / অনুশীলন লেখা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।